জীবনসঙ্গী

জীবনসঙ্গী

কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে গালির ফুলঝুরি। ‘কুত্তার বাচ্চা। শুয়োরের বাচ্চা। তুই ভেবেছিস খুব সুখী হবি। বাল হবি তুই। কুত্তার বাচ্চা কোথাকার। তোর কপালে সুখ কোত্থেকে জোটে দেখে নিবো আমি। কথা বলছিস না কেন কুত্তার বাচ্চা, কথা বল কি বলবে ভেবে পায় না রাতুল। অপরপ্রান্ত থেকে গালি আসতেই থাকে। বলার মতো কিছু না পেয়ে কয়েকবার ঘেউ ঘেউ করে কলটা কেটে দেয় রাতুল।

রাগে গা জ্বলে যায় নিধির। প্রচন্ড রাগে হঠাৎ কান্না পেয়ে বসে। ডুকরে কাঁদতে থাকে। পৃথিবীর সব পুরুষ খারাপ। সব পুরুষ কুত্তা। ‘কুত্তার বাচ্চা। আমার কল কেটে দেয়, এত সাহস। কুত্তার বাচ্চা একটা।’ এই বলে কান্নায় মন দেয় নিধি। চোখের সব পানি আজকেই ঝরিয়ে শেষ করবে। কান্নার শব্দ শুনে নিধির বাবা নাজমুল সাহেব ছুটে আসেন। মেয়ে লক্ষ্মীর মতোন বিছানায় বসে বসে কাঁদছে। কি চমৎকার দৃশ্য। দেখে মন ভরে যায়, আবার চিন্তাও তৈরী হয়। মেয়ের কাছে গিয়ে বসেন। মেয়ের মাথায় হাত রেখে কোমল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন, ‘কিরে, কাঁদছিস কেন? বাবা মরে গেছে তোর?’

‘ঢঙ করো আমার সাথে? তোমার সাথে আমার ঢঙের সম্পর্ক?’
‘কি মুশকিল! এত রাগ কেন? কেউ কিছু বলেছে?’
‘বললে তো হতোই। চুপ করে থাকে কুত্তার বাচ্চা। আমি ওকে খুন করে ফেলবো।’

মেয়ের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু না জানলেও রাগ সম্পর্কে খুব ভালো ভাবেই জানেন নাজমুল সাহেব। এই মুহূর্তে গালাগালি করছে মানে রাগ খুবই বাজে পর্যায়ে। মেয়ের কাছে থাকাটা প্রয়োজনীয় হলেও নিরাপদ নয়। উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ান তিনি।

‘কোথায় যাও? বাবার দায়িত্ব শেষ, মেয়ে কেন কাঁদছে জানতে চাইবে না?’
‘আমার মাথা ব্যথা করতেছে। নাপা খেয়ে একটু ঘুম দেবো।’
‘হইছে। যাও যাও, মেয়ের কষ্ট কে দেখবে। দুনিয়ার সব পুরুষ লোক খারাপ। চেনা হয়ে গেছে নাজমুল সাহেব লেজ গুটিয়ে পালালেন। নিধি ছোটখাটো একটা বিরতি নিয়ে আবার ডুকরে কাঁদায় মন দিল।

রাতুলের কেন জানি খুব খুশি খুশি লাগছে। আগে এমন খুশি বছরে দু’বার হতো। রোজার ঈদে আর কোরবানীর ঈদে। আজকে ঈদ ছাড়াই অনেক খুশি লাগছে। নিধির সাথে ব্রেকআপের ৪ দিন হলো। রাতুল মুচকি হেসে হিসাব করে, সম্পর্ক ছিল ৪ বছরের। আর ৪ দিন আগেই কিনা সব শেষ। একেই বলে বুঝি আইরনি! ৪ বছরের সম্পর্কে কতবার যে ব্রেকআপ-প্যাচআপ হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কখনোই মান-অভিমান দু-তিনদিনের বেশি টিকেনি। ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু এবার জায়গামতো আটকেছে। রাতুল চিন্তা করে। বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। এত ঝঞ্ঝাট সহ্য করা যায়! নিধির সাথে এইবার ব্রেকআপের পরপরই মাকে বলে দিয়েছে ভালো দেখে মেয়ে খুঁজতে। এই বাদুড়ঝোলা জীবন অনেক হয়েছে, এইবার থিতু হতে হবে।

যেই বলা সেই কাজ। একমাত্র ছেলের জন্য মেয়ে খোঁজা শুরু করে দিয়েছেন রাতুলের মা রেহেনা বেগম। মেয়ে খোঁজায় এতটাই মন-প্রাণ উজার করেছেন যে নাওয়া-খাওয়া ভুলতে বসেছেন। এক সপ্তাহেই ওজন কমেছে ৪ কেজি। রাতুল হতাশ হয়ে হিসেব কষে, আবারও সংখ্যা ৪, এইটা কনফার্ম আইরনি! বাবার হাঁটে গিয়ে গরু খোঁজা আর মায়ের হন্যে হয়ে মেয়ে খোঁজার মধ্যে একটা বিশেষ মিল খুঁয়ে পায় রাতুল। দুজনের কেউই সহজে সন্তুষ্ট হয় না। তবুও খোঁজাখুঁজির কাজটা তারা বেশ যত্ন নিয়ে করেন। এই মুহূর্তে রাতুল খুঁজতে থাকে নিধির সাথে এইবারের ব্রেকআপের কারণটা।

সাধারণত তাদের ব্রেকআপের বিশেষ কোন কারণ থাকে না। কিন্তু এইবারের অবস্থা যেহেতু ভিন্ন, কারণটাও হয়তো ভিন্ন হবে। রাতুল ভাবে। ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে যায়। একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার ভাবে। নাহ, কিছু তো মনে আসছে না। হাল ছেড়েই দিতে যাবে এমন সময় মনে পড়ে যায় ঘটনাটা। ঠিক ৪ দিন আগের ঘটনা। নিধি আধ ঘণ্টা ধরে রাতুলকে কল দিয়ে যাচ্ছে। রাতুলের কল ওয়েটিংয়ে। কল ওয়েটিং নিধির কাছে কোন বিষয় না। হতেই পারে। কিন্তু আধ ঘণ্টা ধরে ওয়েটিং কেন থাকবে? নিধির সাজানো গোছানো দুনিয়া তখন চুরমার হয় অবস্থা।

৪ বছরের প্রেম, দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বয়ফ্রেন্ড, বিয়ে হবে বাচ্চা হবে সুখের সংসার গড়বে তারা, একসাথে কাটিয়ে দেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, কত শত হিসেব। কত শত স্বপ্ন। যারে নিয়ে স্বপ্ন তারে কল দিলে কিনা ওয়েটিং, তাও আবার আধ ঘণ্টা ধরে। বেলুন হয়ে জন্মালে নিধি তখনই ফুট্টুস হয়ে ফেটে যেত। অবশেষে রাতুলের কল ওয়েটিং শেষ হয়। রিসিভ হয় নিধির কল। ‘কার সাথে কথা বলছিলে এতক্ষণ?’ ডিরেক্ট অ্যাকশনে নেমে পড়ে নিধি। নরমালি রাতুলের সাথে কথা বলার শুরুতে বাবু, জান, বোকাপাখি বলে সম্বোধন করে নিধি। এখন ওসব ফরমালিটি মারানোর মুড নেই ওর।

‘কেন? হিংসে হয়? আমার মতো হতে চাও?’
‘কুত্তার বাচ্চা আমার প্রশ্নের উত্তর দে। কার সাথে কথা বললি এতক্ষণ?’
‘মিমের সাথে।’ গালি খেয়ে সোজা উত্তর উগরে দেয় রাতুল।
‘মিম, না? নতুন মানুষ তাহলে জুটে গেছে। ৩৫ মিনিট ধরে কথা বলেছিস না, মিমের সাথেই ৩৫ বছর সংসার কর গিয়ে। এরপর তোর সাথে সরাসরি কবরে দেখা হবে আমার। টিল দেন টেক কেয়ার।’

কল কেটে দেয় নিধি। রাতুল বলদের মতো কিছুক্ষণ মোবাইলটা কানে চেপে ধরে বসে থাকে। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না, গলা ধরে আসছে। এখন নিধিকে কল দিয়েও লাভ নেই। ধরবে না সে। ধরলে কোনমতে বলতে পারতো এই মিম যেইসেই মিম নয়। ওর ল্যাংটাকালের বন্ধু, আরিজুল ইসলাম মিম। পোলা মানুষ। নিধি গোটা বাসা মাথায় তুলে ফেলেছে। চিৎকার, চেঁচামেচি, ভাংচুর, গালাগালি কোন অপশন বাদ রাখছে না। কিছুক্ষণ আগে নিজের মোবাইলটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলেছে। এরপর ভাঙলো মায়েরটা। এখন আবার বাবার মোবাইল খুঁজতে শুরু করেছে। নাজমুল সাহেব তার মোবাইলটা পকেটে পুরে এক কোণায় জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। নিধির ছোট ভাই নেহাল তার বোনকে গিয়ে চুপি চুপি বলল, ‘আব্বুর মোবাইল তার পকেটে।’ নিধি এবার তার বাবার দিকে এগোলো।

‘মা আমার, এবার শান্ত হও একটু মা। তোমার কি লাগবে বলো, আমি এনে দিচ্ছি। তবুও এমনটা করে না মা।’
‘যা চাইবো দিতে পারবা?’
‘বলেই দেখো। আমি গরিব মানুষ। সাধ্যের ভেতর হলে অবশ্যই দেবো।’
‘ছেলে লাগবে আমার। ছেলে খোঁজো।’
‘অ্যাডপ্ট করবা? এই বয়সেই?’
‘বিয়ে করবো।

তোমার মেয়ের জন্য জামাই খুঁজো। আর একটা কথা মনে রেখো বাবা, সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। কেউ কারও জন্য অপেক্ষাও করে না। আমার জন্য কেউ করেনি, আমিও কারও জন্য করবো না।’
নাজমুল সাহেব সম্মতিজ্ঞাপন সূচক মাথা ঝাকালেন ঠিকই, কিন্তু মেয়ের কথার আগামাথা কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না। তবে হাফ ছেড়ে বাঁচলেন যে মেয়ে কথাগুলো বলেই নিজের রুমে চলে গেছে। বাসার ভেতরকার আবহাওয়া আপাতত শান্ত। পরবর্তী ঝড় আসার আগেই স্ত্রী-ছেলের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌছালেন যে মেয়ের জন্য ছেলে খোঁজা ফরজ হয়ে গেছে। শুভ কাজে আর বেশি দেরি করা ঠিক হবে না। দেরি করলে কপালে শনি আছে।

ইতোমধ্যে মায়ের সাথে মেয়ে দেখে এসেছে রাতুল। মেয়ের নাম জেরিন। মায়ের তো সেই পছন্দ হয়েছে। তার ভাষ্যমতে ভীষণ মিষ্টি মেয়ে, আচার ব্যবহার ভালো, পরিবার ভালো, বেশ ধার্মিক। রাতুলের অবশ্য চলে টাইপ লেগেছে। মেয়ে নিয়ে রাতুলের তেমন বাছ-বিচার নেই। কেবল মেয়ে কোনপ্রকার গালাগালি না করলেই হলো।
ফেসবুকে বসেছে এমন সময় নিধির এক বান্ধবী মেসেনজারে নক দিলো রাতুলকে। নাম তানহা। জিজ্ঞেস করছে, ‘কি খবর?’ রাতুল জবাবে লিখলো, ‘খুব ভালো।’

‘নিধির সাথে কথা হয়?’
‘কিছুদিন আগে কল দিয়েছিল।’
‘কি বলে?’
‘কুত্তার বাচ্চা বলে।’
‘আর কিছু বলেছে?’
‘শুয়োরের বাচ্চাও বলেছে।’
‘ও আচ্ছা। খবর শুনেছো?’
‘কি খবর?’
‘নিধির বিয়ের খবর। ছেলে দেখছে ওর পরিবার।’
‘জানতাম না। তুমি খবর শুনেছো?’
‘কি খবর?’
‘আমার বিয়ের। মেয়ে দেখে এসেছি।’
‘ও আচ্ছা।’

আলাপ এখানেই শেষ। রাতুল বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। মনে মনে ভাবে, যাক কাউন্টার অ্যাটাক দেয়া গেছে। নাজমুল সাহেব মেয়ের জন্য ছেলে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। আত্মীয়-স্বজনদের কাউকে নক দেয়া বাকি নেই। অনেকেই সাজেশন দিয়েছে, খোঁজ দিয়েছে পাত্রের। নাজমুল সাহেব মনোযোগ সহকারে সবকিছু তদারকি করছেন। তবে আদর্শ কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না। আজকে বাসার ফেরার পথে নিচের ফ্ল্যাটের কাউসার সাহেবকে পেয়ে গেলেন। অতটা কাজের লোক নয়, তবুও সেধে নিজের মেয়ের গল্প করলেন। বললেন কাছে-দূরে আপনার নজরে ভালো কোন ছেলে পড়লে আমাকে বলবেন। নাজমুল সাহেবের কথা তখনো শেষ হয়নি, মাঝপথেই তাকে থামিয়ে দিয়ে কাউসার সাহেব বললেন,

‘আপনার মেয়ের জন্য দূরে কোথাও ছেলে খুঁজবেন ক্যান, আমার পোলা আছে তো। সাবালক, বিয়ের উপযুক্ত। ঘরেই থাকে। চলেন দেখাই আপনারে।’
‘আপনার ছেলে?’
‘হ। দেখেন নাই? পোলার নাম আবিদ। পড়ালেখা শ্যাষ করছে।’
‘তাই নাকি, কি করছে এখন?’

‘গায়ে বাতাস লাগায়ে ঘুরে বেড়ায় আপাতত। বেকার। তবে চাকরি পেয়ে যাবে। আমার ছেলে বলে বলছি না, আসলেই ছেলে ভালো। চাকরি বাকরি না পাইলেও না খেয়ে মরবে না, আমার তো ব্যবসা আছেই।’ কাউসার সাহেবের কথার ধরণে হ্যাঙ খেয়ে যান নাজমুল সাহেব। অবশ্য তিনি জানেন কাউসার সাহেব এভাবেই কথা বলেন। তার ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কেও জানেন। ভাবলেন ছেলেকে অন্তত একনজর দেখাই যায়। একই বিল্ডিংয়ের উপর-নিচ ফ্ল্যাটে থাকেন, অত ঝামেলাও নেই। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। রাতুলের আগেই নিধির বিয়ে কনফার্ম হলো। নিধি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে, ‘বাবা তার রাজকন্যার জন্য রাজপুত্র ঠিক করেছেন। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’

রাতুলের প্রচন্ড হাসি পেল। নিধির পোস্টে হাহা রিঅ্যাক্ট দিয়ে পিসিতে একটা গান ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করে গান শুনছে। সবচাইতে প্রিয় গানটাই ছেড়েছে। অথচ কেন জানি ভাল্লাগছে না। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রাতুলের। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে প্রথমে গান চেঞ্জ করলো, তারপর নিধির পোস্টে অ্যাংরি রিঅ্যাক্ট করলো। এরপর আবার গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। খানিক বাদে রাগ বদলে গিয়ে কষ্টে রূপান্তরিত হলো। বিছানা থেকে উঠে এবার প্রথমে গান বন্ধ করলো। তারপর নিধির পোস্টে স্যাড রিঅ্যাক্ট করে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। একবার মনে হয় বিছানায় শুয়ে থাকি, আবার মনে হয় চুপচাপ চেয়ারে বসে থাকি, ফের মনে হয় দাঁড়িয়েই থাকি এর চেয়ে। কিন্তু একটা পর্যায়ে রাতুলের মনে হতে থাকে এই শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে থাকার কোনটাই এত ইম্পর্ট্যান্ট না।

তাহলে ইম্পর্ট্যান্ট এখন কোনটা? ভাবতে থাকে রাতুল। ভাবতে ভাবতে পেয়েও যায়। এখন ইম্পর্ট্যান্ট হলো নিধির কাছে ক্ষমা চাওয়া। হ্যা, ক্ষমা চাইতে হবে। ভুল যারই হোক, ক্ষমা তো ছেলেকেই চাইতে হয়। এটাই হয়ে আসছে, এটাই দুনিয়ার নিয়ম। উদাহরণ হিসেবে নিজের বাপ-চাচা-দাদা’র কথা স্মরণ করলো রাতুল। আজকেও দেখেছে, ওর বাবা ক্ষমা চাইছে ওর মায়ের কাছে। কি কারণে ক্ষমা চাইছে তা অবশ্য জানে না রাতুল। শুধু রাতুল কি, ওর বাবাও হয়তো জানে না ঠিক কি কারণে ক্ষমা চাইছেন।

রাতুল আর কালবিলম্ব না করে নিধিকে কল দেয়। কিন্তু বিধিবাম, রাতুলের নম্বর নিধির ব্লাকলিস্টের শোভা বর্ধন করছে। রাতুল অবশ্য দমে যায় না। এইবার ফেসবুকে ঢোকে। ম্যাসেনজারে যায়। নিধি অনলাইনে নেই। অথচ রাতুল জানে নিধি অনলাইনে আছে। নিধির বাতিক আছে চ্যাটলিস্ট অফ রাখার। মেয়েটা শ্বাস না নিয়ে দিনের পর দিন পার করে দিতে পারবে, কিন্তু ফেসবুক ছেড়ে এক মুহূর্তও থাকতে পারবে না। রাতুল নিধির ম্যাসেনজারে টেক্সট পাঠায়, ‘আই অ্যাম স্যরি। আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ ঘড়ির কাঁটা মন্থর হয়ে যায় এর পরপরই। এক মিনিট, দুই মিনিট, তিন মিনিট…। রাতুল ম্যাসেনজার থেকে চোখ সরায় না। পলক ফেলতেও ভুলে যায়। একটানা তাকিয়ে থাকে। সুদীর্ঘ পাঁচ মিনিট পর রাতুলের মেসেজ সিন হয়। টাইপিং করার সিগনাল দেখতে পায়। হৃদপিন্ড তার সাধারণ গতির উর্ধ্বে গিয়ে চলছে। সজোরে আঘাত করছে বুকের বাম পাশটায়। রাতুল হা করে তাকিয়েই আছে ম্যাসেনজারের দিকে।

অবশেষে রিপ্লাই আসে নিধির, ‘তোর স্যরির নিকুচি করি কুত্তার বাচ্চা। দূরে গিয়ে মর হারামজাদা।’ এক মাস পেরিয়ে যায়। নিধির বিয়ে হয়ে গেছে। রাতুলেরও বিয়ে হয়েছে। দুজনেরই সংসার হয়েছে। নিধি তার পরিবারের পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করেছে। কোনপ্রকার দ্বিমত পোষণ করেনি। রাতুল অবশ্য বিয়ের উপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। পরিবার মেয়ে ঠিক করার পরও রাতুল বিয়ের প্রতি কোনরকম আগ্রহ দেখাতে পারেনি। অবশ্য অমতও করেনি। করবেই বা কিভাবে, বিয়ের কথা তো সে নিজেই প্রথম বলে তার মাকে। নিজের তৈরী ফাঁদে নিজেই পা দিয়েছে রাতুল। তাই নিয়তিকে মেনে নিয়েছে সহজভাবে।

তবে বিয়ের পর যে রাতুল সুখে নেই তা নয়। সে সুখেই আছে। আগের থেকে অনেক গোছালো হয়েছে। বোকার মতো চলাফেরা করা ছেলেটি এখন সংসারী হয়েছে। বিয়ে করা বউকে নিয়েও কোন আক্ষেপ নেই। মেয়ে ভালোই। সুন্দর সুশ্রী, আচার ব্যবহারও ভালোই, সমস্যা বলতে কেবল একটাই- রেগে গেলে প্রচন্ড গালাগালি করে।

গালাগালি করবেই না কেন, বউ তার শারমিন নাহার নিধি। মাঝে মাঝে অবশ্য সন্দেহ জাগে রাতুলের। তখন ফেসবুকে গিয়ে বউয়ের প্রোফাইল চেক করে। সেখানে ঠিকই স্পষ্ট উল্লেখ আছে- শারমিন নাহার নিধি ম্যারিড টু আবিদ আহমেদ রাতুল। এক মুহূর্তের জন্য সবকিছু আশ্চর্য লাগলেও ভার্চুয়াল আর রিয়েল লাইফের জটিলতা কেটে সব সহজ হয়ে আসে। রাতুল ভাবে, কপালে জোর আছে তার। ভালোবাসার মানুষটিকেই জীবনসঙ্গী করে নিতে পেরেছে। এটাই শান্ত্বনা!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত