– আজকে হঠাৎ রান্না ঘরে!!!
– আজকে আমার বউয়ের সাথে প্রেম করব,তাই রান্না ঘরে।
– “”সুপ্ত””বয়স কত চলছে তোমার?
– মনে নাই।৬৪ ,৬৫ মনে হয়।
– এই বয়সে এত প্রেম আসে কোথায় থেকে???
– যেখান থেকেই আসুক। আসছে তো। তোমার ও তো আমার সমান বয়স। তোমার আসে না কেন???
– রান্না করতেছি।এখন যাও তো!! নাতি-নাতনির বিয়ের বয়স হয়ে গেছে আর এখন ওনার প্রেম প্রেম পাচ্ছে! অফিসে যাও।
– আজ অফিস ছুটি।
– ওমা!! আজ শুক্রবার নাকি?
– না।যারা বিবাহিত তাদের সবাইকে আজ ছুটি দিছি। বেচারা গুলো সারাদিন কত কষ্ট করে। অনেকেই নতুন বিয়ে করছে। একটু সময় কাটাক বউয়ের সাথে।
– ব্যবসার ১২ টা বাজাবে তুমি। এইগুলো কোন ধরনের যুক্তি।
– এইগুলো হলো প্রেমের যুক্তি।
– হাতে কি লুকাচ্ছ???
– কৈ কিছু না তো!!
– আমি ভালো করে বুঝতে পারছি তোমার হাতে কিছু একটা আছে।দেখাও আমায়।
– না ,দেখাব না।
– আমি তো দেখেই ছাড়ব। দেখি!দেখি! বেলী ফুলের মালা!!
– তোমার পাগলামি এখনও গেল না। কি জন্য যে বলছিলাম বেলী ফুলের মালা আমার খুব পছন্দের।এই বুড়ো বয়সে তোমার এই পাগলামি গুলো না করলে হয় না !!
– বিয়ের প্রথম রাতে কি বলেছিলাম মনে আছে?? আমার সমস্ত ভালবাসা আমি আমার বউকে দেব।
– ওসব মনে নাই আমার।
– চলো আমার সাথে।
– কোথায়??? রান্না করছি তো !!
– (সিথি !!! মা একটু রান্না ঘরে আয় তো।)তুমি চলো।সিথি রান্না দেখবে।
– কিন্তু কৈ যাব।
– আরে চলো তো।এত প্রশ্ন করো কেনো??
দেখো এই আয়নাটার দিকে।৩৫ বছর আগে কিনছিলাম। তোমাকে আর আমাকে একসাথে দেখার জন্য। তুমি বুড়ি হয়ে গেছো ! তাই না? শরীর দুর্বল।ব্যথা করে। চুল গুলো সাদা হয়ে গেছে। মুখের নরম মাংস গুলো ঢলে পড়ছে। কতদিন ঠোঁটে লিপস্টিক দাওনা ! লাল শাড়ি পড় না ! চোখে কাজল দাও না !তবুও আয়নায় দেখো – তুমি এগুলো ছাড়াও কত সুন্দর। তোমার চোখের নিচে কালো দাগ,চোখ ভিতরে ঢুকে গেছে। কিন্তু তুমি ভালবাসার দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালে আমিএখনো স্পষ্ট বুঝতে পারি। আজ আবার তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে মন চাচ্ছে। তোমার মুখের লজ্জা মাখা হাসি দেখতে ইচ্ছে করছে।
সময় বহমান কিন্তু ভালবাসা স্হির।আজ বয়স হয়েছে ঠিকই কিন্তু মনটা আজ ও সেই ২৫ বছরের স্মৃতি তে ডুবে আছে। আমার আজ ও মনে আছে আমার দেওয়া ১ ডজন চুড়ি থেকে ১ টা চুরি ভেঙে যাওয়ায় তুমি কিভাবে কেঁদেছিলে।আমি একটা ফড়িং ধরার জন্য ৩ ঘন্টা চেষ্টা করেছিলাম। তুমি বসে বসে আমার ব্যর্থ চেষ্টা দেখছিলা আর হাসছিলা। আজকে সত্যি টা বলি!! ঐদিন আমি ফড়িং ধরতে পারছিলাম না জন্য তুমি হাসছিলা। তাই আমি ইচ্ছা করেই ফড়িং ধরছিলাম না।যদি ধরে ফেলতাম তাহলে তুমি আর হাসতে না। আমি তখন দোয়া করতে থাকি “আজকে যেন সূর্য অস্ত না যায়।সময় যেন এখানেই থেমে যায়”।
তোমার মুখের সেই হাসিটা আজ ও অনেক দেখতে ইচ্ছে করে।আজ ও ইচ্ছে করে তোমার মাথার চুল গুলো বেণী করে দিই। অফিস থেকে ফেরার পথে সাদা, হলুদ,লাল গোলাপ আর আইসক্রিম নিয়ে আসি। তুমি রোজ অফিস সময়ে ফোন করে আমায় ডিস্টাব করো। আমার এটা লাগবে,ওটা লাগবে,এটা ভালো না,ওটা ভাল, এখানে যাব, সেখানে যাব এসব আবদার করো। আমি ঘুমিয়ে পড়লে আমার বুকের উপর শুয়ে থাকো। আমাকে সাত আসমানের ভালোবাসা এনে দাও। এত ভালোবাসা এনে দাও। আমি যেন তোমাতেই বিভোর থাকি। আমি আজও চোখ বন্ধ করলে তোমাকেই দেখতে পাই। তুমি আজও আমার অন্তরে ওভাবেই আছো যেমনটা বিয়ের সময় ছিলা। আমি তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি। কিন্তু আমি নিজের জন্য কোন স্বপ্ন তৈরি ও করিনি। তোমার স্বপ্ন ই আমার স্বপ্ন। তোমার সুখ আমার সুখ। তোমার দুখ আমার দুখ। ভালোবাসা প্রকাশে বয়স কখনোই মুখ্য বিষয় নয়।
– চোখের পানি শুকিয়ে না গেলে আজ তোমায় ভিজিয়ে ফেলতাম।
– জড়িয়ে ধরি???
– না।ধরবা না। তুমি বুড়ো হয়ে গেছো।আর আমার মত সুন্দরী মেয়ে তোমার মত বুড়ো কে জড়িয়ে ধরবে না।
– আয়নার পিছনে ওটা কি !! উমম!! তেলাপোকার মত লাগছে !!
– কিইইইইইইইইই!!!! আউউউউউউউউ!!!
– কি হলো!! এই বুড়োটাকেই জড়িয়ে ধরতে হলো। ছাড়ো! কোন তেলাপোকা নাই ;
– শয়তান। বুড়ো বয়সে ও মাথার শয়তানি গেল না।
– হিহিহিহিহিহি হুহুহুহুহুহু রাত ১:৩৫ । ঘুম ভেঙ্গে গেল। খুব ভারি লাগছে নিজেকে। চোখ খুলে দেখি “পরী” বুকের উপর শুয়ে আছে। খুশিতে মনটা ভরে গেল। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি এমন সময় পরী বলল
– আমিন।
– জেগে আছো?
– হুম।ওঠো।
– কেন??
– আজ তুমি আর আমি হাতে হাত রেখে পুরো শহর পায়ে হেঁটে ঘুরব।
– পা ব্যথা করবে না??
– ৪ টা ব্যথার বড়ি খেয়ে ঘুমাইছি। তোমার সাথে হাঁটব বলে।
– আমার পাগলিটা।
– আমার পাগলটা।