চেয়ারম্যান সাহেবের মেয়ে

চেয়ারম্যান সাহেবের মেয়ে

রাত বাজে বারোটা , হঠাৎ নাছরিন কল দিয়ে বলে ,
= এই কি করছো ।

– এইতো এখন ঘুমাবো । ( আমি )

= আমার না ঘুম আসছে না , তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ।

– তাহলে ভিডিও কল দাও , দেখতে পাবে ।

= ভিডিও কলে না , তোমাকে সরাসরি দেখতে ইচ্ছে করছে । তোমার হাত ধরে গল্প করতে ইচ্ছে করছে ?

– কাল সকালে তাহলে দেখা করি ।

= না , এখনি ।

– এখন এত রাতে তা কি করে সম্ভব ।

= তুমি চলে আসো না আমাদের বাসার সামনে । আমি তোমাকে এক নজর দেখবো ।

– তুমি কি পাগল হয়ে গেছো নাকি, কি বলছো তুমি বুঝতে পারছ ।

= আমি সব বুঝে শুনে তোমাকে আসতে বলছি ।

– যে চেয়ারম্যান সাহেব , এলাকা থেকে চোর মুক্ত করার জন্য কত পদক্ষেপ নিচ্ছে । আর আমি কিনা সেই চেয়ারম্যানের বাসায় যেতাম চুরি করে , উনার মেয়ের সাথে দেখা করতে । তোমার মাথা ঠিক আছে কি । ( তার বাবা আমাদের গ্রামের চেয়ারম্যান )

= দেখো আমি এত কিছু বুঝতে চাইনা তোমাকে না দেখলে আমার ঘুম আসবে না। তুমি যেমন করে পারো পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও আমাদের বাসার সামনে চলে আসো ।

– দেখো এই রাতে একদম ন্যাকামি করবা না ।

= আমি একদম ন্যাকামি করছি না, তুমি যদি না আসো তাহলে তোমার সাথে আমি রিলেশন রাখবো না ।

– এখন কিন্তু ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে ।

= হাঁ তাই করছি দরকার হলে আরো অনেক কিছু করব । এখন তুমি আসবে কিনা বলো ।

– না এসে কি আর উপায় আছে , ঠিক আছে আমি আসতেছি ।

কি আর করার তার কথা রাখার জন্য , তাদের বাসার সামনে গেলাম । বেশি দূর নয় মাত্র দশ মিনিটের পথ । বাসার সামনে থেকে কল দেওয়ার সাথে সাথে সে রিসিভ করে । তার মানে সে জেগে আছে আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।
সে ফোন রিসিভ করে বলে, জানালার পাশে আসার জন্য । আমি চারপাশে দেখে নিলাম কেউ আছে কিনা । তারপর তার জানালার পাশে গেলাম । জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তার সাথে আধা ঘন্টার মত কথা বললাম ।

কথা বলা শেষ করে তাকে বিদায় দিয়ে চলার পথ ধরলাম সাবধানে । কিন্তু এত সাবধানে থেকেও কোনো লাভ হলো না । তার বড় ভাইয়ের সামনে পড়লাম । দৌড়ে যে পালাবো সেই অবস্থাও নাই । একদম মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে ।
তার ভাই আমার কলার চেপে ধরে বলে ” কে তুই বাসার সামনে কি করিস চুরি করতে এসেছিস । আমি জানি না তখন আমার এত সাহস কোথা থেকে এসেছিল । যার সামনে আমি কখনো যাই নি যাকে দেখলেই আমি দূরে দূরে থাকতাম । আজ তার মুখের উপর বলে দিলাম । আমি কোন চোর না চুরি করতে আসেনি । আমি তোমার বোনের সাথে দেখা করতে এসেছি শালা । সাথে সাথে তার ভাই আমাকে একটা ঘুষি মারে । আর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি ।

সকালে যখন আমার জ্ঞান ফিরে , তখন দেখি আমার ভয়াবহ অবস্থা । একটি চেয়ারের সাথে আমাকে বেঁধে রেখেছে । পাশে তাকিয়ে দেখি তার ভাই চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমার জ্ঞান ফিরতে দেখে সে রুম থেকে বের হয়ে চেয়ারম্যান সাহেব কে ডাকতে গেলেন । একটু পরেই চেয়ারম্যান সাহেব রুমে ঢুকলেন ।
আমার মাথার চুল ধরে জিজ্ঞেস করলেন ” সত্যি করে বল এত রাতে কেনো আমাদের বাসায় এসেছিলি । তখন নাছরিনের ভাই বলে ” বাবা এত কথা জিজ্ঞেস করার কি আছে পুলিশ ডেকে তাদের হাতে তুলে দেন, শালা চোর একটা । চেয়ারম্যান সাহেব তখন রেগে গিয়ে বলে “তুই চুপ থাক । আর তুমি বলো কেন এসেছিলে ?

আমি আমতা আমতা করে বললাম ” আমি কোন চোর না বা চুরি করতে আসেনি । আমি আপনার মেয়ে নাছরিনের সাথে দেখা করতে এসেছি । তাকে আমি ভালোবাসি । চেয়ারম্যান সাহেব তখন বলেন ” আমার মেয়ে কি সে কথা জানে । আমি বলি ” আসলে চেয়ারম্যান সাহেব , আমরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসি । চেয়ারম্যান সাহেব তখন নাছরিনকে ডাক দিলেন । সে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষণ আমি লক্ষ্য করিনি । চেয়ারম্যান সাহেব ঠান্ডা মেজাজে তাকে জিজ্ঞেস করলেন ” এই ছেলে যা বলছে তা কি সব সত্যি । তোমরা দুজন কি দুজনকে ভালোবাসো । সে তখন মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো । চেয়ারম্যান সাহেব যখন আবার ধমক দিলেন । তখন সে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল ।

চেয়ারম্যান সাহেব তখন উনার ছেলে কে বলেন, আমার বাঁধন খুলে দিতে । সে তখন আমার বাঁধন খুলে দিয়ে আমাকে আর একটা ঘুসি মারে । আমি আবারও জ্ঞান হারালাম । যখন আমার জ্ঞান ফিরল , চোখ খুলে দেখি  নাছরিন বসে আছে । তার কোলে উপর আমার মাথা । সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেবলল ” তোমার মা বাবাকে খবর দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে । কিছুক্ষণ পরেই তোমার সাথে আমার এঙ্গেজমেন্ট । কথাটা শুনে অদ্ভূত এক আনন্দ আমাকে গ্রাস করেছে । আমি একটু অসুস্থতার ভান করে । তার কোলে আরো কিছুক্ষণ মাথা রেখে শুয়ে ছিলাম ।

কিছুক্ষণ পরেই মা বাবা নাছরিনকে আংটি পরিয়ে দিলেন । চেয়ারম্যান সাহেব তখন বলে ” আমার একটা মাত্র মেয়ে , আমার জীবনের সবচেয়ে দামি হচ্ছে আমার মেয়ের সুখ । তার সুখের কথা ভেবেই তোমার সম্পর্কটা আমি মেনে নিলাম । কিন্তু কখনো যদি তুমি আমার কলিজার টুকরো মেয়েকে কষ্ট দাও । তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না । ওকে আমি ছোটকাল থেকে রাজকন্যার মত করে রেখেছি । আশা করি তুমিও তাকে রাজকন্যার মত রাখবে । আমি মনে মনে ভাবলাম আপনার মতো মহান পিতাকে দাড়িয়ে সম্মান করতে ইচ্ছা হয়। আমি বললাম ” ঠিক আছে চেয়ারম্যান সাহেব আমি কথা দিলাম নাছরিনকে আমি রাজকন্যার মতোই রাখবো । চেয়ারম্যান সাহেব বলেন ” চেয়ারম্যান সাহেব নয় এখন থেকে শশুর আব্বা বলে ডাকবে ” আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম ” ঠিক আছে শ্বশুর আব্বা ।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত