আপনাকে অনেক ভালোবাসি ৫ম শ্রেণির এক ছেলের মুখ থেকে কথাটা শোনার পর আমিও হেসে তার চলটা টেনে বলেছিলাম আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি সোনা।
এই বলাটাই যেনো আমার জীবনে কাল হয়ে দাড়িয়েছিলো।ছেলেটা অনেক ছোট, আর অনেক কিউট ওকে খুব আদর করতাম আমি।ছোট ভায়ের মত ভালোবাসতাম। আমরা যে বাসায় থাকি বাসাটা ৪ তলা। আমরা থাকি ২য় তলায়।একদিন ৪তলার এক আন্টি এসে বললেন তার ছেলেকে পড়াতে।আমিও রাজি হয়ে গেলাম।এমনিতে আমি অনেকগুলো টিউশনি করাই। প্রথম দিন পড়াতে গিয়ে দেখি একদম পিচ্চি একটা ছেলে।দেখলে মনে হয় ক্লাস 2/3 তে পড়ে।তিনি আগে থেকে রেডি হয়ে বসে আছেন বই নিয়ে।
আমি-তোমার নাম কি বাবু?
সে-আমার নাম বাবু না, আমার নাম রাফি।
আমি-বাহ্ খুব সন্দর নাম।
রাফি-তোমার নাম কি?
আমি-আমার নাম সেজুতি।আচ্ছা রাফি তোমার কোন বইটা পড়তে সব থেকে বেশি ভালোলাগে? আমি কথাটা বলা মাত্র রাফি দৌড়ে গিয়ে একটা বই বের করে আনলো।(এই যে এটা পড়তে ভালো লাগে আমার সবথেক)। আমি দেখে সেন্সলেস হবার অবস্থা,রাফি একটা প্রেমের গল্পের বই নিয়ে এসেছে।বইয়ের নাম’ভালোবাসা প্রেম নয়’।একটুকু ছেলে প্রেমের কি বোঝে এটা ভেবে আমার মাথা ঘুরছে।তুমি এটা পড়ো রাফি?
বুঝো কিছু?
রাফি-হ্যাঁ সেজুতি বুঝিতো, এটা পড়তে আমার খুব ভালো লাগে।
আমি-না না রাফি, আমি তোমার অনেক বড় নাম ধরে নয়।আপু বলে ডাকবে আমাকে।
রাফি-(মুখ গোমড়া করে বললো আচ্ছা ঠিক আছে। এরপর থেকে আমি খেয়াল করতাম আমি যখনি পড়াতে যেতাম ও হা করে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতো। ওকে দেখতাম বিকাল টাইমে ওর বয়সি সবাই নিচে খেলা করতো আর ও না খেলে বইয়ে মুখ গুজে বসে থাকতো।বিভিন্ন ধরনের উপন্যাস, প্রেমের কবিতা গল্প এসব।
একদিন ওর মাকে ডেকে বলেছিলাম আন্টি রাফিকে ঐ সব প্রেমের গল্পের বই গুলো পড়তে দিবেন না।ওর মা হেসে বলেছিলো ওগুলো পড়তে না দিলে ও খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দিবে। ও মাঝে মাঝে আমাদের ফ্ল্যাটে আসতো।এসে আমার সাথে গল্প করে আবার চলে যেতো। রাফি সবসময় বড়দের মত হওয়ার চেষ্টা করতো।একদিন বাসায় এসে শুনলাম রাফি এসেছিলো আমাদের বাসায়।আমাকে না পেয়ে চলে গেছে।তারপর আমি আমার রুমে গিয়ে দেখি টেবিলের উপরে একটা হলুদ খাম।
খামটা খুলে একেবারে অবাক হয়ে গেলাম, তাতে কি লেখা ছিলো জানেন লেখা ছিলো আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমি কিছুতে বুঝে উঠতে পারলাম না চিঠিটা কে রেখে গেছে এখানে।বাসার সবাইকে জিঙ্গাসা করলাম সবাই বললো রাফি ছাড়া আমার রুমে কেউ ঢোকেনি। আরে ধ্যাত ওর মত একটা ছোট পিচ্চি ছেলে ভালোবাসার কি বোঝে।ও কেনো রাখবে এটা। আজ পড়াতে গেছি, দেখলাম রাফি আবারো মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
আমি-রাফি পড়াই মনযোগ দাও। রাফি-তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে সেজুতি?
(আমি ওর কথা শুনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম, এতটুকু ছেলে কি বলে এসব)।
আমি-কি বাজে বকছো এসব,এবার কিন্ত মাইর দিবো।আর তোমাকে না বলেছি আমার নাম না ধরতে।আপু বলে ডাকতে বলেছি না তোমাকে। আর কখনো এসব বললে তোমার আম্মুকে বলে দিবো। (রাফি মুখ গোমড়া করে বসে আছে,সিনেমা দেখে আর প্রেমের বই পড়ে পড়ে ছেলেটার মাথা খারাপ হয়ে গেছে একদম)। আমি পড়ানো শেষ করে। বাসায় চলে এলাম কিছুক্ষন পর রাফি আসলো।এসে আমার মায়ের হাতে কিছু একটা দিয়ে আবার চলে গেলো।
মা এসে সেটা আমাকে দিলো।আমি খুলে দেখলাম তাতে ছোট্ট করে ‘সরি’ লেখা। পরেরদিন পড়াতে গিয়েছিলাম,সেদিন রাফি একটা কথাও বলেনি।চুপ করে মাথা নিচু করে পড়েছিলো। আজ ভালোবাসা দিবস।আজ আর পড়াতে যাইনি।কারন আজ ভাইয়া আর ভাবির বিবাহবার্ষিকী। রাফিকে ইনভাইট করা হয়েছে। ও ওর মায়ের সাথে এসেছে একগাদা ফুল এনেছে ওর মা।আর ওর হাতে একটা গোলাপ।ও গোলাপটা সবার আড়ালে এসে আমাকে দিয়ে বললো ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা। (আমি এই ছেলেটাকে দেখি আর অবাক হই। এচোড়ে পাকা একদম।)
তারপর দুদিন পড়াতে যাইনি।কারন পরেরদিন আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো।যখন ওরা আমাকে দেখছিলো ঠিক তখনি রাফি একটা বই নিয়ে আমার বাসায় আসলো এসে আমকে খুজছিলো তখন আম্মু ওকে বললো আমাকে দেখতে এসেছে, আজ পড়াতে পারবো না।আমি দুর থেকে দেখলাম ও মাথাটা নিচু করে মন খারাপ করে চলে গেলো সেখান থেকে চলে গেলো। আমি যাকে ভালোবাসি তারি বাবা মা দেখতে এসেছিলো আমাকে। তারা একপ্রকার পাকা কথা দিয়ে গেছে।আমি তো মহা খুশি। পরের দিন রাফিকে পড়াতে গেলাম।পড়াতে পড়াতে একটা সময় ও বললো আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি,আমিও ছোট ভায়ের মত ওর চলটা টেনে দিয়ে বলেছিলাম আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি সোনা। রাফি-সত্যি বলছো?
আমি-হ্যাঁ(আমি সবসময় ওকে আমার ছোট ভায়ের মত দেখি,সেটা ভেবেই কথাটা বলেছিলাম।তার জন্য যে আমাকে এতটা মুল্য চোকাতে হবে বুঝতে পারিনি)। পরের দিন রাফি সারা এলাকায় যাকে পেয়েছে তাকে বলে বেড়িয়েছে আমি নাকি ওর গার্লফ্রেন্ড।এমনকি রাফি ওর ক্লাসের কাউকে বাদ রাখেনি কথাটা বলতে। কলেজ থেকে ফেরার সময় অনেকে বলেছে আমাকে এ কথাটা।শুনে আমার মাথা গরম হয়ে গেছিলো।রাফির ক্লাসের একটা ছেলেকে আমি পড়াতাম তার মাও আমাকে একি কথা বলেছে।
জানিনা এই কথাটা কিভাবে আমার বফ সুজয়ের কানে গেলো, ও কল দিয়ে বলছে আমি আমাদের এলাকার রাফি নামের কোন একটা ছেলের সাথে প্রেম করতেছি।কথা কাটাকাটি করে গেলো বিয়েটা ভেঙে।শত্রুর তো অভাব নেই কেই এই কথাটাতে মসলা মিসিয়ে ওদের কানে দিয়েছে।আর ও কিছু না জেনেশুনে বিয়েটা ভেঙে দিলো। অনেক ভেবে দেখলাম রাফিকে আর পড়াবো না।দিন দিন ওর এসব আমি আর নিতে পারছি না।ওদের বাসায় গিয়ে ওর মাকে সবকিছু বলার পরে বললাম আন্টি আমি আর রাফিকে পড়াতে পারবো না সরি।
রাফির মা রাফিকে ডেকে আনলো আমার কাছে এনে বললো তোমার জন্য তোমার আপুর বিয়ে ভেঙে গেছে জানো তুৃমি? রাফি সাথে সাথে বললো’তুমি চিন্তা করোনা সেজুতি আমি তোমাকে বিয়ে করবো।(কথাটা শুনে রাফির বাবা, আমি আর ওর মা হা করে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে)। রাফির মা সাথে সাথে ও গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।রাফি কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো। কিছুদিন পর দেখলাম রাফিদের টিভিটা বেঁচে দিলো ওর বাবা,সাথে রাফির সব গল্পের বই।
আর এসব ঘটনার এক মাস পরেই ওরা আমাদের বাড়িটা ছেড়ে দিয়েছিলো।চলে যাবার আগে রাফির বাবা মা আমার কাছে এসে ক্ষমা চেয়েছিলো।কারন রাফির জন্য আমার বিয়েটা ভেঙে গেছিলো। পরে অবশ্য আমার বফ সবটা জানার পর রিলেশন ঠিক করতে চেয়েছিলো কিন্ত আমি করিনি কারন যে সম্পর্কে এতটুকু বিশ্বাস নেই সেটা অন্তত ভালোবাসা হতে পারে না। ওরা চলে যাবার পর আমাদের দরজার সামনে হলুদ খাম ওয়ালা একটা চিঠি পেলাম। তাতে লেখা ছিলো’ ‘সেজুতি আমি তোমাকে অনেক ভালেবাসি, আমি বড় হয়ে ঠিক ফিরে এসে তোমাকে বিয়ে করবো দেখো,একটু অপেক্ষা করো আমার জন্য।আমি ঠিক ফিরে আসবো।
ইতি
রাফি।
এত ছোট ছেলে ভালোবাসার কি বোঝে? ও কি সত্যি ভালোবাসতো আমাকে?আরে আমিও না কি সব ভাবি।ও খুবি ছোট খুবি অবুঝ। হলুদ খাম দুটো যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম সৃতি হিসাবে। সেদিনেরর পর থেকে আর কখনো কোনো টিউশনি করাইনি আমি।আর হয়তো কখনো করবো -ও না।