তিন মাস একুশ দিন পর আমার পাঁচ ছেলেমেয়ে পারিবারিক বৈঠক বসেছে। বৈঠক টা আমাকে নিয়েই। বড় ছেলে জাবেদের বাসায় এই আয়োজন। যদিও এতকাল সব আয়োজন আমার সেই বাসায় হয়েছে। আজ হচ্ছে জাবেদের বাসায়। ছেলেমেয়েরা সব বিয়ে-শাদী করে এখন আলাদা বাসা নিয়েই থাকে। সময়ের প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে, নিজেদের সুবিধামত তারা আলাদা হয়েছে আস্তে আস্তে। আমি বাধা দিইনি। ছোট ছেলেটা এতকাল আমার সাথেই ছিল। গত বছর আলাদা বাসা নিয়েছে। এই বাসা থেকে নাকি মেয়ের স্কুলে যেতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিলো। আমিই বললাম আলাদা বাসা নিলে যদি সুবিধা হয় তবে স্কুলের কাছাকাছি একটা নিয়ে নাও।
তিন ছেলে আর দুই মেয়ের সবাই এসে গেছে। ছোট মেয়েটা চট্টগ্রাম থেকে এসেছে গত রাতে। আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কেঁদেছে। এই মেয়েটা হয়েছে ঠিক তার মায়ের মত। কেমন করে জানি আমার ভেতরের কথাটা বুঝে ফেলে। বাবা কে নিয়ে তারও বেশ চিন্তা। তার চিন্তা সবার মত কিনা জানিনা তবে আমাকে নিয়ে তার ভেতর বিশাল একটা ভয় কাজ করছে তা দেখেই বুঝতে পারছি।
আমার স্ত্রী গুলমেহের খাতুন মানে জাবেদের আম্মা মারা গিয়েছে আজ তিন মান একুশ দিন হলো। বিয়ের পর গুলমেহের কে আমি আদর করে মেহের বলেই ডাকতাম। এই ডাক টা শুনে গুলমেহের খুব লজ্জা পেলেও মনে মনে যে খুব খুশি হতো তা আমি বুঝতাম। বড় ছেলে জাবেদ জম্মের আগ পযর্ন্ত তাকে আমি এই মেহের বলেই ডেকেছি। জাবেদ জন্মের পর কেমন করে জানি মেহের নাম টা আস্তে আস্তে জাবেদের আম্মা হয়ে গেল। গত সাইত্রিশ বছর এই জাবেদের আম্মা নাম টা নিয়ে গুলমেহের কাটিয়েছে।
তবে গত ডিসেম্বরে যখন স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গুলমেহের কে, তখন আমি তার পাশেই ছিলাম। এক মিনিট, এক মিনিটও আমি তার কাছ থেকে দুরে থাকিনি। এই সময় টায় আমি গুলমেহের কে সেই মেহের নামে ডেকেছি। আমার মুখে এই নাম টা শুনে গুলমেহের আনন্দে অনবরত চোখের জল ফেলেছে। গুলমেহের আমাকে বুঝতে না দিলেও আমি ঠিক ঠিক বুঝেছি যে আমার মুখে মেহের নাম টা শুনে সে কাঁদছে। আমি জানি ঠিক এতটা বছর পর, এতটা সময় পর, এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার পর নাম টা শুনে তার ভেতর অনেককিছু আবার ষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
গুলমেহেরের সাথে আমার বিয়ের সময়টা মনে পড়লে বেশ হাসি আসে। প্রথম থেকেই গুলমেহের আমাকে আপনি করে ডাকতো। আমার খুব রাগ হতো তার এই আপনি ডাক শুনে। সময় পেরিয়ে গেলেও আমি গুলমেহেরের মুখে সেই আপনি ডাক আর ছাড়াতে পারিনি। তার নাকি লজ্জা লাগে। একটা সময় এসে আমিও মেনে নিলাম। সময়ের সাথে সাথে আমি কেমন করে জানি এই গুলমেহেরের উপর ভীষণ নির্ভরশীল হয়ে পড়লাম। আমি তো সরকারি চাকরি নিয়েই ব্যস্ত। পাঁচ পাঁচটা ছেলেমেয়ে মানুষ করা থেকে শুরু করে আমার কখন কী লাগবে সব সমাধান যেন এই গুলমেহের। সংসারের কোন ঝামেলা আমার কাছে অবধি আসতে দিতে চাইতো না। আমি একটুতেই টেনশন করা মানুষ। এই কথা গুলমেহের খুব ভালো করে জানে। জানে বলেই হয়তো আমার কাছ থেকে লুকিয়ে অনেককিছু সমাধা করতো। গুলমেহের সব সময় বলতো, আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমার মৃত্যু যেন আপনার পরে হয়। আমি বলতাম, কেন এই দোয়া কর?
গুলমেহের হাসতে হাসতে বলতো, আপনার কি সেই চিন্তা আছে? নিজের খাওয়া-দাওয়া, ওষুধপত্র হিসেব কি কখনো রেখেছেন? এই সব চিন্তা যে আমারই সব সময় করতে হয়েছে। সংসারে আরও কত কত ঝুট ঝামেলা থাকে। এই ঝামেলা কখনও আপনি নিয়েছেন? আপনিই বলেন আমি না থাকলে এসব কেমন করে হবে? পারবেন সামলে নিতে?
শেষের কথাগুলো বলতে গিয়ে গুলমেহের কেমন আবেগ প্রবণ হয়ে গেল। তার গলা বেশ ভারি হয়ে এলো। আমি বুঝলাম গুলমেহের কাঁদছে। গুলমেহের আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আমিও বাসি কিন্তু গুলেমেহেরের মত করে কখনো ভালোবাসতে পারিনি। এই যে, সবাই চায় দায়িত্ব এড়িয়ে আগে মরে বেঁচে যেতে। অথচ গুলমেহের আমাকে নিয়ে সব সময় চিন্তিত। আমাকে একা রেখে গেলে এই বয়সে আমার কেমন করে চলবে এই নিয়ে তার বেশ চিন্তা।
সেই গুলমেহের ঠিক ঠিক আমার আগেই চলে গেল। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে মাত্র বছর খানেক পেরিয়েছে আমার। সংসারের এটা সেটা বুঝে উঠার এখনো সুযোগ হয়ে উঠেনি। অথচ গুলমেহের আমাকে ছেড়ে চলে গেল। গুলমেহের যাওয়ার পর আমার চারপাশ যেন অন্ধকার হয়ে গেল। চির চেনা চারপাশ আমার কেমনজানি অচেনা লাগছে। এত অচেনা আমার আগে কখনো লাগেনি। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি বিশাল সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছি। যে চির চেনা সমুদ্র আমার কাছে ছিল আস্থা আর ভালোবাসার, সেই সমুদ্রে আমি তলিয়ে যাচ্ছি দেখে আমার ভয় বাড়তে থাকে। পরিবারের আপন মানুষগুলো কেমন করে জানি আমার এক অচেনা সমুদ্র মনে হতে থাকে। এত এত মানুষগুলোর ভিড়ে আমি গুলমেহের কে খুঁজি। এই আপন মানুষগুলো যে আমাকে চিনতে পারে না। সবাইকে আমারো কেমন অচেনা লাগে।
চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরও গুলমেহের আমাকে আগলে রেখেছে। আমার সব চাওয়া-পাওয়া ঐ গুলমেহের জানত। আমি বুঝে উঠার আগেই এই গুলমেহের কেমন করে জানি বুঝে যেত আমার কী চাই। ছেলেমেয়েদের চাওয়া পাওয়া, রাগ অভিমান, ক্ষোভ সব যেন গুলমেহের। আমি একটু আধটু বুঝতে পারতাম গুলমেহের অনেককিছু লকিয়ে রাখে। হয়তো আমার কষ্ট হবে জেনে লুকায়। গুলমেহের কখনো চায়তো না সংসারের কোন ঝুট ঝামেলায় আমি কষ্ট পাই। অনেক বিষয় আমাকে না জানিয়ে সমাধা করতো। এই যে ছেলেরা আলাদা বাসা নিল, এটা নিয়ে গুলমেহের একা ছেলেদের সাথে যুদ্ধ করেছে। আমি কষ্ট পাবো ভেবে সন্তানদের বুঝিয়েছে। সন্তানেরা মানেনি। শেষে যখন বাধ্য হলো তখন ছেলেদের পক্ষ নিয়ে আমাকে বুঝিয়েছে। তার ভয় ছিল এই নিয়ে আমি যেন কষ্ট না পাই। আমি বুঝেছি। আমি জানতাম এই গুলমেহের থাকলে আমার তো আর কিছু আকঁড়ে থাকার দরকার নেই। আমার সব চাওয়া পাওয়া যে ঐ গুলমেহের বুঝতে পারে।
ঠিক তিন মাস একুশ দিন আগে আমাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে গুলমেহের চলে গেল। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। আমার চারপাশ একা হয়ে গেল। ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনি সবাই আছে কিন্তু আমার কেনজানি মনে হচ্ছে আমার বুঝি কেউ নেই। সময় পেরুতে পেরুতে আমি ঠিক বুঝতে পারি আসলেই আমার কেউ নেই। জীবনের এতগুলো সময় যাদের জন্য, যাদের ভালো থাকার জন্য, ভবিষ্যতের জন্য ব্যয় করেছি তারা সবাই যেন আমার অপরিচিত। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।
গুলমেহের মারা যাওয়ার পর সবার অনুরোধে বড় ছেলের বাসায় গিয়ে উঠেছি। সবকিছু গুলমেহেরের গুছানো পাওয়া এই আমি ছেলের বাসায় গিয়ে কেমন একটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। তারা দুজন চাকরিজীবি মানুষ। সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে কাটে। তাদের কষ্টও আমি বুঝি। ফজরের নামাজ পড়ে আমি আর গুলমেহের হাঁটতে যেতাম। হেঁটে এসে দুজন মিলে হালকা কিছু খাওয়া দাওয়া। তারপর অন্যকিছু। এই রুটিনগুলো গুলমেহের কে নিয়ে আমার অনেক বছরের। কী খেতে চাই, না চাই সব যেন গুলমেহের। এই বাসায় এসে কেমন অসহায় লাগছে। তারপরও আমি নিয়তি বলে মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমি বুঝতে পারি এত ব্যস্ততার মধ্যে ছেলেরা আমাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। চিন্তিত বলতে তারা একা কেউ আমার দায় নিতে রাজি নয়। আমি বুঝতে পারি, আমি হয়তো তাদের কাছে পাহাড়। এত বড় পাহাড় কেউ একা টেনে নিতে রাজি নয়। আমাকে সব ছেলেমেয়েরা ভাগ করে দায় নিতে চায়।
সবাই বৈঠক বসেছে। আমি বসে আছি চুপচাপ। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে আমার পাশে বসে গুলমেহের কাঁদছে। আমি ষ্পষ্ট গুলমেহের কে দেখতে পাচ্ছি। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার কষ্ট লাগছে গুলমেহেরের কান্না দেখে। আমি জানি গুলমেহের বেঁচে থাকলে এমন একটা সময় বা বৈঠক কখনো হতে দিত না।
বৈঠকে আলোচনা হচ্ছে আমাকে কে কতদিন রাখতে পারবে। মেজো ছেলে বেশ আমতা আমতা করছে। আমার খাবার-দাবারে একটু নাক উচু নিয়ে তার একটু অনুযোগ। ছেলের এমন কথা শুনে আমি হাসলাম।
ছোটো ছেলেটা আমার সাথে অনেকদিন ছিল। সে তো খুব অভিমান নিয়ে অন্য ভাইদের বললো, আমি তো অনেকদিন বাবা মায়ের সাথে থেকেছি। তোমরা এবার কিছুদিন বাবাকে সময় দাও।
বড়ো ছেলে এবার একটু অভিমান করেই বলল, বাবার তো ঘন ঘন চা খাওয়ার অভ্যাস। আমরা বাসায় কেউ থাকি না। আব্বা কে তো এখন অনেককিছু বুঝতে হবে, মানতে হবে। তাছাড়া এখন তার উল্টা পাল্টা কিছু করাও যাবে না। আমাদের কাজ কর্ম বাদ দিয়ে উনাকে হাসপাতালে কে দৌড়াদৌড়ি করবে? আমাদের কী সেই সময় আছে?
আমার অনেককিছু বলতে ইচ্ছে করছে। বলতে ইচ্ছে করছে, খোকা তুমি কী কখনো আমাকে এক কাপ চা করে খাইয়েছিলে? তুমি কি আমাকে দু একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলে?
তবে আমি কিছুই বলতে পারি না। ইচ্ছে করে না। এদের কিছু না বলাটা শ্রেয়। আমি শুধু আমার বড় ছেলের কোলে বসে থাকা আমার তিন বছরের দাদু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসি। নিশ্চয় একদিন আমার দাদুভাই আমার খোকার মত বড় হবে।
আমাকে নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। এটা সেটা, ভালো মন্দ কত কিছু। অমুক লোক স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছেলেমেয়েদের না জানিয়ে আবার বিয়ে করেছে, অমুক লোক ছেলেমেয়েদের সম্পত্তির কিছুই দেয়নি। নানা কথা। আমি শুধু শুনছি। ছেলেমেয়েরা অনেককিছু বুঝে। বুঝতে পারে। শিক্ষিত ছেলেমেয়ে। না বুঝে উপায় কী।
বড়ো ছেলে খুব হাসি হাসি মুখ করে বলে, বাবা, তোমার এমন কোন কিছু করার ইচ্ছে হলে আমাদের অত্যন্ত জানাবে। আমরা তোমাকে বাঁধা দিব না।
ছেলের কথা শুনে আমি শুধু একটা হাসি দিলাম। আমি জানি, আমি বুঝতে পারি ছেলেমেয়েরা আমাকে নিয়ে বিশাল একটা সমস্যায় পড়ে গেল। নিজের কাছে আমার খুব অসহায় লাগছে। এই অসহায়ত্ব, এই কষ্ট, এই সময়টা হয়তো গুলমেহের আগে থেকেই উপলব্ধি করতে পেরেছিল। পেরেছিল বলেই হয়তো এই কষ্ট, অসহায়ত্ব থেকে আমাকে মুক্তি দিতে আমার আগে মরতে চায়নি।
তবে এখন আমি খুশি। আমার কাছ থেকে সবকিছু লুকিয়ে রাখতে পারলে গুলমেহের এই কঠিন বাস্তবতা লুকিয়ে রেখে যেতে পারেনি। এটা আমার জানা প্রয়োজন ছিল। হয়তো এই সময়টা ধারণ করার ক্ষমতা গুলমেহেরের থাকতো না। সহ্য করতে পারতো না। এই একটা কষ্ট আর অসহায়ত্ব থেকে গুলমেহের মুক্ত বলে আমার খুব ভালো লাগছে।
আমাকে নিয়ে ছেলেমেয়েরা মোটামুটি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। সবাই স্বস্তির একটা হাসি দিচ্ছে। সিদ্ধান্ত বলতে একটা ছক। ভাগাভাগির ছক। সেই ছক এখন আমার সামনে উন্মোচন করা হবে। সেই ছকের সবকিছু আমাকে মনে রাখতে হবে। এই ছক দেখেই আমার আগামী দিনগুলো চলবে। বৈঠক শেষে আমাকে সেই ছকের বিষয়ে বলতে যাবে অমনি আমি সবাইকে থামিয়ে দিলাম।
থামিয়ে দিয়ে আমি বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। বেশ খানিকক্ষণ চুপ থাকার পর বললাম, তোমাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমাকে নিয়ে তোমাদের এত বেশি চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। তোমাদের এতটা কাল লালন পালন করা, সংসার করা, চাকরি বাকরি করা এই আমি নিশ্চয় অবুঝ হয়ে যাইনি। আমি সবকিছু বুঝতে পারি। সবকিছু। তোমাদের কাছে আমি হয়তো দায় কিন্তু আমার নিজের কাছে আমি এখনো সম্পদ। একজন মানুষ যতক্ষণ পযর্ন্ত নিজেকে অবহেলা না করবে ততক্ষণ অন্যের অবহেলাতে কিছু যায় আসে না। নিজের প্রতি নিজের শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস টা জরুরী।
এটা হারিয়ে গেলে মানুষের শক্তিটা কমে যায়। তখন অন্যেরা হেলাফেলা করার সুযোগ পায়। আমি মনে করি আমার সেই শক্তি, সাহস আর আস্থাটা আছে। আছে বলেই আমি নিজেকে কখনো দায় ভাবি না। আমি সবার সাথে মিলে মিশে শেষ সময়টুকু থাকতে চেয়েছি। চেয়েছি তোমাদের মঙ্গলও। কিন্তু তোমরা যখন আমাকে দায় ভাবছো তখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি একা থাকবো। তোমরা সবাই স্বাবলম্ভী। সেই জায়গাটা আমি তোমাদের তৈরী করে দিতে পেরেছি। আশা করি তোমাদের কোন অভাব নেই। আমার যে সম্পদটুকু আছে তা থেকে সামান্য কিছু অংশ বিক্রি করে দিলে বাকি জীবনটা আমি খুব ভালো ভাবে কাটিয়ে দিতে পারব। তখন আমাকে ঘন ঘন চা খাওয়ার জন্য কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।
ডাক্তারের কাছে যেতে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। কেনই বা থাকবো আমি? প্রয়োজনে আমি দশজন লোক রাখবো। এই সম্পদ আমার। এই সম্পদের অংশ আমি বিনা দ্ধিধায় খরচ করতে পারি। আমার নিজের অর্জিত সম্পদ রেখে কেন আমি অন্যের কাছে করুণা করবো। এই ভুলটা অনেকে করে। অনেকে। জীবনের উজ্জল সময় মাটি করে সম্পদ অর্জন করেও শেষ সময়ে এসে ছেলেমেয়েদের কাছে দায় হয়ে দাঁড়ায়। নিজের ভেতর সেই শক্তিটা ধরে রাখতে পারে না। এটা অন্যায়। নিজের অর্জিত সম্পদের কিছু বিক্রি করে যদি বেলাশেষে একটু ভালো থাকা যায়, অন্যের করুণা বিহীন থাকা যায় তবে কেন সেটা আমি করবো না?
কথাগুলো শেষ করে আমি উঠে দাঁড়ালাম। যাওয়ার আগে বলে গেলাম, তোমরা আমাকে কী দেবে? ছক করে আমাকে আর কী দিতে পারবে? এই ছকে যে ভালোবাসা আর মায়া নেই। আমি তোমাদের যা দিয়েছি তা আগে হিসেব করে দেখ ফেরত দিতে পারবে কিনা, তারপরও না হয় এমন একটা ছক করা ভালোবাসা দিও।