ভালবাসি

ভালবাসি

আপনি একটা মেয়েকে খুব পছন্দ করেন।শুধুই কি পছন্দ? না খুব বেশি ভালওবাসেন তাকে। কিন্তু সেটা মনে মনেই।মুখ ফুঁটে বা ইশারাতে যা কখনোই বলতে পারেন নি বা প্রকাশ করেননি।

-বলবেন বলবেন ভাবছেন।এই ভাবছেন যে বলে ফেলবেন।কিন্তু আপনার ভাবাটা সফল হয় না।এই এদিন না সেদিন বলে ফেলবেন, তবুও পারছেন না। কারণ ভুল বশত সেই মেয়েটি আপনার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড!যাকে ছাড়া আপনার কোন দিনও চলেনা।বলার পর যদি বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়।তাই বলতেও পারছেন না।

– আপনার সাথে তার পরিচয় অনেক দিনের একই ভার্সিটিতে পড়ছেন।কিংবা পড়া বাদে একই এলাকাতে বাস করেন আপনারা।কিংবা সে আপনার দূর সম্পর্কের আত্মীয় বা কাজিন। কিভাবে যে আস্তে আস্তে তার প্রেমে পড়ে গেলেন।সেটা আপনি নিজেই জানেন না। অল্প অল্প করে মনের ঘরে তার জন্য একটা জায়গা করে দিয়েছেন।হয়তো সেও আপনার জন্য।কিন্তু আপনার মনে জায়গা হওয়াটা তার জন্যে ভালবাসা।আর আপনার ভাবনাটা মিথ্যেও হতে পারে।তিল তিল করে গড়ে ওঠেছে আপনাদের বন্ধুত্ব।যেখানে ভালবাসা আসলে বন্ধুত্ব যদি ভেঙ্গে যায়। আর এদিকে ভালবাসি কথাটি না বলে। আপনি সহ্য করেও থাকতে পারছেন না।

এদিক দিয়ে ভালবাসার কথা বলতেও পারছেন না।যদি বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়। তাই কোন এক সময় আপনার সুবুদ্বির উদয় হলো।ভালবাসার কথাটা না বলে থাকতেও পারছেন না। ভাবছেন কাছে না গিয়ে দূর থেকে বলবেন।অনেক ভেবে পেলেন যে।দূর থেকে মোবাইলের মাধ্যমে তাকে মনের কথা বলবেন।পরে যা হবার হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। মোবাইলে তাকে ফোন দিয়ে মনের কথা বলবেন। ফোনটাও দিলেন

-হ্যালো
-হুম বল
-তোকে একটা কথা বলার ছিলো।
-শোনছি তো বলেফেল।
-না মানে না মানে কথাটা হচ্ছে।

-ঐ হারামি বল কি বলবি।এতো না মানে না মানে করছিস কেনো। আপনি অবাক হলেন হারামি বলছে বলে।আপনি কিছুটা ভয়ও পেলেন।কিন্তু না ভয় পেলে চলবে না।কুল ডাউন।নিজেই নিজের সাহস জোগাচ্ছেন।মনে কিছুটা ভয় নিয়ে বলেও ফেললেন।

-আমি তোকে ভালবাসি।

এই কথা বলতেই আপনি বুঝতে পারলেন মোবাইলের ঐপাশের মানুষটি নিরব হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলেন আগুনের ন্যায় কথাগুলো গরম।বিকট শব্দে বলতে লাগলো। থাপড়াইয়া তোর দাঁত ফালাইয়া দিমু হারামজাদা।তোর সাহস তো কম না।ভালবাসার কথা বলিস।তোকে সামনে পেয়ে নেই তারপর বুঝবি মজা। মানুষটির কথায় আপনি খুব ভয় পেয়ে গেলেন।ভয় পেয়ে কথা আর না বলে লেজ গুটিয়ে ফোনের লাইনটাই কেটে দিলেন। লাইন কেটে ভয়ে দোয়া দরুদ পড়ে বুকে থুথু দিতে লাগলেন। বলতে লাগলেন কি মেয়েরে বাবা।

-আপনি ভয় পেলেন তার মানে আপনার কোন সাহস নাই।

আরে ভাই সাহস কি আর কিনতে পাওয়া যায়? যায় না।সাহস কেউ বিক্রি করেনা।কিন্তু এভাবে বসে থাকলেও তো আর চলবেনা। ফোনে কথা গুলো বলার পর থেকে দুই/তিন দিন চলেগেল। তার সাথে কোন যোগাযোগ করেন নি আর আপনি ভয়ে।যদি সামনে পেলে অপমান করে বসে।আরে ভাই এমনও তো হতে পারে। ঐ মেয়েটা হয় তো মনে মনে ভাবছে,কেন যে হারামিটারে মানে আপনাকে এভাবে বকা দিতে গেলাম।তার মনেও হয়তো আপনাকে নিয়ে আফসোস করছে।

-এই কয়েক দিনে আপনি সাহস কিনলেন।না ভাই সাহস কেনা যায় না আগেআ বলেছি।কারণ এটা তো বিক্রি হয়না।আমার কেনার মানে হচ্ছে বন্ধুদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া।কিভাবে মনের কথাটা আবার বলা যায়।কেমনে তার সাথে ভালবাসার সম্পর্ক করা যায়।বন্ধু বান্ধব আপনাকে কিছুটা সাহস দিলো।তারা পরামর্শ দিলো আরেক বার বলে দেখতে।যা হওয়া তাই হবে।

-আপনিও বন্ধুদের কথামত আবার ফোন দিলেন।ফোন দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন।আপনি ফোন দিতেই আবার সেকি জারি।

-ঐ হারামি, ফাজিল, কুত্তা,বান্দর,উল্লুক,বিলাই,হাদারাম,শয়তান তুই আমারে ফোন দিলি কেন? তোর হাড্ডি দিয়া আমি গুডবারি খেলুম। কথাগুলো শোনে ভাবতেছেন বন্ধু হারামিদের কথায় ফোন দিয়া তো বিপাকে বিপদ পড়তে হইছে।আপনার ভাবনার অবসান হলো।যখন আপনার প্রিয় মানুষটি হারামি বলে ডাক দিলো।আপনিও কোন কিছু না ভেবে আবার বললেন, না মানে আই তোরে আই লাভ ইউ। আপনার এ কথা বলার পর।

আপনি শোনলেন ঐ পাশ থেকে ভেসে আসলো – ঐ হারামি আবার?তুই আমার সামনে আয়।দেখ তোরে কি করি।তোরে কুচি কুচি করে কাইট্টা নদীতে ভাসাই দিমু হারামজাদা।তোর ভালবাসার ভূত ছুটামু। এরকম কথা শোনে ভাবতাছেন এইবার বুঝি আর রক্ষা নাই। দিলেন আবার ভয়ে ফোন কেটে।বলতে লাগলেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। এদিক দিয়ে মেয়েটা রাগে হয়তো বেলুনের মতো ফুলতেছে।আবার এটাও বলতেছে হারামিটারে হাতের কাছে পাই আগে।ফোন করে ভালবাসি বলে। সালা রামছাগল হাদারাম সরাসরি বলতে পারেনা ভালবাসি কথাটা।

এই ঘটনার পর আরও ৫/৭ দিন তার সাথে কোন যোগাযোগ নাই আপনার।কি ভাবে কোন মুখ নিয়ে যোগাযোগ করবেন? কিন্তু ৫/৭ হয়ে গেলো কোন যোগাযোগ নাই। আপনার মনটাকেও মানানো যাচ্ছেনা।এমনতো হয়নি আগে। বলছেন কেন যে ভালবাসার কথা বলতে গেলাম।এভাবেই থাকলেই হতো।কি দরকার ছিল ভালবাসি কথাটি বলার।মনে মনে ভাবছেন ফোন দিবেন। ঠিক ঐসময় আপনার মোবাইলে আপনার প্রিয় মানুষটির নাম্বার ভেসে ওঠলো। আপনে নাম্বার দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়েগেলেন।কিন্তু মনটা আবার চুপসে যাওয়া বেলুনের মত হয়ে গেল।এই ভেবে যে আবার যদি বকা দেয়।কিন্তু মনে মনে এটাও ভাবতাছেন কি করবেন। শত জল্পনা কল্পনার পর ফোন রিসিভ করলেন রিসিভ করতেই-

-এই তুই কই? গরম ভাবে বললো না নরম ভাবে বললো আপনি বুঝতে পারেন নি।বুঝতে না পেরে হুদাসে বললেন

-দেখ আমি তোকে আর ভালবাসি বলবোনা। তবুও শুধু হারামি বলে বকাঝকা করিস না। আমি মোটেও হারামি না।আর তোর বকাও শোনবো না।

– হারামি বলবো একশ বার বলবো।হাজার বার কোটি বার বলবো।সামনে পেলে থাপড়ায়া তোর সব কয়টা দাঁতও ফেলবো। কই তুই? ৩০ মিনিটের ভিতর বকুলতলায় আসবি। নাহ হয় খবর আছে।যদি দেরি হয় তাহলে তোর মন্ডু দিয়ে আমি হালিম রান্না করবো বলে দিলাম।

-আপনি আত্মহারা হয়েগেলেন।না খুশির ঠেলায় না, ভয়ের ঠেলায় আত্মহারা হলেন।

কি আর করবেন ভয়ে ভয়ে আপনি কাপা কাপা গলাই হ্যা বলে দিলেন।বলে দিয়েও যেন বিপাকে পড়লেন।ভাবতে লাগলেন কি আছে কপালে।যা হবার তাই হবে যা করবে সব গোপালে। রেডি হতে হতে ৩০ মিনিটের জায়গাই ৪০ মিনিট লেগে গেল। তবুও আপনি মহারানী থুক্কু আপনার কাছে এখন দজ্জালনী।তার কাছে পৌছলেন।

আপনি সেখানে উপস্থিত হয়ে। মহারানীর উপর থেকে আজকে যেন চোখ নামাতে পারছেন না। আজকে মহারানীর সেই সাজে সেজেছে।শাড়ি পড়া অঙ্গে কাজল কালো চোখে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে, লিপস্টিক হীন ঠোঁটে আর হাত ভূতি চুড়িতে আজ অন্যরকম লাগছে।আপনি যেন স্বপ্ন দেখছেন। মহারানী আপনার সামনে একটা তুরি দিয়ে আপনাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো।আপনি স্বপ্ন নয় বাস্তবেই দেখছেন।কিন্তু এত আনন্দের মাঝে ভয়ও লাগছে।কারণ ভাবছেন সুন্দরীরা রূপবতী হয় সাথে খুনওবতীও হয়।কে না জানে আপনাকে খুন করে বসে।

আপনাকে অবাক করে দিয়ে আপনার হাতটি ধরে সেই জায়গাতে নিয়ে গেলো। যেখানে বসে আপনারা ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাঁটাতেন দু’জন।সুখ স্মৃতির জায়গা এটা। সুখ স্মৃতির জায়গাতে নিয়ে যেতেই আপনি আপনার কানের কাছে বজ্র পাতের মত আওয়াজ শোনতে পেলেন। হ্যা আপনাকে থাপ্পড় মারা হয়েছে।আপনার রূপবতী, গুণবতী মায়াবতী থাপ্পড় মেরেছে।মনে মনে ভাবছেন আব্বা গো আর বুঝি রক্ষা নাই। হঠাৎ দজ্জালনী আপনাকে বলতেছে ঐ হারামি,কুত্তা, বিলাই ঐ আগের সব গালি দিয়ে বলতেছে। এতো বছর পর ভালবাসি বললি কেন?

তবুও মোবাইলে। হারামি কোথাকার তোর কি কোন সাহস নাই সরাসরি বলতে।নাকি হাতে চুড়ি পরে ঘুরিস যে সাহস নাই।এই কথা শোনে কিছুটা লজ্জা পেলেন।তারপর আবার শোনলেন বলতেছে তোকে যে আমিও ভালবাসি সেটা কেনো বুঝিস না তুই।মেয়েরা কি আগে কখনো ভালবাসি বলে? হারামি কোথাকার একটা কথা বলতে এত বছর লেগে গেল। এই বলে কিছু কিল ঘুষি আপনার বুকের উপর পড়লো। এদিকে আপনার আর কোন ভয় নাই! মনে মনে খুশি হলেন কিন্তু মনটা ভার করে বললেন।তাকে রাগানোর জন্য- তুই যা দজ্জালনী।মোবাইলে ভালবাসি কথা বলতেই যা করলি।সরাসরি বললে আমার অবস্থা শেষ হয়ে যেত।আমার গার্লফ্রেন্ড বিধবা হয়েযেত।

-কি আমি দজ্জালনী? তোর আরও গার্লফ্রেন্ড আছে।সে বিধবা হয়ে যেত।

যা আমার সাথে তোর থাকতে হবেনা।যেখানে যাবি যা।মুখটা মলিন করে অন্য দিকে ঘুরে বললো। আপনি বুঝতে পারলেন দজ্জালনী।ওহ সরি গায়েজ আপনার দজ্জালনী তো মহারাণী হয়েছে।আপনি বুঝতে পারলেন আপনার মহারাণী অভিমান করেছে। অতঃপর মহারানীর রাগ ভাঙ্গাতে একটু কাছে গেলেন। কানে কানে বলতে লাগলেন, আজকে যে থাপ্পড়টা মারলি।এটার প্রতিশোধ ব্লা ব্লা রাতে তুলবো।ব্লা ব্লা রাত মানে ইয়ের রাত।আরে মশাই বুঝেন কেন ইয়ের রাত মানে বাসর রাত আরকি। অতঃপর মহারানী এই কথা শোনে লজ্জায় কয়েক কিল ঘুষি আপনার বুকে দিলো।তারপরে আপনার বুকেই তার লজ্জা মাখা মুখ লুকালো। ব্যাস হয়ে গেলো আপনার প্রেমের কেল্লাফাতে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত