খুনসুটি ভালোবাসার আরেক নাম হচ্ছে ছোটবোন।আর সে ছোটবোন অাফসানা ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েও রাত ৮টা বাজে শ্বশুরবাড়িতে ডায়াবেটিস অাক্রান্ত মানুষগুলোর জন্য রুটি বানাতে হয়।ছোটবোনকে সারপ্রাইজ দিবে বলে কাউকে না জানিয়ে রিহান চট্টগ্রাম যায় সেদিন,গিয়ে এই দৃশ্য দেখবে তা কখনো কল্পনা করে নাই সে।সন্ধ্যা ৭ টা বোনের স্বামীর বাসায় যায়, সোফায় বসে আছে তার শ্বশুর শাশুড়ি।মুচকি হাসি দিয়ে রিহান তাদের বললো-
_আসসালামু আলাইকুম।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম,আরে রিহান কেমন আছো তুমি?
_জ্বি অালহামদুলিল্লাহ্ ভালো,আপনারা কেমন আছেন?
_হ্যাঁ ভালো,
_আফসানা কোথায়?
_রান্নাঘরে আছে। রান্নাঘরে দিকে রিহান গেলো,আফসানা রুটি বানাচ্ছে।আফসানা বড়ভাইকে দেখে খিলখিল করে হেসে দিয়ে বলে-
_ভাইয়া আসার আগে ফোন করলি না কেন?কেমন আছিস?
_ভালো আছি,তুই এ অবস্থা এখন কেন এসব কাজ করতেছিস।তোর ননদ কোথায়?
_সে তো পড়তেছে।
_মাহমুদ এখনো কাজ শেষ করে আসে নাই?
_সে তো আজ দুই’দিন ব্যবসার কাজে রাঙ্গামাটি গেছে,কাল সকালে ফিরবে বলছে।
অাফসানা প্রেগন্যান্ট তা রিহান জানতো তবে এই সময়ে এই কাজ করবে তা কখনো জানতো না।আফসানার বাবা এমন ছেলের হাতে অাফসানে তুলে দিয়েছে যে ছেলেটা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার হাত ধরে রাখবে।কিন্তু ঘরের মানুষের হাসি ফুঁটাতে তাকে বাহিরে কাজ করতে হয়,ঘরে সুস্থ মানুষ থেকেও যখন একজন আরেকজনকে হেল্প করে না তখন জিনিসটা খারাপ লাগে।রিহান তনুর রুমে দিকে উঁকি দিয়ে দেখে সে শুয়ে শুয়ে মোবাইল দেখতেছে।
রিহান এ দৃশ্য দেখে আফসানা’কে বলে-
_তোর ননদ তনু তো না পড়ে মোবাইল দেখতেছে,ও তোকে হেল্প করে না?
_তাকে করতে বলে সে পড়ার বাহানা দিয়ে কাজ করতে চায় না।
_ও আচ্ছা, না করুক কাজ।সেও একদিন মা হবে গর্ভে সন্তান নিয়ে কাজ করতে কেমন কষ্ট হয় সেও একদিন অনুভব করবে।আর শুন আমি বাড়ি ফিরে গেলে বাবাকে আর মাকে আসতে বলবো। তখন মাহমুদকে বলে কিছুদিনের জন্য আমাদের বাড়িত চলে আসিস।মাথা নাড়িয়ে আফসানা বললো-
_আচ্ছা ঠিক অাছো বলবো। সোফায় বসে বসে মাহমুদের মা,বাবার সাথে কথা বলতেছে রিহান।ভাইয়ের জন্য নাস্তা নিয়ে আসলো অাফসানা,এখনো রিহান বোনকে সারপ্রাইজের কথা বলে নাই।একটু পানি পান করে রিহান বলে-
_আমাকে যেতে হবে। আফসানা দুচোখ বড় করে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বলে-
_এই রাতে কোথায় যাবি, আর গেলেও বা আসলি কেন?
_ক্লাবের কাজে আসছি চট্টগ্রাম,জিশান রেলস্টেশনে বসে আছে,১২ টা আমাদের ট্রেন ছাড়বে তাই সুযোগ পেয়ে তোকে দেখতে আসছি।
ছোটবোনকে বিদায় জানিয়ে চলে আসছে রিহান।রিহান আসার সময় অাফসানা খুব কাঁদে,একটু কাঁদলেও ভালো।সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে বোনের মুখে হাসি ফুঁটানোর চেয়ে রিহান চলে যাওয়া ভালো মনে করলো।কারণ রিহান জানতো তার ছোটবোন এ গর্ভঅবস্থা ভাইয়ের জন্য কষ্ট করে হলেও ভালো ভালো রান্না করবে।এজন্য সারপ্রাইজের চেয়ে মিথ্যা কথা বলে চলে যাওয়া শ্রেয় মনে করলো রিহান। চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এককোণে হাতে ব্যাগ নিয়ে বেঞ্চে বসে আছে রিহান।ল্যামপোস্টের আলোতে খেলা করতেছে অনেকগুলো ছোট ছোট ছেলেরা।এই রাতেও বাচ্চাগুলোর ঘুম নাই,ঘুম কি করে থাকবে?তাদের যে থাকার কোথাও যায়গা নাই,যখন ঘুম আসবে তখন কোনো বেঞ্চের নিচে শুয়ে পড়বে।রিহান তাদের সবাইকে ডাক দিয়ে বললো-
_এই ব্যাগে একটা কেক আর অনেকগুলো চকলেট আছে এগুলো তোমরা নিয়ে যাও। একটা ছেলে এসে হাসি দিয়ে কেকটা নিলো। ছেলেটা কেকটা দেখে বলে
_আজ কি আপনার জন্মদিন?
_না,
_তাহলে কার?
অশ্রুচোখে রিহান বলে- আজ আমার ছোট বোনের জন্মদিন।তবে আমার ছোটবোন না শুধু, সে এখন অন্যর ঘরের বৌ। রিহানের চোখে অশ্রু দেখে স্টেশনের বাচ্চাদের মধ্যেয় একটা ছেলে বলে-ভাইয়া শুনেন,এ পৃথিবীতে কেউ যদিও আপনার বোনকে না ভালোবাসে, দিব্যি একজন আছে যে আপনার বোনকে খুব ভালোবাসে ও কেয়ার করে তার উপরে ভরসা রাখুন,সে আপনার বোনকে ভালো রাখবে, কারণ সে আমাদের সৃষ্টিকর্তা।