স্পর্শ এসে বাড়ির সামনে গাড়িতে পর পর দুইবার হর্ন দিল। স্নেহাকে আগেই মেসেজ করে দেয় স্পর্শ, স্নেহা ব্যাগ নিয়ে সব গুছিয়ে তৈরি ছিল। হর্ন শুনে বেড়িয়ে এল দাদার সাথে। কোন কথা না বলে সোজা ব্যাগপত্র নিয়ে পিছনের সিটে বসলো। স্পর্শ কিছুটা বিরক্ত হলেও দাদার সামনে কিছু বলে না…..
– থ্যাঙ্কস স্নেহা
– কেন দাদা
– পিছনে বসলি তাই, আমি ভেবেছিলাম তুই সামনে বসবি, তোকে উঠায় দিতে হবে
– ওহ
– স্পর্শ যদি কিছু মনে না করো তো, আমাকে একটু আমার ব্যাংকে ড্রপ করে দিবে
– ঠিকাছে দাদা, উঠে পড়ুন (স্পর্শ কিছুটা স্বাভাবিক হয়, অন্তত দাদা গেলে স্নেহা বসবে এই ভেবে)
– থ্যাঙ্কস………. সরি স্নেহা তোর জায়গা নিয়ে নিলাম
– নো প্রবলেম দাদা, জায়গা তো আর আমার কেনা না
( কথাটা আবার বিরক্তি সৃষ্টি করে স্পর্শের মনে, কিন্তু চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যায়)
– আমি জানি স্নেহা, তুই স্পর্শের পাশে অন্য কাওকে দেখতে পারিস না, হোক সে ছেলে বা মেয়ে
– তুমি না দাদা, কি যে বল
– ভুল বললাম কি? তুই আমার বোন, হতে পারে আপন নয়
– আমি কখনো বলেছি সেটা? মায়ের পেটের না হলেও তুমি আমার কাছে আপন দাদার মতই সম্মানীয়
– স্নেহা আপনাকে অনেক ভালবাসে, শ্রদ্ধা আর সম্মান করে, এমনকি কিছু দিতে না বললে বলে “আমার দাদা কখনো আমাকে না করে নি”
– একটু বেশি করে হয়তো
– আসলেই ও আপনাকে অনেক মর্যাদা দেয়
– আচ্ছা রাখো এখানে, এসে গেছে। (গাড়ি থেকে নামে দাদা) স্নেহা এবার সামনে এসে বস।
– দেখছি। তুমি সাবধানে যেও, লাঞ্চ করে নিও। সাবধানে ফিরো
– আচ্ছা, তোমরাও সাবধানে যেও, গিয়ে জানিও।
– আচ্ছা দাদা, বাই
দাদা চলে যাবার অনেকক্ষণ পরেও স্পর্শ গাড়ি চালু করে নি। কারণ স্নেহা সামনে এসে বসে নি। চুপচাপ পিছনেই বসে আছে। অনেক সময় নীরব থাকার পর, স্পর্শ মুখ খোলে
– সামনে আসা যাবে?
– নাহ! আমি এখানেই ঠিক আছি
– আমি কি তোমার ড্রাইভার নাকি?
– আচ্ছা নেমে যাচ্ছি, তুমি বাসায় চলে যাও আমি অটো করে যাবো
( স্নেহা ব্যাগ নিয়ে নামতে গেলে স্পর্শ গাড়ি স্টার্ট দেয়। এছাড়া দ্বিতীয় পথ ছিল না। সারা রাস্তা চুপচাপ যায় দুজন। কোন কথা নেই, মিররে স্পর্শ বারবার স্নেহাকে দেখছিল। স্নেহা হয়তো খুব রেগে আছে, খুব খুব রেগে আছে। চুলগুলো উড়ে আসছে চোখের উপর, বাইরে তাকিয়ে আছে আর কিছু সময় পরপর দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়াচ্ছে। স্পর্শ বারবার সেটাই দেখছে। রাগলে স্নেহাকে অত সুন্দর না লাগলেও আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে। এই রাগের মাঝে অভিমান আছে, ভালবাসার ক্ষোভ আছে, হয়তো স্থান কাল পাত্র মিলে গেলে দুনয়নে ঝরনাধারা বইবে। মাঝে মাঝে নিজের কাছেই অপরাধী হচ্ছে স্পর্শ। এসব ভাবতে ভাবতে প্রায় বাসার কাছে এসে গেল। তখন ওর এক বন্ধু ফোন দিল যে আসবে বাসায়, কখন আসবে সেটা শোনার আগেই লাইন কেটে যায়, পরে আর পায় না। বাসার গেটে এসে স্পর্শ গাড়ি থেকে নেমে স্নেহা নামলে ব্যাগ গুলো নিতে যায়…..
– আমি নিতে পারবো
– আমি নিচ্ছি, সমস্যা কি
– আমি পারবো বলেছি তো
– আমিই নেই না
(দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি, হাতাহাতিতে রূপ নেয়। স্নেহার নখের আচড় লাগে স্পর্শের হাতে। কিছুটা ব্যাথা পায়। স্নেহা তখন ব্যাগ ছেড়ে দিয়ে ঘরে চলে যায়। গিয়ে সোজা বসে পড়ে সোফায়। স্পর্শ ব্যাগটা ঘরের কোনায় রাখে, আস্তে করে স্নেহার পাশে এসে দাঁড়ায়….
– রাগ করেছো?
– না
– i love u
– u don’t…..
– i miss u
– u didn’t, did you?
– আমার কাজ ছিল, আমি খোঁজ নিতে পারি নি, তাই বলে কি আমি তোমায় মিস করিনি? শুধু তুমিই আমাকে মিস করেছো
– ৪৮ ঘন্টারও বেশি সময় ছিল, একটা মেসেজ দিতে তো ৪৮ সেকেন্ড সময় লাগে তাই না!!
– সরি তো, আমি সত্যিই অনেক মিস করেছি তোমাকে…
– তুমি আমাকে ভালবাসো না, মিস করো না, করলে এত সময় ধরে যোগাযোগ ছাড়া থাকতে না। তুমি একটা কাপুরুষ, তুমি একটা স্বার্থপর (কথাগুলো চিতকার করে বলে উঠে স্নেহা আর দুহাত দিয়ে স্পর্শের বুকে কিল দিতে থাকে, মারতে থাকে। স্পর্শ স্নেহার দুহাত চেপে ধরে ওকে বুকের মধ্যে টেনে নেয়। বুকের মাঝে আকড়ে ধরে। স্নেহা তখন বাচ্চাদের মত কাঁদতে শুরু করে)
– আমার পাগলিটাকে আমি অনেক মিস করি, কিন্তু কি করবো বলো, সময়ই হয় না। তাই বলে কি আমি তোমাকে ভালবাসি না। অনেক ভালবাসি। অনেক অনেক বেশি। আমিও তো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না সোনা। বুকের মাঝে অনেক কষ্ট হয়।
( স্নেহা শুধু কেঁদেই চলে। স্পর্শের শার্ট স্নেহার চোখের জলে ভিজে উঠে। মেয়েটা বাইরে থেকে যত শক্ত ভিতরে ততই নরম। এর মধ্যে স্পর্শের বন্ধুও চলে আসে দরজা খোলা পেয়ে ভিতরেই এসে পরে। স্পর্শের একার বন্ধু বললে ভুল হবে, দুজনেরই বন্ধু)
– এহেম এহেম, তোদের রাধা কৃষ্ণ প্রেমলীলা শেষ হলে আমি একটু আসি
– আরে তুই, আয় আয়
– রাধা বিরহ চলছিল বুঝি
– দেখ কি অবস্থা, কেঁদে কেটে শেষ
– সে তো বুঝলাম, আমার হিল্লে কি করবেন আপনারা, আজ একটু চলুন, মেয়ে দেখতে
– হ্যা অবশ্য হুজুর, তার আগে খেয়ে নেই কিছু
– তোমরা বসো আমি খাবার নিয়ে আসি
– স্নেহা, চার্জার কইরে, ফোন অফ হয়ে গেছে
– দেখ টেবিলে আছে
– তুই বস বুঝলি, আমি জামা পাল্টে আসি….
(স্পর্শ জামা কাপড় পাল্টে আসে, স্নেহা খাবার নিয়ে আসে। সবাই খেয়ে দেয়ে কাজের জন্য বের হয়)
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা