বউ সেজে বসে আছি। যেই ঘরটায় আমাকে বসানো হয়েছে ঘরটা বেশ গোছানো, সব কিছুই পরিপাটি। ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে, বেলি ফুলের ঘ্রানে চারদিক মো মো করছে। কিন্তু কোনো কিছুই আমার মনকে স্পর্শ করছে না। নিজের ভালোবাসার মানুষটির জন্য বউ সাজার ইচ্ছা ইচ্ছাই রয়ে গেলো। বাবাকে প্রচন্ড ভয় পেতাম কখনোই মুখের উপর কিছু বলতে পারিনি। এই বিয়েতে আমি রাজি নই এটা বলার সাহস ও সঞ্চয় করতে পারিনি। অবশ্য সাহস করেই বা কি বলতাম ভুল মানুষকে ভরসা করে দিনের পর দিন ভালোবেসে ঠকেছি। এসব ভাবতেই হঠাৎ দেখলাম আবির সাহেব ঘরে ঢুকলেন। ভদ্র লোক বয়সে আমার ৮ বছর সিনিয়র। বাবার বেশ পছন্দের মানুষ । পেশায় ব্যাংকার, দেখতে ভদ্রই লাগে। আসলে কেমন মানুষ তা জানিনা। বাবা বলেছিলেন সুখী হবি ওর সাথে ওর মতো ছেলেই হয় না। ভাবনায় ছেদ পড়লো উনার কথায়
– জনাবা আপনার কি মন খুব বেশি খারাপ?
– না
– তাহলে কান্না থামিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
– আমি ঠিকাছি
– ওযু করে আসুন ২ রাকাত নফল নামাজ পড়বো
– কেনো
– এটা আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য। কিছু না বলে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে বসলাম, উনিও পাশে এসে বসলেন
– আপনি আমাকে ভালো বন্ধু ভাবতে পারেন, বিয়েটা যেহেতু হঠাৎ করেই হয়ে গেছে, জানাশুনার জন্য সময় পাইনি। তবে আমি আপনাকে সেই সময়টা দিচ্ছি।
– এখন সময় দিয়ে লাভ কি
– লাভ লস জানিনা কিন্তু সংসার টা ভালোবাসা দিয়ে শুরু হোক এমন টাই চাই।
– তা কি আদো সম্ভব
– আল্লাহ চাইলে অবশ্যই সম্ভব
– আমি খুব ক্লান্ত ঘুমাবো
– একটা কথা ছিলো বিয়েটা ভাঙতে কেনো চাচ্ছিলেন, কেনো বারবার আমাকে ফোন দিয়ে বলতেন আপনাকে রিজেক্ট করতে, আপনি তো সিঙ্গেলই ছিলেন, সমস্যা কোথায় ছিলো
-শুনুন মিস্টার রিজেক্ট তো করেন নি এখন কেনো জানতে চাইছেন
– আপনাকে আমার ভালো লেগেছে না করি কিভাবে
– সব ছেলেই এক
– হয়তো হয়তো না।
– আমার ব্রেকাপ হয়েছে তাই একটু সময় নিতে চেয়েছিলাম নিজেকে বিয়ের জন্য প্রিপেয়ার করার জন্য
– তো জনাবা আপনার কি কারনে ব্রেকাপ হলো
– আমি তার একমাত্র ভালোবাসা হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু হয়েছিলাম অনেকের মধ্যে একজন। যা মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
– বুঝতে পেরেছি, ঘুমান।
– একটা অনুরোধ ছিলো
– বলুন
– প্লিজ আমাকে কখনো মিথ্যা বলবেন না, আমাকে ভালো না লাগলে ছেড়ে দিবেন কিন্তু আমার অগোচরে অন্য নারীতে আসক্ত হবেন না। এটা অনেক বড় ধোকা। আর আমি এই কষ্ট টা সেকেন্ড টাইম মেনে নিতে পারবো না।
– ঠিকাছে জনাবা।
– আর প্লিজ জনাবা বলবেন না আমার নাম রিয়া।
– ঠিকাছে রিয়া বলেই ডাকবো।
আবিরের পরিবারের প্রতিটা মানুষ এতোটাই ভালো যে অল্প দিনেই আমাকে খুব আপন করে নিলো। আমার খুব ভালো সময় কাটছিলো। আবির আমার খুব ভালো বন্ধু হলো সে আসলেই ভালো মানুষ, চাইলেই পুরুষত্ব খাটাতে পারতো চাইলেই আমাকে আমার অতীত নিয়ে কথা শুনাতে পারতো, কিন্তু সে তার কিছুই করেনি। ধীরে ধীরে তার প্রতি আমার দূর্বলতা কাজ করতে লাগলো। সত্যিকারের ভালোবাসা হয়তো এটাই। কিন্তু সব সময় মনে একটা ভয় কাজ করতো যদি সেও আমাকে ঠকায়। সব সময় আল্লাহর কাছে একটা জিনিষই চাইতাম, আমি আর ঠকতে চাই না। এভাবে ১ বছর কেটে গেলো। ১ম বিবাহ বার্ষিকী তে আমরা বাইরে ঘুরতে বের হলাম। হঠাতই সামনে রাহাত কে দেখতে পেলাম, অবাক করা বিষয় হলো তাকে দেখে ঘৃণার অনুভুতি টাও কাজ করছিলো না। সে শুধু তাকিয়েই ছিলো আমি তার দিকে তাকানোর জন্য এক মিনিট সময় ও ব্যয় করতে চাচ্ছিলাম না।
ফিরে এসে আবিরকে বললাম
– যদি কখনো আমাকে ঠকান আর আমি তা বুঝতে পারি তাহলে আমি আপনাকে খুন করবো
– আরে বাবা তাই নাকি
– হ্যা আর আমি এই বিষয়ে অনেক বেশি সিরিয়াস
– তা ঠিকাছে কিন্তু ভালো তো বাসো না আগে তো ভালোবাসো, আমি একা একা আর কয়দিন ভালোবাসবো বলো, পরে কিন্তু অন্য দিকে মোড় নিবে ভালোবাসা। দৌড়ে গিয়ে কলার চেপে ধরে বললাম
– অন্য মেয়ের নাম নিলেও খুন করে ফেলবো
– তাহলে যাতে নাম না নেই সেই কাজ করুন জনাবা
– হুম ভালোবাসি
– এভাবে বললে হয় না
– কিভাবে বললে হয়
– সুন্দর করে লক্ষী বউ এর মতো করে বলো
– পারবোনা
– তাহলে আর কি আমি গেলাম
– অনেক ভালোবাসি আবির, আমি আর কষ্ট পেতে চাইনা, সারা জীবন পাশে থেকো অনুরোধ করছি।
– আরে পাগলী তুমি ছাড়া আমি আর কোথায় যাবো বলো আমি অনেক আগেই তোমার ভালোবাসার মায়ায় পড়েছি, তাই তো শ্বশুড় মশাইকে তেল পট্টি মেরে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি।
– এর মানে কি
– ঐটা তুমি বুঝবানা
– আমি বুঝবোনা কেনো সবই বুঝেছি সেয়ানা ছেলে…
এভাবেই খুনসুটি আর ভালোবাসার মধ্যেই ভালো কাটছে আবির রিয়ার সংসার। ভালো থাকুক প্রতিটা পরিবার।