দুপুর ১২ টা। খুব আয়েশ করে ঘুমোচ্ছিলাম।ঘুমের মধ্যেও মনে হলো কেউ একজন গভীর মনোযোগ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কৌতূহল বশত চোখ মেলে তাকালাম।।বাসার কেউ এভাবে আহাম্মকের মতো আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে.. তা ভাবার কোনো মানে হয় না।।তাহলে কে হতে পারে??ব্যাপারটা ব্যাপক কৌতূহল উদ্দীপক।এই কৌতূহল তো মেটাতেই হয়।।
গভীর আগ্রহ নিয়ে চোখ মেলে তাকিয়েই আমি অবাক।শুভ্র ভাই!!শুভ্র ভাই আমার উপর ঝুঁকে পড়ে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।অদ্ভূত!!ব্যাপারটা বুঝতে পেড়ে রাগে আমার পিত্তি জ্বলে গেলো।উনাকে আমি আমাদের বাসার ত্রিশ সীমানার মধ্যে আসতে নিষেধ করেছি আর মহাশয় আমার বেডরুমে আমারই বিছানায় উঠে আমারই উপর ঝুঁকে আছে,, কেমনডা লাগে?উনাকে ধাক্কা দিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে বালিশের উপর উঠে বসলাম।।চোখে মুখে রাগের আগুন জ্বালিয়ে উনার দিকে তাকালাম।কিন্তু তাতে উনার কোনো ভাবোদয় হলো বলে মনে হলো না…শান্ত ভঙ্গিতে সোজা হয়ে বসলেন।আমার শরীরের কম্বলটা টেনে নিয়ে পা ঢাকলেন,,পাশের বালিশটা টেনে নিয়ে কোলের উপর রেখে আরাম করে বসলেন।।উনার এমন উদাস ভাব দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো আমার….রাগী গলায় বলে উঠলাম এখানে কি করছেন আপনি?আপনার সাহস দেখে আমি হতবাক!!
উনি আমার কথাটাকে যেনো জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেললেন।বাঁকা হাসি দিয়ে চিন্তিত মুখে বলে উঠলেন- এই তুই যে ঘুমোনোর সময় এমন ভুসভুস করে নিশ্বাস ছাড়িস জানা ছিলো না তো…আবার দেখি ফুসফুস করে কথাও বলিস…কি মারাত্মক ব্যাপার!!তোকে পুরোপুরি গরু গরু লাগছিলো রে।তোর বর তো রাতে তোর এমন ভুসভুস ফুসফুস শব্দ শুনে রীতিমতো হার্ট অ্যাটাক করবে । উনার কথায় মেজাজটায় খারাপ হয়ে গেলো।।মনে মনে চরম কিছু গালি দিয়ে দিলাম মুহূর্তেই।আমি ঘুমালে ভুস ভুস শব্দ করি না ঠুসঠুস শব্দ করি তাতে উনার বাপের কি?যত্তসব আবাল জাতি!!কিন্তু মুখে বললাম- সেটা আমার আর আমার বরের ব্যাপার।তুমি আমার বরকে নিয়ে চিন্তা করে প্রেশার বাড়াচ্ছো কেন বুঝলাম না!!
কি বলছিস তুই? আমি প্রেশার বাড়াবো না?অবশ্যই বাড়াবো…তোর বাপে তো তোকে সরকারি চাকরীওয়ালা ছাড়া বিয়ে দিবে না।তুই ভাবতে পারছিস, একজন সরকারি চাকুরীজীবি আমাদের দেশের কতো বড় সম্পদ!!আর তোর মতো একটা ভুসভুস করা মেয়েকে বিয়ে করে দেশের এতোবড় সম্পদ রাতের আধাঁরে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে… তা আমি একজন ভার্সিটি ছাত্র হয়ে হতে দিতে পারি?? কিছুতেই হতে দিতে পারি না।।কিছুতেই না…
শুভ্র ভাইয়ার কথায় উনার চুলগুলো টেনে ছেঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।।এক সেকেন্ডেই দেশের সচেতন নাগরিক হয়ে গেছেন উনি…যে কি না কোল্ড ড্রিংকস্ এর বোতল রাস্তায় ছুঁড়ে মারে সে মুহূর্তেই নিজেকে সুনাগরিক দাবি করছে,, ভাবা যায়??হুহ। আমার ঘুমের জন্য কেউ হার্ট আট্যাক হয়ে মরে যাবে?আশ্চর্য!!তাহলে তুমি যে এতোক্ষণ ঝুঁকে ঝুঁকে আমার ভুসভুস ফুসফুস ঠুসঠুস শব্দ শুনছিলে তাতে তুমি হার্ট আট্যাক করলে না কেন শুনি??
আরে আমি তো হলাম স্ট্রং বয় তাই এসব আট্যাক ফ্যাটাকে আমার কিচ্ছু হয় না।।এসব কথা বাদ দে…একটু কাছে এসে বোস তো..তোকে একটা জরুরি কথা বলবো…আয়… আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই উনি আবারও তাড়া দিয়ে উঠলেন- কি রে কাছে আসতে বললাম তো।।তাড়াতাড়ি আয়…আমার তো কনসেনট্রেশান ব্রেক হচ্ছে রে বাবা!! আমি চুপচাপ উনার দিকে একটু এগিয়ে বসলাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললেন- ওরে বাবা…তুই তো সো ফাস্ট।।ওড়না টুড়না কি সব তোর ড্রেস আপ সেন্স থেকে আউট করে দিয়েছিস নাকি?তবে তেমন খারাপ লাগছে না…
উনার কথায় নিজের দিকে তাকিয়েই চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম…আমার গায়ে ওড়না নেই!! ওহ শিট।।তাড়াতাড়ি আশেপাশে হাঁতরিয়ে ওড়না খুঁজতে লাগলাম।।দরকারের সময় দরকারী জিনিসগুলো কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না…এবার যে পাবো তাও আশা করতে পারলাম না।।অসহায় দৃষ্টিতে কম্বল ধরে টান দিতেই……উনি হাসতে হাসতে পাশের টি-টেবিল থেকে ওড়নাটা নিয়ে আমার গায়ে ছুঁড়ে মারলেন।লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার উপক্রম আমার!!ছিহ ছিহ…।উনি আগের মতো স্বাভাবিক গলায় ফিসফিস করে বলে উঠলেন-
কিরে বললাম না জরুরি কথা বলবো? এগিয়ে আয়!! কথাটা বলে অপেক্ষা না করে নিজেই একটু চেপে এসে বলে উঠলেন- এই রোদু….স্বপ্নে প্রেম টেম করিস নাকি?এতো ফুসফাসের কারণ কি?(ভ্রু নাচিয়ে)বিষয়টা কিন্তু ব্যাপক চিন্তার বুঝলি?তোর বাপ শুনলে তো সোজা হার্ট অ্যাটাক…. মাইয়া তার স্বপ্নেও প্রেম করে…ভাবা যায়??
এই মুহূর্তে উনাকে চরম কিছু গালি দিতে ইচ্ছে করছে আমার।।যা শুনলে উনি কান চেপে ধরে বলবেন-” ছেঁড়ে দে মা… কেঁদে বাঁচি” কিন্তু সমস্যা হলো এই জাতীয় কোনো গালি এই মুহূর্তে মনেই পড়ছে না।।মার প্রতি খুব বিরক্ত লাগছে এবার…মা সব শিখিয়েছে গালিটা কেনো শেখায় নি বুঝতে পারছি না।তাহলে এই অতি অভদ্র লোকটিকে অতি ভদ্রতার সাথে কিছু গালি উপহার দেওয়া যেতো।হুহ…আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে উনি আবারও বলে উঠলেন- কি রে বললি না যে।।স্বপ্নে প্রেম টেম করছিলি নাকি??কোন স্টেপ পর্যন্ত পৌঁছেছে তোদের প্রেম?হাত ধরাধরি নাকি এরও আগে…বুঝতে পারছিস তো কি বলছি?
এবার আর নেওয়া যাচ্ছে না।।ইচ্চে তো করছে একটা লাথি দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিই উনাকে। ইচ্ছেটাকে সংবরণ করে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম- গেইট লস্ট!! বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে।।বিনা অনুমতিতে একটা মেয়ের রুমে ঢুকে যাওয়াটা কোনো ভদ্রলোকের বিহেভিয়ারের মধ্যে পড়ে বলে আমার মনে হয় না।।খুব তো সুনাগরিক সুনাগরিক করে দেশ উদ্ধার করছিলে… মেয়েদের রুমে ঢুকে যাওয়া সুনাগরিকের কয় নম্বর নীতি বলবে প্লিজ??(দাঁতে দাঁত চেপে)
উনি মুচকি হেসে বলে উঠলেন -“নিজের বউয়ের রুমে আসতে পারমিশন লাগে নাকি, বোকা!!” উনার কথায় চোখ মুখ লাল করে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলাম…”মানে?” উনি হুট করে আমার গালে একটা চুমু খেয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন…যেতে যেতে বলে গেলেন..” মানে হলো… তুই বড্ড বোকা !!”আমি রোবটের মতো বসে আছি।। কোনো সেন্স কাজ করছে না আমার।।
রিয়েক্ট বাটন নষ্ট হয়ে গেলো না তো??কি মারাত্মক ব্যাপার…মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরছে…”এটা কি হলো?” “এটা কি হলো?” কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে চোখে মুখে পানি দিয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসলাম।।আড্ডার আসর মেতে উঠেছে চরম ভাবে ঠিক তখনই কোথা থেকে আমার ফুপির ছোট্ট মেয়েটা দৌড়ে এসে শুভ্র ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো-” দাদাভাই?তুমি যে তখন রোদাপু কে পাপ্পি দিলে আমায় দিবে না?আমারও পাপ্পি চাই…চাই-ই চাই” ওর কথায় শুভ্র ভাইয়া বিষম খেলেন।।সবাই অবাক দৃষ্টিতে একবার আমার দিকে তো আবার শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছে।।আমি আবারও বরফ হয়ে বসে রইলাম।।মাথায় আবারও একটা কথায় ঘুরছে…এটা কি হলো??