মা আমি বড় হয়ে আবির ভাইয়ার মতো কাউকে বিয়ে করবো। আমার কথা শুনে পুরো বাড়ির লোকজন হেসে মাটিতে গড়াগড়ি করেছিলো। কারন তখন আমার বয়স ছিলো ৮। হুম ৮ বছর বয়স থেকেই আবির ভাইয়া কে ভালো লাগতো কারন ও আমাকে গল্প শোনাতো, হাওয়াই মিঠাই কিনে দিতো, ঘুরতে নিয়ে যেতো আর অনেক অনেক পুতুল কিনে দিতো।
আবির আমার মামাতো ভাই। আমার চেয়ে ১০ বছরের বড়। এতো ভালো ছাত্র ছিলো যে সবাই ওকে নিয়ে গর্ব করতো। সবাই চাইতো ও যেনো বড় হয়ে ডাক্তার হয়। ছোট বেলায় নানু বাড়ি যাওয়ার কথা শুনলেই খুশিতে পাগল হয়ে যেতাম। অন্য কাজিনদের তুলনায় ওকে বেশি পছন্দ করতাম। ওর বাবার পোস্টিং হওয়ায় ওরা অনেক দূরে অন্য জেলায় চলে গেলো। অনেক বছর আর দেখা হলো না, ওরা যখন নানু বাড়ি আসতো তখন আমরা ব্যস্ত থাকতাম। বাসা দূরে হওয়ায় আমাদের বাসায় ওদের আসা হতো না বললেই চলে।৫ বছর পর যখন আমি অষ্টম শ্রেনীতে পড়ি তখন দেখা হলো। ও তখন মেডিকেলের ছাত্র।
আগের মতই ভালো বন্ধুত্ব হলো, যখন শুনলাম ওর প্রেমিকা আছে এতো কষ্ট পেলাম। পিচ্চিকালের ভালো লাগা বলে কথা এতো সহজে ছেড়ে দেয়ার মেয়ে আমি নই। যোগাযোগ কন্টিনিউ রাখলাম আর সব সময় দোয়া করতাম ওর যেনো ব্রেকাপ হয়ে যায় , ওর প্রেমিকা যেনো ওকে ছেড়ে চলে যায়। যখন দশম শ্রেনীতে উঠলাম ও তখন ইন্টার্নি করছে। এর কিছুদিন পরেই শুনলাম ওর প্রেমিকার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেছে। শুনে বেশ খুশি হলাম। যাক আমার লাইন ক্লিয়ার। ফ্যামিলি পিকনিকে গেলাম সব কাজিনরা মিলে। সুযোগ পেয়ে, কিছু না ভেবেই ওকে ভালোবাসি বললাম। এমন এক থাপ্পড় মেরে দিলো, পুরো ব্যক্কল হয়ে গেলাম। ওর ভাষ্যমতে আমি এখনো অনেক পিচ্চি।
ভালোবাসা বুঝার মতো বয়স এখনো আমার হয়নি। যখন বয়স হবে তখন ঠিক বুঝবো যে আজ কি একটা বাজে কাজ করেছি। আমার এমন রাগ হলো, রাগে ওর সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিলাম। আর সব সময় মনে মনে চাইতাম ওর যেনো আর কখনো প্রেমিকা না জুটে। এভাবে এস এস সি শেষে কলেজে ভর্তি হলাম। ফ্যামিলি ফাংশন ছাড়া ওর সাথে দেখা হতো না। খুব মন চাইত ওকে দেখতে। সেই ছোট বেলায় ওকে যতোটা ভালো লাগতো আজো ঠিক ততোটাই ভালো লাগে। মাথায় বাজ পড়লো যখন শুনলাম ওর জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে খুব শীঘ্রই ওর বিয়ে। আমার একজন লেডি প্রাইভেট টিউটর ছিলেন উনাকে আমার মা পছন্দ করলেন আবিরের জন্য। আমি শুনে হতবাক। আবিরকে বললাম মিস এর বয়ফ্রেন্ড আছে সে তোমায় বিয়ে করবে না, না বলে দাও।
মিস কেও বললাম আবির আপনাকে না ওর প্রেমিকা কে বিয়ে করতে চায়। দিলাম বিয়ে ভেংগে। এইচ এস সি শেষে যখন ভার্সিটি এডমিশন টেস্ট দিতে যাবো সেদিন আবির আমার সাথেই ছিলো। সুযোগ বুঝে সেদিন আবার প্রপোজ করলাম। ও এবার আর থাপ্পড় মারলো না। আমাকে বুঝালো, খুব ভালো করে বুঝালো আমি ওর অনেক ছোট, আমাকে নিয়ে ঐভাবে কখনো ভাবেনি। আমি অনেক ভালো ছেলে পাবো। এতো বুঝিয়েও কোনো লাভ হয়নি। একের পর এক ওর সব বিয়ে ভেঙ্গেই যাচ্ছিলাম। প্রায়ই নতুন নতুন স্টাইলে প্রপোজ করতাম। কতটা ভালোবাসি বুঝানোর চেস্টা করতাম।
ফাইনালি জনাবের মন গলতে শুরু করলো, ফাইনালি আবির বুঝলো আমি তাকে সত্যি ভালোবাসি। পাগলামি না। যখন আমার ১ম বিয়ের প্রস্তাব টা আসে আবির সবার সামনে আমার নানু আর আমার বাবাকে বলে ফেললো ও আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমাদের পরিবারের সবাই ও কে ভীষন পছন্দ করত, কেউ আর আপত্তি করলো না। যখন আবিরের বয়স ৩০, আমার তখন ২০। কি লাভ হলো এতো ভাব নিয়ে সেই ততো আমাকেই বিয়ে করলো। মাঝখান থেকে নিজের বয়স টা বাড়ালো আর লাভ মেরেজের শখ টাও পূরন হলো না। যাই হোক ওকে তো পেয়েছি।
এখন অবশ্য প্রায়ই বলে, আসলে তোমাকে ভালোবাসতাম কিন্তু কেউ মানবে না এই ভয়ে বলিনি। আর ভাবতাম তুমি ছোট মানুষ পরে আবেগ কেটে গেলে আমাকে আর ভালো বাসবে না। বিয়ের পরেই সেই থাপ্পড়ের শোধ কিন্তু ঠিকি নিয়েছি। আজ আমাদের ২০তম বিবাহ বার্ষিকী। হুম অনেক ভালো আছি। আজো আবিরকেই ভালোবাসি। বড় হলে আবেগ কেটে যাবে, কিন্তু ভালোবাসা কেটে যাবেনা।আমার সেই পিচ্চিকালের ভালোবাসা সফল হয়েছিলো। মন থেকে চাইলে হয়তো আসলেই পাওয়া যায়।