একটা ছোটখাটো কোম্পানিতে চাকরী করি। খুব অভাবের সংসার। এই অভাবের সংসারে সবার মুখে হাসি ফুটানো আমার একটা বিরাট দায়িত্ব। অফিস থেকে বাসায় যাচ্ছি। এমন সময় দেখতে পেলাম একটা পথশিশু রাস্তায় বসে আছে। আমার কাছে আসল।
” ভাই ২০ টা টাকা দেন। ভাত খাব। ” আমি খুব অবাক হলাম ২০ টাকা দিয়ে ভাত খাওয়া যায়।
” এই নে ৫০ টাকা। তা দিয়ে কিছু খেতে পারবি। ২০ টাকা দিয়ে কিছু খেতে পারবি না। ”
ছেলে টা আমার দিকে চেয়ে বলে ” ভাইয়া আপনি খুব ভালো। ” বাসার কাছে চলে আসলাম। করিম চাচা কে পেলাম। আমি সালাম দিয়ে বললাম ” চাচা আপনি এতো রাত কি করেন? ” চাচা হাসি দিয়ে বললেন ” বাবা আকাশ টা দেখি। একা দেখতে খুব ভালো লাগে। ” আমি কিছু বললাম না। চাচার কাছ থেকে চলে আসলাম। দরজায় কলিংবেল দিলাম। বউ দরজা খুলে আসসালামু আলাইকুম দিল। আমি সালামের উত্তর দিলাম। আমি অধরা কে বিয়ে করে যখন বাসায় নিয়ে আসি। তখন দেখতে পেলাম অধরা আমাকে সালাম দেয় না। তাই আমি নিজে আগে সালাম দিতে শুরু করলাম। আমি কয়েক দিন দিলাম। তারপর দেখি অধরা আমাকে সালাম দিতে শুরু করল। এখন প্রতিদিন আমাকে আগে সালাম দেয়। অধরার চেহারা মনমরা হয়ে আছে । হয়তো বেশি কাজকাম করেছে। অধরার মন টা খুশিতে বড়ে দেওয়ার জন্য বললাম ” আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। ”
” কি যে বলেন? ” কালো হয়ে আছি। ”
” কে বলছে? বরং অন্যদিন থেকে আজ বেশি রোমান্টিক লাগছে। আচ্ছা শুনো কাল থেকে আমি তোমার সাথে রান্না করব। ”
” তা কি করে হয়? আপনি সারাদিন অফিস করে বাসায় আসেন। একটু বিশ্রাম দরকার। আপনি বিশ্রাম নেন। ”
” ইশ! তুমি ওত খুব পরিশ্রম করো। আমার জন্য কত কষ্ট করে রান্না করো। তোমার খুব কষ্ট হয়। ”
” আচ্ছা বাদ দেন। আসেন খেতে আসেন। ”
খাবার টা মুখে নিতেই। খুব ঝাল লাগল। হয়তো মরিচ বেশি দিয়েছে।
” খাবার টা কেমন হয়েছে। ”
” খুব ভালো হয়েছে। ”
” আমাকে ধন্যবাদও বললেন না। ”
” হেহেহে। ধন্যবাদ। ”
” হাসি টা একদম বিশ্রী। ”
” তুমি এতো ভালো রান্না করো। খেতে খুব ভালো লাগছে। ”
আসলে রান্না টা তেমন ভালো হয় নি কিন্তু তবুও বললাম ভালো হয়েছে। এই কথা বলায় অধরা খুব খুশি হয়েছে।
রাতে যখন ঘুমাইতে গেলাম। অধরা কে বললাম ” আই লাভ ইউ। ”
” হিহিহি। প্রতি রাতেই বলা লাগে? ”
” তবুও তোমার প্রতি কর্তব্য শেষ হয় না। তোমাকে যত দেখি তত ভালো লাগে। তোমার মুখ টা এতো মায়াবী কেন? তুমি আমাকে পাগল করে দেও। বিশ্বাস করো তোমাকে ভালবাসি। ”
” ইশ! আমি যেমন আপনাকে ভালবাসি না । আমিও আপনাকে খুব ভালবাসি। তবে আপনার থেকে আমি বেশি ভালবাসি। ”
” না না। আমি। ”
” না। আমি। ”
” গাল ফুলিয়ে বসে আছো কেন? ”
” আমি বেশি ভালবাসি। এই কথা আপনি বলেন।
” ঠিক আছে বাবা। তুমি আমার থেকে বেশি ভালবাসো। এবার খুশি তো। ”
” হ্যা। অনেক খুশি।
অফিসে চলে যাচ্ছি। এমন সময় পাশের বাসার এক দাদি আসলেন। অধরা কে এক চোখ টিপা মারলাম। অধরা তো লজ্জায় একেবারে শেষ। আমি যখন সময় চোখ টিপা মারলাম তখন দাদী দেখে ফেললেন।
” বউ এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই। ছেলেরা একটু একটু দুষ্টু হয় নইলে সুখ আসে না। ছেলেটা খুব ভালো। ”
” জানতে হবে না। স্বামী টা কার? আমার স্বামী। ”
” বউ আমার মাথা টা একটু তেল দিয়ে দাও তো। ”
এরপর লজ্জা পেয়ে চলে আসলাম। রাতে ভাত খাচ্ছি অধরা আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে। বুঝতে পারলাম চাওয়ার কারণ কি।
” মুখ বড় করে (আ) করো তো।
” কেন? ”
” এতো ভাব ধরতে হবে না। খাইয়ে দিব। মনে হচ্ছে ডিনার করো নি। ”
” হিহিহি। দেন। ”
” হুহুহু। ”
” কি হইল?
” হাতে কামড় দিলে কেন? খুব ব্যথা পাইছি। ”
” ব্যথা পান নাই তো? ”
” ব্যথা পাব কেন? বউয়ের কামড়ে কি ব্যথা পাওয়া যায়। বরং হাত টা শক্ত হয়। হিহিহি ”
” ও। তাই বুঝি। দেন আরেক টা কামড় দেই। ”
” না বাবা। আর না। নইলে হাত দিয়ে রক্ত বের হবে। ”
” এবার আপনি খান। ”
” ওকে।
অধরা ঘুমিয়ে আছে। সারপ্রাইজ দিলাম। ঘুম থেকে তুলে বললাম ” শুভ জন্মদিন। ” মেয়েটা কেঁদে দিল। কেঁদে দিয়ে বলল ” এতো ভালবাসেন কেন? মাঝে মাঝে ভয় দেখিয়ে দেন। ”
” পাগলি মেয়ে ভয়ের কি আছে? ”
” আমাকে একা রেখে চলে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁঁচব? ”
” দূর। নেও কেক খাও। ”
” আপনিও খান। ”
” কাল কিন্তু ঘুরতে যাব। ”
” সত্যি। ”
” সত্যি। ”
সকালবেলা সাজতে লাগল। ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম। কিছু সময় পর আমিও সাজলাম। মেয়েটা কে দেখার পর চোখ টা সরাতে পারি নি। খুব মায়া লাগছে। ঠোটে লিপস্টিক। চোখে কাজল। হালকা মেকাপ। মাথায় বেলী ফুলের মালা। কি অপূর্ব লাগছে।
” কি অপূর্ব? ”
” কাকে অপূর্ব লাগছে? ”
” আমার কি দশ টা বউ। আমার মাত্র একটা বউ। তাকে বললাম অপূর্ব লাগছে। ”
” ইশ! বুঝতে পারছি। আমার সাথে মশকারি করেন। ”
” তোমার প্রেমে আবার পড়ে গেলাম। আই লাভ ইউ। ”
” আই লাভ ইউ টু। ”
” চলো এবার যাই। ” রাতে মাথায় একটা বুদ্ধি আসল। অধরার সাথে লুডু খেলব।
” তুমি কি আমার সাথে লুডু খেলতে পারবে? আমি ছোট বেলায় সব সময় চ্যাম্পিয়নস হতাম। ”
” আপনি তো নিজের প্রশংসা নিজে করেন। আমার সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা নাই। ”
” দেখা যাক। ”
” লুডু আনেন। এখনই জিতিয়ে দেখাব।
ইচ্ছা করে হেরে গেলাম। অধরার মুখে হাসি দেখার জন্য। তার মন টা খুশিতে বড়ে গেল। আমিও খুশি। কারণ অধরা খুশি।
” দেখলেন কিভাবে আমি আপনাকে হারিয়ে দিলাম। ”
” তুমি তো খুব ভালো লুডু খেলতে পারো। ”
” এখন তো খুব শান্ত কন্ঠে কথা বলেন। আগে তো খুব নিজের প্রশংসা করছিলেন।
” হিহিহি। ”
” এতো হাসেন কেন? ”
” হেরে গেছি তাই। ”
” নির্লজ্জ। “আজ রাতে রান্না করলাম। অধরা ঘুমিয়ে আছে। অধরা ঘুম থেকে উঠে দেখে আমি রান্না করলাম।
” কি করছেন? ”
” রান্না করছি। ”
” আপনি রান্না করতে পারেন? আগে তো জানতাম না। ”
” তোমার কাছ থেকে শিখেছি। ”
” আমি কোনো দিন আপনাকে শিখিয়েছি? ”
” হিহিহি। আমি লুকিয়ে দেখেছি। ”
” আপনি একটা চুর। আমার রান্না কেন আপনি লুকিয়ে দেখেছেন? ”
” তাতে তোমার কি? আমি আমার বউয়ের রান্না চুরি করে দেখেছি। তোমার। জ্বলে কেন? ”
” আপনার বউ কয়টা ? ভ্যাএএএএএএ। ”
” কান্না করো কেন? ”
” আপনি এখন না বললেন যে আপনার বউয়ের কাছ থেকে রান্না শিখছেন। তো সে বউ কে? ”
” তুমি। হিহিহি। আমার একমাত্র বউ। ”
” তাইলে মায়া করে বলতে পারেন না । এমনভাবে বললেন যেন আরেকজন আছে। ”
” হা হাহাহাহা। ঠিক আছে। মায়া করে ডাকব ও আরেক টা বিয়ে করব। ”
” মেরে ফেলব। ”
” দূর। তুমি ওইতো আমার আশার আলো।
“সারাদিন অনেক ক্লান্ত ছিলাম। কিন্তু বাসায় এসে দেখি অধরা ঘুমিয়ে আছে। মাথায় হাত দিয়ে দেখি অনেক জ্বর।
” জ্বর কখন আসলো? “।
” আপনি কখন আইছেন? দেন ব্যাগ টা দেন। ”
” তোমার তো জ্বর। ঘুমিয়ে থাকো। ”
” না ব্যাগ দেন। আপনি টেবিলে যান আমি খেতে দিচ্ছি। ”
আমি বুঝতে পারছি মেয়েটা আমার প্রতি বিরক্ত হলো। আসলে অফিসের কাজের জন্য বাসায় কল করতে পারি না। যদি কল করতে পারতাম তাইলে অধরার জ্বর টা জানতে পারতাম। এখন তো ওষুধ আনতে হবে। তাই ওষুধ আনতে চলে গেলাম। ওষুধ নিয়ে এসে দেখি অধরা টেবিলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। অধরা কে ঘুম থেকে তুলে ওষুধ খাইয়ে দিলাম। মেয়েটা একটু শান্তি অনুভব করল। আমার দিকে চেয়ে হয়তো কষ্ট অনুভব করল। আমিও ঠোট ভেঙ্গে অপরাধী সাজলাম। ভালবাসা টা তৈরি করে নিতে হয়। তাতেই হয় ভালবাসা পবিত্র।