সম্পর্কের শুরু

সম্পর্কের শুরু

আমি বছরে একবার জুতো কিনি। শপিং মলে খুব একটা যাই না বললেই চলে । অনেকে আছে না, এমনিতে মার্কেটে ঘুরতে যায়, এইটা আমার একদম অপছন্দ। আমার ছোট বোন সেই প্রায়সময় আমার শপিং করে দেই। তাছাড়া আমার নিজের তেমন পছন্দ নেই পিচ্চি আমার জন্য যা পছন্দ করে সেটা আমার পছন্দ হয়। কিন্তু জুতা কেনার সময় আমি নিজে গিয়ে অনেক কিছু দেখে তারপর কিনি । তার কারন আমার পায়ে সব ধরনের জুতা বা স্যান্ডল মানায় না।

ছোট থেকে এখন পর্যন্ত যতবারই জুতার শোরুমে গিয়েছি জুতা পছন্দ করে যখন সেলসম্যানদের বলি অন্য পায়ের টা দিতে, তখন তারা আমার পায়ের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে মনে হয় কোন এলিয়েনের পা দেখছে। একজন আবার অন্যজনকে ইশারা করে আমার পা টা দেখতে। তাদের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখলে আমার লজ্জা লাগে । তাই বেশি ট্রায়াল ও দিতে পারি না। পায়ের পাতা ঢাকা যায় এমন জুতা ফিট হলেই কিনে নিই । এতো ফ্যাশন দেখার সময় নেই। অনেক সময় দেখা যাই সেইম জুতা আমি পরপর কিনি ।

বলে রাখি আমার দুই পা’ র সাইজ দুই রকম। একটা ৬ আরেকটা ৭। বাম পা একটু বড় ডান পায়ের চেয়ে। তবে একটা জিনিস লক্ষ করলাম সব জুতার দোকানে ডিসপ্লেতে বাম পায়ের জুতাটা সাজিয়ে রাখে। আর আমি চাইতাম আগে ডান পায়ের জুতা। ঐ পায়ে ফিট হলে কিনে ফেলি। কারন আমার ডান পা’ টা পুড়ে গেছে গরম পানিতে সেই ছোটবেলায়। তখন সবে মাত্র আমি হাঁটা শিখছি। পুড়ে যাওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবে পা’ টা একটু ছোট। পায়ের উপর বিস্রিভাবে পোড়া দাগ তো আছেই স্মৃতি হিসেবে। এই পোড়া দাগ দেখে সবাই এলিয়েনের পা ভাবে।

যখন অপরিচিত কেউ জিজ্ঞেস করে আমার পায়ে কি হয়েছে? আমি তখন তাদের বলি, বিড়াল কামড় দিয়েছে কারন আমি বিড়াল কে লাথি মেরেছিলাম! জানিনা কেন আমি সবাই কে একথা বলি, অথচ আমি বিড়াল কে খুব পছন্দ করি । লাত্তি দেওয়া তো দূর কি বাত! যাই হোক, শপিংয়ে যতবার যাই আমার পরিবারের কেউ না কেউ সাথে থাকে। তারা থাকলে কিছুটা হলেও কনফিডেন্সলি কিছু কিনতে পারি । এখন সমস্যা হলো আজ যাবো আমার হবু শশুড়বাড়ীর মানুষদের সাথে । তারা তাদের ঘরের নতুন বউকে নিয়ে বিয়ের শপিং করবে। আমি অবশ্য বলে দিয়েছিলাম, তাদের পছন্দ আমার পছন্দ হবে। উনারা যেন তাদের মত করে কিনে নেয়।

এই কথায় আমার শশুড় বাড়ীর মানুষ বেশ খুশি হয়ে গেল। বিশেষ করে আমার শশুড়। খুশিতে তিনি হুকুম দিয়েছে বিয়ের জন্য একটা সুতা ও কিনতে যেন বউয়ের পছন্দ লাগে। পরলাম এক বিপদে, আজব আমি তো আলসেমির বা অন্য কারনে বলেছি আর উনারা তো ?? কি আর করা অবশেষে বাধ্য হয়ে শপিং মলে যেতেই হল।

সকালে তৈরি হয়ে শপিংমলে গেলাম ছোট বোন, খালাকে সাথে নিয়ে। তাদের পক্ষ থেকে দেখি পুরা বরযাত্রী চলে এসেছে। ছেলের বোন, খালা, চাচি, ফুপু তাদের মেয়েরা। আবার অনেক ছেলেও দেখছি তাদের বউদের সঙ দিতে এসেছে। কিন্তু যার বিয়ের শপিং সে মহান মানুষটা কে তো দেখছি না। আমার হবু বর। সে আসে নি। ছোট দেবর আমাকে দেখার সাথে সাথে জানাই দিল তার ভাইয়ার নাকি জরুরি কাজ আছে, তাই সে আসবে না। আজব, আমি কি তাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি নাকি তার ভাই কেন আসে নাই? আর সে আসলেও কি না আসলে কি! যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়া পড়শির ঘুৃম নেই সে অবস্থা হলো।

আমি সবাই কে সালাম কুশলাদি বিনিময় করতে করতে আধাঘন্টা পার করে দিলাম। তারা সবাই অনেক ফ্রেন্ডলি। একেবারে হাম সাত হে সাত হে মুভির মত। তাদের কে দেখে বারবার ঐ মুভির সবার চরিত্র গুলো চোখে ভাসছে। এত বড় পরিবার আমি কিভাবে এডজাস্ট হবো সে ভয়ে আছি আপাতত। প্রথমে শাড়ির শোরুমে ঢুকতেই সবাই হুরমুর করে সামনের দিকে চলে গেল। আমি চুপচাপ পিছনে একটা ছোট মোড়া পেয়ে তার উপর বসে পরলাম। সবাই এটা ওটা দেখছে পুরা দোকানে যে যার শাড়ির গল্প জুরে দিয়েছে।দোকানের ছেলেটা এত জনকে একসাথে দেখে বুঝে নিয়েছে বিয়ের জন্য শাড়ি কিনতে এসেছে। তাই সে সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো,

– আপা কত বাজেটের মধ্যে দেখাবো? আমার হবু খালা শাশুড়ি তারে হালকা ধমকের সুরে বলে,

– আপনি বাজেট নিয়ে ভাবছেন কেন? আমাদের পছন্দ হলো বড় কথা। শাড়ি পছন্দ হলে সেটা লাখ টাকার হোক বা কম। আরো কয়েকজন তার সাথে সুর মিলিয়ে বলো উঠলো,

– আপনি দামের কথা চিন্তা না করে ভাল আনকমন শাড়ি দেখান। তখন সেলসম্যান দের থেকে অন্যজন এসে বললো,
– আপা সে নতুন তো তাই বুঝতে পারে নাই, আমি দেখাচ্ছি।

সেলসম্যান একটার পর একটা শাড়ি বের করছে , কিছু কিছু শাড়ি সে নিজেও পরে দেখাচ্ছে। সবাই বেশ মজা পাচ্ছে তার শাড়ি পরা নিয়ে। কারো রং ভাল লাগলে কারো শাড়ির আঁচল আবার কারো পার ভাল লাগছে না। এখন এত মানুষের একটা শাড়ি পছন্দ হবে এটা ভাবা তো মুশকিল । আজকে এই সেলসম্যানের কপালে দুঃখ আছে।

আমি ও তাদের এইসব দেখে বেশ মজা নিচ্ছি।একটা জিনিস খেয়াল করলাম, যেটা আমার শাশুড়ি পছন্দ করছে সেটা আমার ফুপু শাশুড়ি মানা করে দেয় কোন এক বাহানা দিয়ে। ভাবছি শাড়ি কে পরবে? আমি না উনারা? একটা শাড়ি পছন্দ করতে এতক্ষন! তারচেয়ে ভাল আমি বোরকা পরে স্টেজে বসলে। একটু পর পর আমার ননদ আমার কাছে এক একটা শাড়ি এনে দেখাচ্ছে। সে বেশি জোর দিচ্ছে লেহেঙ্গা কিনতে। তার এত জোর দেখে বুঝতে পারছি ডাল ম্যে কুছ কালা হ্যে! তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

– নিতু তোমার পছন্দ হলে দেখ। আমার তেমন কোন সমস্যা নেই পরতে। আর কালার টা জোস বেগুনি। তুমি ও পরতে পারবে। ( আমি জাস্ট হাসিমুখে তার কারন টা জানতে চেয়েছিলাম) নিতু আমার ননদ সে সাথে সাথে বলে উঠলো,

– ভাবি কালার টা খুউব জোশ তাই না! আপনাদের বিয়ের কয়েকমাস পর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বুবলির বিয়ে। তার বিয়েতে ড্রেসকোড হচ্ছে বেগুনি । এখন আপনি যদি এইটা নেন আমি তখন আমার ফ্রেন্ডের বিয়েতে এই লেহেঙ্গা পরতে পারবো। আমি তার কথা শুনে মুচকি হেসে বললাম,

– তোমার পছন্দ হলে নিয়ে নাও। সে তখন জানালো তার ভাইয়ের বিয়ের ড্রেসকোড ব্লু। তাই সে ব্লু নিবে এখন।

আমি আর কিছু বলি নাই। সে কাপড়ের বস্তার দিকে আবার চলে গেল। কিন্ত আমার তো এইসব চাহিদা নেই। যে যেটা দেখাচ্ছে আমার ওটাই পছন্দ হচ্ছে। আসলে এখানে প্রত্যেকটা শাড়ি খুবই সুন্দর। শেষে একটা বেনারসি শাড়ি পছন্দ করলো সবাই। কচি পাতার কালার। সবাই মোটামুটি পছন্দ করেছে। এর মধ্যে আমার ফুপু শাশুড়ী বলে উঠে ,

– বিয়েতে বউ এই শাড়ি পরে দাঁড়ালে সবাই মনে করবে কলাগাছ দাঁড়িয়ে আছে।

ছেলেরা সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিল। এতক্ষন পর যা একটা শাড়ি পছন্দ হয়েছে সেটা ও কলাগাছ বলে বাদ দিচ্ছে। এবার আমার শশুড় সবাই কে ধমক দিয়ে বলে,

– এত হাসাহাসি কি! আমাদের বৌমার যেটা পছন্দ হবে সেটা নিবো। সবাই যে যার পছন্দের শাড়ি সামনে রাখো।

সবাই তড়িঘড়ি করে যে যার শাড়ি আমার সামনে এনে ধরলো। এত গুলো শাড়ি, কিন্ত আমার বরাবর চোখ যাচ্ছে ঐ কলাগাছ শাড়িটার উপর। কেমন জানি মায়া মায়া লাগছে। শেষে আমি ঐটাই পছন্দ করলাম।
অবশ্য আমার ননদের পছন্দের লেহেঙ্গা টা ও নিলাম। নিতু বেশ খুশি হয়ে গেল। আমার শাশুড়ি বেশ খুশি। এদিকে আমার খালার শাড়িটা পছন্দ হয় নি। আমাকে সবার সামনে চোখ রাঙিয়ে বলে,

– তুই কালার চিনিস, তোর সব তো আমরা পছন্দ করি। এত ক্ষন থেকেও একটা শাড়ি নিজে পছন্দ করতে পারলি না।
লাল রঙের বেনারসি শাড়ি টা দেখ, বিয়ের জন্য ভাল মানাবে তোকে। সেলসম্যান ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো, ঐটা যেন প্যাকেট করে। কেউ আর কিছু বললো না। আমি একেবারে চুপসে গেলাম খালার কথা শুনে। তখন আমার শাশুরি বললো,

– যারা যারা আমার বউমার জন্য শাড়ি পছন্দ করেছো সবগুলোই কিনবো। সব আমার বউমা পরবে।

আমি তো শুনে অবাক। কি সব বলছেন আমি এত শাড়ি পরবো? যাই হোক আমি আর কোন কথা বাড়ায় নি। তাদের ঘরের বউয়ের জন্য যা ইচ্ছে তাই কিনুক। অবশেষে পাক্কা চার ঘন্টা পর আমরা শাড়ির দোকান থেকে বেড় হলাম। বেড় হওয়ার সময় দেখি নবাব সিরাজুদ্দৌলা এসেছে মানে আমার হবু বর! তার নাম রাজ । তাকে কেন জানি এই নামে ডাকতে ইচ্ছে করে কারন তার ভাব সাব কিন্তু নবাবদের মতো! সে সালমান খান স্টাইলে এসে জানতে চায়,

– এত তারাতাড়ি শপিং শেষ?

সবাই হো হো হো করে হেসে উঠলো। এতক্ষনে মাত্র শাড়ি কিনা হলো আর সে বলে শেষ কিনা! আমার মনে হয় না এভাবে চলতে থাকলে আমার বিয়ের শপিং এই জীবনে শেষ হবে !! আমরা দোকান থেকে বের হলাম। ছেলেরা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সবাই এতক্ষন যে কেমনে ছিল। আল্লাহ রহমত করুক। এদের বাড়ির ছেলেদের ধৈর্য্য আছে অনেক। বের হয়ে অন্য দোকানে যাবো, নিতু আমার শশুড়কে বলে উঠলো,

– আব্বু আমাদের সবার খিদে লেগেছে আগে খেতে যাব তারপর বাকি শপিং।

সবাই নিতুর কথায় সাই দিল। আমি ও খুশি হয়ে গেলাম। এই সুযোগে রাজ এর সাথে আমার কথা হবে। রাজকে জরুরি কিছু কথা বলার আছে। আমরা সবাই একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। যে, যে খানে পারে ঐখানে বসে গেল। পুরা রেস্টুরেন্ট আমার শশুর বাড়ির মানুষ দখল করে নিয়েছে। মনে হচ্ছে এইটা তাদের বাড়ি ডাইনিং রুম। রাজ পিলারের কোনে একটা টেবিলে বসে আমাকে ইশারায় ডাকলো । আমি বসতে যাচ্ছি, তার আগে আমার চাচা শশুর তার পাশে বসে গেল। আমাকে দেখে উনি বললেন,

– সুমনা তুমি আমর পাশে বস।

ভাজ্ঞিস ঐ টেবিলে চার টা চেয়ার ছিল। রাজ আমার মুখোমুখি বসে আছে। আমার কি যে লজ্জা লাগছে। এই ছেলে শুধু মুচকি মুচকি হাসতে জানে আর কিচ্ছু বলতে পারে না মনে হয়। সে দেখি আমার চেয়ে বেশি লাজুক। একবার বিয়ে হোক তারপর এই নবাব সিরাজুদ্দৌলার মুচকি হাসি আমি বাইর করবো। অবশেষে আমরা সবাই খাওয়া, দাওয়া শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলাম। খাওয়ার পর আমার শশুড় আরো বাকি ছেলেরা সবাই চলে গেল। রাজ আমার দেবর ছোট ছোট আরো কয়েকজন রয়ে গেল ।

আমার দেবর ফাঁকে ফাঁকে আমার ছোট বোনের সাথে টাংকি মারছে। তারা দেখছি ইশারায় ইশারায় ও কথা বলছে। নতুন নতুন তালতো ভাইবোন কত মসকারা করবে। তবে আমার এইসব পছন্দ না। বাসায় গিয়ে রুমানা কে বলে দিব। যা দুস্টমি করুক না কেন সবকিছু যেন লিমিটের মধ্যে থাকে। তারপর আমরা গেলাম বিশাল এক জুতার শো রুমে। আমার হাত পা কেন জানি কাঁপছে। সবার সামনে জুতা পরতে বললে কি করবো আমি? বারবার পরে দেখাতে হবে আমার কি যে লজ্জা লাগছিল। আমি দোকানে ঢুকতেই চাচ্ছি না। ছেলেরা অবশ্য বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল আমরা মেয়েরা ভিতরে ছিলাম। আমার ননদ বেশ উচু হিল দুই ফিতা দেওয়া একটা স্যান্ডেল পছন্দ করে দিল। আমি যেন পরে দেখাই। আমি সাথে সাথে না বলে দিলাম,

– আমি পেন্সিল হিল পরি না নিতু । সু’ আমার পছন্দ।

তখন আমার ফুপু শাশুড়ী বলে উঠলো , বিয়েতে একটু আধটু পরতে হয়। আর তুমি তো স্টেজে বসে থাকবে। তেমন তো হাঁটাচলা করতে হবে না।

– না ফুপু আমি পেন্সিল হিল কখন পরি নাই, তাই বলছি। এমনিতে ডিজাইন টা অনেক সুন্দর। এই ডিজাইনের মধ্যে সু থাকলে দেখতে পারি।

এরপর তারা, একটু ডিফারেন্ট বক্স স্যান্ডেল এনে দিল। এখন পরার পালা। আমি তাদের দুইটাই দিতে বললাম। যখন স্যান্ডেল পরে হাঁটছি সবাই দেখি আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার খালা বললো,

– সুমনা এই স্যান্ডেল তোর পায়ে মানাচ্ছে তেমন। সাথে সাথে বাকিরাও বলা শুরু করলো। হ্যা ঠিক তো সুমনাকে তেমন ভাল লাগছে না। এইটার মধ্যে অন্য কালার হলে মানাতো।

এভাবে বেশ কয়েক জোড়া ট্রায়াল দেওয়া হয়ে গেল। এক পযার্য়ের আমার চোখ কান্নায় লাল হয়ে গেছে। আমি বারবার স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি। নিতু রুমানা খেয়াল করলো বিষয়টা তারা সাথে সাথেই তার ভাইয়ারে ডাক দিল। রাজ আসাতে আমি চোখ মুছে ফেলি। রাজ আমার চোখ লাল দেখে মনে করেছে কেউ আমাকে কিছু বলেছে। আমাকে সবার সামনে থেকে অন্য এক জায়গায় নিয়ে গেল। সবাই কে বললো, সে অন্য এক সপে একটা জিনিস দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে। একটু পর চলে আসবে। ততক্ষণে তারা যেন নিজেদের টা পছন্দ করে। সবাই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তারপর রাজ আমাকে টিস্যু দিয়ে বললো,

– কারো কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি সত্যি খুউব দুঃখিত। আসলে আমাদের বাড়িতে অনেক বছর পর বিয়ের অনুস্টান হচ্ছে। আর আমি সবার বড় ছেলে। তাই সবাই একটু বেশি এক্সাইটেড।

– আমি আপনাকে কিছু বলেছি? আপনি এত কথা বলছেন কেন!

– তাহলে তুমি কাঁদছ কেন? আমি চুপ করে রইলাম। কিছু বলছি না দেখে রাজ অস্থির হয়ে গেল । তারপর বললাম,

– আমার সবার সামনে লজ্জা লাগছিল জুতো পরে দেখাতে। সবাই কেমন করে আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল।

– এইটা কোন কথা সুমনা? আমরা কি জানিনা তোমার পায়ে কি হয়েছে। আমার বাবা তোমাকে পছন্দ করেছে। এবং বাড়ির সবাই জানে।

– আমার মোজা পরে আসা উচিত ছিল।

– মোজা পরতে হবে কেন, দেখি তো তোমার পা টা! আমার তো দেখতে খারাপ লাগছে না। তোমার কেন এত লাগছে?

তখন রাজ সুমানাকে অন্য আরেকটা জুতার শোরুমে নিয়ে গেল। আমাকে পছন্দ করতে বললো। সে নিজেই আমাকে একটা পছন্দ করে দিল।

– এইটা পরে দেখ তো সুমনা ?

– ফিতা লাগানো!

– উফফ্ তুমি আগে পরো তো!

রাজ নিজ হাতে আমার পায়ে জুতাটা পরিয়ে দিতে চাইলে আমি তার হাত থেকে কেড়ে নিই। তারপর জুতাটা পরে দেখাই তাকে । আমার পায়ে বেশ মানিয়েছে। স্যান্ডেলের ডিজাইন টা ছিল চিকন দুইটা কালো ফিতার উপর স্টোন বসানো। সামান্য হিল। এই প্রথম এই ধরনের স্যান্ডেল আমি পরলাম। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার রাজের সামনে জুতা পরতে আমার একটুও লজ্জা লাগছিল না !!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত