বিয়ে বাড়ির প্রেম

বিয়ে বাড়ির প্রেম

জেমিকে প্রথম চুমু খেয়েছিলাম তার বান্ধবীর বিয়েতে। তার বান্ধবী ছিল আমার বন্ধুর বোন। বন্ধু আমাকে বারবার রিকুয়েস্ট করেছিল, আমি যেন বিয়ের এক সপ্তাহ তাদের ওখানে যাই এবং বিয়ের সকল কাজে যেন একটু হেল্প করি। কেননা তার পরিবারে তার বোনের অভিভাবক বলতে সে এবং তার মা ছাড়া অন্য কেউ নেই।

রনির কথামতো আমি এক সপ্তাহ আগেই তার বাড়িতে যাই। অন্যদিকে রুহী অর্থ্যাৎ রনির বোনের বান্ধবীরাও আসে। বিয়ে বাড়িতে তখনো অতটা শোরগোল শুরু হয়নি। উঠতে বসতে প্রায় রুহীর বান্ধবীদের সাথে দেখা হতো। তবে কথা বলা হয়ে উঠতো না। মাঝে মাঝে জেমির চোখে আমার একটু আধটু চোখ পড়তো। চোখ পড়লে সে মুচকি একটা হাসি দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতো।

দুই দিন যেতে না যেতেই জেমির সাথে একটা ভাব জমে উঠলো আমার। দেখলাম, মেয়েটার আমার প্রতি আগ্রহ অনেক। আমিও তার আগ্রহ সফল করতে তার সমীপে যেতে থাকলাম। প্রথম প্রথম “শুধু কেমন আছেন, কী করেন” এইটুকু কথাতেই আমাদের কথপোকথন সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ক্রমান্বয়ে তা গভীর আলাপে উপনীতত হলো। এখন দেখা হলে আমাদের মাঝে একটু প্রণয়ালাপও হয়।

বিয়ের যখন আর দু’দিন বাকি। তখন ধীর ধীরে বিয়ে বাড়িতে রনির আর সকল আত্মীয় স্বজনেরাও আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি বাড়িটা এখন বিয়ে বাড়ি বিয়ে বাড়ি মনে হচ্ছে। এদিকে সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। কেউ খোশগল্পে রাত্রি কাটায়, কেউবা লুডু খেলায়, আবার কেউবা গানের আড্ডায়। এর মাঝে আমি রনির যতটুকু হেল্প দরকার, ততটুকু করে একটু নিরালায় গিয়ে জেমির সাথে কথা বলি। জেমিও তার বান্ধবীদের আড়ালে এসে আমাকে সময় দেয়।

বুধবার রাতে সবাই বিভিন্ন কাজে কিংবা আড্ডায় সময় পার করছে। এদিকে জেমি আমাকে সিড়ির ঘরের দেয়ালের পাশে ডাকলো। আমি গেলাম। অতঃপর কিছু কথপোকথন হলো। আমি লক্ষ করলাম মেয়েটা ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আর সেদিনই সেই ক্ষণেই জেমিকে আমি প্রথম চুমু খেলাম। মেয়েটার ঘন ঘন নিঃশ্বাস যেন মাতাল করে তুলছিল আমায়। নিজেকে সংযত রাখা বড় দায় হয়ে গিয়েছিল। এ যেন অ্যালকোহলের থেকেও অনেক বড় নেশা।

সেদিন রাতেই আবারও দ্বিতীয়বার তার সাথে আমার সাক্ষাত হলো। আর সেই সাক্ষাতে সে যৌবনের তাড়নায় নিজেকে আমার কাছে সঁপে দিলো। আমি এর আগে কখনো কোনো নারী-শরীর স্পর্শ পর্যন্ত করিনি। কিন্তু জেমি আমাকে তার শরীরের প্রতি যে নেশা তৈরি করে দিয়েছিল। তাতে জেমির এই সঘন প্রেমের আহ্বান আমি প্রত্যাখ্যান করতে পারলাম না।

নারী দেহে যে এতো সুখ, তা আমি সেদিনই অনুভব করেছিলাম। দিনের বেলা জেমির সাথে তেমন একটা কথা হতো না। তবে হঠাৎ করে সামনাসামনি পড়ে গেলে সে মুচকি হাসতো। আমার কেন যেন তার সেই হাসিটা বড্ড ভাল লাগতো। জীবনে কখনো প্রেম করা হয়ে ওঠেনি। সেজন্য মেয়েদের দিকে কখনো ভালভাবে তাকানোও হয়নি। আর সে কারণেই তাদের এই মুচকি মিষ্টি হাসিগুলো আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি।

বৃহস্পতিবার রাতে একটু কাজ পড়ে গিয়েছিল। রনি জানালো বর যাত্রী আসবে প্রায় ত্রিশজন। সাথে এমনি এলাকার মানুষকেও দাওয়াত করা হয়েছে। সেজন্য গরু কাটার কাজে বেশ লম্বা সময় পার হলো আমার। রাত তখন তিনটা ছুঁইছুঁই। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। এদিকে মাংসের কাজেকর্ম তখনো কিছু বাকি। রনি আমাকে বললো, তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। আমার বোধ হয় আজ আর ঘুমানো হবে না। দেখি সকাল বেলা সময় করে একটু ঘুমিয়ে নেবো।

আমি রনির কথামতো ঘুমাতে চলে আসি। যেই রুমে ঘুমাতাম। সেখানে আমি আর রনি বাদে অন্যকেউ ঘুমাতো না। আমি রুমে ঢুকে আলো জ্বালাতেই চমকে উঠলাম। দেখলাম জেমি রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বলতে যাবো। ঠিক তার আগেই সে বলে উঠলো, এতো সময় লাগে গরু কাটতে? একটু সময় কি আমাকে দেওয়া যায় না? আমি মেয়েটাকে বললাম, দেখো কালকে বিয়ে। তাছাড়া এখন যদি একটু কাজ না করি, তাহলে কখন করবো? সে বললো, আমি সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।

আমি অবাক হয়ে বললাম, কেন? আর তুমি এই রুমে কেন? যদি আমার জায়গায় রনি ঢুকতো? সে মুখ ভেংচিয়ে বললো, রনি ভাইয়া আজ রুমে আসবে না। কারণ সে এখন কাজকর্মে ব্যস্ত। আর আজকের রাতটায় তো তোমার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতার শেষ রাত। এরপরে আর এমন সুযোগ কখনো পাবো বলে মনে হয় না। আমি তাকে বললাম, আজই শেষ রাত মানে এরপরে আর তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক থাকবে না? সে বললো, সেটা না। সম্পর্ক থাকবে। তোমার সাথে আমার এই প্রেমও থাকবে। তুমি সময় করে আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাবও পাঠাবে। সেই রাতে জেমির সাথে শেষবারের মতো প্রেমে লিপ্ত হই। মেয়েটার শুভ্র কায়া কোমলতায় ভরা। আমি তার মধ্যে ক্রমাগতভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলাম। এ সুখ যেন সেই মুহূর্তে অমৃতেও হার মানাবে।

ভেবেছিলাম মেয়েটা বোধ হয় নিজের শারীরিক চাহিদা পূরণ করতে আমাকে ব্যবহার করছে। কিন্তু না, মেয়েটা আমাকে সত্যই ভালেবেসেছিল। আমি তাকে মাঝে মাঝেই বলতাম, দেখো জেমি বিয়ের আগে আমাদের এসব করা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। সে বলতো, প্রেম ভালবাসায় এসব না থাকলে সে প্রেম টিকেও না। আজ যদি তুমি এমনিতে আমার সাথে প্রেম করতে। আর আমাকে যদি একান্তে পেতে চাইতে। আর তখন যদি আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিতাম। তবে আমি নিশ্চিত তুমি তখন অন্যকারো কাছে প্রেম খুঁজতে। মেয়েটা আরো বলতো, এইযে তুমি আমার সাথে এতটা সময় কাটাও। তাতে আমি নিশ্চয়ই তোমার মনের মধ্যে একটা অবস্থান তৈরি করে নিয়েছি। আর এই অবস্থানটাই তোমাকে আর আমাকে বিয়েতে মিলিত করবে। নচেৎ তুমি হারিয়ে যাবে কালের স্রোতে।

আজ আমার আর জেমির বিয়ে। দু’জনের পরিবারের সম্মতিতেই বিয়েটা হচ্ছে। আমাকে তার পরিবারের ফিরিয়ে দেবারও কোনো কারণ ছিল না। কেননা আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানির একটি সম্মানীয় পদে জব করি। জেমির সাথে আমার রিলেশনের আজ দুই বছর একমাস পাঁচদিন। জেমির সাথে মেশার পর অন্যকারো দিকে আমি চেয়েও দেখতাম না। কখনো কোনো প্রয়োজন পড়লে জেমিকেই বলতাম। আর জেমিই আমার সেই প্রয়োজনটা মিটিয়ে দিতো।

প্রেমটা যদিও অন্যান্যদের থেকে একটু আলাদাভাবেই শুরু হয়েছিল। তবে ঐযে মায়া জিনিসটা! তার জন্য এই দুই বছরের মেয়েটার থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারিনি। বাসরঘরে ঢুকতেই সে এসে আমাকে সালাম করলো। তারপর নরম সুরেই বললো, এতো সময় লাগলো কেন? আমি বললাম, বন্ধু-বান্ধবদের বিদায় দিতে একটু দেরি হয়ে গেল। সে বললো, সমস্যা নেই। কিন্তু আমার একটা দাবি আছে। আমি বললাম কী দাবি? সে বললো, আজ এখন এই মুহূর্তে আমায় প্রপোজ করতে হবে? আমি একটু হেসে বললাম, এই তোমার দাবি?

– হ্যাঁ।
– তবে ফুল তো নেই।
– টেবিলের উপরে আছে দেখো।

আমি টেবিলের উপর থেকে ফুল নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো তাকে প্রপোজ করলাম। এর আগে তাকে প্রথম প্রপোজ করেছিলাম একটা রেস্টুরেন্টে। তখন ফুল দিয়ে নয়। বরং একটা অঙ্গুরি দিয়ে। আর আজ এই বাসর রাতে, টাটকা লাল গোলাপ দিয়ে। মেয়েটা দু’হাতে ফুলটা নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও পরম মমতায় তাকে আমার বাহুডরে আবদ্ধ করলাম।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত