লজ্জাবতী

লজ্জাবতী

অফিস থেকে এসে একটু খেলা দেখছিলাম।কখন যে দশটা বেজে গেছে সেদিকে খেয়ালই নেই।
আমি টিভি বন্ধ করে রান্না ঘরের দিকে গেলাম।হুম সবকিছু ঠিকই আছে। শুধু দুধটুকু গরম করতে হবে।
দুধটুকু গরম করতে বেশী সময় লাগলো না।অফিস থেকে এসে একবার গরম করেছিলাম তো তাই হালকা গরম করেই নামিয়ে নিলাম।
.
আমি দুধটুকু গ্লাসে ঢেলে রুমে এসে দেখি মেয়েটা এখনও পড়ছে।আমি যে রুমে এসেছি সেদিকে তার কোন খেয়ালই নেই।
আমি মিমের পাশে গিয়ে বললাম,
– দুধটুকু খেয়ে নাও।
আমার কথায় মিম আমার দিকে তাকালোও না।বইয়ের মধ্যে যেন একদম ডুবে আছে।আমি মিমকে আবারও বললাম,
– দুধটুকু খেয়ে নাও।

আমার কথায় মিম এবার মাথা তুলে তাকালো।তবে আমার হাতে দুধের গ্লাস দেখে প্রতিদিনের মত আজও ওর হাসি মাখা মুখটা একটু শুকিয়ে গেলো।আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই মিম বললো,
– আজও খেতে হবে?
– হ্যা।এক্সাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত খেতেই হবে।
আমি গ্লাসটা মিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে কথাটি বললাম।
মিম এবার কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
– দাও খায়িয়ে দাও।
আমি দুধের গ্লাসটা মিমের মুখে ধরতেই ও আস্তে আস্তে দুধটুকু খেয়ে নিল।তবে মুখ দেখে স্পষ্টই বুঝতে পারলাম প্রতিদিনের মত আজও দুধের প্রতি বিরক্ত।

মিমের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে বছর খানেক হবে।তবে এটাকে শুধু বিয়ে বলা যাবে না।যাকে বলে পালিয়ে বিয়ে।
মেয়েটা আমাকে এতটাই ভালবাসতো যে ওর সবকিছু ছেড়ে আমার কাছে চলে এসেছিল।
মিমের বাবা বেশ প্রভাবশালী ছিল।কিন্তু মিমের জন্যে আমাকে কিছু বলতে পারেনি।যতই হোক মেয়ের জামাই বলে কথা।

মিমের সাথে যখন আমার বিয়ে হয় তখন ও সবে মাত্র অনার্স থার্ড ইয়ারের ফাইনাল দিয়েছে।মেয়েটার ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করে বড় কিছু হবে।তাই আমিও আর ওকে না করিনি।তাছাড়া মেয়েটা পড়াশোনায়ও বেশ ভাল।
এদিকে ওর ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম শুরু হয়ে গেছে।দু তিনটা হয়েও গেছে।বেশ রাত জেগেই পড়তে হয়।তাই শরীর ভাল রাখতে প্রতিদিন দুধ, ডিম দেই।কিন্তু ইনি দুধ খেতেই চায় না।তাই প্রতিদিন জোর করেই খাওয়াতে হয়।

অফিসে কাজ করছিলাম।তখনি মিমের ফোন। আমি ফোন ধরতেই মিম বললো,
– কখন আসবা?
– এইতো আর একটু পরেই।
– কাল ই তো এক্সাম শেষ।এদিকে খাতা কলমও প্রায় শেষ।একটা খাতা আর দুইটা কলম নিয়ে এসো।
– আচ্ছা ঠিক আছে।আর কিছু?
– না।শুধু তুমি থাকলেই হবে।
– লাভ ইউ।
– লাভ ইউ টু।

বাসায় এসে মিমকে আগে দুধটুকু খায়িয়ে দিলাম।কাল এক্সাম আছে তাই আজ আর রাত জাগা যাবে না।আমি মিমের পাশে গিয়ে বললাম,
– চলো ঘুমাবে।
– আর একটু পড়ি।
– না।কাল এক্সাম আছে।আজ আর রাত জাগা যাবে না।
– আর একটু।
আমি আর কিছু বললাম না।মিমকে কোলে তুলে নিলাম।সোজা কথায় কাজ হবে না।আমি ওকে শুয়িয়ে দিয়ে আমিও শুয়ে পড়লাম।মেয়েটা আমার বুকে মাথা রেখেই ঘুমালো।শান্তির ঘুম।

কই হলো তোমার।

আমি মিমকে আবারও ডাক দিলাম।এদিকে এক্সামের সময় হয়ে গেল।আমি যখনি রুমে যাব তখনি দেখি মেয়েটা বের হচ্ছে।আমার কাছে এসে বললো,
– হুম চলো।
– তোমার এডমিট, ফাইল কই?
– এই রে ভুলে গেছি।দাড়াও আমি এক্ষুনি আনছি।
– তোমাকে আনতে হবে না।আমিই যাচ্ছি।আবার কি না কি ভুলে ফেলে রেখে যাও।

মিমের ফাইলটা গুছিয়ে ওকে নিয়ে বের হলাম।মেয়েটা বাইকের পেছনে বসে আমাকে শক্ত করেই জড়িয়ে আছে।মনে হচ্ছে আমি যেন ওকে রেখে পালিয়ে যাব।

মিমকে এক্সাম হলে রেখে আমি অফিসের দিকে রওনা হলাম।আবার এক্সাম শেষে বাসায় নিয়ে যেতে হবে।ইনি আবার আমাকে ছাড়া একা বাসায় যেতে ভয় পায়।
“”
এক্সামের পর প্রায় অনেকদিন কেটে গেল।এদিকে মেয়েটা বার বার বলছে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে।কিন্তু সময়ের কারনে হচ্ছেনা।

এই চলো না কোথাও ঘুরে আসি।

মিমের কথায় আমি ওর দিকে তাকালাম।কথাটা খারাপ বলেনি।এক্সামের চাপে একদম খারাপ অবস্থা।এখন তো এক্সাম শেষ।তো কোথাও যাওয়া যেতেই পারে।তাছাড়া অনেক দিন হলো বলছে মেয়েটা কোথাও নিয়ে যেতে।আমি মিমকে বললাম,
– কোথায় যাবে?
– কক্সবাজার। অনেক দিন যাওয়া হয় না।চলো না।
– আচ্ছা ঠিক আছে।আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিচ্ছি।তবে একটা শর্ত।
– কি?
– পানিতে নামা যাবে না।পানিতে নামলেই তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।
আমার কথায় মিমের মুখটা একটু মলিন হয়ে গেলো।তবে মুচকি হেসে বললো,
– আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে।
“”
অফিসে কাজ করছিলাম তখনি মিমের ফোন এসে হাজির।এই কয়েকদিনে অনেক কাজ জমে গেছে।মেয়েটাকে কত করে বললাম পানিতে নামা যাবে না।কে শোনে কার কথা।
পানিতে নেমে জ্বর বাধিয়ে নিল।এমন জ্বর আমি কোন দিনও দেখিনি।প্রায় একমাস পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলো।আর এই কয়েকদিনে অফিসেও ঠিক মতো আসতে পারিনি।

আমি ফোন ধরতেই মিম বললো,
– আজ তো রেজাল্ট। তুমি কি দেখবে নাকি আমিই ভার্সিটিতে যাব।
– তোমার যেতে হবে না।আমি অফিস থেকে বের হয়ে রেজাল্ট নিয়ে বাসায় আসবো।
– আচ্ছা।
মিমের আচ্ছা কথাটা কেমন যেন শোনালো।মনে হয় অনেক টেনশন এ আছে।
“”
একটা তে ফেইল।কিভাবে সম্ভব।

আমি একটু জোরেই কথাটি বললাম। মিমের চোখে এতক্ষন পানি টলমল করছিলো।কিন্তু এখন কেঁদেই দিল।কিছু বলতেও পারছে না।শুধু কাঁদছে।
আমি এবার মিমের পাশে বসে রেজাল্ট শিটটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,
– নাও দেখো।
মিম কান্না জড়িত কন্ঠে বললো,
– না।লাগবে না।
– বললাম তো দেখতে।
মিম এবার কাগজটা নিয়ে আরও জোরেই কেঁদে উঠলো।একবার আমার দিকে আর একবার কাগজটার দিকে তাকাচ্ছে।আমিই ভুল বললাম না কি ওই ভুল দেখলো এইটা মেলাতে পারছে না।
আমি মিমকে কিছু বলতে না দিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে একটা চুমু দিলাম।হুম মিম ফেল না,এ প্লাস পেয়েছে। যাকে বলে ফাস্ট ডিভিশন।
আজ আমার থেকে বেশি খুশি হয়তো মিমও হয়নি।আমি মিমের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম,
– এই খুশির দিনে তুমি যা চাইবে তাই দিব।বলো কি চাও।
– তোমাকে।আমার কাছে শুধু তোমাকেই চাই।শুধু তোমাকেই চাই।
– আসার সময় দারওয়ান চাচার কাছে মিষ্টি দিয়ে এসেছি।পুরো বিল্ডিং এ দেওয়ার জন্যে।
– তো আমার মিষ্টি কে দেবে?
– সবারটা যখন আমিই দিয়েছি তোমারটাও আমিই দেবো।
আমার কথায় মিম আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে আমার বুকে মুখ লুকালো।মেয়েটা মনে হয় লজ্জা পেয়েছে।লজ্জাবতী মেয়ে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত