সন্ধ্যার আগ দিয়ে মা ফোন দিয়ে বললো — ছিহ:নিলয় তুই আমাদের না জানিয়ে অন্যের বউকে ভাগিয়ে নিয়ে আসবি আমি কল্পনাও করতে পারিনি। মায়ের কথা শুনে মনে হয় আকাশ থেকে পড়লাম।কখন আমি কোন মেয়েকে ভাগিয়ে নিয়ে আসলাম? আর কোন মেয়েই আমার সাথে ভেগে আসবে? ভাবতে ভাবতে আম্মা ওপাশ থেকে যতপ্রকার গালি আছে আমাকে দিয়ে ফোন কেটে দিলো।
আমি আহম্মক হয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এমন সময় এক ফ্রেন্ড ফোন করে বললো — মামা তুই এমন কাজ করবি আমি ভাবতেও পারিনি।ছিহ:তুই এত নিচে নেমে গেছিস।ভুল করেও যদি একবার আমাদের বলতি তাহলে আমরা দুই পরিবারকে রাজি করিয়েই তারপর তোদের বিয়ে দিতাম,,কত স্বপ্ন ছিল তোর বিয়ে,তোর বিয়েতে নাচবো, গাইবো,কয়েকটা মেয়ে পটাবো আর শেষে তুই কিনা….
— আরে কি হয়েছে বলবি তো?আর তোরা সবাই কই?
— আরে আমরা সাদেক ভাইয়ের বাড়িতে আসছিলাম এখন তোদের বাড়ির দিকে যাইতেছি।বিলকিস ভাবি বলল তুই নাকি সাদেক ভাইয়ের বউ ভাগিয়ে নিয়ে গেছিস?ভাবি নাকি তোর রুমে বসে আছে?
– আরে আমি এসব কিছুই… বলার আগেই ওপাশ থেকে রাফি ফোন কেটে দিলো।
আমি আহম্মক হয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। সাদেক ভাই গতকাল মাত্র বিয়ে করছে আর আজকেই তার বউ সাদিয়া নাকি অন্য একটা ছেলের সাথে ভেগে গেছে।তাই সাদেক ভাইকে সান্তনা দেওয়ার জন্য তার বাড়ির দিকেই যাচ্ছিলাম।এমন সময় এই খবর শুনে আবার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। ওমা বাড়িতে পৌছেই দেখি লোকলোকারণ্যে বাড়ি ঘড় ভর্তি হয়ে আছে। বাড়িতে ডুকতেই দেখি মা কান্না করতে করতে চোখ মুখ লাল করে ফেলছে।পাশের বাসার ভাবিরা কেও কেও হাঁসাহাঁসি করতেছে,,পাশের বাসার আন্টিরা কেও কেও আমার নামে কানাঘুষা করতেছে।
ভয়ে ভয়ে আম্মাকে বললাম — কিচ্চে আম্মা আপনি কান্না করেন কেন? আম্মা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো — আমি যদি আগে জানতাম তুই এমন কাজ করবি তাইলে জন্মের সময়ই তোরে নুন খাইয়ে মেরে ফেলতাম। তাহলে আজকে আমার এই দিন দেখতে হইত না। আম্মার কথা শুনে রাগ উঠে গেলো, রাগের ঠেলায় বললাম — আরে হইছে কি তাই বলবা তো?
— তুই ওই পাশের গ্রামের সাদেকের বউ রে ভাগিয়ে নিয়ে আসলি ক্যান,তাই বল আমারে?তোর যদি এতই বিয়ে করতে মন চাইছিল তাহলে আমারে বলতি, আমি তোর বাবাকে বুঝিয়ে রাজি করাইতাম।লাল টুকটুকে একখান বউ আনতাম।আর তুই কিনা অন্যের বউ ভাগিয়ে নিয়ে আসলি।
— আসতাগফিরুল্লাহ।এগ্লা কি বলো আম্মা?আমি কি এমন ছেলে?
— তুই এমন না তাই না?বলেই আমাকে টানতে টানতে আমার রুমে নিয়ে গেলো।
ওমা রুমে গিয়ে তো আমি অবাক।আমার খাটের উপর শুয়ে, কানে হেডফোন গুজে মোবাইল টিপছে আমার ক্লাসমেট সাদিয়া। আমি একবার মায়ের দিকে আরেকবার সাদিয়ার দিকে তাকালাম।
— এই ম্যাইয়া ক্যারা? এই ম্যাইয়া আইসা তোর ঘরে শুয়ে পরল ক্যান? মায়ের কথা শুনে লজ্জায় পরে গেলাম।
— আরে ওর নাম সাদিয়া।আমার ক্লাস..
তার আগেই আম্মা বলল — হ্, হ্, ওর নামই সাদিয়া।ওই তো সাদেকের বউ সাদিয়া। বিয়ের পর সাদেকের বউ দেখতে যাইনি বলে কি সাদেকের বউয়ের নামও জানিনা নাকি? ওই ম্যাইয়ার নাম শুনেই আমি বুঝে গেছি যে ঐডাই সাদেকের বউ সাদিয়া।
আমি উপায় না পেয়ে সাদিয়ার দিকে তাকালাম।আমরা যে রুমে এসে কথা বলছি সেদিকে তার কোনো হুসই নেই।
টান দিয়ে কানের হেডফোন আর মোবাইল নিতেই সাদিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো — আরে তুই কখন আসলি,,সেই কখন থেকে তোর জন্য বসে আছি।আন্টির সাথে কথা বলে জানলাম তুই বাড়িতে নেই, তাই এতক্ষণ বসে ছিলাম। আল্লাহ আমারে উঠাই নেও।এতক্ষণ ধরে কত কিছু ঘটে গেলো আর এই ছেমড়ি কিচ্ছু জানেনা।
— তুই এই অসময়ে আমার বাড়িতে কেন?
— আরে পাশের গ্রামে আমার বড় বোনের বান্ধুবির বাড়িতে গেছিলাম।তার নামও সাদিয়া।সে নাকি জামাই রেখে অন্য জনের সাথে পালিয়ে গেছে।সেখান থেকে আসলাম তোর সাথে দেখা করতে।কতদিন হয় কলেজ যাস না,,তাই আজ ভাবলাম দেখা করে যাই। আমি আর উপায় না পেয়ে সাদেক ভাইকে ফোন দিয়ে বললাম আপনার বউ সাদিয়া আমার বাড়িতে আছে।তাড়াতাড়ি এসে বউ নিয়ে গিয়ে আমাকে উদ্ধার করেন।
এখন যদি আমি বলি এই সাদিয়া আমার বান্ধবি, সাদেক ভাইয়ের বউ না।তাহলে কেওই বিশ্বাস করবে না।তাই উপায় না পেয়ে সাদেক ভাইকেই ফোন দিলাম। দশ মিনিটের মধ্যেই সাদেক ভাই এসে পড়ল।বেচারা বউয়ের চিন্তায় একদিনেই শুকিয়ে গেছে। রুম থেকে সাদিয়াকে বের করে সাদেক ভাইয়ের হাতে দিয়ে বললাম — এই লন আপনার বউ নিয়ে এখন তাড়াতাড়ি ভাগেন। সাদেক ভাই হাত ছাড়িয়ে বললেন — হেই নিলয় এগ্লা কি কস?এইটা আমার বউ সাদিয়া না,এই মেয়ে তো কিছুক্ষন আগেই আমার বাড়ি থেকে আইলো।
— তাহলে এবার চিকৎকার দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেন এই বউ আপনার বউ সাদিয়া না,,এইটা আমার ক্লাসমেট সাদিয়া। সাদেক ভাই চিকৎকার করে গলা ফাটিয়ে বলতে লাগলো– ভাইসব,বোনসব,আন্টিরাসব শুনেন এইটা আমার বউ সাদিয়া না।এইটা নিলয়ের ক্লাসমেট সাদিয়া।
— ধন্যবাদ ভাই।অনেক উপকার করলেন,এখন আপনি আসতে পারেন।
সাদেক ভাই মন খারাপ করে চলে গেলো। মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো — পাশের বাড়ির ভাবি যে কইল সাদেকের বউ এর নাম সাদিয়া আর ওই ম্যাইয়া নাকি অন্য পোলার লগে ভাইগা গেছে…. এমন সময় আব্বা বাড়িতে প্রবেশ করলো । মাকে বললাম – তোমার জামাইরে এখন তুমিই বুঝাও গিয়ে।শুধু নাম শুনে আর তোমার ভাবির কথা শুনেই সাদেক ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে দিছো। মা আর কিছু না বলে আব্বাকে টেনে নিয়ে রুমে চলে গেলো। কিন্তু পাশের বাসার আন্টিরা,ভাবিরা তারা সবাই এখনো কেও দাঁড়িয়ে কেও বসে হাঁসাহাঁসি কানাঘুষা করতেছে। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম — আপনাদের কি বিমান ভাড়া করে বাড়িতে পৌছিয়ে দিতে হবে নাকি? কথা শুনে এক মুহূর্তেই সবাই বিদায়। বন্ধুরা সবাই এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।সাদিয়াকে টেনে নিয়ে গিয়ে বললাম — তোরা কেও সাদিয়াকে বিয়ে করবি? একজন হাত তুললো। সাদিয়া বলে উঠলো — What…মানে কি নিলয়?
— মানে কি তাই না?তুই আমাকে না জানিয়ে বাড়িতে আসলি কেন?
— তাতে কি হইছে?
— কি হয়নাই তাই বল!তর এই কমন নামের ফলে সমস্ত গ্রামে আমার নামে কলঙ্ক লটে গেছে।ভাগ্যিস আমার গার্লফ্রেন্ড এখনো শুনে নাই,,তাহলে তো এতক্ষণে ব্রেকাপ হয়ে যেতো।
যা এখন বাসায় যা।আর কোনোদিন না বলে কইয়ে কারো বাসায় আসবি না। বন্ধুদের বলে কইয়ে সাদিয়াকে বাসায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে ফোন হাতে নিতেই দেখি গার্লফ্রেন্ড মেসেজ দিছে “ব্রেকাপ”।
ফেসবুক, নাম্বার,ইমু সব জায়গায় ব্লক করে রেখেছে।মনে হয় আমার এই অমর কৃতির কথা সারাদেশে ভাইরাল হয়ে গেছে। ব্রেকাপের যন্ত্রণা সহ্য করে না পেরে গান ধরলাম তুমি ছিলে এই বুকে নাদিয়া। আমাদের ব্রেকাপের কারন হলো সাদিয়া। কত কি স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমায় নিয়া। সব স্বপ্ন ভেঙে দিলো সাদিয়া। কথা ছিল হবে আমাদের বিয়া। বিয়ের আগেই ব্রেকাপ করে দিলো সাদিয়া।