মাঝরাতে গার্লফ্রেন্ড ফোন দিয়ে বলল ‘বাবু তোমার একটা লুঙ্গী পরা পিক দিবা?’ গার্লফ্রেন্ডের মুখ থেকে এমন কথা শুনে আহাম্মক হয়ে গেলাম। মেয়ে বলে কি। এই মাঝরাতে লুঙ্গী পরা পিক কেন চায়? কিউ চায়? মাথায় আসছে না। ধমক দিয়ে বললাম….
–ঐ হারামজাদি মাথা ঠিক আছে? মাঝরাতে লুঙ্গী পরা পিক কেন দিব?
-কুত্তা ধমকাশ ক্যান? সুন্দর করে মধু খেয়ে কথা বল।
–মধুর মায়রে নানি। মুই পিক দিতাম না।
-বাবু দাওনা পিক প্লিজ।
–মুই পারতাম নাগো বেবি।
-কেন পারবানা? আমি না তোমার কলিজা।
–তাই বলে মাঝরাতে লুঙ্গী পরা পিক দিব?
-হ্যাঁ দিতে হবে।
–পারুমনা।
-ঐ হারামি আমি তোর কাছে নুডি চাইছি যে দিতে পারবিনা?
–নুডি কি
-আহা ধোয়া তুলসি পাতা, নুডি বোঝেনা।
–আরে সত্যি বলছি।
-কুত্তা নুডি মানে Nude…
মারিয়ার ইংরেজি উচ্চারণ শুনে আমি তাজ্জব বনে গেলাম। কি শিক্ষিতরে মাইরি। নিউডরে নুডি কয়। হাউ লুল অফ দ্যা ইয়ার। যাইহোক ঝগড়া করার মুড নাই, তাই বললাম…..
–বাবু লুঙ্গী পরা পিক না দিলে হয়না?
-না হয়না। এটা আমার জীবন মরন আমার মানসম্মানের প্রশ্ন।
–মানে?
-তোমার এতকিছু বুঝতে হবেনা, পিক দাও এখনি।
-বাবুউউউউ বোঝার চেষ্টা করো।
-তুই পিক দিবি নাকি….
–আচ্ছা ওয়েট দিচ্ছি।
মারিয়ার কল কেঁটে দিলাম। ভাবতে লাগলাম কিভাবে লুঙ্গী পরা পিক দিব। তাও আবার এত রাতে। কিন্তু মারিয়া লুঙ্গী পরা পিক কেন চায় মাথায় আসলোনা। এদিকে আমার লুঙ্গীও নাই যে পিক দিব। নতুন একটা লুঙ্গী আছে সেটাও ইঁন্দুর হারামজাদা বিভিন্ন জায়গায় কেঁটে কুটে মানচিত্র বানিয়ে ফেলেছে। আরেকটা লুঙ্গী আছে নিজেই ছিড়ে তেনা বানিয়ে রুম পরিস্কার করি। চট করে মাথায় আইডি এলো ছোট ভাই সাইফের লুঙ্গী আছে সেটাই নিতে হবে। কিন্তু আরেকটা মুসিবত, সাইফকে সন্ধ্যায় আমার রুম থেকে বের করে আব্বার রুমে পাঠিয়েছি ও কি লুঙ্গী দিবে? ছোট ভাইতো দিতে পারে….সরাসরি ওদের রুমে গেলাম…. আস্তে করে লাইট অন করলাম। আব্বা আর সাইফ বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। যেভাবেই হোক আমাকে সাইফের লুঙ্গী নিতেই হবে। আমি বাতি অফ করলাম দেখলে কেলেংকারি হয়ে যাবে। সাইফের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে ডাক দিলাম….
–সাইফ?
– (ঘুম)
–ঐ সাইফ?
– (ঘুমোচ্ছে)
–ভাই ওঠনা তোর লুঙ্গী একটু দে।
কয়েকবার ডাকার পর সাইফের কোন ভাবান্তর নেই। মনে মনে ইচ্ছেমত বকলাম। মোবাইলের ফ্লাস অন করে দেখলাম সাইফ লুঙ্গী কাচা দিয়ে ঘুমিয়েছে, যাতে রাতে লুঙ্গি খুলে গলায় না ওঠে। ওর আবার লুঙ্গী গলায় ওঠার অভ্যাস আছে। ভাবলাম সাইফের লুঙ্গী খুলে পরব। নিচেতো হাফ প্যান্ট আছেই ওর। আমি আস্তে করে ওর কাছে গেলাম। উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। আমি কাচা খুলে দিলাম। তারপর আস্তে করে লুঙ্গী টান দিলাম। সাইফ নড়েচড়ে উঠলো। আমি চুপ হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আবার লুঙ্গী টানলাম। একটু খুলে এলো। আরেকটান দিতেই সাইফ ধরফর করে উঠলো। ওর লুঙ্গী খোলা দেখেই চিৎকার করে বলল….
–চোর চোর, আব্বা চোওওওর লুঙ্গী চোর আমার লুঙ্গী চোর। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি অবাক হয়ে রইলাম। সাথে সাথে আব্বাও চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠলো। আমি কিছু বলতে যাব অমনি সাইফ ধারাম করে বালিশ দিয়ে বারি দিলো। বারি খেয়ে ধপাস করে ফ্লোরে পরে গেলাম। সাথে সাথে সাইফ বলল….
–আব্বা মারো মারো।
আমি কিছুই বলতে পারলাম না শুরু হলো বালিশ দিয়ে উড়াধুরা বারি। সে কি বারি, একেকটা বারির ওজন ২ মন। মনে হচ্ছে অলিম্পিক বারির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আমার পিঠ শেষ। বারির ঠেলায় নিচ থেকে শুধু ক্যাংকুত ক্যাংকুত শব্দ করছি। আমি বললাম…..
-আমি রুবেল আব্বা… মাফ চাই ।
–ঠাসসসসস ঠাসসসসস। (সাইফের বারি)
-ঠাসস ঠাসসস ঠাসস। (আব্বার বারি)
অমনি রুমে লাইট জ্বলে উঠলো। আম্মা চিৎকার দিয়ে বলল…..
–এই এটাতো রুবেল, তোমরা থামো। পিডাপিডি থামিয়ে আমাকে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেলো। ছোট বোন রোদেলাও আম্মার সাথে। রোদেলা আমার কাছে আসলো। তারপর বালিশ নিয়ে আমার পিঠে বারি দিয়ে বলল….
-ভাইয়া চোর কি মতা কি মতা….হি হি হি। দেক্সেননি কারবারডা? এটা বোননা ডায়নি। সবার বারি দেওয়া শেষে বারি দিলো। তাও আবার চিনে। না চিনলে কি হতো আল্লাহ মালুম। আব্বা হুংকার দিয়ে বলল….
–তুই এত রাতে এই রুমে কেন?
-আসলে আব্বা…..
–বলো ভাইয়া কেন তুমি এই রুমে চোরের মতন আসলা।
-সরি কিছুনা, এমনি। (সত্যি বললে মাইর খামু)
–তুই বলবি নাকি আবার পিডামু? (আম্মা)
-আসলে আম্মা, কিছুনা সরি আম্মা।
–বল বলছি নইলে বাসা থেকে বের করে দিব। উপায়ন্তর না পেয়ে আব্বা-আম্মাকে মারিয়ার ব্যাপারে সব বলে দিলাম। সব শুনে আম্মা বলল….
-বের হ…
–আম্মাআআআআআ…সরি।
-তুই একটা মেয়ের সাথে প্রেম করিস? ছিঃ তুই আমাদের ছেলে? এখনি বের হ….(আব্বা) আমি কিছুই বলতে পারলাম না। আব্বা আম্মা বাসা থেকে বের করে দিলো। তাও আবার মাঝরাতে। কি আর করার বাসা থেকে বের হলাম। আসার সময় সাইফ লুকিয়ে ওর লুঙ্গী খুলে দিয়ে বলল….’তবুও রিলেশন ঠিক থাকুক, শুভ কামনা ভাইয়া।’ নিজেকে বাংলা সিনেমার জসীম মনে হচ্ছে এমন ছোট ভাই পেয়ে। যাইহোক রাস্তায় আসলাম। সোডিয়াম বাল্বের নিচে গিয়ে লুঙ্গী পরে কয়েকটা সেলফি তুললাম। তারপর সেগুলো মারিয়াকে দিলাম। পিক পেয়েই মারিয়া বলল…..
–উফফফফ বাবু এত্তগুলা ভালোবাসি।
-বাবু পরে কইস হারামি।
–কিচ্চে মনা?
মারিয়াকে সব ঘটনা খুলে বললাম। সব শুনে মারিয়া হাসতে হাসতে বলল….
–সরি বাবু আমার জন্য এসব। টেক কেয়ার আলাবু আমাল জানুতা। বলেই মারিয়া ফোন কেঁটে দিলো। ভাবলাম সারারাত প্রেমে করে কাটিয়ে দিব তা আর হলোনা। স্টেশনে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে ঘুম ভাঙ্গলো ফোনের রিংটোনের শব্দে। সাইফ ফোন করেছে। বললাম….
–কি হয়েছে বল?
-ফেসবুকে যাও দেখো। ভাবির আইডিতে দেখো।
আমি কল কেঁটে দিলাম। ডাটা অন করে ফেসবুকে ঢুকে মারিয়ার আইডিতে গেলাম। যা দেখলাম আমার চক্ষু চড়কগাছে। মারিয়া আমার লুঙ্গী পরা পিক সবগুলো ট্যাগ করে পোস্ট দিয়েছে….
ক্যাপশনঃ ‘এটা আমার বফ ছিলো এখন আংকেল হয়। আমরা দু’জন চাচা ভাতিজি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আর আমার চাচার কপালে যেন সুন্দর একটা চাচি জোটে তার দোয়াও করবেন।’ নিচে হ্যাশ ট্যাড দিয়ে লেখা…’ডেয়ার ডান’ আমি পোস্ট দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। তারপর ফোন অফ করে আবারো স্টেশনের বেঞ্চে ঘুমিয়ে পরলাম। জীবনটা সত্যিই রঙ্গীন। কোন হৈচৈ নেই।