অধিকার

অধিকার

অবশেষে নিজের বিবেকের কাছে নিজেই হেরে গেলাম।আমি কেন নিশির জন্য সুমাকে কষ্ট দিচ্ছি।একজনের জন্য আরেকজনের জীবন কেন নষ্ট করব আমি।সুমা তো কোনো দোষ করেনি।দোষ তো করেছে নিশি।এখনো আমার সেদিনের কথা মনে আছে যেদিন নিশির সাথে আমার শেষবারের মত কথা হয়েছিল।
-হ্যালো,রাজ।কই তুমি?
-আমি তো বাসায়।কেন কি হয়েছে?
-আমার সাথে এখনি একটু দেখা কর তো।
-কি হয়েছে সেটা বলবে তো।
-এত কথা বল কেন? তুমি আসবে কিনা বল?
-আচ্ছা কোথায় দেখা করবা?
-যেখানে প্রতিদন দেখা করি সেখানেই…
-আচ্ছা আমি আসছি।
-হুম বাই।
-বাই।
তাড়াহুড়ো করে গেলামা।গিয়ে দেখি নিশি আগে থেকেই বসে আছে।ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
-কি হয়েছে হঠাত ডাকলে যে…..
ও কিছু না বলে আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিল।
-কি এটা?
-এর ভিতরে সবকিছু আছে যা গত একবছরে তুমি আমাকে দিয়েছ।
-মানে?
-মানে আমি তোমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে পারছি না।
আমি অবিশ্বাস এর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।যে মেয়ে আমার সাথে একদিন কথা না বলে থাকতে পারেনা…আমার কথা না শুনলে যার ঘুম আসেনা,সে কিনা আমাকে এই কথা বলছে।আমি বলেছিলাম…
-নিশি,তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না?
-তোমার সাথে আমি মজা করছি না।আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন।আর আমিও বাবার অবাধ্য হতে পারব না।তাই আমি আর এই সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছি না।
যেভাবে দ্বিধাহীন কন্ঠে ও কথাগুলো বলল এতে আমার কোনো সন্দেহই রইল না যে ও সত্যি বলছে।তবুও শেষ চেষ্টা হিসেবে বলেছিলাম….
-তুমি কি তোমার বাবাকে আমাদের কথা বলনি?
-কিভাবে বলব?তুমি তো বেকার।কোনো বেকার ছেলের সাথে তো বাবা আমার বিয়ে দেবে না।আর ওই ছেলে অনেক বড় চাকরি করে।আমারও পছন্দ হয়েছে।
-তাই বলে তুমি আমার ভালবাসাকে টাকার কাছে তুচ্ছ করে দিলে…
-দেখ রাজ,ভালবাসা দিয়ে সংসার চলবে না। সংসার ভালভাবে চালাতে হলে টাকার দরকার। আমি তোমাকেই বিয়ে করতাম যদি তুমি ভাল চাকরি করতে।আচ্ছা, আমার এখন যেতে হবে।তোমাকে তোমার জিনিসগুলি ফেরত দিতেই এসেছিলাম।ভাল থেকো,বাই।
বলেই ও সেদিন আমার জীবন থেকে একেবারের জন্য চলে গিয়েছিল।আমি সেদিন আর কিছুই বলতে পারিনি ওকে।হয়তবা খুব ভালবেসেছিলাম তাই।ওর দেওয়া ব্যাগটাও সেখানেই ফেলে এসেছিলাম।আমি তো ওকে ভালবেসে এগুলো দিয়েছিলাম। ফেরত নেওয়ার জন্য তো দেইনি।
বাসায় এসে খুব কেঁদেছিলাম সেদিন।মা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে আবার নতুন করে গড়েছিলাম।শুধু নিশির প্রতি ভালবাসাকে আমি মুছে ফেলতে পারিনি।তারপর একটা ভাল চাকরিও পেলাম।মা বাবার চাপে বিয়েটাও করতে হল।বাসর রাতেই সুমাকে বলে দিয়েছিলাম যে আমি ওকে স্ত্রীর অধিকার দিতে পারব না।কারণ সুমাকে কখনোই আমি মন থেকে মানতে পারিনি।প্রতিদিন ওকে ওর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছি আমি।কিন্তু ও কিছুই বলেনি।সবসময় আমার খেয়াল রেখেছে,অসুস্থ হলে সেবাযত্ন করেছে।কিন্তু কখনো ওকে আমি ভালতো বাসিইনি আরো অপমান করেছি।আমি রাতে ঘুমাতে গিয়েছি আর ও বারান্দায় গিয়ে কেঁদেছে।আজকেও হয়তবা তাই হত যদিনা বালিশের নিচে ওর ডাইরিটা পেতাম।ওর অনেক স্বপ্ন ছিল ওর স্বামী কে নিয়ে।ওর স্বামী ওকে খুব ভালবাসবে,ওকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবে।রাগ করলে কোলে নিয়ে ওর কাছে মাফ চাইবে। মোটকথা ওর স্বামী ওকে খুব ভালবাসবে।
ওর স্বপ্ন গুলো সব আমি নষ্ট করে দিয়েছি।ওকে ভালবাসার বদলে ওকে কষ্ট দিয়েছি।অপমান করেছি।
নিশির জন্যই ওকে এত কষ্ট দিয়েছি আমি।যে চলে গেছে তার কথা ভেবে আর কি লাভ।বরং যে আছে তার কথা ভাবা উচিৎ।নিশির জন্য কেন সুমাকে ওর অধিকার দিচ্ছি না।
ডাইরিটা রেখে চুপি চুপি বারান্দায় গেলেম।যা ভেবেছিলাম তাই…ও কাঁদছে। কোনো মেয়েই তো স্বামীর অবহেলা সহ্য করতে পারেনা।ওর কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম।ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।আমিও ওর চোখের দিকে তাকালাম। কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কোলে নেওয়া অবস্থায়ই আমাকে জড়িয়ে ধরল।অনুভব করলাম আমার শার্ট ভিজে যাচ্ছে ওর চোখের পানিতে।কাঁদুক… এই কান্না অপমানিত হওয়ার নয় অধিকার ফিরে পাওয়ার কান্না।
(কিছু কথা মুখে বলতে হয়না..বুঝে নিতে হয়)

………………………………………………সমাপ্ত…………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত