মেঘে ঢাকা রোদ

মেঘে ঢাকা রোদ

আমাকে বিয়ে করতে পারবি? মেঘলার এমন কথায় রোদ চা খাওয়া বাদ দিয়ে মেঘলার দিকে তাকালো এক পলক। মেঘলা আবার বললো- কিরে তোকে বলছি। পারবি আমাকে বিয়ে করতে? রোদ চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে একবার মেঘলাকে ভালো করে দেখলো। এরপর একটু থেমে বললো- মেঘ তোর কি হয়সে?হটাৎ এমন কথা?

মেঘলাঃ ঐটা পরে জানবি এখন বল আমাকে বিয়ে করতে পারবি কি না?

রোদঃকি বলস এসব? এটা কেমন মজা?হটাৎ করে এভাবে বললে??

মেঘলাঃ আমি মজা করছিনা। আমি সিরিয়াস। আচ্ছা তোকে আজ সারারাত ভাবার সময় দিলাম।কাল সকাল ১০টায় এখানে আসবি। তোর উত্তর জানার পর ভাববো তোকে বিয়ে করার কারণটা বলা যায় নাকি না।

রোদঃএটা কেমন কথা?

মেঘলাঃআচ্ছা আমি এখন যায়। কাল দেখা হবে।আর চাপ নিস না ভেবে চিন্তে বল। ওকে বাই। মেঘলা চলে গেলো। রোদ ঠাঁই ওখানে বসে আছে। মাথায় কিছু ঢুকছেনা।

রোদঃ এটা কি এতো চাপ দিয়ে বললো চাপ নিও না। মেঘ রে মেঘ তুই এমন কেনো? রাতে মেঘলা নিজের রুমে আছে।সে খাটে শুয়ে আছে। বই পড়ছিলো।এমন সময় দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দ পেলো।

মেঘলাঃকে?

রহিমা খালাঃ আপা আমি। আসতাম?(দরজা খুলে)

মেঘলাঃ আসো খালা। রহিমা খালা অনেকটা উত্তেজনা নিয়ে রুমে ঢুকলো। আর দরজাটা বন্ধ করে দিলো। রহিমা খালা দৌড়ে মেঘলার পাশে এসে দাড়ালো।

মেঘলাঃ তো খালা আজ কি খবর দিবেন?

রহিমা খালাঃ আফা জব্বর একটা খবর আনসি। মেঘলা হালকা হেসে বললো- তো কি তোমার জব্বর খবর শুনি।

রহিমা খালাঃ আফা সাহেব আর খালাম্মা আপনার বিয়ার জন্য একটা পোলা দেখছে।

মেঘলাঃ কি বল। তারপর।

রহিমা খালাঃ হ আফা। খালাম্মা যখন ছবিটা দেখতাসিলো আমিও দেখসি। আফা গোআফা ঐ পোলা আপনার জন্য না। আপনি দেখলেও হেতেরে রিজেক্ট করবেন।

মেঘলাঃ কি বলো? এতো খারাপ নাকি দেখতে?

রহিমা খালাঃ না আফা দেখতে তো খারাপ না কিন্তু……

মেঘলাঃ কিন্তু কি?

রহিমা খালাঃ আফা ঐ পোলার সব ঠিক আছে।খালি দাঁত বাদে। মেঘলা অবাক হয়ে বললো – কেনো দাঁতের কি হলো?

রহিমা খালাঃ আরে পোলাডার দাঁতগুলো ফাঁক ফাঁক। আর পোলাডা হাসাবার কারণে দাঁতে যে খাবারগুলা আটকাই আসিলো তা দেখা যাইতাসিলো।আফা গো আফা কিরকম খবিশ ব্যাটা ভাবতে পারেন?এমন পোলার লগে আপনারে কেমনে বিয়া দি বলেন?তাই আমি কইতাসি কি আফা খালাম্মা যদি আইয়া আপনারে ঐ খাটাশ ব্যাটার ছবি দেখায় তাহলে আমনে বিয়ার জন্য হ্যা কইবেন না। আপনার বিয়া নিয়া আমার কত স্বপ্ন, কত ভাবনা ঐ খচ্চর এর লগে আপনারে কেমনে বিয়া দি। কন তো? মেঘলা হালকা হেসে বললো-তা তো বুঝলাম কিন্তু আমার বিয়ে নিয়ে আপনার কি স্বপ্ন শুনি তো? রহিমা মেঝেতে পা মুড়িয়ে বসে পড়লো।

রহিমাঃ আফা আমনের বিয়াতে আমি “চিস বারি হে মাস্ত মাস্ত” এই গানডাতে নাচুম।আপনার যদি সবজি বিয়া হয় তাইলে রহিমাকে থামিয়ে দিয়ে মেঘলা বললো- সবজি বিয়ে মানে কি?

রহিমাঃআরেহ আফা এইডা জানেন না। বাপ মায়ের পছন্দে বিয়া করলে তারে সবজি বিয়া কয়।ঐ আপনারা যে এরেন্ক মিরিজ বলেন যে হ্যাইডা। এই বিয়ারে সবজি বিয়া কয় কারণ দেহেন সবজি আমগো জন্য কত জরুরি৷ সবজি খাইলে শরীল ভালা থাকে কিন্তু আপনি কন সবজি খাইতে মজা আছে?সবজিতে পুষ্টি থাকলেও মজা কম। আর ঐ কয় যে লভ মিরিজ হ্যাইডা হইলো গিয়া মাংস বিয়া।মাংসে হাজারো দোষ কিন্তু মাইনষে মাংস খাওয়া বন্ধ করসে?করে নাই। প্রেম বিয়া ও তেমন হাজারো দোষ আছে তবুও পোলা মাইয়া লভ মিরিজ করে। সবজি বিয়া তো তারগো পছন্দ না। মেঘলা এবার জোরেই হেসে দিলো। তো খালা বুঝলাম তোমার বিয়ে নিয়ে থিওরি এখন বলো তোমার স্বপ্নের কথা।

রহিমাঃহ কইতাসি। দেহেন আফা আমনে যদি সবজি বিয়া করেন তাইলে আমি মাটির উপর বইয়া গলা ফাটাইয়া কানমু।কারণ এই বিয়া তো খালু খালা ঠিক করসে আমনে না। আর যদি মাংস বিয়া করেন তাইলে অর্ধেক হাসুম অর্ধেক কান্দুৃম।কারণ হেইডাতে আপনারও মত আছে আর খালু খালারও।

মেঘলাঃ ওহহ বুঝলাম।আচ্ছা তুমি এখন যাও আমার ঘুম আসছে। শুভ রাত্রি।

রহিমাঃআফা আমনারে না কইসি ইংরেজীতে কথা কইবেন না। আমার বুঝতে কষ্ট হয়।শুভ খাত্রি না কি আমি বুঝিনা। আমি যায়তাসি। গুড নিইট। রহিমা খালা চলে যেতে লাগলে মেঘলা বললো-আচ্ছা খালা আমি যদি পালাই বিয়ে করি তুমি কিভাবে কান্না করবে?

রহিমাঃআফা আপনি কি পালাইবেন?

মেঘলাঃআসলে চিন্তা করতাসি। কালকে সিউর হবো। তুমি আজ সারারাত চিন্তা করে আমাকে কাল ফোন করে জানাবে ঠিক আছে।এখন যাও।

রহিমাঃজ্বি আফা। আইজ রাইত চিন্তা কইরা আফনারে কমু।গুড নিইট।রহিমা খালা চলে গেলো।। রহিমা খালার কথা শুনে মেঘলার খুব হাসি পেলো আসলেই আজিব রহিমা খালা। উনি ১পিসই আছেন। রোদ মাত্র ঘরের সামনে এলো। কলিং বেল বাজাচ্ছে কিন্তু কেউ দরজা খুলছেনা ।রোদ এর মাথায় এখন মেঘের বলা কথাগুলো ঘুরছে।রোদ আবার কলিং বেল বাজালো।এবার অবশেষে তুলি দরজা খুললো।তুলি হলো রোদ এর বোন। রোদ এর বাবা মা নেই। তুলি রোদ এর ছোট বোন। ওর বিয়ে হয়েছে ৪ বছর হলো।একটা আড়াই বছরের মেয়ে আছে নাম পরী।তুলির হাসবেন্ড বিদেশে থাকে ।তুলি এখানে মাঝে মাঝে আসে রোদ এর সাথে থেকে যায়।

তুলিঃ তুই এতোক্ষনে আসলি?কই ছিলি এতোক্ষন?

রোদঃসরি আর লেট হবে না।

তুলিঃ হুমম। তুই…….

রোদ রুমে চলে গেলো। আর রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।তুলি অবাক হলো কারণ রোদ সচারচর বাসায় এসে ওর সাথে কতক্ষন কথা বলে কিন্তু আজ তা করলো না। রোদ রুমে এসে খাটে শুয়ে পড়লো। চিন্তা করছে মেঘলার বলে যাওয়া কথাগুলো। মেঘের কথাগুলো রোদ মজা হিসেবে উড়িয়ে দিতে পারে না কারণ মেঘ মজা করলেও যখন সে বলে ও সিরিয়াস তখন ও আসলেই সিরিয়াস হয়। কিন্তু কথা হলো মেঘ হটাৎ এমন ডিসিশন কেনো নিলো। মেঘলা অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা। ১০০টা মেয়ের ভিড়ের মাঝেও ওকে আলাদা করে চেনা যায় এমন মেয়ে।

মেঘলার সাথে রোদ এর পরিচয় ভার্সিটি থেকে। রোদ মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলে না কিন্তু মেঘলা ছিলো অন্যরকম। ওর সাথে কথা বলে রোদ নিজেই অবাক হয়েছিলো কারণ সে এই প্রথম একজন মেয়ে ক্লাসমেট এর সাথে কথা বলছে।পরিচয়ের প্রথমে আপনি।মেঘলা থেকে মেঘ। তারপর আপনি থেকে তুই এর জার্নিটা রোদ আর মেঘলার জন্য খুব আনন্দময় ছিলো। দুইজন খুব অল্প সময়ে হয়ে উঠলো বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু রোদ তো মেঘলাকে বন্ধু থেকেও বেশি ভাবতো। হ্যা এটা বললে ভুল হবে না যে রোদ মেঘলাকে অনেক ভালোবাসে,কিন্তু কখনো মেঘলাকে মনের কথা বলার সাহস করতে পারেনি। এর কারণ ছিলো ভয়, বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ার ভয়।এই ভয় এর তাড়নায় কখনো নিজের মনের ভাব বলতেই পারেনি রোদ।রোদ এটাও জানে না মেঘলাও কি ওর মতো অন্য কিছু ফিল করে নাকি শুধু বন্ধুই ভাবে। জানা নেই রোদের। কিন্তু আজ হটাৎ মেঘের কি হলো। ডিরেক্ট বিয়ের কথা?

বলা নেই কওয়া নেই হুট করে বিয়ে করার কি ডিসিশন নিলো মেঘ তাও চায়ের দোকানে আসলেই মেঘ আলাদা।বলতে গেলে এলিয়েন।কোনদিন যে অন্য গ্রহ থেকে এলিয়েনরা এসে মেঘকে নিয়ে গিয়ে বললে-এটা আমাদের জিনিস, ভুলক্রমে এখানে চলে এসেছে।আর মেঘকে নিয়ে চলে যাবে সে চারচোখওয়ালা এলিয়েন।নিজের ভাবনায় নিজেই বিরাম চিহ্ন বসালো রোদ। এখন ওর ভাবনা কাল মেঘকে কি উত্তর দিবে।এমন নয় যে রোদ মেঘকে বিয়ে করতে চায় না কিন্তু এভাবে??আর মেঘের বিশ্বাস নেই কাজী অফিসে গিয়ে বলবে আমার বিয়ে করার ইচ্ছা নাই তখন তো ইজ্জত এর ফাটা ত্যানা হয়ে যাবে। না না কিছু একটা ভাবতে হবে। আচ্ছা আমি মেঘকে মানা করে দিবো। এরপর দেখি ও কি করে?যাক বাবা ডিসিশন ফাইনাল না বলবো আমি।নিজের ডিসিশনে খুশি হয়ে রোদ ঘুমিয়ে পড়লো।

সকালে রোদ মেঘের সাথে দেখা করার জন্য রেডী হয়ে নিজের রুম থেকে বাইরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। রুম থেকে বের হয়ে হল রুমে আসতেই দেখলো তুলি পরীকে গোসল করাচ্ছে। এটা তুলির অভ্যাস। তুলির সব কিছু পরিষ্কার রাখার বাতিক আছে।ময়লা সে দেখতে পারে না।ময়লা দেখলেই তা ডলে ডলে পরিষ্কার করে। আর এই পরিষ্কার বাতিক এর শিকার হয় পরী। ১ নম্বর হোক আর ২নম্বর হোক পরী যাই করুক গোসল ওর জন্য বাধ্যতামূলক। একদিনে হয়তো ৪/৫বার তাকে ওয়াস করে তুলি।এই পর্যন্ত দুবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে পরীকে ঠান্ডার জন্য তবুও তুলি ঠিক হয় না। এখন ৪/৫বার গোসল না করালেও ১দিনে ৩বার তো অবশ্যই গোসল করাতে হবে এটা তুলির ধারণা৷

রোদ জুতা পড়তে পড়তে বললো-হ্যা আরো গোসল করাও। পারলে বাসার সামনে যে পুকুর আছে ওখানে তোমার মেয়েকে ৭/৮টা ডুব দেওয়ায় আসো। আর তা না হলে আমাদের বাসার টাংকিতে ছেড়ে দিয়া আসো। এতো কি গোসল করাও মেয়েকে তুমি? অলরেডী ২বার হসপিটালে গেসে। দুলাভাইয়ের ৫০হাজার টাকার মতো খরচ হয়সে তবুও আক্কেল হয় না?আর কি এতো পরিষ্কার?তুমিই কি খালি পরিষ্কার করার ঠ্যাকা নিয়া রাখসো?,নাকি প্রধান মন্ত্রী তোমারে সব কিছু সাফ করার জন্য আদেশ দিসে? তুলি কিছু বলছেনা । পরীর গায়ে অনবরত সাবান লাগিয়ে যাচ্ছে।

রোদঃঐ লাগাও আরো সাবান লাগাও।পারলে তোমার মাইয়ারে তারের জালি দিয়া মাজো।ড্রয়ারে আরো সাবান আছে আনি দিতাম?আর তা না হলে…..

তুলিঃঐ চুপ কর।কিছু জানিস না বুঝিস না খালি বকর বকর করস। আমার একদম পছন্দ না তের এসব কথা।তোর সাবান শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই এমন করতাসোস।যা তুই রাখ তোর সাবান। আমি আর ইউজ করবো না। আমি আজকেই শ্বশুর বাড়ি চলে যাবো।ও আব্বা গো ও আম্মা তোমার পোলা আমারে সাবানের খোটা দিতাসে।এই দেখা বাকি আছিলো।আমি থাকবো না আর এই বাড়িতে। রোদ মুচকি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।এটা রোজকার ঝামেলা। আপার সাথে এমন মজা করে রোদ আনন্দ পায়। যদিও রাতে এসে সরি বলে দে।আর সে জানে আপা কোথাও যাবে না।উল্টো ওর জন্য রান্না করবে নিজ হাতে।তুলি আসলেই অনেক ভালো মহিলা। ওর মতো বোন পাওয়া ভাগ্যের।রোদের লাইফে দুজন নারী আছে যারা খুব স্পেশিয়াল।এক তুলি আরেক মেঘলা। মেঘলা চায়ের কাপে এক চুমক দিয়ে কাপটা টেবিলে রাখলো।

মেঘলাঃতো কি ভাবলি?

রোদঃকি নিয়ে?(জানা সত্ত্বেও)

মেঘলাঃওমা কাল তোকে বললাম না আমি বিয়ে করবো। আর আজকেই করবো। এখন তুই করবি কি না বল।

রোদঃওহহ মনে পড়েছে।আসলে মেঘ আমি ভাবছিলাম…

মেঘলাঃদেখ রোদ তোর যদি সমস্যা হয় নো প্রবলেম। আমি মুহিত এর সাথে কথা বলেছি ও এক পায়ে খাড়া। তুই না করলে ও করবে।

রোদঃমুহিত.??আমাদের ক্লাসের ঐ ছেলেটা না যে সবসময় এতো মেয়ে থাকতে তোর কাছ থেকে নোট চায়।ঐ ছ্যাছড়ার সাথে তুই কথা বলস?.

মেঘঃহ্যা বলি তো এতে দোষের কি?ও কত কিউট আর আমাকে বিনা প্রশ্নে বিয়ে করতে রাজি।তুই মানা করলে….

রোদঃ ওঠ।

মেঘলাঃমানে??

রোদঃওঠ বলছি ওঠ। এখনি তুই আমার সাথে কাজী অফিসে যাবি আর বিয়ে করবি।

মেঘলাঃকি বলছিস?তুই তো বলেছিলি তোর টাইম লাগবে…??

রোদঃ টাইমের নিকুচি করি।চল এখন ঐ ছ্যাছড়ার সাথে,বিয়ে করবি তুই?করাচ্ছি তোকে।চল!! রোদ আর মেঘলার কিছু ফ্রেন্ড এর সাক্ষীতে বিয়েটা হয়ে গেলো। কাজী অফিস থেকে বের হয়ে রোদ আর মেঘলার বন্ধুরা যার যার কাজে চলে গেলো।রোদ আর মেঘলা দাড়িয়ে আছে। রোদ শকে আছে মুহিত এর নাম শুনে রাগের মাথায় বিয়েটাতো করে নিলো কিন্তু এখন মাথা ভনভন করছে অন্যদিকে মেঘলা এমনভাবে আছে যেনো কিছুই হয়নি।ও সেলফি নিতে ব্যস্ত।

মেঘলাঃআচ্ছা চল।

রোদঃকোথায়?

মেঘলাঃওমা বিয়ে করলি আর হানিমুনে যাবো না?

রোদঃমেঘ তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস?,কি বলছিস এসব এভাবে বিয়ে তার উপর হানিমুন তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস?

মেঘলাঃ,দেখ রোদ আমরা যেভাবে বিয়ে করেছি এটাকে পালিয়ে বিয়ে বলা যায়।পালিয়ে বিয়ে করলে জানিস তো কি হয়।মেয়ে আর ছেলের ফ্যামিলি ডাকাত দলের মতো আচরণ করে।তখন তাদেরকে মিশা সওদাগর থেকে কম মনে হয় না। এখন যদি তুই ওদের গিয়ে বলিস আমি বিয়ে করেছি তাইলে ওরা তোরে মাটির মধ্যে গাইড়া ফেলবে।তাই ওদের মাথা ঠান্ডা হতে কিছু সময় দেওয়া দরকার ততদিনে তুই আর আমি হানিমুনটা সেড়ে আসি। ভাবছি সাজেকে যাবো ৬দিনের প্লান করেছি।সব ঠিকঠাক ওখানে গিয়ে জামা কাপড়ের শপিং করে নিবো।চল অনেক মজা হবে।

রোদঃসাজেক??তোর ড্রিম হলিডে তাই না??

মেঘলাঃহুমমম।চল গাড়ি সামনে দাড়িয়ে আছে।যা তুই টেনশন করিস না খরচ আমার পরেরবার হানিমুনে তুই খরচ দিস ওকে জানু।

রোদঃদাড়া মেঘ তার আগে বল তুই আমাকে কেনো বিয়ে করলি?

মেঘলাঃপরে বলবো চল।

রোদঃনা এখন বল।

মেঘলাঃদেখ রোদ এসব বলার টাইম আছে। কিন্তু এখন না গেলে লেট হয়ে যাবে চল তো। মেঘলা রোদকে জোর করে গাড়িতে বসালো। গাড়ি চলতে শুরু করলো।রোদ আর মেঘ পাশাপাশি বসে আছে।এমন সময় মেঘলার মোবাইলে রহিমা খালার কল আসে।মেঘলা কল রিসিভ করে।

মেঘলাঃহ্যালো খালা।

রহিমাঃহ আফা আমি।আমনে না কালকে আমারে কইসিলেন আপনি পালায় বিয়ে করলে আমি কি করুম তা আমি ভাইবা লাইসি।পালাই বিয়া করনরে কয় বিরিয়ানী বিয়া।আর এই বিয়া আপনি পালায় করসেন তাই আপনার মত আছে।আর আপনি এই বিয়াতে খুশি। তাই আপনি পালায় বিয়া করলে আমি খুব জোরে জোরে হাসমু।

মেঘলাঃতো খালা কিভাবে হাসবা একটু দেখাও তো? রহিমা খালা হাসতে শুরু করলো।খুব জোরে জোরে হাসতে লাগলো রহিমা খালা।

মেঘলাঃঠিক আছে খালা তুমি এভাবে হাসতে থাকো। আর আব্বু আম্মু এবং তুলি আপাকে জানিয়ে দাও আমি আর রোদ পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছি। আর এখন হানিমুনে যাচ্ছি। ওকে?বাই। রহিমা হাসতে হাসতে বাই বলে ফোন রেখে দিলো।হটাৎ খেয়াল হলো মেঘলা কি বলেছে।

রহিমাঃখোদা গো আফা সত্যি সত্যি পালাইসে।আল্লাহ গো!!!খালু গোওওও।ও খালাম্মা সব শেষ। ওরে,কই সব!!আফা পালাইসে

মেঘলাঃ’

রোদ কিছু বুঝতে পারছেনা।ওর বিয়ে হয়েছে এতে খুশি হবে নাকি এমনভাবে বিয়ে হওয়াতে টেনশন করবে। পরে অনেক ভেবে চিন্তে বললো-যা হবার হয়ে গেছে ঘুরতে এসেছি আগে ঘুরে নিই।তারপর দেখা যাবে। রোদ আর মেঘলা সাজেক পৌছে গেলো। তারা সেখানে হোটেল ভাড়া করলো। ফ্রেশ হয়ে কিছু খাবার খেয়ে নিলো।এরপর বিশ্রাম নিলো।এখানে আসতে আসতে রাত হয়ে গেছে। তাই কাল সকালে তারা ঘুরবে।দুইজন টায়ার্ড ছিলো তাই শোবার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে ওরা নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লো ঘোরার জন্য। তারা অনেক জায়গায় ঘুরলো।অনেক মজা করলো। হানিমুনের ৫ম দিন সকালে,রোদ ঘুমাচ্ছিলো। হটাৎ মেঘলা ওকে ডাক দিলো। রোদ ঘুম থেকে উঠে বললো -কি হয়েছে?

মেঘলাঃরোদ বাবার অবস্থা খুব খারাপ আমাকে এখনি বাসায় যেতে হবে।

রোদঃকি বলছিস?

মেঘলাঃহ্যা।আমার টেনশন হচ্ছে প্লিজ চল।

রোদঃআচ্ছা ঠিক আছে। আমি দেখছি। তুই রেডী হয়ে নে।

মেঘলাঃহুমমমম।

কিছুক্ষনের মধ্যেই ওরা হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লো বাসার উদ্দেশ্যে। মেঘলা গাড়িতে ঘুমাচ্ছে। ওর মাথা রোদ এর কাঁধে। রোদও মেঘলাকে জরিয়ে ধরে আছে।বাসার কাছে আসতেই রোদ মেঘলাকে ডেকে তুললো। মেঘলা উঠে গেলে।

রোদঃঐ উঠ। প্রায় চলে এসেছি আর ১০মিনিট লাগবে তোর বাসায় আসতে।

মেঘলাঃওহহহ।ড্রাইভার সাহেব এখানে একটু দাড়ান তো।

রোদঃএখানে কেনো দাড়া করালি?তোরা বাসা তো সামনে

মেঘলাঃআমি জানি।দেখ আসলে বাবার শরীর তো খারাপ তাই তোকে দেখলে হয়তো রিয়ক্ট করতে পারে আগে আমি যায় সব সামলাই তারপর তুই আসিস।

রোদঃকিন্তু…

মেঘলাঃ,কোনো কিন্তু না আমি যা বলছি তা। তোকে আমি ফোন করে বলবো আসার জন্য ততদিন তুই বাসায় থাক। সব ঠিক হয়ে গেলে তোকে আমি নিজে ফোন করবো তুই কল করিস না ঝামেলা হবে ওকে।

রোদঃওকে(না চাওয়া সত্ত্বে ও)

মেঘলাঃতাহলে আমি এখানে নেমে যাচ্ছি। তুই বাসায় যা।ওকে বাই।

রোদঃহুমমম বাই।(কেনো যেনো মেঘকে যেতে দিতে মন চাইছে না।

মনে হচ্ছে ও দূরে কোথাও চলে যাচ্ছে) মেঘ চলে গেলো। রোদও ওর বাসার দিকে রওনা দিলো। বাসায় পৌছে রোদ কেমন যেনো অস্বস্তি হচ্ছে।ঘরে কেউ নেই।আপা দুলাভাই বিদেশ থেকে আসার কারণে কালকেই চলে গেছে।বিয়ের কথা জানার পর আপা রাগ করলেও পরে খুশি হয়েছেন।মেঘলার পরিবারের রিয়েকশন জানি না কারণ মেঘ ওনাদের সাথে তেমন কথা বলেনি।নিজেকে কেমন যেনো একা লাগছে। মেঘকে ছাড়া কেমন শূণ্য শূণ্য লাগছে। এই কয়দিন মেঘের সাথে কাটানো দিনগুলো বারবার মনে পড়ছে। মেঘ আসলেই আলাদা। ওর মতো মেয়েকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া আমার জন্য আসলেই শ্রেষ্ঠ ব্যাপার।

২দিন পর…

রোদ কন্টিনিউসলি মেঘলার মোবাইলে ওর ফ্যামিলির সবাইকে কল দিচ্ছে কিন্তু কেউই কল রিসিভ করছে না।

রোদঃএটা কেমন কথা ২দিন হয়ে গেলো এর কোনো খবর নেই।একটা কল ও দিলো না । ও কি আমার কথা একবারও ভাবলো না?আমার কি টেনশন হয় না।না আর এখানে বসে থাকা যাবে না। আমি এখনই মেঘের বাসায় যাবো। এরপর যা হবে হোক আমি কিছু জানি না কিন্তু আমি এখনই মেঘের সাথে দেখা করবো। অনেক হয়েছে ও কি পেয়েছে। ২দিন ধরে কোনো যোগাযোগ নেই। রোদ নিজের সাথে কথা বলতে বলতে শার্ট পড়ে নিলো।সে এখন মেঘলার বাসায় যাবে। রোদ যেই না মেঘেলার বাসায় যাওয়ার জন্য নিজের বাসার দরজা খুললো রোদ দেখলো রহিমা খালা ওর দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। রহিমা খালাকে আচমকা এভাবে দেখে রোদ একটু ভয় পেলো।

রোদঃরহিমা খালা তুমি??

রহিমাঃ……

রোদঃ কি হয়সে খালা তুমি এখানে?মেঘও আসছে নাকি?কই ও?আংকেল কেমন আছে?মেঘ!!মেঘ!!! খালা ও কোথায়? রহিমা খালা কান্না করতে শুরু করলো।

রোদঃ খালা কি হয়সে তুমি কান্না করতাসো কেনো?কি হয়সে? মেঘ কোথায় খালা?মেঘ.…….

রহিমা খালা কান্না করতে করতে বললো-আ…..আফা, আফা মইরা গে….সে। রোদ পড়ে যেতে লাগলে দরজা ধরে ফেললো।রোদ এর চারপাশ ঘুরছে। পায়ের তল থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো।রোদ এর মনে ভূমিকম্প হচ্ছে।সব কিছু কেমন উলট পালট লাগছে। তবুও রোদ নিজেকে সামলে নিলো।

আবছা আবছাভাবে বললো-মে….মেঘ কেনো কেনো আমাকে ছেড়ে…. যাবে?ও তো বলেছিলো আমার পা….পাশে থাক…থাকবে। তাহলে ও.. ও।রোদ মেঝেতে বসে পড়লো। চোখ দিয়ে জল পড়ছেনা। মনে হচ্ছে চোখের জলগুলি বরফে পরিণত হয়েছে। রহিমা নিজের চোখের জল মুছে রোদ এর পাশে এসে বললো-রোদ ভাই। আ…আফা আপনারে এইডা দি….দিতে কইসে(নিজের কান্না চেপে)রহিমা রোদের দিকে একটা বক্স এগিয়ে দিলো। রোদ বক্সটি নিলো।রহিমা কান্না করতে করতে চলে গেলো। রোদ বক্সটিকে ভালো করে এক নজর দেখে নিলো।এরপর দরজার সাহায্যে উঠে দাড়ালো।বক্সটি নিয়ে রোদ বারান্দায় গেলো।আর ওখানে একটা চেয়ারে বসলো রোদ।সোনালি রং এর পেপারে মোড়ানো বক্সটি সূর্যের আলোতে চকচক করছে।রোদ ধীরে ধীরে বক্সটা খুললো।

বক্সটাতে অনেক কিছু আছে। রোদ একটা একটা করে জিনিসগুলি বের করতে লাগলো। প্রথমে একটা ঘড়ি পেলো।এটা রোদ এরই প্রিয় ঘড়ি।কলেজে থাকতে হারিয়ে গিয়েছিলো আর পাইনি।এটা মেঘের কাছে ছিলো?রোদ আবার বক্সে দেখলো।একটা রুমাল পেলো।এটাও রোদের। একবার ফুচকা খাওয়ার সময় অতিরিক্ত ঝালের কারণে ওর চোখ দিয়ে জল পড়ছিলো। তখন রোদ রুমালটা মেঘকে দিয়েছিলো। আর নিতে মনে ছিলো না। এটাও মেঘলা এতো যত্ন করে রেখে দিয়েছে?পুরো বক্সটা রোদ এর জিনিস দিয়ে ভরা। এসব জিনিস মেঘ কখনো লুকিয়ে নিয়েছে বা কখন ওর থেকে চেয়ে। সব জিনিসের নিচে দুটো খাম পেলো রোদ। প্রথম খামটা খুলে দেখলো রোদ।ডিভোর্স পেপার। রোদ আর মেঘলার ডিভোর্স পেপার।ডিভোর্স পেপারটা দেখে রোদ অবাক হয়ে গেলো। দ্রুত রোদ পরের খামটা খুললো –  মেঘের চিঠি-;

“ কি খবর মি.রোদ।তুই এই চিঠিটা যখন পাবি তখন আমি থাকবো না।জানি তুই কষ্ট পাবি। আমি এমন কেনো করলাম, কেনো তোকে বিয়ে করলাম আর হটাৎ এসব কি হলো।সব তোকে বলছি। প্রথম থেকে বলি—-আমার বাবা মা দুজনই চাকরি করতো। তারা দুজনই কাজে এতো ব্যস্ত থাকতো তাদের কাছে আমার জন্য সময় থাকতো না। ছোটবেলা থেকেই কেমন একা হয়ে পড়েছিলাম।স্কুল লাইফে তেমন কারো সাথে কথাও বলতাম না। চুপচাপ থাকতাম।সেদিন আমার এসএসসি পরীক্ষার লাস্ট দিন ছিলো। পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম।হটাৎ রাস্তায় দেখলাম পরীক্ষার্থী একটা ছেলে একটা রাস্তার অসহায় ছেলেকে নিজ হাতে পাউরুটি খাওয়াচ্ছে। দেখে খুব ভালো লাগলো।

সেদিন অনেকদিন পর আমার ঠোঁট জোড়ায় মুচকি হাসির আভাস পেয়েছিলো।এরপর আর কখনো ছেলেটিকে দেখেনি। মস্তিষ্কের কোনো এক কোণায় ঐ ছেলেটি রয়ে গিয়েছিলো। রেজাল্ট এলো কলেজে ভর্তি হলাম। কলেজের ২য় দিন ঐ ছেলেটাকে আবার দেখলাম। এরপর প্রতিদিন ওকে দেখতাম৷ জানি না কেনো ঐ ছেলেটা আমাকে আকর্ষন করতো। ভালো লাগতো ওর স্বভাব। মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলে না কিন্তু সবাইকে সাহায্য করে।অনেকটা আলাদা প্রকৃতির ছিলো।এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে ঐ ছেলেকে দেখতে আমার মজায় লাগতো।একদিন হটাৎ দেখলাম আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।একদম ভালো লাগলো না৷ সেদিন প্রথম ওর সাথে গিয়ে কথা বললাম আর কথা বলার নাম করে ওর সামনে দাঁড়ালাম যাতে ঐ মেয়ে ওকে দেখতে না পারে।নিজের এমন কাজে নিজেই অনেক হেসেছিলাম। এরপর ধীরে ধীরে কথা থেকে ফ্রেন্ডশিপ হলো। কলেজ থেকে ভার্সিটিতে এলাম।আপনি থেকে তুই হলো।

মেঘলা থেকে মেঘ হলাম।এতোদিন শান্তশিষ্ট মেয়েটাও ওর কাছে পাগলামি করতে লাগলাম।উড়ন্ত পাখির মতো পৃথিবীটাকে দেখতে লাগলাম।সব পাগলামি করতে লাগলাম। ওর প্রিয় জিনিসগুলি লুকিয়ে নিজের কাছে রাখা, প্রতিদিন ইচ্ছা করে ঝাল ফুচকা খাওয়া যাতে ওর রুমাল দিয়ে চোখ মুচতে পারি।ওর সাথে ঘুরা সব করতে খুব ভালো লাগতো।আমি জানতাম ও আমাকে ভালোবাসে।ওর চোখে দেখতাম। আমিও ওর ব্যতিক্রম ছিলাম না। খুব ভালোবাসতাম। ওকে চাইতাম।রোদকে মেঘের চাদরে ঢাকতে চাইতাম।আমি জানি ও আমাকে বলতে ভয় করে আমাকে হারানোর ভয়ে বলতে পারে না কিন্তু এই মন যে বড় খারাপ।ওর মুখেই ভালোবাসার কথা শুনতে চাই৷ তাই তো বারবার ওকে বোঝাতে চাই ওকে কত ভালোবাসি।কিন্তু কি জানিস আমার ভাগ্যটায় খারাপ।তার জন্যই তো খোদা আমাকে তোর থেকে নিয়ে চলে আসার চিঠি পাঠালো।

তোর মনে আছে তোকে প্রায়ই বলতাম আমার মাথা ব্যাথা করছে।কেমন লাগছে তুই সবসময় বলতি চল ডাক্তারের কাছে যায়।আর আমি সবসময় তোর ঐ অর্ডার নাকচ করে দিতাম।কিন্তু ঐ মাথা ব্যাথা আমাকে ছাড়লো না।একদিন হটাৎ বাসায় মাথা ঘুরে পড়ে যায়।কিন্তু দেখ তখনও আমার বাবা মা ছিলো না নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।রহিমা খালা আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। ডাক্তার আমাকে অনেকগুলো টেস্ট দেয় করার জন্য। আমি সবগুলো টেস্ট করায়। রিপোর্ট নিতে হসপিটালে আমি একাই যায়। জানতে পারি আমার ব্রেইন টিউমার হয়েছে। সাইজটা মোটামোটি বড়। তবে অপারেশন করে বের করা যাবে কিন্তু এই অপারেশনে রিস্ক আছে।আমার বয়স,ফিজিকাল কন্ডিশন এতো ভালো না যে অপারেশন এর ধকল নিতে পারবে।

আমার বাঁচার চান্স ১০%ছিলো।সেদিন চারপাশ ঘুরছিলো আমার। ডাক্তার বললো ১০দিন পর আমার অপারেশন করবেন। আমাকে রেস্ট নিতে হবে।কিন্তু তুই বল ১০দিন কি এনাফ সময়?আমার তো কত কিছু বাকি ছিলো।তোকে ভালোবাসিও বলা হয়নি। তোর মুখেও শুনিনি ভালোবাসার কথা।তোকে বিয়েও করা হয়নি।তোর সাথে ছোট একটা সংসার বাধার স্বপ্ন ছিলো তাও পূরণ হয়নি।তোর সাথে আমার ড্রিম হলিডেতেও যেতে পারিনি। আর অপারেশন এর পর যে বেঁচে ফিরবো তারও নিশ্চয়তা ছিলো না। কিছুই মাথায় ঢুকছিলো না।আমার সব স্বপ্ন ধীরে ধীরে ভেঙে যেতে লাগছিলো।তখন হটাৎ তোকে বিয়ে করার কথা মাথায় আসে।এই সময়টা তোর সাথে কাটানোর, তোকে ভালোভাবে চেনার ইচ্ছা জাগে। তাই তোকে ব্লাকমেইল করে বিয়ে করি।

আমি জানতাম এই ৬দিনে তোর থেকে তোর মনের কথা আমি শুনবো।তুই আমাকে ভালোবাসিস এই কথাটা তোর মুখ থেকে জানবো।কিন্তু কি বলতো খোদা না এমন চাইনি সেদিন সকালে হটাৎ আমার শরীরটা খারাপ লাগতে শুরু করে।ওয়াসরুমে গিয়ে দেখি নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে।এতোদিন ঔষধ দিয়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলেও সেদিন পারিনি।বুঝে গিয়েছিলাম আমার অবস্থা ভালো না। তাই তোকে মিথ্যা বলে এখানে আসি। তুই আমাকে নামিয়ে দিলে আমি সোজা হসপিটালে যায়। ওখানে রহিমা খালাকে আসতে বলি।বাবা মাকে বলি নাই কারণ ওনাদের সময় নষ্ট করতে চাইনি। আমি এখন হসপিটালের বেডে কিছুক্ষন পর আমার অপারেশন। আমি এই চিঠিটা রহিমা খালাকে দিয়ে লিখাচ্ছি।ওনার লেখার হাত আমার থেকে সুন্দর।জানি না কি হবে। খুব ভয় করছে।তোর হাত ধরতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে।ভেবেছিলাম তোকে বিয়ে করলে আশা পূরণ হয়ে যাবে কিন্তু আমি না অনেক লোভী। আমার এখন ইচ্ছা হচ্ছে তোর সাথে আরো থাকি।জানি না সময় পাবো কি না।

এই চিঠিটা আমি যদি মারা যায় তবে পাবি। জানিস তোকে না খুব দেখতে মন চাইছে। রহিমা খালা খুব বিশ্রিভাবে কান্না করছে।আমি যদি মারা যায় ওনাকে একটু দেখিস।জানিস আমার না একটায় দুঃখ তোর মুখে ভালোবাসার কথাটা শুনতে পেলাম না।তুই না অনেক পাজি। এতোদিন ঘুরলাম তবুও বললি না।আমি যদি মারা যায় একটা কাজ করিস চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে মুখ করে খুব জোরে বলবি “I love you megh”, পারবি তো? তাহলেই হবে।তোর কাছে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছি।আমি সাইন করে রেখেছি এটা অনেক আগে থেকে রেডী ছিলো। তুইও সাইন করে দিস তাহলে আরেকটা বিয়ে করতে পারবি।আমাদের ভার্সিটিতে ঐ পিয়ালী নামের একটা মেয়ে আছে বুঝলি?ও তোকে রোজ দেখতো তোকে পছন্দ করে মনে হয়। ওকে বিয়ে করতে পারিস।শুধু তোর কাছে একটায় চাওয়া আমাকে ভুলিস না।মনের কোনো এক ছোট কোণায় আমাকে রাখিস। আচ্ছা আর নারে গলা ব্যাথা করছে আর বলতে পারবো না। ভালো থাকিস।

ইতি তোর

রোদ স্তব্ধ হয়ে রইলো। শক্ত হয়ে বসে আছে রোদ। চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো রোদের গাল বেয়ে।একা বসে আছে রোদ।

৩বছর পর…

রোদ বসে আছে নদীর পাড়ে। রোদ ওর ফ্যামিলিকে নিয়ে পিকনিকে এসেছে।রোদ একা নদীর পাড়ে বসে আছে।
আজ মেঘকে খুব মনে পড়ছে ওর।

রোদঃ তো মেঘ কেমন আছেন আপনি?(আকাশের দিকে তাকিয়ে)

দেখ আজ আমি নদীর পাড়ে এসেছি।এটা তোর প্রিয় জায়গা তাই না?তুই বড্ড স্বার্থপর মেঘ। তুই নিজের সব আশা তো পূরণ করলি কিন্তু আমার কথা তো ভাবলি না। আমাকে একা ফেলে চলে গেলি।তুই বড় খারাপ। আমাকে তোর শেষ দিনেও ডাকলি না। এতো হিংসুক তুই?তুই আমাকে আমার সব জিনিস দিয়েছিস কিন্তু নিজের প্রিয় কানের দুল, নূপুর, নোট খাতা যেগুলো আমার কাছে ছিলো,তোর কাছ থেকে লুকিয়ে নিয়েছিলাম সেগুলো তো নিতে পারিসনি।

প্রতিদিন ঐসব জিনিস দেখলে তোর কথা মনে পড়ে আমার সেগুলো কেনো নিয়ে যাস নি?আমাকে ডিভোর্স পেপার দিয়েছিস যাতে তোর সব দোষ ঢেকে যায়?না মেঘ তোকে আমি এতো সহজে মাফ করবো না।আমি কখনোও সাইন করবো না ঐ পেপার।তুই আমার বউ ছিলি,আছিস, আর থাকবি।আমি না কাউকে বিয়ে করবো না তোকে ডিভোর্স দিবো। এটা তোর শাস্তি। আর কখনোও তোকে বলবো না I love you, I really love you”(রোদের চোখে জল)
কি ভাবছিস আমি তোকে ভালোবাসি?না তোকে ভালোবাসি না।”I hate you”তুই অনেক খারাপ অনেক।
রোদ মাথা নিচু করে ফেললো.কান্না থামছেনা ওর। হটাৎ রোদ এর পিঠে কেউ হাত দিলো।রোদ পিছনে তাকালো।

পরীঃমামা তুমি এখানে কি করো? রোদ মুচকি হেসে পরীকে কোলে নিয়ে বললো-তোমার মামির সাথে কথা বলি।

পরীঃমামি কি আকাশে থাকে?

রোদঃহুমমম।

পরীঃ কেনো ওখানে কেনো থাকে?আমাদের সাথে থাকে না কেনো?

রোদঃ ও বড় পাজি মেয়ে। আমার সাথে ওর ঝগড়া হয় আর ও রাগ করে ওখানে চলে যায়।

পরীঃ ওহহহহ।(দুঃখ করে বললো)এরপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো-মামি তুমি চলে আসো আমি মামাকে বকা দিবো।ও আর ঝগড়া করবে না।তুমি চলে আসো আমি তোমার সাথে খেলবো।প্লিজ চলে আসো। রোদ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে জানে মেঘ আসবে না তবুও কেনো যেনো মন চাচ্ছে ওকে আবার ফিরে পেতে।আবার ভালোবাসতে।আবার নিজেকে ওর পরশে ঢাকতে। রোদকে মেঘে ঢাকতে। মেঘে ঢাকা রোদ হতে মন চাইছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত