আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবেন? কথা বলেই রুপা ভয়ে ভয়ে মুখটা নিচু করে ফেললো।একটা মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে বলছে তার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে।কতটা সাহস থাকলে একটা মেয়ে হয়ে বলতে পারে তা আমার ধারনার বাইরে।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো ওর এই কথায় আমি সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি।অবাক হয়েছি বললেও ভুল হবে।আমি কোনদিন কল্পনাও করতে পারিনি যে রুপা আমাকে ওর সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে বলবে। যে মেয়ে আমাকে দেখলেই রেগে যায় সে আমাকে বলে তার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে।
রুপার সাথে আমার পরিচয় ৬ মাসের। ওরা থাকে আমাদের পাশের বাসায়। ওর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল খারাপ ভাবেই। রাতে ঘুমতে যেতাম ১১ টায়। আবার চারটায় উঠে গিয়ে ফজরের আজান দিতে হয়। যার কারনে রাতে বেশি ঘুম হয় না। ফজরের নামাজ পড়ে এসে যখনই ঘুমায় ঠিক তখনই শুনতে পায় গানের আওয়াজ। এত জোরে জোরে গান গায় কানের মধ্যেই ঢুকে যায় সেই আওয়াজ। আমি বুঝি না এত সকালে এত জোরে গান গাওয়ার কোন মানে আছে। আর ওই বাসার মানুষই বা কি? আমরা যেখানে দূর থেকে বাঁচতে পারছিনা সেখানে ওই বাসার লোকজন কিভাবে বাঁচে কে জানে। প্রতিদিনের মতো আজও সেই গানের গলা। মাত্র ঘুমলাম। না আর হয়না এভাবে। কিছু একটা করতে হবে।
টানা ৪ মিনিট কলিংবেলটা বাজাচ্ছি কিন্তু কেউই দরজাটা খুলছে না। সবারকি কান নষ্ট হয়ে গেলো নাকি। ৪ মিনিট পরই দরজাটা খুলে গেলো। দরজাটা খুলছে একটা পরি। কি বুঝলেন না তো। একটা মেয়ে যে কি না একটা পরিকে হার মানিয়ে দিতে পারে।
-কি সমস্যা আপনার? এই ভাবে কেউ কলিংবেল বাজায়।ফালতু ছেলে।
-বাড়িতে কেউ আসলে তার সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয় তা আপনার জানা নেই। ফালতু মেয়ে।
-কিভাবে করতে হয়? (রেগে)
-এই ভাবে রাম ছাগলের মতো চিল্লান কেন প্রতিদিন সকাল হলেই?
-কিইইই? আমাকে কি বললেন? আমি রাম ছাগলের মতে চিল্লায়?
-তা নয় তো কি। রাম ছাগলের মতো প্রতিদিন সকালে শুরু করেন। আপনার কারনে কেউ ঠিকমতো ঘুমতেও পারেনা।
-আমাকে রাম ছাগল বলা তাইনা। আজ তোকে আমি বলেই পাশ থেকে একটা লাঠি ধরেছে আমাকে মারার জন্য। আর আমি লাঠিটা ধরে ফেলে দিয়েছি।
-দেখতে মাশাল্লাহ। কিন্তু ব্যবহার তো পুরাই বেয়াদবের মতো। আর গলা তো রাম ছাগলের মতো।
-কি হয়েছে বাবা? আমাদের ঝগড়া শুনে আন্টি চলে আসছে।
-আসলে আন্টি প্রতিদিন সকালে আপনার মেয়ে যেভাবে চিল্লাই গান করে তাতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়।
-বাবা তোমার একা না আমাদেরও হয়। যার কারনে সকাল হলেই কানে তুলা দিয়ে রাখি যাতে কিছু শুনতে না পায়। আচ্ছা বাবা আমি এখন থেকে দেখবো যেন ও আস্তে আস্তে গান করে।
-ওকে আন্টি ধন্যবাদ।
-আচ্ছা আন্টি আমি তাহলে আসি।
রুপা ভাবছে আসছে লাট সাহেব। উনি বললো আর আমি গান বন্ধ করে দিলাম। আহা কি সুন্দর কথা। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। দুইদিন খুব ভালো ভাবেই ঘুমলাম। কোন গানের শব্দ আসে না। মাগরিবের নামাজ পড়ে আসছিলাম। যখনই রুপাদের পেয়ারা গাছের নিচে আসলাম ঘটনা ঘটলো ঠিক তখনই। মাথার উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে গোবর পানি। ছিঃ। এই জঘন্য কাজটা কে করলো।
গাছে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। তারমানে পালিয়েছে৷ কিন্তু কাজটা কে করলো। কারো সাথে তো আমার শত্রুতা নেই। আমি যখনই এগুলো ভাবছি ঠিক তখনই রুপাদের ঘর থেকে হাসির আওয়াজ আসছে। আমাকে দেখেই হাসছে।
-কি লাট সাহেব এই অবস্থা কেন? বলে আবারও হেসে গরিয়ে যাচ্ছে।
-ও এবার বুঝতে পারলাম এই কাজ এই রাম ছাগলটার।
-এই লাট সাহেব এই কি বললেন আমাকে? আমি রাম ছাগল? আপনাকে আমি কি করি তাই দেখেন।
-আর কি করার বাকি আছে। এই কাজটা একদম ঠিক হয়নি
-কোন কাজ লাট সাহেব।
-এই রাম ছাগল আপনি আমাকে লাট সাহেব বলবে না বলে দিলাম। এমনিতেই মাথায় গোবর ঢেলে মাথা খারাপ করে দিছো।
-কি যে বলেন লাট সাহেব আমি কি আপনার মাথায় গোবর ঢালতে পারি। এত বড় একটা মিথ্যা কথা বলতে পারলেন। আমি একটা অবলা মেয়ে। তার নামে এত বড় মিথ্যা কথা।
-তুমি অবলা??
-আমার কি মনে হয় জানেন? শয়তানে হিসু করে দিছে আপনার মাথায়।
আমি আর কিছু না বলে চলে আসলাম। না মেজাজ খারাপ করে দিলো। আবার বলে অবলা। শয়তানে নাকি হিসু করে দিছে। ফাজিল একটা। ভালোবাসি বলে বেঁচে গেলো। নয়তো বুঝায় দিলাম। রুপার কাজিন আসছে ওর বাড়িতে বেড়াতে। ওর নাম মিরা। আগেই আমাদের পরিচয় হয়েছিল। কিন্তু তেমন কথা হয়নি। তো আমি বাড়ি ফিরছিলাম। রাস্তায় দেখা রুপা আর মিরার সাথে।
-আরে ভাইয়া কেমন আছেন (মিরা)
– মিরা। তুমি কবে আসছো? আমি ভালো আছি। তুমি?
-জ্বি ভালো আছি।
-ও আচ্ছা তাহলে থাকো। আমি আসি পরে কথা হবে।
এই ভাবে প্রতিদিন মিরার সাথে কথা হতো। অনেক সময় কথা হতো আমাদের।মাঝে মাঝে ঘুরতেও যেতাম। খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছিলাম। এদিকে রুপা ভাবছে ইশশ ঢং কত!মেয়ে একটা দেখলেই তার সাথে কথা বলতে হবে?ফাজিল ছেলে। ইশশ এগুলো আমি কি ভাবছি৷ ওর যা ইচ্ছা তাই করবে। তাতে আমার কি। আর আমার অবস্থা তো খারাপ।রুপা আমার মনের মধ্য এতটাই ঢুকে গেছে।না পরছি কিছু বলতে না পরছি থাকতে।
-মিরা শোন (রুপা)
-হুম বল (মিরা)
-তুই আর ভাইয়ার সাথে কথা বলবি না।
-কেন?
-তোকে বলতে না বলছি তাই বলবি না।
-কেন? তোর এত জ্বলছে কেন?
-আমার জ্বলবে কেন?তুই কথা বলবি।
-কি রে ডুবিয়ে ডুবিয়ে পানি খাওয়া হচ্ছে নাকি।
-কি যা তা বলছিস।
-হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবেনা
-মিরা….
-আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম।যখনই আমি কথা বলতাম ভাইয়ার সাথে তখনই তুই কেমন রাগ হয়ে যেতিস।আড় চোখে তাকিয়ে থাকতি ভাইয়ার দিকে। কি ভাবিস আমি কিছু বুঝিনা?
-চুপ কর তো।
-আগে বল কি করে হলো। তুই তো ভাইয়াকে সহ্য করতে পারতি না।
-আমি জানিনা কিভাবে ওকে আমার এত ভালো লেগে গেলো। কখন যে ওনার প্রেমে পড়ে গেছি জানি না।তবে কি জানিস ওনার অনেক কিছু ভালো লাগে।
-কি ভালো লাগে রে?
-ওনার কথা বলা।যখন কথা বলে নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলে।একবারও মুখের দিকে তাকায় না। এটা খুব ভালো লাগে।
-আর কি ভালো লাগে রুপা?
-তা তোকে বলা যাবে না। এটা সিক্রেট।
-ওকে ঠিক আছে।তবে একটা কথা বলি শোন।
-কি বল।
-ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে।এতদিন ভাইয়া আমকে শুধুই তোর কথা বলতো।তোর কথা শুনতে শুনতে আমার কানই নষ্ট হয়ে যেতে গেছিলো।ভাইয়া তোকে খুব ভালো বাসে।
-হুম
-তুই ভাইয়াকে বলে দে।ভাইয়ার যে লজ্জা কোনদিন বলতে পারবেনা।
-আচ্ছা দেখি।
প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আমি বাইরা দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছি আর ব রুপার কথা ভাবছি। ঠিক তখনই রুপা কথাটা বললো, ভিজবেন আমার সাথে আমার কি বলা উচিৎ বুঝতে পারছি না। আমি পরিস্কার দেখতে পারছি রুপার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা,ভয় লজ্জা একসাথে। আমি যদি বলি না তাহলে হয়তো ওর মনটাই ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু আমি যে আমার মায়াবতীকে কষ্ট দিতে চাইনা।
আমি কি তোমার হাতটা ধরতে পারি। আমার কথায় রুপা বেশ অবাকই হলো।তবে হাতটা বাড়িয়ে দিলো। তুমি কি আমার বাবুদের আম্মু হবে? তাহলে আমিও ভিজবো তোমার সাথে বৃষ্টিতে। এবার রুপা বেশ লজ্জাই পেলো। আর আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আর আমরা দুজনে ভিজতে লাগলাম ভালোবাসার বৃষ্টিতে। যে ভালোবাসা কোনদিন শেষ হবে না।