ম্যাডামের সাথে প্রেম

ম্যাডামের সাথে প্রেম

আমিও কলেজে ভর্তি হয়েছি, কলেজে নতুন ম্যাডামেরও আগমন ঘটেছে! ম্যাডাম অনেক কিউট আর অনেক বেশি ফ্যাশনেবল! প্রতিদিন ক্লাসে ঢুকে মুচকি হেসে তিনি সবাইকে বলেন, “কেমন আছো সবাই?”

এরপর তিনি কিছুক্ষণ নীতি বাক্য দিয়ে যান! ওনার নীতি বাক্যগুলো হচ্ছে, “ভুলেও এই বয়সে প্রেম করবানা তোমরা, অন্যথায় লাইফ হেল হয়ে যাবে! আমাকে দেখো, স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটি কোথাও কারো সাথে রিলেশন ছিলনা, অনেক ছেলে প্রোপজ করলেও পাত্তা দিইনি; ফলাফল আমি মাস্টার্স শেষ করেছি এবং তোমাদের সামনে আজ লেকচার দিচ্ছি!” উনি লেকচার দিচ্ছিলেন প্রতিদিন ভালই লাগতো খারাপ না, প্রতিদিন বাংলা সাবজেক্টটা আমাদের ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যেতেন এটাও ভাল ছিল! কিন্তু হঠাৎ একদিন উনি আমার পিছু লাগলেন! ভুল করে ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের দিকে আমার চোখ পড়লে দুজনেই মুচকি হেসে উঠি ৷ ম্যাডাম এটা দেখে দাঁড় করালেন আমাকে এবং জ্ঞান দেওয়া শুরু করলেন! উনি বললে,

____এই বয়সে এত প্রেম আসে কোথা থেকে তোমাদের হুম? লেখাপড়ার বেলায় তো ঘোড়ার আন্ডা! আবার চুল কেটে আসছো ভিলেনদের মত করে! বুঝলাম না ম্যাডাম হঠাৎ চুল নিয়ে পড়লো কেন? উনি আরো বললেন,

____বোতাম খোলা কেন? ঠিক করো! স্টুপিড ছেলে! শোনো তোমাদের মত ছেলেদের সুযোগ দিলে মাথায় উঠে পড়ো ৷ আজ আমার পুরো ক্লাসে তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে! কোন কম্প্রমাইজ চলবেনা আমার কাছে!

____ম্যাডাম, আমার ভুলটা কি ছিল?
____আমার ক্লাসে কারো সাথে চোখ টিপ মারা, মুচকি হাসা, কথা বলা চলবেনা ৷ আমি ক্লাসে এসব দেখতে আসিনা!
____হায় ম্যাডাম! আমি কখন এসব করলাম?
____চুপ করো বেয়াদব, তোমাকে আমি ভাল করেই নোটিস করেছি; চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো!

কি আর করার পুরো দেড় ঘন্টা ক্লাসে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো আমাকে! সবার সামনে ৷ মেয়েরা আমার এমন অবস্থা দেখে মিটমিট করে হাসছিল! এ লজ্জা কই রাখি? তারচেয়ে বড় কথা ম্যাডাম আমাকে যেভাবে অপমানিত করলো এই অপমানের জ্বালা কখনো কি দূর হবে? ক্লাস শেষে সবাই আমাকে ক্ষ্যাপাতে লাগলো! ব্যাপারটা ভুলে যাবার চেষ্টা করলাম! ম্যাডাম যেহেতু একটা অপবাদ দিয়ে ফেলছেই সূতরাং সেটা সত্যে পরিণত করবো ৷ প্রেম আমাকে করতেই হবে! এবং প্রেম অন্য কারো সাথে নয় ম্যাডামের সাথেই করবো! আর সেটা ফেসবুকে!

আমার ক্লাসমেটস নিলিমার থেকে ম্যাডামের আইডির লিংক নিলাম! তার আইডির নাম “সানজিদা আক্তার বিথী”
দেখলাম ম্যাডামের প্রোফাইলে দারুণ একটা পিকচার দেওয়া আছে! নীল শাড়ি পড়ে গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে ছবিটা উঠেছে ৷ আসলেই চমৎকার লাগছিল! পিকচারটা পাবলিক করা, লগ করা ছিলনা! কমেন্ট করতে যাবো তখনই মনে পড়ে গেল আমি যে আইডি দিয়ে কমেন্ট করতে যাবো আইডিতে তো আমার পিকচার দেওয়া আছে অনেকগুলো! এটা দিয়ে কমেন্ট করলে তো চিনে ফেলবে! এজন্য নতুন আইডি খুললাম! প্রোফাইলে ইরানী হিরোর পিকচার দিলাম! আমি জেনেছি ম্যাডাম সিনেমা দেখেনা এজন্য সুদর্শন হিরোর পিকচার দিলাম যাতে ম্যাডামের নজর লাগে! আইডিটা আরো আকর্ষণীয় করে তুললাম চমৎকার ভাবে Quotes, Bio লিখে! ম্যাডামকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালাম! তারপর ওনার পিকচারে কমেন্ট করলাম,

____“ওয়াও, আপনি এতটা সুন্দর যে বিশ্বাস করতে পারছিনা আপনি পৃথিবীর কোনো অপরুপা নারী নাকি স্বর্গের পরী! রাত ৯:২০ এ যেহেতু কমেন্টটা করলাম সেহেতু এসময় অবশ্যই ম্যাডাম অনলাইনে থাকবেন! এবং উনি কমেন্টের রিপ্লাই দিলে বুঝতে পারলাম আমার ধারণাই ঠিক! উনি রিপ্লাই দিয়েছেন,

____এত সুন্দর পাম মারার জন্য থ্যাংকস আপনাকে! আমি বুঝলাম উনি একটু ভাব নিচ্ছে, তাই থামলে চলবেনা; আমাকে চালিয়ে যেতেই হবে ৷ আবারো কমেন্ট করলাম,
_____প্লিজ, আমার মনের কথাকে পাম মনে করবেন না, কষ্ট পাবো ৷ যিনি স্বর্গের পরীর মত সুন্দরী তাকে যদি এমনভাবে প্রশংসা না করি তবে অনেক বড় অন্যায় হয়ে যাবে!

_____আচ্ছা, বুঝলাম আপনি মন থেকেই বলছেন ৷ আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!
_____আমি সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিবো পৃথিবীতে এমন একজন সুন্দরীর আগমন ঘটিয়ে ৷ আপনাকে ধন্যবাদ দিবো এজন্য যে প্রোফাইলে আপনার পিকচার আপলোড করে আমাকে স্বর্গের পরীকে দেখার সুযোগ করে দেবার জন্য! উনি এবার ব্যাঙ রিয়্যাক্ট দিলো! একটু পর দেখি উনি আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করছে! এরপরই ওনাকে টেক্সট করলাম,

____এতটা সুন্দর না হলেও পারতেন ৷ মেয়েরা তো হিংসায় পুড়ে মরবে ৷ আর ছেলেরা ক্রাশ খেয়ে আপনাকে না পেয়ে আত্মহত্যা করবে!
____আপনি যেভাবে বলছেন সেরকম সুন্দরী আমি নই!
____কি যে বলেন না! আমি পৃথিবীর অনেক দেশের মেয়েকেই দেখেছি কিন্তু আপনার মত সুন্দরী দেখিনি!
____আপনি কি টুরিস্ট?
____জ্বী, বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করাই আমার কাজ! আপনি কি করেন?
____টিচার!
____ওয়াও, এজন্যই তো বলি এতো সুন্দরী কেন আপনি?
____হয়েছে অনেক বলেছেন ৷ আপনাকে আমার ভাললেগেছে ৷ ফেসবুকে কথা বলিনা কারো সাথে আপনার সাথে বললাম এই প্রথমবার! আমরা বন্ধু তো হতে পারি?

____অবশ্যই!
____আচ্ছা ঠিকআছে ৷ কাল কথা হবে, Bye.

এরপর থেকে কথা বলা শুরু ৷ আমার পটানোও শুরু ৷ আরো নানাভাবে তাকে প্রশংসা করতে লাগলাম ৷ সে এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে গেল যে রাত্রে কথা না বলে সে থাকতে পারতোনা ৷ তিন,মাস পর আমরা আরো ক্লোজ হয়ে গেলাম ৷ রাত ১টা পর্যন্তও কখনো কথা বলেছি, সর্বনিম্ন রাত ১২ টা পর্যন্ত কথা বলতাম নিয়মিত! কলেজে এসে তার ফোলা চোখ দেখে মিটমিট করে হাসতাম আমি ৷ একদিন ম্যাডামকে বললাম,

____আজকাল কি রাত বেশি জাগছেন ম্যাডাম?
____স্টুপিড ছেলে, আমি রাত জাগি তুমি জানলে কেমনে? আর আমার রাত জাগাতে তোমার সমস্যা কি? দাঁড়াও! আজও তোমার শাস্তি আমার ক্লাসে পুরো সময় জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে! আজও আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো! ঐদিন রাত্রেই ম্যাডামকে প্রোপজ করলাম! উনি প্রোপজ পেয়ে অনেকক্ষণ ধরে চুপ রইলো কোন রেসপন্স পেলাম না ৷ হঠাৎ টেক্সট করলো,

____আমি তোমাকে বিশ্বাস করে বন্ধু বানিয়েছিলাম ৷ কবে যে তোমার প্রেমে পড়েছি নিজেও জানিনা! আমিও তোমাকে ভালবাসি

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত