ফিজিক্যাল রিলেশন

ফিজিক্যাল রিলেশন

রিতার সাথে তিন বছর রিলেশন করার পর ফিজিক্যাল সম্পর্ক করার জন্য চাপ দিতে থাকে দ্বীপ। রিতা এমনটা কখনো আশা করেনি দ্বীপের কাছ থেকে। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো তাঁর কিছুই বুঝতে পারছে না সে। বারবার কল করে দ্বীপ শুধু একটা কথায় বলছে! “কাল রুমডেট করতেই হবে বন্ধুর ফ্লাট ফাঁকা আছে।”

রিতা তাঁর অনেক বান্ধবীকে দেখেছে প্রমিকের মন রাখতে গিয়ে নিজের সতীত্ব বিলিন করেছে। তবে তাঁর পূর্ণতা পেয়েছে এমন কেউ নেই। ছেলেরা মেয়েদের মন বুঝতে চায়না, চায় শুধু দেহ। দেহের ক্ষুধা মিটে গেলেই প্রমিক হারিয়ে যায়। আবার নতুন কোনো মেয়ে খুঁজতে। তিন বছর রিলেশন করে কখনো রিতার মনে হয়নি দ্বীপ এমন কিছু আব্দার করবে। যা দিতে পারবেনা রিতা। রিতা মনে মনে ভাবে! “দেহের মিলনেই কি ভালবাসার পূর্ণতা পাই?” কোনো উত্তর আসে না রিতার ভিতর থেকে। দ্বীপ আবার রিতার কাছে কল করে, রিতা কাপাসিয়া কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করে!

–হ্যেলো রিতা।
–হুম! বলো?
–তুমি কি রাজি হবে না?
–দ্বীপ বুঝতে চেষ্টা করো! এখন এসব না করি। আগে পড়াশোনা শেষ করে নিই। তারপর তো আমরা বিয়েই করবো।
—আজ তিন বছর রিলেশন করেও আমায় বিশ্বাস করতে পারলে না। কি মনে হয় তোমার? ঠকাবো আমি। এটাই তোমার বিশ্বাস।

–প্লিজ বাবু। এমনটা নয়। এটা অনৈতিক। সমাজ এটাকে ভাল চোখে দেখে না। সবাই জানলে ছি ছি করবে।
–কেউ জানবে না। আমরা তো আর সবাই কে জানিয়ে করবো না।
–আমি পারবোনা দ্বীপ। আমায় মাপ করো।
–এমনটা কেনো বলছো? তুমি খেয়াল করো, চারপাশে যারা রিলেশন করেছে তাঁর সিংহভাগ ফিজিক্যাল সম্পর্কে করেছে। আর তাঁরা ভালবাসায় পূর্ণতা ও পেয়েছে।
–পাইনি কেউ। আর কেউ পাবে না।
–তুমি বেডে না গেলো আমি আর আমাদের সম্পর্কটা কন্টিনিউ করতে পারবোনা।
–এমনটা বলো না।
–ব্রেকআপ।

দ্বীপ কল কেটে দেই। আর রিতা গুমরে কেঁদে ওঠে। একপর্যায়ে হাল ছেড়ে দিয়ে দ্বীপের কথায় রাজি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। অনেকটা সময় নিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে দ্বীপ কে কল করে। বলে সে ডেটিং করতে রাজি আছে। রিতার কথা শুনে দ্বীপ আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। ফোনের ওপাশ থেকেই নানা রকম অশ্লীল কথা আর অনবরত কিস করতে থাকে। তিন বছর রিলেশনশিপে কখনো দ্বীপ এমন অশ্লীল ভাষায় কথা বলেনি আর কিস করতে হলেও অনুমতি নিয়েই করতো সেটাও ফোন থেকে। দ্বীপের অশ্লীল কথা শুনতে খুব খারাপ লাগে তমার। তাই “রাখছি” বলে কল কেটে দেই।

দ্বীপ ও ডেটিং করার সময় বলে এপাশ-ওপাশ করতে থাকে। তাঁর মনের পশুটা আজ জাগ্রত হয়েছে। সারাক্ষণ সব বন্ধুদের মুখে ‘ডেটিং ডেটিং’ শুনতে ভালো লাগে না আর। এবার সবাই কে বলতে পারবে, “আমি ফিজিক্যাল সম্পর্ক করেছি।” মনের আনন্দে রুম থেকে বের হয়ে ছোট বোন নিহার রুমে ঢুকে বই-খাতা নাড়াচাড়া করে কিছু টাকার আশায়। অপর দিকে রিতা কল কেটে দিয়ে গোসল করতে বাথরুমে ঢুকে। আয়নার সামনে গিয়ে সমস্ত শরীর উন্মুক্ত করে দেখে ভাবে! “ভালবাসা বলতে কি শুধু দেহের প্রলোভন?” গুমরে কেঁদে ওঠে রিতা। আজকের পর সে আর প্রবিত্র থাকবে না। দ্বীপের উপর যে ভালবাসার বিশ্বাস স্থাপন করেছিলো সব শেষ হয়ে যায়। আজ রিতার শুধু এটাই মনে হয়, “দ্বীপ ও শেষমেশ অন্য সবার মতো কুকুর হয়ে গেলো।”

দ্বীপ নিহার রুমের খাতা-কলম উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে কিছুই পাই না। টাকা-পয়সা না পেয়ে বের হতে যাবে এমন সময় নিহার ফোনে একটা sms আসে। সেটাকে পাত্তা না দিয়ে বাইরে যাওয়া বলে পা চালাই, তখনি আবার sms টুং করে বেজে ওঠে। এবার কৌতুহলের বশে নিহার ফোনটা হাতে তুলে নেই দ্বীপ। দেখে দিপু নাম দিয়ে সেইভ করা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। মেসেজে লেখা ছিলো! “বাবু কাল তাহলে আমার বন্ধুর ফ্লাটে দেখা হবে।” আর একটা মেসেজে লেখা! “এই জানু শোনো! খুব করে সেজে আসবে। যেনো তোমাকে খুব হট লাগে।” মেসেজ দুইটা পড়ে দ্বীপ আর স্থির থাকতে পারে না। নিজের মাথায় হাত দিয়ে নিহার বিছানায় বসে পরে। আর তখনি নিহা রুমে প্রবেশ করে তাঁর ভাইয়াকে বিছানায় বসে দেখে।

নিহা দ্বীপ কে দেখে ভয় পেয়ে যায়। আরো বেশি ভয় পাই তখন, যখন দেখে দ্বীপের হাতে তাঁর নিজের ফোন। নিহা ভয় পেয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়। আর দ্বীপ অপলক তাকিয়ে আছে নিহার চোখের দিকে। মনে হয় অনেক কান্নাকাটি করেছে বাথরুম থেকে। যার কারণে চোখ-মুখ লাল টকটক করছে। বুকের উপর ভারী পাথর দিয়ে গরম বালির উপর রেখে প্রহার করলে যেমন কষ্ট হয় তাঁর চেয়ে বেশি কষ্ট মনে হয় এই ফিজিক্যাল সম্পর্ক করতে বলা হয় যদি কোনো মেয়েকে। তাহলে তো রিতা ও এখন এমনি কষ্টে আছে। বুঝতে পারে দ্বীপ ” সে কি করতে চলেছিলো।”

একটা মেয়ের সতীত্ব তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় সম্পদ। কিন্তু সামান্য ভালবাসার দোহাই দিয়ে সেই সম্পদ হরণ করে চলেছে হাজারো প্রমিক পুরুষ। নিজের ফোনটা বের করে রিতার কাছে ছোট্ট মেসেজ করে দেই! “সরি রিতা আমাকে ক্ষমা করো। আমাদের ভালবাসা যদি প্রবিত্র হয় তবে আমাদের মিলন হবে। আর কখনো ফিজিক্যাল রিলেশন করতে চাইলে আমায় জুতা পেটা করবে। কাল দেখা হবে না। ছোট বোন কে নিয়ে ঘুরতে যাবো।” মেসেজ টা কিছু সময় পর দেখতে পাই রিতা। চটজলদি আল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে শুকরিয়া আদায় করে।

দ্বীপ এগিয়ে যায় নিহার কাছে। নিহার ফোনের মেসেজটা দেখিয়ে বুকেতে জড়িয়ে নেই পরম আদরে। নিহা ভাইয়ার বুকে মাথা রেখে ঢুকরে কেঁদে ওঠে। তখনি নিহার ফোনে একটা মেসেজ আছে দিপুর নাম্বার থেকে! “পাগলি চোখের জল মুছে নামাজ পড়ো। আমি ও নামাজে যাচ্ছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করবো, যেনো তোমায় আমার বৌ হিসাবে পাই। জানো তো! প্রবিত্র নারী প্রবিত্র পুরুষের জন্য। আমি তোমাক আমার প্রবিত্র ভালবাসার রুপে দেখতে চাই। আর হ্যাঁ কাল আমি তোমার সাথে না আমার বোনকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি। দ্বীপের মেসেজটা দেখে নিহা ও দ্বীপের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত