রুপা ভালোবাসি তোমাকে

রুপা ভালোবাসি তোমাকে

একটু বাইরে আসবে? আমার কথার কোন উত্তর আমি পায়না। আমি জানি মেয়েটা বেশ অবাক হয়েছে। অবাক তো হবেই। এত রাতে একটা ছেলে এসে তাকে বলছে বাইরে আসতে। যে ছেলে কি না কখনও নিজে থেকে একটা ম্যাসেজ পর্যন্ত দেয়নি সে নিজে থেকে ফোন দিয়ে এত রাতে বলছে বাইরে যেতে। রুপার কোন উত্তর না পেয়ে আমি আবারও বলি,

– আমি তোমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

এটা বলেই চুপ করে থাকি। ওপাশ থেকে ফোন রেখে দেয়। আর আমি অপেক্ষায় থাকি কতক্ষণে মেয়েটা আসবে। রুপার সাথে আমার পরিচয় ৮ম শ্রেণী থেকে। নতুন স্কুল নতুন পরিবেশ আমার খুবই ভালো লেগেছিল। সেই ভালোলাগার পেছনে ছিল রুপা। ক্লাসে বসে আমি, অয়ন, আতিক আড্ডা দিচ্ছিলাম। ঠিক তখনই রাজকন্যার আগমন। এতটা বিস্ময় কখনও হয়নি আমি যতটা রুপাকে দেখে হয়েছিল। বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথা অনুভব করছিলাম। আমি বুঝেছিলাম আমিও সেই কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েগেছি। সেদিন থেকেই আমি রুপার প্রেমে আসক্ত। রুপার সাথে আস্তে আস্তে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তবে আমি যে বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু ভাবি রুপাকে। শুধু আমি না রুপাও যে আমাকে অন্য কিছু ভাবে সেটাও আমি বেশ ভালো করেই জানি।

আমরা ক্লাসে বসে ছিলাম। কোন মেয়ে ছিল না। হঠাৎ একটা কাগজ এসে পরে আমাদের এখানে। কাগজটা পড়ে দেখি একটা লাভ লেটার লেখা আমার নামে। কিন্তু কে লিখেছে সেটা জানিনা। এই খবর রুপার কাছে যেতে বেশি দেড়ি হয়নি। আমার হারামি বন্ধুগুলো গোয়েন্দার মতো গিয়ে রুপাকে বলে দিয়েছে। এটা শুনে রুপা তিনদিন ক্লাসে আসেনি। শুনেছিলাম না খেয়ে ছিল ও। তিনদিন পরে ক্লাসে আসার পরেও আমার সাথে আড়ি করে ছিল। সেদিনই বুঝেছিলাম রুপা আমাকে কতটা ভালোবাসে।

দুজন দুজনকে ভালোবাসি কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারিনি। কেন বলতে পারিনি সেটাও আমার অজানা। অনেকবার বলতে চেয়েছি আমি। জানাতে চেয়েছি আমার অনুভূতির কথা। কিন্তু জানাতে পারিনি। রুপার সামনে যতবারই যায় ততবারই আমি হারিয়ে যায় ওর মাঝে। বলা হয়ে ওঠেনা কখনই। আমি জানি রুপাও অপেক্ষায় আছে আমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য। কিন্তু আমি যে পারছিনা বলতে। দুইটা বছর আমরা এভাবেই কাঁটিয়েছি। আমি জানি এখন বলে দিতে হবে। নয়তো পাখি আর বন্দী হয়ে থাকবেনা।

রাতে শুয়ে আছি। শীত শেষ হয়ে গরম গরম ভাব। তারপরও রাতে বেশ শীত। এই শীত উপেক্ষা করে আজ আকাশ মেঘলা হয়ে গেছে। বৃষ্টি নামার বেশ সম্ভাবনা। যতবারই মেঘ হয় আমি মনে করি রুপার মন খারাপ। ও বুঝি কাঁদছে। তাই ওর সাথে আকাশও কাঁদছে। আমি রুপাকে ফোন দিয়ে কথা বলি। ওকে আমার ভাবনার কথা বলি। মেয়েটা খিলখিল করে হাসে। সেই হাসি আমাকে পাগল করে দেয়। আমি জানি যখনই বৃষ্টি নামে বা আকাশ মেঘ করে তখন রুপাও আমার ফোনের আশায় বসে থাকে। এটা জেনেছি রুপার খাতা থেকে।

শীতের মধ্যে বৃষ্টি। খারাপ না। বেশ ভালোই। আর এখন তো বেশি শীত নেই তো বৃষ্টি খুব ভালো লাগছে। আমি জানি এখন আমার কি করতে হবে। আজই তো সেই দিন। আমি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বেরিয়ে পরি রুপাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। রুপা যে আমার ফোনের অপেক্ষায় আছে। আমি রুপাদের বাড়ির সামনে এসে রুপাকে ফোন দেয়। রিং হবার সাথে সাথেই রুপা ফোন রিসিভ করে। আর আমি উপরের কথাটা বলি,

– একটু বাইরে আসবে?

আমি যখন এইগুলো ভাবছিলাম তখনই হঠাৎ ভাবনার অবসান ঘটে রুপার আগমনে। মেয়েটা আমাকে দেখে কতটা অবাক হয়েছে তা ওর চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পারছি। অবাক চোখের মাঝে এক ঝলক হাসির রেখা ফুটে উঠেছে রুপার মধ্যে।

– তুমি পাগল হয়ে গেছো? বৃষ্টির মধ্যে কেউ আসে এভাবে? যদি অসুস্থ হয়ে যাও?

কথাগুলো রুপা রাগী হয়েই বলে। তবে রাগটা যে ওর সাজানো সেটা খুব ভালো করেই ওর মধ্যে জেগে ওঠেছে।আমি ওর কথার কোন উত্তর দেয়না। ওকে চুপ করে থাকতে বলে। মেয়েটা কি বুঝলো কে জানে। চুপ করে গেলো। আরেকটু এগিয়ে আসলো আমার দিকে। আমাদের মাঝে দুরত্ব মাত্র একদমই সামান্য। আমার মনের মধ্যে অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করে। এই মাঝ রাতে এই শীতের বৃষ্টিতে ভিজে চলেছি দুজনে। কেউ নেই আমাদের মাঝে।

আমি ডান হাত রুপার চোখ বরাবর উঠলাম। হাতের মুঠিটা খুলে ফেললাম। আমার হাত থেকে বেরিয়ে আসলো একটা নুপুর। এবার রুপা আরো বেশি অবাক হলো। আমি কিছু না বলে ওর চোখে দিকে তাকিয়ে মাটিতে বসে পরি। আমাকে আর কিছু বলতে হয়না। রুপা ওর নিজের একটা পা আমার দিকে এগিয়ে দেয়। আমিও রুপার পা কে সাজিয়ে দেয় একটা নুপুরে। একটু চুপু একে দেয় ওর পায়ে।

আমি জানি এখন সেই সময় এসেছে মনে কথা প্রকাশ করার। আমি রুপার সামনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বলে রুপাকে কোলে তুলে নেয়। রুপা আমার বুকে মাথা লুকায়। আমি আমার মুখটা ওর কানের কাছে নিয়ে আস্তে করে বলে দেয় সেই কথা।সেটা শোনার জন্য রুপা অপেক্ষা করছে দুইটা বলছ।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত