বোকার প্রেম

বোকার প্রেম

অর্পা জাহিদকে জোর করে জড়িয়ে ধরে বললো “তুই জাস্ট আমার।অন্যকারো দিকে তাকালে তোর চোখ তুলে ফেলবো।” জাহিদ জড়সড় হয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। ক্যাম্পাস ভরতি মানুষ। সবাই থ মেরে দাঁড়িয়ে গেছে। জাহিদ নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে বললো “পাগল হয়ে গেলি নাকি?ছাড় প্লিজ।” অর্পা জাহিদের কানে কানে বললো “তাহলে বল ভালবাসি।” জাহিদ স্তব্ধ। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার দিন মা বলে দিয়েছে, প্রেম করা বারণ।এখন মায়ের কথা অমান্য করলে কপালে শনি আছে। জাহিদ কিছুক্ষণ ভেবে বললো “না, আম্মু বকা দিবে।”

“আরে ধুর।তুই কি এখনও ছোট আছিস নাকি?”
“তুই আমার পরিস্থিতি বুঝবি না।তাছাড়া ভালো ছেলেরা প্রেম করে না।”
“বিয়ে তো করে।”
“হুম।”
“তাহলে চল, একবারে বিয়েই করে ফেলি।” অর্পা জাহিদকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। জাহিদ কান্না করে দিবে অবস্থা।

“এভাবে জোরাজুরি করিস না।মানুষ খারাপ ভাববে তো।”
“ভাবুক।তোর কিছু যায় আসে?”
“হুম, সম্মান থাকবে না।”
“সম্মান ধুয়ে পানি খাবি।চল এবার, বিয়ে আমি করবোই।”
“আম্মুকে একবার জিজ্ঞাসা করে নেই?”
“নে।”

অর্পা জাহিদের ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলো। লোকসমাজ ভরপুর মজা নিচ্ছে। জাহিদ পকেট থেকে ফোন বের করে মায়ের নাম্বারে কল করলো।

“হ্যালো আম্মু।”
“বলো বাবু?বাসায় আসবা কখন?”
“একটু পর।আম্মু অর্পার কথা মনে আছে?”
“হ্যা।কেন কি হইছে?”
“ও আমাকে জোর করে বিয়ে করতে চাচ্ছে।”
“মানে?তুমি এখন কোথায়?”
“ক্যাম্পাসে।” কথার মাঝে অর্পা জাহিদের হাত থেকে কেড়ে ফোন নিয়ে গেলো।

“হ্যা আন্টি আমি অর্পা।”
“চিনছি বলো।”
“আপনাকে কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলাম।”
“হুম।”
“আসলে, কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না।খোলামেলা ভাবে বললে আপনি মাইন্ড করবেন নাতো?”
“না।”
“জাহিদের সাথে আমার দুই বছরের রিলেশন।এই দুই বছরের মধ্যে আমাদের অনেক কিছু হয়ে গেছে।কিন্তু এখন ও বলতেছে আমাকে বিয়ে করতে পারবে না।আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি বুঝতে পারছেন আন্টি?”

“কি সব যা-তা বলছো?জাহিদ মোটেও এই ধরণের ছেলে না।”
“জানি আন্টি।বাট আমি মিথ্যা বলবো কেন বলেন?”
“তুমি জাহিদের সাথে আমাদের বাসায় আসো।সামনাসামনি বসে কথা না বললে বিষয়টা ক্লিয়ার হচ্ছে না।”
“আব্বু-আম্মুকে সাথে নিয়ে আসবো আন্টি?”
“ওনারা যদি আসে তাহলে সমস্যা নেই।”
“ওকে।আধঘন্টার মধ্যে আমি সবাইকে সহ আসতেছি।”

অর্পা কল কেটে জাহিদের দিকে তাকালো। হাবাগোবা ছেলেটা গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবশ্য দেখতে খারাপ লাগছে।কেমন কিউট একটা ভাব ফুটে উঠেছে।

“তুই মিথ্যা কথা বললি কেন?”
“কি মিথ্যা বলছি?”
“তোর সাথে আমার দুই বছরের রিলেশন?”
“হ্যা, দুই বছর ধরে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড না?”
“হুম, কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেক কিছু হইছে বলতে কি বুঝাইলি?”
“এতকিছু জানতে হবে না।তুই জাস্ট বাসায় গিয়ে হ্যা তে হ্যা আর না তে না বলবি।যদি দেখি একটু এদিকওদিক হইছে তাহলে…”

“তাহলে?”
“সারা ক্যাম্পাসে পোস্টার ছাপাবো, তুই আমাকে রেপ করছিস।”
“নাউজুবিল্লাহ।ছিঃ এসব কোন ধরণের কথা?”
“চোপ।চল এখন।”

সোফায় সিরিয়াল ধরে সবাই বসে আছে। ললিতা বেগম (জাহিদের মা) বললেন “অর্পা তুমি নির্ভয়ে সব বলো।” অর্পা চোখ মোছার অভিনয় করে বললো “ভার্সিটিতে প্রথমদিন জাহিদ আমাকে প্রপোজ করে।কিন্তু পাত্তা না দিয়ে আমি মানা করে দেই।পরে প্রতিদিন ও আমাকে ফলো করতো।এভাবে প্রায় দেড় মাস কেটে গেলো।মেঘ নেই বৃষ্টি নেই সকাল দশটার মধ্যে জাহিদ আমার বাড়ির সামনে হাজির। তবে কখনো ব্যক সাউন্ড বা ডিস্টার্ব করতো না।শুধু পেছন পেছন ঘুরতো।

ওর এই বিষয়টা আমার ভাললেগে যায়।তাই আমি নিজে থেকে একদিন ওরে ডাক দেই।ও ভয়ে দৌড় দেয়।ব্যস!এভাবে চলতে চলতে কখন দুজনের কথাবার্তা শুরু হয়ে যা কেউই জানিনা।জাহিদ তোমার মনে আছে, ঠিক কবে আমরা প্রথম কথা বলেছিলাম?সম্ভবত সেদিন কেউ রেপ হয়েছিলো।” জাহিদ চমকে উঠে মিছে হাসার চেষ্টা করলো। “ম..মনে থাকবে না কেন?প- ১৫ অক্টোবর।” সফিক সাহেব (অর্পার বাবা) বললেন “আমি তো প্রথমে অর্পার কথা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না।কিন্তু যখন ফোনে দুজনের একসাথে ঘোরাঘুরির ছবি দেখিয়েছে তখন বিশ্বাস করেছি।যাইহোক, বাচ্চা মানুষ।এই বয়সে সামান্য ভুল করে।আমাদের উচিত ওদের ভুল সুধরে নতুন পথ দেখানো।কি বলো ফাহিমা (অর্পার মা)।”

ফাহিমা বেগম হেসে হ্যা সূচক মাথা নাড়লেন। ললিতা বেগম কিছুক্ষণ ভেবে বললেন “ওদের বিয়ে দেওয়া ছাড়া ভালো কোন পথ নেই।আমি চাইনা আমার ছেলে কাউকে না পাওয়ার কষ্ট সারাজীবন ভোগ করুক।” সফিক সাহেব বললেন “হ্যা, তবে জাহিদ তো এখন কিছু করে না।” হাসান সাহেব (জাহিদের বাবা) বললেন “আমার একটাই ছেলে।যা শোয়-সম্পত্তি ও সারাজীবন বসে খেলেও ফুরাবে না।তাছাড়া কয়েকদিন ধরে ভাবছি শ্যামলীর যে ফ্যাক্টরি সেটা জাহিদের দায়িত্বে দিয়ে দিবো।ওর এখন থেকে ব্যবসা বোঝার প্রয়োজন আছে।সুতরাং, আপনাদেরকে এইদিক চিন্তা করতে হবে না।” সফিক সাহেব নিশ্বাস ছেড়ে বললেন “জ্বি আপনারা যা ভালো মনে করেন।”

ললিতা বেগম বললেন “দুই সপ্তাহ বাদে আমাদের বাড়িতে অনুষ্ঠান।প্রতিবছর আমরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করি।বলতে পারেন একপ্রকার আত্নীয়-স্বজনদের মিলন মেলা।যদি আপনাদের সমস্যা না থাকে তাহলে আমি ওই দিনে ওদের বিয়ে দিতে চাই।ভাবতে পারেন এভাবে না জেনেশুনে বিয়ে দিতে রাজি হলাম কেন?আসলে অর্পাকে আমি অনেক আগে থেকে চিনি।ও জাহিদের সাথে অনেকবার আমাদের বাসায় এসেছে।ওর আচার ব্যবহার দেখে ভেবেছিলাম জাহিদের বিষয় কথা বলবো।কিন্তু ওরা আগে থেকেই সব ঠিকঠাক করে রেখেছে তা জানা ছিলো না।”
সফিক সাহেব হেসে বললেন “হা হা হা।আমাদের কোন আপত্তি নেই।তুমি কি বলো ফাহিমা?”

ফাহিমা বেগম লজ্জা পেয়ে বললেন “আমি আর কি বলবো?তোমরা যেদিকে আমিও সেদিকে।” সবাই একসাথে হেসে উঠলো। লতিলা বেগম হাসি থামিয়ে বললেন “এবার তো তবে মিষ্টিমুখ করতে হয়।জাহিদ ফ্রিজে দেখো মিষ্টি আছে।প্রিচে সুন্দরভাবে সাজিয়ে মিষ্টি নিয়ে আসো।” অর্পা দাঁড়িয়ে বললো “আমিও ওর সাথে যাই আন্টি?” হাসান সাহেব বললেন “যাও মা।” জাহিদ হাঁটা দিলো।পেছন পেছন অর্পা হাঁটছে। অন্যরুমে আসতে অর্পা জাহিদের সামনে গিয়ে বললো “কেমন দিলাম মিস্টার?” জাহিদ চশমা ঠিক করে বললো “এরকম ডাহামিথ্যে বলতে পারলা?”

“এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ্ এন্ড অয়ার্স।”
“আমি তোমাকে ভালোবাসি?”
“আমি তো বাসি।”
“ভালো, যাও এখন।”
“কোথায়?”
“জানিনা।”
“সত্যি একটা কথা বলবা?”
“হুম।”
“চশমার নিচে একজন আছে, যে আমাকে আড় চোখে সবসময় খোঁজে তাইনা?”

জাহিদ মিটমিটিয়ে হেসে ফেললো। অর্পা জাহিদের পেটে গুতা মেরে বললো “যতটা ভালো তোমাকে দেখে মনে নয় ততটা ভালো তুমি না।” জাহিদ ধাক্কাদিয়ে অর্পাকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে বললো “অনেক কিছু বুঝে ফেলেছো দেখছি।” অর্পা জাহিদের দিকে তাকিয়ে হতবাক। ছেটার চোখেমুখে দুষ্টুমি। না এ হতে পারে না। এই ছেলেকে বোকা ভাবা সবচেয়ে বড় ভুল।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত