পিরানহা ও মশার ভালোবাসা

পিরানহা ও মশার ভালোবাসা

রাস্তার পাশে দাড়িয়ে সুন্দরী মেয়ের ডিপি দেখে দেখে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিচ্ছি। ঠান্ডা মিহি বাতাস বয়ে যাচ্ছে। চাঁদটা কাস্তের আকৃতি ধারণ করে আকাশে ঝুলছে।

মনে মনে কবিতার লাইন আওড়াচ্ছি। জীবদ্দশায় কবি ছিলাম না। কবিতার লাইন কেনো আসছে মাথায়? ব্যাপারটা বোধগম্য হচ্ছে না। হু, মনে পড়েছে। কালকে রাতে যে মানুষটার মাথা খেয়েছিলাম সে বোধহয় কবি ছিলো। তাকে কাবু করার সময় দেখেছিলাম কাধে ঝোলা ব্যাগ। অনেক ময়লা আর পুরোনো ছিলো সেটা। ব্যাগ থেকে তখনই খাতা,কলম আর পেন্সিল পরে গিয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। কবি’র মাথা খেয়েছিলাম বলেই আমার মুখ দিয়ে কবিতা বের হচ্ছে। আমি যখন বেচে ছিলাম তখন পিরানহা মাছ ছিলাম। যে জাতের মাছ’রা মানুষ খায়। এখন আমার লেখক আমাকে মানুষের রুপে এনেছে। লেখক আমাকে একা রাখেননি। আমার সঙ্গীনীও আছে। আমার প্রেমিকা এখন ইংরেজিতে ভ্যাম্পায়ার, আর বাংলাতে ডাইনি। সে রক্ত খায়। যখন বেচে ছিলো তখন ছিলো মশা।

একটা পিরানহা মাছের সাথে একটা মশার প্রেম। কি অদ্ভুত! কেমন গর্দভ লেখক চিন্তা করুন একবার। ক্লাস মেইনটেইন করতে যানে না শালা! প্রেম একটু ভালো জাত দেখে করিয়ে দিবি! তা না! মশার সাথে আমার মতো পিরানহা মাছের প্রেম! যায়? আপনারাই বলুন, যায়? তাও মেনে নিলাম। একটা প্রেমিকা আছে সেটাই অনেক। আপনারা যারা লেখাটা পড়ছেন তারা বেশিরভাগই তো ফ্রাস্ট্রেটেড সিঙ্গেল। আর সে এখন মানুষের রুপে। মশার রুপে তো না। আমি তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। তাই তার জন্য ফ্লাক্সে কবি’র রক্ত করে নিয়ে যাচ্ছি। বেশিদিন তো বেচে থাকতে পারে নি। একজন কবি’র রক্ত খেয়েছে বলে মন হয় না।

আমার হাতে থাকা ফ্লাক্সে টান পরেছে টের পেলাম। হাত অনুসরণ করে দেখি আমার ভ্যাম্পায়ার প্রেমিকা মিশা। মশা থেকে নাম দিয়েছি মিশা। সে আমার নাম দিয়েছে পরান। মিশা ফ্লাক্সে মুখ লাগিয়ে রক্ত খেতে খেতে বললো, ‘তুমি আবার আমার জাত নিয়ে বাজে কথা বলছো সবাইকে!’ আমি বললাম, ‘এটা তো সত্য কথা। সত্য বারবার বলতে হয়।নাহলে মিথ্যায় রুপান্তরিত হয়ে যায়।’ ‘এটা কিসের রক্ত এনেছে? গাজার গন্ধ আসছে রক্ত থেকে।’

‘একজন কবি’র রক্ত।’ ‘আমি এ রক্ত খাবো না। গলা শুকিয়ে আছে। আমার জন্য ভালো রক্ত নিয়ে আসো।’ আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,’ আমি তোমার জন্য এতো রাতে মানুষ খুন করতে পারবো না। এটাই খেয়ে নাও। গাঞ্জা ফ্লেভারের রক্ত। নতুন অভিজ্ঞতা।’ মিশা আমার দিকে তার লাল চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে। মুখের ভিতর থেকে রক্ত স্রোতের ধারা নামছে। তার চেহারাটাই এমন বলে রেগে আছে কিনা বুঝতে পারলাম না।

আমি বললাম, ‘আমরা লেখকের কাছে যাবো এখন। জীবন নিয়ে টানাটানি আমাদের। বেচে থাকলে পরে তোমাকে জিমের ট্রেইনারদের রক্ত এনে খাওয়াবো। তারা ভালোমন্দ খায় নিয়মিত। রক্ত ভালো হবে অবশ্যই।’ ‘হু। তা ঠিক বলেছো। লেখকের লোকেশন তোমার জানা আছে তো? ভূবারে একটা ট্যাক্সি কল করো।’ আমি ফোন টিপে ভূবারে একটা ট্যাক্সি কল করলাম। ভূবার হলো আপনাদের উবারের মতো। ভূতের ট্যাক্সি ও বাইক রাইড শেয়ারিং এপসকে বলা হয় ভূবার। ভূবার ফুডও আছে। মিশা রক্ত অর্ডার দেয় সেটা থেকে। হোম ডেলিভারি ফ্রি।

৫ মিনিটের মধ্যেই আমাদের ট্যাক্সি এসে পড়েছে। ড্রাইভারের এক হাতে সিগারেট। দিন-দুনিয়া ভুলে ধুমসে সিগারেটে টান দিচ্ছে সে। আমরা ট্যাক্সি তে উঠে বসলাম। খেয়াল করলাম তার শরীর থেকে আলাদা করেও ধোঁয়া বের হচ্ছে। সেটা সিগারেটের ধোঁয়া না। মিশা ফ্লাক্স থেকে রক্ত মুখে ঢেলে বললো, ‘যদি কিছু মনে না করেন আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? আপনার শরীর থেকে কি সবসময় ধোঁয়া বের হয়?’ ড্রাইভার কিছু বললো না। তার মুখ দিয়ে গোঙানির মতো একটা শব্দ হলো শুধু। সে সিগারেট টেনেই চলেছে।

মিশা আবার বললো, ‘ড্রাইভার সম্ভবত আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিলো। এজন্য তার শরীর থেকে সারাক্ষণ ধোঁয়া বের হয়।’ আমি বললাম, ‘ভালোই হয়েছে। খুজে দেখলে হয়তো দেখা যাবে ওর শরীরের বিশেষ কোনো অঙ্গতেও আগুন জ্বলছে। সে আগুন দিয়ে সিগারেট ধরায়।’ ‘১৮২’, এতক্ষণে ড্রাইভারের মুখ থেকে কথা বের হয়েছে। ১৮২! কিসের সংখ্যা বুঝলাম না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিসের সংখ্যা এটা?’ ‘আমার ভাড়া।’ ‘কি? ভাড়া এডভান্স নেন নাকি?’ ড্রাইভার নরম কাতর স্বরে বললো, ‘কি করবো বলুন! এডভান্স নেয়া ছাড়া উপায় নেই।”কেনো?’

‘শেষবার গাঞ্জা খেতে খেতে গাড়ি চালিয়ে ছিলাম। কিসের সাথে যেনো সংঘর্ষ হলো। গাড়ির সাথে আমিও পুড়ে মারা গেলাম। পেমেন্টটা আর নেয়া হয়নি।’ ড্রাইভারের হাতের সিগারেটে আসলে গাঞ্জা ভরা। ফ্লাক্সের গাঞ্জা ফ্লেভারের রক্ত খাবে কিনা জিজ্ঞেস করবো? পকেট থেকে ১৯০ টাকা বের করে তাকে দিলাম। ভাংতি নেই আমার কাছে। ভাড়া শেয়ার করার উদ্দ্যেশ্যে মিশার দিকে আড় চোখে তাকালাম। সে বাইরে তাকিয়ে আছে, শেয়ার করতে হবে বলে যে বাইরে তাকানোর ভান ধরে আছে সেটা বুঝতে বাকি রইলো না। মেয়েরা ভূত হোক আর মানুষ, শেয়ার করতে রাজি না এটা জেনে রাখেন।

ড্রাইভার বললো, ‘ভাই,ভাড়া টা ভূকাশ করুন। দেখছেন না ধোঁয়া বের হচ্ছে। পুড়ে যাবে তো টাকা সাথে রাখলে। আমার সিটের পিছনে, আপনার সামনের দিকে ভূকাশ নাম্বারটা লেখা আছে । QR Code ও আছে। ভূকাশে পেমেন্ট করলে ক্যাশব্যাক পাবেন ৫%।’ ‘আপনি বেচে থাকতে পিরানহা মাছ ছিলেন?’,ড্রাইভার আবার মুখ খুললো। ‘হু। তুমি বুঝলে কিভাবে?’

‘আপনার চেহারায় বুঝা যায়। একটা ইংরেজি অশ্লীল মুভিতে দেখেছি আপনাকে। অনেক অর্ধনগ্ন মেয়ে-ছেলেকে খেয়েছিলেন। ভাবী কী ছিলো? ফ্লাক্সে করে খাচ্ছে কী?’ ‘তোমার ভাবী মশা ছিলো, এখন ডাইনি। ফ্লাক্সে করে একজন কবির গাঞ্জা ফ্লেভারের রক্ত খাচ্ছে।’ ‘ছি ছি ব্রো। আপনি একটা মেয়েকে ডাইনি বললেন? নারীবাদীরা তো এখনই আপনার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়বে।’ ‘সত্যিকারের ডাইনি কে ডাইনি বলবো না? মানুষের রক্ত খেয়ে বেড়ায়। রাত-বিরেতে ভয় দেখায়। আকাশে উড়ে বেড়ায়।’

আমার কথা শুনে মিশা তার লাল চোখ আরো লাল করে তাকালো। গাঞ্জার পিনিকের কারনে হয়তো আমার কথা তেমন বুঝতে পারে নি। নাহলে এতো কটু কথা সহ্য করে বসে থাকার মেয়ে না সে। আমার খবর করে ছাড়তো এতক্ষণে। ‘আপনারা দুজনই ভূত। যেখানে যাবেন এমনিতেই তো যেতে পারতেন। টাকা খরচ করার কি দরকার ছিলো?’

ড্রাইভারকে প্রথমে ভেবেছিলাম কথা বলতে পারে না। এখন দেখছি একেবারে বাচাল। আমি বললাম, ‘আমরা যদি এমনি এমনিই যাই, তাহলে তো তোমার মতো গরীব ভূতরা না খেয়ে মরবে।’ ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ছোট গোল আয়না আর লিপস্টিক বের করে আলতো করে ঠোঁটে লাগিয়ে নিচ্ছে মিশা। আহ! কি মায়াবী চেহারা। ১৭৬ বছর বয়স মেয়েটার। কিন্তু চেহারায় লাবণ্য ধরে রেখেছে কত সুন্দর! যতই ডায়নি বলি আর যাই বলি,রুপ যৌবনে অন্যদের থেকে ঢের এগিয়ে মিশা।

১৭৬ বছর বয়সে কত কিনা দেখেছে সে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের জন্ম দেখেছে। ইংরেজদের শাসন – পতন দুটোই দেখেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতার যুদ্ধ দেখেছে। মাঝেমধ্যে খুব গর্ব হয় মিশা কে নিয়ে। ‘আপনারা এত দূর দূর বসেছেন কেনো? পাশাপাশি চেপে বসুন ‘, মিররে তাকিয়ে ড্রাইভার বললো। ‘পাশাপাশি বসতে চাই তো। সে তো আর হচ্ছে না আমাদের গর্দভ লেখকের জন্য। সে আমাদের কাছাকাছি এনে আবার দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।’ ড্রাইভার মাথা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দু’চোখে প্রশ্নসূচক দৃষ্টি দিয়ে তাকালো। গাড়ি ঠিকভাবেই চলছে। একটুও হেরফের হচ্ছে না। ‘ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না। খুলে বলুন।’ আমি বললাম, ‘তুমি সোজা তাকিয়ে গাড়ি চালাও। আমি বলছি। কান খাড়া করো।’

সায়েল মুহাম্মদ নামের একটা ফালতু লেখক আছে। সে একটা বই লেখা শুরু করেছিলো ২ বছর আগে। সে বইয়ের গল্প আমাদের দুজনকে নিয়ে। পিরানহা মাছ আর মশার ভালোবাসা। সেই থেকেই আমাদের আবার পূনরায় জন্ম হয়। প্রথম থেকে এই পর্যন্ত ভালোই ছিলো। ২ বছর ধরে লিখে ভালো সমাপ্তি পাচ্ছে না।এখন তার ভাবনাতে এসেছে আমাদের আলাদা করে দেয়ার। মিশার সাথে আরেকজনের প্রেম করিয়ে দিবে আর আমার মৃত্যু হবে গাড়ি এক্সিডেন্টে।

এই পার্ট লেখার আগেই ওর কাছে যেতে হবে। নাহলে আমি আর তোমার ভাবী আলাদা হয়ে যাবো। ‘হু। বুঝলাম ব্যাপারটা।’ ‘লেখক যদি গল্পের বাকি পার্ট টা লিখে তাহলে প্রেম কার সাথে হবে জানো?’ ‘কার সাথে?’ ‘ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে। মানে তোমার সাথে মিশার প্রেম ঘটবে। আমি মারা যাবো গাড়ি এক্সিডেন্টে।’ ড্রাইভার বিষ্ময়কর ভাবে তাকালো পিছনে। এ কথা শুনে তার গাড়ির স্পিড মনে হয় আরো বেড়ে গেলো। আমাদেরকে জায়গামতো নামিয়ে দিয়ে বললো, ‘তাড়াতাড়ি গিয়ে শালার ব্যাটা লেখক রে ধরেন।’

পুনশ্চঃ আমরা লেখকের কাছে গিয়ে উপন্যাসের গল্প পরিবর্তন করেছি আসছি। এখন আমরা বিশাল উচু এক গাছের ডালে বসে আছি। মিশার লাল চোখ আর রক্তমাখা মুখ দেখেই লেখক ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। মিশা বলেছিলো গল্প পরিবর্তন না করলে লেখকের রক্ত ওরস্যালাইনের সাথে মিশিয়ে খাবে। মুখ দেখে অনেক হাসি পেয়েছিলো। তার উপন্যাসের চরিত্র গুলো এভাবে বাস্তবে এসে হুমকি-ধামকি দিবে। গল্প পরিবর্তন করতে আসবে এটা সে কল্পনাতেও ভাবেনি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত