ছেলেটা ১মাস যাবৎ আমার পিছে ঘুরছে। সব জায়গায় ফলো করছে।অনেক সহ্য করেছি।আজ এমন ধোলাই দিবো বাপ বাপ করে উল্টো দৌড় দিবে।এ মুখো আর হবে না। পিছন ঘুরে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে বললাম, কি সমস্যা আপনার?১মাস যাবৎ আমাকে ফলো করছেন কেন? ছেলেটা বললো, আপনি কমার্সের স্টুডেন্ট হয়ে হিসাবে এমন ভুল কি করে করতে পারেন?
–মানে?
–মানে আমি আপনাকে ১মাস ৯দিন যাবৎ ফলো করছি।
–ওই একি হলো।
–জ্বি না এক হলো না।হিসাববিজ্ঞানে এক এক টা দিন কত ইম্পর্ট্যান্ট সেটা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়।একদিনের হিসাব বাদ পড়লে কারবারের আর্থিক হিসাবের পরিমাণ গরমিল হতে পারে এবং আর্থিক অবস্থার সঠিক চিত্র ও প্রকাশ পাবে না।আর,,,
তিনি আরো কিছু বলতে চাইছিলো।আমি হাত উঁচু করে বললাম, থামুন।লেকচার বন্ধ করুন।আমার ভার্সিটির স্যারেরাও ক্লাসে এতো লেকচার দেয়না আপনি যতটা,,, সে যাই হোক আসল কথায় আসি। আপনি আমাকে ফলো করছেন কেন?
–কারন আজ থেকে ১মাস ১০দিন আগে আপনাকে দেখে আপনার প্রেমে পড়ে গেছি আর সেদিন ই ঠিক করেছি আপনাকে আমার মন্টুর মা বানাবো।তাই আপনাকে দেখেশুনে রাখছি। আমি মনে মনে ভাবছি এই মন্টুটা আবার কে??আর আমাকে মন্টুর মা বানাবে।কি বলছে লোকটা। তাই সরাসরি জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, এই মন্টু টা কে? তিনি দাত খেলিয়ে বললেন,আমাদের ছেলে।
–সে এখন কোথায়?
তিনি মাথা চুলকিয়ে লজ্জা পাওয়ার ভংগীতে বললো, ইয়ে মানে এখনো দুনিয়ায় আসে নি।তবে আপনি চাইলে খুব শীঘ্রই আমরা দুজনে মিলে তাকে দুনিয়াতে আনতে পারবো ইনশাআল্লাহ। লোকটা বলে কি।ওনার কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেলো।কাশি শুরু হয়ে গেলো।আমি খুক খুক করে কাশতে শুরু করলাম।তারপর ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে এক নিশ্বাসে পুরো বোতল খালি করে দিলাম।রাগ আমার মাথায় চরে গেছে।বড় করে নিশ্বাস নিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ছ্যাচড়া ব্যাটা।ফাইলামি করার জায়গা পাস না?থাপ্পড়াইয়া তোর চেহেরার মানচিত্র পাল্টে দিবো।পাবনা ফেরত যত্তসব ফাউল পাবলিক।
–পাবনার সাথে আমার দূর দূর পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক নেই।তবে তুমি যদি আমার ছেলের মা না হও তবে খুব শীঘ্রই পাবনার সাথে রিলেশন হয়ে যাবে। আমার আর এই লোকের ফালতু কথা সহ্য হচ্ছে না।ইচ্ছে করছে এক ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে ফেলি।তারপর সবাই যখন ফাটা নাক ওয়ালা,,,নাম টা তো জানি না।যাই হোক ফাটা নাক ওয়ালা,,,, কে আর কিছু না বলে সামনে পা বাড়ালাম।আর তখন ওই ফাটা নাক ওয়ালা আমার পিছনে হাটা শুরু করলো।
আমি ঘুরে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে বললাম, আর এক পা যদি বাড়িয়েছিস,,আমার পিছনে যদি আমি তোকে দেখি পা কেটে গাছে ঝুলিয়ে রাখবো বলে দিলাম।লোকটা ওখানেই স্ট্যাচু হয়ে রইলো। নিজেকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে।ছেলেটা আমার কথায় ভয় পেয়ে গেছে।আমার পিছনে আর আসেনি। সন্ধ্যায় পড়তে বসেছি।বসে বসে আর্থিক অবস্থার বিবরনী করছি।কিন্তু মিলছেই না কি মুশকিল।সল্যুশন বের করে দেখি স্যালারি ৬মাসের না নিয়ে ৯মাসের নিয়েছি।উফফ লোকটা তো ঠিকই বলেছিলো। উফফফ আমি ওই ছ্যাচড়া ব্যাটার কথা কেন ভাবছি।আজকে ওই রোড সাইট রোমিও কে আমার পথ থেকে ডিলিট করে দিয়েছি। হটাৎ অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো। ফোন তুলে বললাম, হ্যালো,কে বলছেন?
–শিশির।
–কোন শিশির?
–তোমার ছেলে মন্টুর বাপ। আমি লাফিয়ে উঠলাম।
–রোড সাইট রোমিও!!না তুই রোড সাইট রোমিও না তুই কুত্তা।কুত্তার মতো আমার পিছনে পড়ে আছিস কেন?
–আহা জানু রাগ করে না।
আমি চেচিয়ে বললাম, ওই খবরদার।আমাকে আর এক বার জানু বললে আমি তোর জিভ কেটে কুত্তাকে খাওয়াব।
ফোন কাটতে যাব তখনই শিশির বললো,
–জান নাম্বার টা সেইভ করে রেখো শিশির না,,
আমি খট করে ফোন কেটে দিলাম।তারপর কল লিস্ট থেকে নাম্বার ডিলিট করতে গিয়েও করলাম না।শিশির লিখে সেভ করতে গিয়েও কেটে নাম্বার টা কল লিস্টে ঝুলিয়ে রাখলাম। পরের দিন ফ্রাইডে।ভার্সিটি অফ।বিকালে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম।নিচে চোখ যেতেই দেখলাম রোড সাইট ছ্যাচড়া রোমিও নিচে দাড়িয়ে আছে। এই লোক আমার বাসার নিচে কি করছে?এতো দিন রাস্তায় বের হলে দেখতাম পিছনে পিছনে যেত আর আজকে বাসার নিচে।রুমে গিয়ে জানালার পর্দার আড়ালে গিয়ে ফোন দিলাম।
–ওই মিয়া আমার বাসার সামনে কি করেন হা??খেয়ে দেয়ে কাজ নাই?
–না।আজকে ফ্রাইডে তাই খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নাই।তাই তো খেয়ে দেয়ে সোজা তোমাকে দেখতে চলে এলাম।কিন্তু দুঃখের বিষয় ১ঘন্টা এই কাঠ ফাটা রোদে দাঁড়িয়ে থেকেও তোমাকে দেখতে পেলাম না।একটু বারান্দায় এসো না।
–আহা,,,একটু বারান্দায় এসো না।বয়েই গেছে।আসবো না আমি।চলে যান।
আমি আবার ফোন কেটে দিলাম। সকালে ভার্সিটি যাবার জন্য তরিঘটি করে রেডি হয়ে গেইট দিয়ে বের হতেই সেই রোড সাইট ছ্যাচড়া রোমিও।আমি বুঝি না এই লোকের খেয়ে দেয়ে আর কোন কাজ নেই।আমি না করার পরও আমার পিছে পড়ে আছে কেন??
আমি না দেখার ভান করে হাটছি।ওনি পিছনে পিছনে আসছে।আমাকে মন্টুর মা মন্টুর মা বলে ডাকছে।কিন্তু আমি পিছে তাকাচ্ছি ই না।ওই নওশীন?? আমি থমকে গেলাম।এই লোক আমার নাম জানল কি করে? আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
–আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?
-শুধু নাম ই না সব ই জানি। ওসব বাদ দেও,চলো না কোথাও ঘুরে আসি।তুমি আর আমি।
–শালা,,,তুই কি মানুষ না অন্য কিছু?তোর কি কান কাটা?তোকে যে বলছি আমার পিছু নিবি না শুনতে পাস না?
–হুম শুনতে পাই।কিন্তু এসব তোমার মনের কথা না।
–আপনি এতো বেহায়া নির্লজ্জ কেন??লজ্জা সরম কি বাজারে বেচে খেয়ে ফেলেছেন?
সেই বিখ্যাত হাসি দিয়ে বললো, কেন তুমি কিনতে?? আমার রাগে সারা শরীর কাপছে।পাশে একটা ভাংগা ইট দেখতে পেলাম।আস্তে করে তুলে নিতেই ব্যাটা দৌড়।ছুটে মারলাম কিন্তু আমি বেচারির এত শক্তি নেই যে ইট বেশি দূর পর্যন্ত যাবে। উফফ বাচলাম। শান্তিমতো ক্লাস করছি।যাওয়ার সময় ও ওই লোকটার আর দেখা পাইনি। রাতে ঘুমাচ্ছি হটাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।ঘুম ঘুম চোখে ফোন পিক করলাম।
–হ্যালো,,,
–ওই মন্টুর মা ঘুমাচ্ছো নাকি?? লাফিয়ে উঠলাম।
–ওই আপনার সমস্যা কি?আপনার জন্য শান্তিতে একটু ঘুমাতেও পারবোনা?
–আমার ঘুম কেরে নিয়ে তুমি শান্তিতে ঘুমাবা?তুমি এতো স্বার্থপর কেন?আমার ঘুম আসছেনা একটু গল্প করোনা বেবি।
–বেবি?ওই আমি কি ১ বছরের বাচ্চা?ফিটার খাই যে তুই আমাকে বেবি বলিস?আমি এখন ঘুমাবো যদি আরেকবার ফোন দিস তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।ফার্মের মুরগী কোথাকার।
ফোন কেটে বন্ধ করে দিলাম।বিরক্ত লাগছে।কি সুন্দর ঘুমাচ্ছিলাম,,আমার ঘুমটা নষ্ট করে দিলো। সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো কিন্তু ঠিক করলাম আজ আর ভার্সিটি যাবো না খেয়েদেয়ে আবার ঘুম দিলাম।ফোন টাও অন করিনি তাই ডিস্টার্ব করার মতো ও কেউ ছিলো না।দুপুরে গোসল করে খেয়েদেয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম।চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে।আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে,বাতাস বইছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে।তাই রুমে গিয়ে দরজা জানালা বন্ধ করে দিলাম।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে।ফোনটা অন করতেই এত্ত এত্ত মেসেজ।
১.নওশীন তুমি আজ বের হচ্ছো না কেন?ভার্সিটি যাবে না?
২.ফোন বন্ধ করে রাখছো কেন?আমার খুব টেনশন হচ্ছে।
৩.তোমার শরীর ঠিক আছে তো?আমার খুব চিন্তা লাগছে।
৪.আমার খুব অস্থির লাগছে।আজকে সারাদিনে তোমাকে একবার ও দেখিনি।তোমার বাসার সামনে এসে ঘুরে গেলাম কত বার।
৫.কয়েকশো বার ফোন দিয়ে ফেলেছি।ফোন অন করলে আমাকে একটা কল দিও প্লিজ।আর ভালো লাগছেনা। তখনই ফোন টা বেজে উঠলো।
–হ্যালো।
–নওশীন তুমি কি ধরনের মানুষ বলো তো?সারাদিন এভাবে কেউ ফোন অফ করে রাখে।কত চিন্তা হচ্ছিলো জানো?তুমি ঠিক আছো তো।
-আমি ঠিক আছি।আর আমার ফোন আমি যা খুশি করবো আপনার কি?
–তুমি সব সময় এমন করো কেন আমার সাথে?যাই হোক।একটু বারান্দায় আসবে?আমি নিচে দাড়িয়ে আছি।অনেক বৃষ্টি পরছে তোমাকে একটু দেখেই চলে যাব।
–শুনুন আপনি চলে যান।আমি বারান্দায় আসতে পারবোনা।
–নওশীন প্লিজ।আমি বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি।তোমাকে দেখেই চলে যাবো।
–আমি আসবো না।বৃষ্টিতে না ভিজে চলে যান।
–তুমি না আসলে আমি এখানেই দাড়িয়ে থাকব।
–বৃষ্টিতে ভিজার এতো যখন শখ ভিজুন।
বলেই ফোন কেটে দিলাম।এই ছেলে কে একদম লাই দেওয়া যাবেনা তাহলে মাথায় উঠে নাচবে।রোজ নতুন নতুন আবদার নিয়ে হাজির হবে। ২০মিনিট পর মেসেজ আসলো আমি কিন্তু এখনো দাঁড়িয়ে আছি।বৃষ্টিতে ভিজে গেছি পুরা।আমার অনেক ঠান্ডা লাগছে। উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখলাম সত্যিই রাস্তার অপারে দাঁড়িয়ে আছে।খুব মায়া হলো।দরজা খোলে বারান্দায় গেলাম।উনি বারান্দার দিকেই তাকিয়ে আছে।আমাকে দেখে হেসে ফেলল।ভিজে যা তা অবস্থা। আমি মেসেজ করে চলে যেতে বললাম। পরেরদিন ভার্সিটি যাওয়ার সময় ওনাকে আর দেখতে পেলাম না।আসার সময় ও না।নো ফোন নো মেসেজ। রাতে ফোন এলো। কিছু বলতে যাবো তখনই বললো, জানি তোমাকে বিরক্ত করছি।প্লিজ ফোনটা কেটোনা। কন্ঠে কেমন নরম নরম লাগছে।ব্যাপার কি?এতো শান্তভাবে কথা বলছে।
–কালকে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছি।শরীর অনেক দূর্বল।আম্মু কিছুতেই বাসা থেকে বের হতে দিলো না তাই তোমাকে আজ আমার দেখা হলো না।একটু কথা বলোনা প্লিজ।১০৩ ডিগ্রি জ্বর ধরো মরে গেলাম তখন তো আপসোস করবে। বুকটা ধক করে উঠলো।কি ভেবে যেন কথা বললাম অনেক ক্ষন।কথা শেষে বললাম, দেখুন আপনি অসুস্থ তাই আপনার সাথে এত কথা বলেছি।আপনি অন্য কিছু ভেবে বসবেন না। প্রতিউত্তরে তিনি হাসলেন।
পরের দিন সকাল সকাল আম্মু টেনে ঘুম থেকে তুললেন।এভাবে আচমকা টেনে তুলার কারণ জিজ্ঞেস করতেই বললো, ফুপুরা আসছে হটাৎ করে।আমি যেন আম্মুকে কাজে একটু হেল্প করে দেই।আজ যেন ভার্সিটি না যাই।তাই করলাম।ফুপুরা এলো,সাথে ফুপাতো ভাই।কতদিন পরে দেখে।অনেক ক্ষন এক সাথে আড্ডা দিলাম।লাঞ্চ করে রুমে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখি শিশিরের ২১মিডস কল আর ১২মেসেজ। মেসেজ ওপেন করতে যাবো তখনই ফুপাতো ভাই অনিক বললো, নওশীন রেডি হয়ে নে।আমরা বেরুবো।আমার হাত থেকে ফোন রেখে দিয়ে ১০মিনিটের মধ্যে রেডি হতে বলল।আমরা একসাথে বেরুলাম।গেইট থেকে বেরিয়ে কয়েকপা এগুতেই কোথায় থেকে শিশির দৌড়ে এলো, নওশীন তুমি আমার ফোন তুলছো না কেন? অনিকের দিকে তাকিয়ে বললো, এই ছেলেটা কে? আমার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেলো।আমি অনেকের হাত ধরে শিশিরকে বললাম,আমার বিএফ।আমাদের ২বছরের রিলেশন।বছরখানেক পর আমরা বিয়ে করছি। শিশিরের মুখটা ধপ করে কালো হয়ে গেলো।ও কিছু না বলেই চলে গেলো।
বাসায় ফিরে ফোন চেক করে দেখি শিশিরের মেসেজ, নওশীন তোমার বিএফ আছে জানলে আমি কখনো ই তোমাকে বিরক্ত করতাম না।তুমি যদি একবার বলতে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো,,যাই হোক অনেক বিরক্ত করেছি পারলে ক্ষমা করো।আর কখনোই তোমাকে বিরক্ত করবো না।ভালো থেকো। মেসজেটা পেয়ে আমার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু তেমনটা অনুভব করতে পারছিনা।সে যাই হোক এই আপদটা তো পিছু ছেড়েছে। পরেরদিন তাকে কোথাও দেখিনি।না ফোন না মেসেজ।যাক বাচা গেছে অবশেষে আমার পিছু ছেড়েছে।
কিন্তু বিপত্তি ঘটলো কিছুদিন পর রাস্তায় বের হলেই আমার এই দুটি চোখ শুধু তাকেই খোঁজে।সব সময় আমি তাকে খুজি।ফোনের দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা চেয়ে থাকি তার একটা মেসেজ কিংবা কলের আশায়।তার কথা,তার পাগলামি গুলো খুব মিস করি।মাঝে মাঝে নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হয়,ইচ্ছে করে নিজের চুল নিজেই ছিড়ি।কি দরকার ছিলো এতো ঢং করার?ফুপাতো ভাইকে বিএফ বানানোর?ঠিক হয়েছে। যে আমি তার হাজার রিকুয়েষ্টে একবার বারান্দায় যাইনি এখন আমি বেশিরভাগ সময়ই বারান্দায় থাকি।তাকে খুজি।উফফ খুব মিস করি শিশিরকে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে ফোন করে সব বলে দেই কিন্তু পারিনা।এভাবেই আমার দিন কেটে যাচ্ছিলো তার বিরহে।
১০-১২দিন পর কোচিং করে বাসায় ফিরছিলাম।এলাকার মোড়ে হটাৎ শিশিরকে দেখি।একটা মেয়ের সাথে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে।মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছে।এই মহল্লাতেই থাকে।কিন্তু শিশির মেয়েটার সাথে কি করছে?
আমি গিয়ে ওর পিছনে দাড়ালাম। তারপর কাশি দিলাম। শিশির আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আরে নওশীন যে,কেমন আছো? আমি বললাম মেয়েটা কে? শিশির একটু হেসে বললো,আমার জিএফ বিন্দু।শিশির বিন্দু। আমার চোখ কপালে,,জিএফ??
–তুমি হয়তো চিনো।তোমাদের পাশের বাসায় থাকে।তুমিতো প্রেম করলে না তাই ভাবলাম তোমার এলাকার কোনো মেয়ের সাথেই প্রেম করে সে দুঃখ মোচন করবো।
মেজারটা পুরাই বিগড়ে গেল।আমি ওর কলার ধরে বললাম,শালা লুইচ্চা,ক্যারেক্টারলেস।দুইদিন আগেও আমার পিছে ঘুরতি যেই আমি রিজেক্ট করলাম দুদিনেই নতুন জিএফ পটিয়ে ফেলেছিস।আমাকে না কত ভালোবাসার কথা শুনাতি,,,আর দুদিনেই সব শেষ।আসলে ভুল আমারি,,,আমি তোকে,, আমি আর বলতে পারলাম ভিতরের কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে বের হয়ে আসতে চাইছে।চোখে পানি ছলছল করছে।এখনি পড়ে যাবে তাই ঘুরে হাটা ধরলাম।চোখের ভিতরের ছলছল করা পানির কণাগুলো বৃষ্টি হয়ে নামছে।আমি চোখের পানি মুছছি আর হাটছি।শিশির পিছনে থেকে ডাকছে। তারপর ছুটে এসে আমার সামনে দাড়ালো তারপর বললো,,
–কি কষ্ট হচ্ছে?? আমারো হয়েছিলো।যখন ফুপাতো ভাইকে বিএফ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলে।
আমি চোখ বড়বড় করে তাকালাম। তাই দেখে শিশির বললো,জ্বি আমি জানি ও তোমার ফুপাতো ভাই।তাই ভাবলাম তোমাকে একটা শিক্ষা দেওয়া যাক। ও আমার জিএফ না।আমার খালাতো বোন।ওই আমাকে তোমার সব ইনফরমেশন দিয়েছে।তাই রোজ ওকে ঘুষ হিসেবে ফুচকা খাওয়াতে হয়। আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।শিশির বাকা হেসে বললো, অবশেষে প্রেমে পড়েই গেলে?তা কবে হচ্ছো আমার ছেলের মা? আমি ভ্রু কুচকে বললাম,এতো সহজ না।আগে ইন্টারভিউ নেই। পড়াশোনা কতদূর?
–গত বছর মাস্টার্স করেছি।একাউন্টটিং ডিপার্টমেন্ট।
–চাকরী করেন??
–না।
-তাহলে একটা চাকরি বাকরি জোগাড় করুন।ছোটখাটো হলেও চলবে।কোনো বাবা তো আর বেকার ছেলের কাছে মেয়ে দিবেনা।তাই আগে চাকরি জোগাড় করুন।তারপর বাসায় প্রস্তাব পাঠাবেন,বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নিবো।
–তার আর দরকার নেই।আমি বেকার না।
–মানে??
–মানে আমার একটা রেস্টুরেন্ট আছে।কে এফ সি।যেখানে তুমি তোমার বন্ধুদের সাথে প্রায়ই যাও।
–ওটা আপনার রেস্টুরেন্ট??
–ওখানেই আমি তোমাকে প্রথম দেখি।তারপর তোমার পিছু নিতে নিতে এতদূর,,তাহলে কালই যাই তোমার বাসায়??
–হুম।তবে আমার একটা শর্ত আছে। শিশির উতলা হয়ে বললো,
–আবার কি??
–ছেলের নাম মন্টু রাখা যাবেনা।ব্যাকডেটেট টাইপ নাম আমার ছেলের হবেনা।রাজি?? শিশির ফিক করে হেসে দিলো।সাথে আমিও।।