রুহির রাগ হচ্ছে। বিশ মিনিট বাদে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। এদিকে বিজয়ের কোন পাত্তা নেই।এখনও ঘুম থেকে উঠেছে কি না কে জানে।ছেলেটার জন্য প্রতিদিন ক্লাসে যেতে লেট হয়। রুহিকে গম্ভীর দেখে রুহির মা জিজ্ঞাসা করলেন “কিরে কি হইছে?এভাবে বসে আছিস কেন?” রুহি রাগ দেখিয়ে বললো “কিছু না যাও।”
– আজ ভার্সিটিতে যাবি না?
– যাবো।
– ক্লাস কয়টায়?
– এগারোটায়।
– দশটা চল্লিশ বাজে।যাবি কখন আর ক্লাস করবি কখন!
– সেই কথা বিজয়কে গিয়ে বলো।ও এখনও রেডিই হয়নি।
– তাহলে তুই একা চলে যা।
– ধুর, যাওতো গিয়ে তোমার কাজ করো।
রুহির মা চলে গেলেন। রুহি ফোন হাতে নিয়ে বিজয়ের নম্বরে কল করলো। কিছুক্ষণ রিং বাজার পর বিজয় ফোন রিসিভ করে ঘুম মিশ্রিত কণ্ঠে বললো;
– কি হইছে বল।
– তুই উঠিস নাই?
– উঁহু।
– ভার্সিটিতে যাবি না?
– যাবো।
– কখন?
– সাড়ে এগারোটায়।
– এগারোটায় ক্লাস।তুই সাড়ে এগারোটায় ভার্সিটিতে যায়ে কি করবি?
– এক মেয়ের সাথে মিট করতে হবে।
– নাম কি?
– নেহা।কাল রাতেই ফেসবুকে পরিচয় হইছে।ফাস্ট ইয়ার্সের।
– মিট করতে হবে না।
– কেন?
– মানা করছি তাই।
– আমি মিট করবো।তাছাড়া তুইও থাকবি।একা মিট করতে ভয় পাই।
– সারারাত ওই মেয়েটার সাথে কথা বলছিস তাইনা?
– বুঝলি কিভাবে?
– ঘুমের লিমিটেশন দেখে।ওয়েট, আজ তোকে শিক্ষা দিচ্ছি। বিজয় জবাব দেওয়ার আগে রুহি ফোন কেটে বিজয়দের ফ্লাটে গেলো। বিজয়ের মা হেসে জিজ্ঞাসা করলেন “কেমন আছো মামনী?” রুহি অভিমানের সুরে বললো “ভালো না।”
– কেন কি হইছে?
– তোমার ছেলে একসাথে ভার্সিটিতে যাবে বলে বসায় রাখছে।এখন বলতেছে ভার্সিটিতে যাবে না।পরে জিজ্ঞাসা করলাম কেন যাবে না।তো বললো কোন গার্লফ্রেন্ডের সাথে নাকি দেখা করবে।
– গার্লফ্রেন্ড?
– হ্যা।তোমরা কোন খবর রাখো ওর?তোমাদের ছেলে খারাপ হয়ে গেছে।কয়েকটা মেয়ের সাথে প্রেম করে।মাঝে মধ্যে সিগারেট খায়।ভার্সিটির সবচেয়ে বাজে ছেলেগুলোর সাথে মিশে।এর আগে অনেকবার মারামারিও করছে।
– কিহ্!আজ বিজয়ের বাবা আসুক বাসায়।ওনাকে বলে এমন সায়েস্তা করবো!
– পিটুনি না দিলে ঠিক হবে না।বিজয় কি ঘুম থেকে উঠছে আন্টি?
– মনে হয় না।
– আচ্ছা ওরে ঘুম থেকে তুলে আসতেছি।তোমার সাথে অনেক কথা আছে।
– ঠিক আছে।
রুহি বিজয়ের রুমে ঢুকে এদিকসেদিক তাকাতে লাগলো। বিজয় মুখের সামনে থেকে ফোন সরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “কিরে কি খুঁজিস?” রুহি দরজার পাশ থেকে ঝাড়ু হাতে নিয়ে বললো “এইটা খুঁজি।” “কেন?ঝাড়ু দিয়ে কি করবি?” রুহি জবাব না দিয়ে বিজয়ের দিকে ছুটে গিয়ে উড়াধুড়া মাইর শুরু করলো। বিজয় চেঁচিয়ে বলতে লাগলো “আরে মারতেছিস কেন?আমি কোন দোষ করলে বল।আস্তে মার।আঃ…উঃ…মারিস কেন?” রুহি টানা পাঁচ মিনিট ঝাড়ু পেটা করার পর ক্লান্ত হয়ে বিছানায় বসলো। মুখ ঘেমে গেছে। কিচেন থেকে বিজয়ের মা এসে জিজ্ঞাসা করলেন “এত চিল্লাপাল্লা কিসের?” রুহি হাসি মুখে জবাব দিলো “তেমন কিছু না আন্টি।ও খাট থেকে পড়ে গেছিলো।” বিজয়ের মা ও আচ্ছা বলে চলে গেলেন। বিজয় অবাক দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি দাত কিটমিট করে বললো;
– ব্যথা করছে?
– হুম।
– মলম লাগিয়ে দিবো?
– না থাক।মারলি কেন সেটা বল।
– হুদাই, মারতে ইচ্ছা হইলো।
– মারতে ইচ্ছা হইলেই মারবি?
– হুম, কোন সমস্যা?সমস্যা থাকলে বল।আন্টিকে গিয়ে তোর কুকর্মের কথা বলি।
– কি বলবি?
– সিগারেট, জুয়া, নেশা, ইভটিজিং, মারামারি আরও যত বাজে কাজ আছে সব বললো।
– কবে!কখন!কিভাবে!এরকম ডাহা পড়া মিথ্যা কথা বলতে তোর বাঁধবে না?
– না, একটুও বাঁধবে না।
– তোর নামেও মিথ্যা বলবো।
– তুই বললে জীবনেও কেউ বিশ্বাস করবে না।
– কিছু বলার নাই।যা ঘুমাবো।
– উঁহু, উঠে ফ্রেশ হয়ে চল।
– কোথায়?
– ভার্সিটিতে।তোর জুনিয়র অপেক্ষা করতেছে।
– কয়টা বাজে?
– এগারোটা দশ।
বিজয় লাফ দিয়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। রুহি সেই সুযোগে বিজয়ের আইডিতে ঢুকে নেহা এবং বিজয়ের সব চ্যাটিং পড়তে লাগলো। বিজয় এবং রুহি ক্যাম্পাসে বসে আছে। দুজনের মধ্যে দেখা করার অপেক্ষা। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রায় বিশ মিনিট লেটে নেহা উপস্থিত হলো।
– হাই বিজয়।
– হাই।
– কেমন আছো?
– হুম ভালো, তুমি।
– আমিও।সরি ফর লেট।আসলে বাসা থেকে ফোন দিয়েছিলো তো।
– ইটস্ ওকে।এনিওয়ে, মিট মাই বেস্ট ফ্রেন্ড রুহি।এন্ড রুহি, সি ইজ নেহা। রুহি নেহার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো “প্রথম বর্ষ?” নেহা হেসে বললো “হ্যা।”
– বিজয় তোমার থেকে কয় ব্যাচ সিনিয়র?
– আই থিংক টু অর থ্রি।
– টু অর থ্রি!তো তুমি বিজয়কে কি বলে সম্মোধন করলে?
– তু..তুমি![ঘাবড়ে গিয়ে]
– আচ্ছা।সিনিয়রদের তুমি বলে ডাকা তোমাকে কে শিখিয়েছে?
– উনিই বলছে।
রুহি বিজয়ের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো “তুই বলছিস তুমি করে ডাকতে?” বিজয় ঢোক গিলে বললো “না….মানে হ্যা।” “প্রেম করার ইচ্ছা জাগছে?” বিজয় কাঁপা স্বরে বললো “ছোট বোন, তাই ভাবলাম!” “তোর ভাবা আমি ছোটাচ্ছি।” নেহা ভয় পেয়ে বললো “আপু আমি যাই তাহলে।” রুহি ঝাড়ি মেরে বললো “তোরে যাইতে বলছি?শালি ভার্সিটিতে এসেই নৈটামি শুরু করে দিছিস।তোর নৈটামি আগে ছুটায় নেই।” “সরি আপু।আমি জানতাম না বিজয় ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে।” রুহি নেহার কথায় কান না দিয়ে ইশার নম্বরে কল করলো।
– দোস্ত কই তুই।
– পুকুরপাড়ে, কেন?
– এক জুনিয়র ম্যাইয়া বেয়াদবি করছে।
– তুই কোথায় এখন?
– ক্যাম্পাসে বটতলা বসে আছি।
– ওকে থাক, আসতেছি।
– না শোন, আমি মেয়েটারে কান ধরায় এক পায়ের ওপর দাড় করিয়ে রেখে যাচ্ছি।তুই এসে বাদবাকি শায়েস্তা কর।মেয়েটা লাল টপস আর জিন্স পড়া।চুল লেয়ার কাট।এখানে আসলেই বুঝে যাবি।
– আচ্ছা দোস্ত।অনেকদিন বিনোদন হয় না।আজ একটু বিনোদন হবে।
রুহি ফোন কেটে নেহার উদ্দেশ্য বললো “কানে ধরে এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাক।” নেহা চারিপাশে তাকিয়ে বললো “কিন্তু আপু!” রুহি চিৎকার দিয়ে বললো “তুই সিনিয়রের কথা অমান্য করবি?” নেহা জবাব না দিয়ে কান ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ক্যাম্পাসের সবাই নেহার দিকে তাকিয়ে হাসছে।অনেকে ছবি তুলছে। রুহি বিজয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো “চল।”
“কোথায়?”
“তোর প্রেম করার শখ জাগছে।শখ মিটায় দিয়ে আসি।যাতে পরবর্তীতে কোন ধান্দাবাজের হাতে না পড়স।”
“মানে?”
“তোর এই নেহা একনাম্বারে কল গার্ল।যেখানে যার সাথে সুযোগ পায় শুয়ে পড়ে।ইন্টারে থাকতে আমার কাজিনের সাথে ওর রিলেশন ছিলো।পরে কাজিনের বন্ধুর সাথে রিলশনে জড়ায়।বাকি ইতিহাস না বললাম।”
“তুই এত কনফিডেন্সের সাথে কিভাবে বলছিস?”
“কারণ আমার কাজিন সুইসাইড করছিলো।”
“অর্নব ওর জন্য সুইসাইড করছিলো?” রুহি জবাব না দিয়ে বিজয়ের হাত ছেড়ে হাঁটতে লাগলো। বিজয় রুহির সামনে কান ধরে বললো “সরি।”
– ফর হোয়াট।
– ডোন্ট নো।
– ওকে।
– তুই প্রেম করায় দিতে চাইলি?
রুহি ভ্রু কুচকে বিজয়ের দিকে তাকালো। বিজয় বোকা বোকা হেসে বললো “হে হে হে, জাস্ট ফান।” রুহি সিরিয়াস ভাবে জিজ্ঞাসা করলো “তোর কেমন মেয়ে পছন্দ?” বিজয় কিছুক্ষণ ভাবলো।তারপর বললো “যে আমাকে বুঝবে।আমার হেলামো গুলো মেনে নিবে।ভুল সুধরে দিবে।বিপদেও পাশে থাকবে।সবচেয়ে বড় কথা, হাজার অন্যায় করলেও ছেড়ে যাবে না।সব মিলিয়ে ঠিক তোর মতন।”
রুহি অন্যদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “এরকম মেয়ে পাবো কোথায়?” বিজয় রুহির হাত ধরে দাঁড় করিয়ে সামনে গিয়ে হাঁটু গেরে বসে আস্তের করে বললো “কেন তুই আছিস না?” রুহি হেসে ফেললো।সে জবাব খুঁজে পাচ্ছে না। ইচ্ছা করছে ভরা ক্যাম্পাসে সবার সামনে জড়িয়ে ধরতে। বিজয় রুহির নীরবতা দেখে বললো “চুপ কেন?” রুহি বিজয়ের চোখে চোখ রেখে বললো “চল আজকেই বাসায় জানিয়ে বিয়ে করে ফেলি।” বিজয় লজ্জা অনুভব করলো। এক মুহূর্তের জন্য দুজনের মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সবটুকু সুখ যেন তাদের অপেক্ষাতে আছে।