আগামীকাল আমার বিয়ে।অথচ এই রাত দুটোয় আমি আমার হবু শ্বশুরবাড়ির ড্রইংরুমে বসে আছি। আমার জানা নেই কোনো ছেলে বিয়ের আগের রাতে এমন উদভ্রান্তের মতো হবু শ্বশুরবাড়িতে বসে ছিল কিনা। অবশ্য এটা যে কোনদিন আমার আদৌ শ্বশুরবাড়ি হবে না বিষয়টি তখন কিছুতেই আমার মাথায় ধরছিল না।ভাবতেই পারছিলাম না রূপা এখানে নেই!
রূপা মানে আমার হবু স্ত্রী যে কিনা গত বারো দিনেই আমার অর্ধাংগিনীর জায়গা দখল করেছিল! এই বারো দিনেই রূপাকে সবদিক থেকেই আমার স্ত্রী হবার উপুযুক্ত মনে হয়েছে। ও হ্যাঁ… আমার স্ত্রী মানে রূপা ছিল খুব হাসিখুশি, বাচ্চাদের মতোই ও আধৌআধৌ বুলিতে কথা বলত। আমি কল্পনাও করিনি রূপার সঙ্গে আমার যোগাযোগের স্থায়িত্বকাল হবে মাত্র বারোদিন! কি নিষ্ঠুর হয়ে উঠে ভাগ্য তার নিজের ইচ্ছা মিটাতে, তার একমাত্র কলমেই লিখা হবে আমাদের আজ,কাল, আগামী! এটুকু বলেই বিপুল মাথা নিচু করল।আমার মনে হল বিপুল কাঁদছে।চোখ ঝাপসা হয়ে উঠেছে।রুমে হালকা আলো থাকার দরুন বিপুলের চোখ দেখা যাচ্ছে না। আমি ছোট্ট বললাম-“তারপর?”
–রূপার সঙ্গে আমার বেশি কথা হতো ফোনে!
বিয়ের কেনাকাটা করতে ওর সঙ্গে তিনবার শপিংয়ে গেছি,আর প্রথম মেয়ে দেখতে গিয়ে দেখা হয়েছিল সবমিলিয়ে চার বারের মতো দেখা! আমার দেখা শ্রেষ্ঠ মেয়ে সে! এবার আমার কেমন অস্বস্তিতে পাচ্ছে।বাসরঘরে স্বামীর মুখে অন্য মেয়ের সৌন্দর্যের প্রসংশা শুনতে কারই বা ভালো লাগে? আমি অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে বললাম-“তারপর ?”
–রূপাদের ড্রইংরুমে বসে বসে আমি তখনও ভাবছি রূপার কথা বলার ধরন,হাত নাড়া,গালে টোল ফেলে অকারণে ফিক করে হেসে ফেলা।
ক্রীম কালারের গাউনটাতে চকবারের দাগ লেগেছে বলে শপিংমলের সামনে রাস্তায় কান্নায় চোখ ফুলে উঠা…মফস্বল শহরের মেয়েরা নিজের বিয়ের কেনাকাটা করতে হবুবরের সঙ্গে যেতে পারে না।কিন্তু রূপা নাছোড়বান্দা,সে গেছে। রূপার বাবা তার এই ছোট মেয়েটাকে অসম্ভব ভালোবাসেন বলেই হয়তো এসব সম্ভব হয়েছে।তাছাড়া আমাদের বিয়েটা ঠিক হয়েছিল দুবাইয়ে বসে।রূপার বাবা মানে ইউসুফ আংকেল আর আমি দুবাইতে একই কোম্পানিতে যব করি,রুমমেটও। বাবা মেয়ের আদুরে ফোনালাপ রুমে যেমন চলত তেমনি চলত কাজের ফাঁকে ফাঁকেও। আমরা বাঙ্গালীদের বিদেশের মাটিতে বসে নিজের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে কথা বলার আনন্দ দেশের মাটিতে পাওয়া যায় না। দেশ থেকে কেউ ফোন করলে বা কাউকে আত্বীয় স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে দেখলে কেমন একটা গূঢ় অনুভূতি জেঁকে বসে মগজে,বুকের ভেতরে…! ভিডিও কলে একদিন রূপা কেঁদে কেঁদে আবদার করছিল বাবার কাছে। আমার হঠাৎ চোখ চলে যায় মোবাইল স্ক্রিনে! সেই প্রথম দেখা।
তখনই ভালো লাগে। তারপর আংকেল কাছে না থাকলে, হয়তো ওয়াশরুমে নয়তো কিচেনে তখন ইচ্ছে করেই তার ফোন রিসিভ করতাম।সৌভাগ্য একদিন এলো, সেই একদিনই প্রথম রূপার সঙ্গে কথা বলা। বিয়ের প্রস্তাব টাও আমিই দিয়েছিলাম সরাসরি রূপার বাবার কাছে। তিনদিন পরেই আমি দেশে ফিরছি।এই তিন দিনেই আমার ফ্যামিলিতে সবাইকে রাজি করাতে হল। চার মাসের ছুটিতে এসেছিলাম বলেই বিয়েটা প্রথম মাসেই সারতে চাইলাম। সবকিছু ঠিক ভাবেই চলছিল।দেশে ফিরে রূপাদের বাড়িতে গিয়ে প্রথম রূপাকে সরাসরি দেখা, তখন ও হাত নেড়েচেড়ে ফোনে কথা বলছিল। যেহেতু পারিবারিক ভাবে আসা, রূপার সঙ্গে দেখা হবার কথা সাধারণ নিয়মে মানে অনেক পরে। সেখানে আমরা গেট দিয়ে ঢুকতেই উঠোনের কোণঠাসা জুঁইচাপার নিচে দাঁড়িয়ে সোনালী রঙের শাড়ি পরা মেয়েটাই যে রূপা আমার বুঝতে দেরী হয়নি।
সেদিন উপস্থিত আমার ফ্যামিলির অনেকেই রূপাকে অপছন্দ করে তার শ্যামবর্ণ ও অস্থির মনোভাবের কারণে। কিন্তু ওর সারল্য,বাচ্চাদের মতো মনোভাবই আমার ভালো লাগে।এদিকে আমি বাড়ির বড় ছেলে বলে ওদিকে রূপা বাড়ির ছোট মেয়ে বলে বিয়ের আয়োজনে চলছিল মহা ধুমধাম। আমার মায়ের আনন্দই ছিল দেখার মতো! মা’র সঙ্গেও রূপা কথা বলেছিল। কখনও একবারের জন্যও মনে হয়নি আমাকে রূপার অপছন্দ একবারও বলেনি তারও পছন্দের মানুষ আছে!” বিপুলের গলা ধরে এসেছে,শার্টের হাতায় চোখ মুছছে। অন্ধকারটা অসহ্য মনে হচ্ছে আমার নাকি স্বামীর চোখে অন্য একটা মেয়ের জন্য কান্নার জল দেখে? হিংসা হচ্ছে এই রূপা কে,প্রচণ্ড হিংসা হচ্ছে! আনমনেই নড়েচড়ে উঠে বললাম-
–তারপর রূপার কি হল?
–রূপা..? হ্যাঁ সেই রূপা আমাকে এভাবে ছেড়ে যাবে আমি ভাবতেই পারিনি!
কিন্তু আমি তখনও বিশ্বাস করতে পারিনি রূপা আর কখনও ফিরবেনা!আমার ভাবতে অবাক লাগছিল শুধু একটা ব্যপারে এই বারোটা দিনে আমি একবারও টের পাইনি রূপা আমাকে নয়, অন্য কাউকে পছন্দ করে! সেদিন রাত ঠিক দুটা বেজে সাতাশ মিনিট, আমি ওদের ড্রইংরুমে উদভ্রান্তের মতো অপেক্ষা করছি,একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল করে রূপা জানালো- সে ভালো আছে।সে আর কখনও ফিরবেনা।তার জন্য যেন কেউ অপেক্ষা না করে। সে তার পছন্দের মানুষটিকে বিয়ে করেছে একটু আগেই…!
এই ক’টা লাইন বলেই রূপা ফোন কেটে দিল।একবার জানলোওনা আমি তাদের বাড়িতে,তারই ড্রইংরুমে বসে অপেক্ষায় আছি ক্রোধ-আক্ষেপ আর পরাজিত ভালোবাসা যেন পিছু তাড়া করলো। নিমিষেই দৌড়ালাম যেন তাড়া করছে খুনি …স্থির পৃথিবীরও কম্পন আর কতখানি পথের দৌরাত্ম মাড়িয়েছি মনে পড়ে না। শুধু মনে পড়ে যখন জ্ঞান ফিরেছিল তখন মাথাটার একাংশ অন্ধ, সৃতিভ্রষ্ট। রূপা তো গেল,সঙ্গে আমাদের বিয়ের জন্য কেনা বেশিরভাগ জিনিস, ঊনিশ ভরি গয়নাও সাথে নিয়ে গেল। নিজেকে যেন আমি ক্ষমা করতে পারছিলাম না। ঐ মাঝরাতেই বেরিয়ে এলাম,ভাবলাম আর কখনও আসবোনা এখানে।
একটা ফোনকল যেন বুকটা খামছে ধরেছিল, সেটা সারতে সময় নিচ্ছিল।আমার মন বারবার বলছিল, আমি যদি রূপাকে সত্যিই ভালোবাসি তবে ওকে আমার কাছে ফিরতেই হবে! বিশ্বাসটা কেমন জেঁকে বসল হৃদয়ে।
সকাল না হতেই ফের ছুটলাম রূপাদের বাড়ি। রূপার মা অজ্ঞান, ডাক্তার ডাকা হয়েছে।বাড়িতে হৈচৈ লেগেছে।দাদী,নানীরা রূপাকে অভিশাপে আকাশ ভারী করে তুলছে। ব্যাপারটা খুব খারাপ লাগলো। মন বললো, “রূপা তো আসবেই ফিরে,এত অভিশাপ দেয়ার কি হল!” রূপার পরিবার থেকে তাকে পুরোপুরি ত্যাজ্য করা হল । রূপাকে কেউ খারাপ বলবে আমি সেটা সহ্য করতে পারব না তাই ঘন্টা খানেক রূপার রুমে পায়চারি করে বের হয়ে এলাম।রূপার নম্বরে ফোন ঢুকছে না। সেই অপরিচিত নম্বরটাও বন্ধ। নিঃশ্বাস যেন আটকে আসতে চাইছে।মনে মনে শুধু এই একটি কথাই বারবার আওড়াচ্ছি-রূপা তুমি ফিরে আসো,তোমাকে ফিরে আসতেই হবে…
এভাবেই দিন কাটতে থাকল, রোজ একবার করে রূপাদের বাড়ি গিয়ে ওর রুমে বসে থাকা যেন অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এইখানে এলে রূপার ছোঁয়া লাগে,রূপার জিনিসপত্র ছুঁয়েও কেমন একটা প্রশান্তি মিলতো, এই প্রশান্তির যে কি নেশা রূপা চলে যাবার ন’দিনের মাথায় একদিন খবর পেলাম রূপা তার কলেজের এক শীর্ষ নেতাকে বিয়ে করেছে নাম অহম…! লোক মুখে ও রূপার বান্ধবীদের মুখে আমাকে নিয়ে টিটকারী ও শুনলাম–” ইস্ কোথায় অহম ভাই আর কোথায় এই বিদেশি কামলা, অহমের নখের সৌন্দর্যও নেই এর মাঝে। এজন্যই রূপা অহমের হাত ধরে পালিয়েছে হা হা” অহমের একটা ছবিও জোগাড় হল, দেখলাম… নাহ্ ছেলেটা বেশ হ্যান্ডসাম,উজ্জ্বল গায়ের রং, তার উপর কলেজে ছাত্র রাজনীতিতে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। তবে চারিত্রিক রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। ডজনখানেক বাছাই করা সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড আছে। কয়েকজন এর কাছে ড্রাগ এডিট বলেও শোনা যেতে লাগলো।” বিপুল বেশ জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে থামলো।আমি ফের বললাম–
–” ওহ্ এটাই তাহলে আপনার গল্প?”
–গল্পটা এখানে শেষ হলেও ভালো হত, কঠিন বর্বরতা দেখতে হতোনা।
–কেন কি হয়েছিল তারপর?
–রূপার ঘোর আমার কাটেনি তখনও, রূপা চলে যাওয়ার পর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরিবার থেকে নতুন করে বিয়ের তাগিদ দিতে লাগলো।মেয়ে দেখা শুরু হল।কিন্তু আমি যেন দিনকেদিন ভেঙেচুরে যাচ্ছিলাম। রূপা আজকাল তার বড় বোনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে। উড়ো উড়ো খবর পাওয়া যাচ্ছিল রূপা বাড়ি ফিরতে চায়। কিন্তু ওর ভাই স্পষ্ট জানিয়েছে কোনো অবস্থায়ই যেন রূপার সঙ্গে কারো যোগাযোগ না রাখা হয়। ইউসুফ আংকেলও ছেলের কথার উপর কথা বলতে সাহস করেননি। রূপা যে কলঙ্ক মাখিয়ে গেছে তা আর মোছন হবার নয়। এসব ব্যপারগুলো আমার কাছে খারাপ বৈ ভালো কখনো লাগেনি। আমি শুধু সব সময় চাইতাম – রূপা ফিরে আসুক আমার কাছে! আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাকে আসতেই হবে!
সেদিন রূপার চলে যাওয়ার দুমাস একুশ দিন! একটা আননৌন নম্বর থেকে কয়েকবার ফোন এল। সাইলেন্ট করা ছিল,দেখিনি। ব্যাক করে কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করলাম, কেন যেন মনে হল ঐপাশটা ইচ্ছে করেই চুপ করে আছে।হালকা নিঃশ্বাস পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠেকাতে আর নিজেকে স্বাভাবিক করার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরলাম নানান জায়গায় প্রায় একমাস। নিজেকে বদলাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। রূপা নামটা ভুলে যেতে চাইছি। দুবাই ফিরবার বন্দোবস্ত করছি ।রূপা নামটা কিছুটা স্তিমিত তখনই খবর পেলাম রূপা ফোন করে বোনের কাছে কান্নাকাটি করেছে, ফিরে আসতে। খটকা লাগলো রূপা ভালো নেই! মুহূর্তে যেন ফিরে গেলাম আগের কষ্টঘরে।বুকের উপর যেন পাথর চেপেছে।
ছুটে গেলাম রূপার বাড়িতে, ওর পরিবারের কেউই ওর নাম শুনতেও নারাজ। অনেক বুঝিয়েও লাভ হয়নি। রূপা ভাইয়ের কড়া আদেশ রূপার সঙ্গে যোগাযোগ করা হারাম। ইউসুফ আংকেলও সেদিন দুবাই থেকে ফোনে রূপার ফোন নম্বর চাইলেন, কিন্তু রূপার পরিবারের কেউই তাকে বা আমাকেও ওর নম্বর দিল না। এটাই ছিল ভুল, সবথেকে বড় ভুল!
একদিন দুপুর বেলা শুয়ে শুয়ে দুবাইয়ে ফিরে যাবার কথা ভাবছি। এদেশ আমার জন্য কিছু রাখেনি, কিচ্ছু না? নিজেকে স্বাভাবিক করতে চাইলে যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে পালাতে হবে। হঠাৎ কোথা থেকে যেন রূপা এলো! রূপার গা থেকে ভুরভুর করে জুঁইচাপার সুবাস ছড়াচ্ছে। বিষন্ন মুখ! লম্বা খোলা চুল হাওয়ায় উড়ছে। রূপা হাতটা একটু নেড়ে করূণ কণ্ঠে বলল–“একবার এসোনা, আমাকে দেখে যেও!” একটু তন্দ্রা লেগেছিল ঠিকই! কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল রূপার কণ্ঠটা আমি স্পস্টতই কানে শুনেছি। এবং সেই জুঁইচাপার সুবাস এখনো আছে! আমাদের বাড়িতে এই ফুলের গাছ নেই,বাড়ির আশেপাশেও নেই।তবে…?.স্বপ্ন এমন হয়না। কিন্তু রূপা কি করে এখানে আসবে?
ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠল।রূপার বোন চিন্তিত কণ্ঠে যা বলল তা শুনে আমি মুহূর্তে ফিরে গেলাম সেই অনুভূতিতে, অপেক্ষার দ্বারপ্রান্তে। রূপার মোহময়ী অপেক্ষার সঙ্গে যুক্ত হলো দুঃশ্চিন্তা। রূপার হাজব্যান্ড নাকি ফোন করে বলেছে–রূপাকে নিয়ে যান। নম্বরটা নিয়ে আমি ফের কল করলাম, একটা বাজখাই গলা কোনোরকম সৌজন্য ছাড়াই হড়বড় করে বলল
–“কে আছে? কোথায় আছে? কেমন আছে এসব ফালতু ফর্মালিটি ছেড়ে খুব দ্রুত এসে রূপাকে নিয়ে যান।ওর ভালো চাইলে এক্ষুনি আসুন।তিনদিন আগে ওর বোনকে বলেছি ওকে নিয়ে যেতে, এখনো কোনো খবর নেই!! আমি কিছুটা রেগে বললাম-
–রূপা কে ফোনটা দিন
–রূপা এখন কথা বলতে পারবেনা।
–কেন?
–আরে ভাই এসব ফালতু কোশ্চেন না করে খুব দ্রুত এসে ওকে এখান থেকে সরান। আমি এড্রেস দিচ্ছি।
এড্রেসটা শহরের শেষ মাথার অনেক পুরোনো একটা চারতলা বাড়ির।রূপার বোনকে নিয়ে যে এড্রেসে পৌছালাম সে ফ্ল্যাটের তালাবদ্ধ একটা ঘিঞ্জি নিচ তলার ছোট্ট রুম যা সাধারণত বাড়ির কেয়ারটেকার, ড্রাইভারদের থাকার জন্য।
ঘন্টা খানের দাঁড়িয়ে থেকেও ওই নম্বর থেকে কোন রেসপন্স পাওয়া গেল না। আশপাশের উপরের লোকজনের কাছ থেকে জানলাম হ্যাঁ এখানে অহম থাকে তার স্ত্রী কে নিয়ে। ক’দিন আগে অহমের মা’ ও এসেছিলেন। কিন্তু তিনদিন হল এই বাসা তালাবদ্ধ। আমি একটু তালাটা নাড়াচাড়া করতেই কড়া খুলে এলো! রূপার বোনকে চিন্তায় ঘর্মাক্ত দেখাচ্ছে, সেই জোর করে ঢুকে পড়লো, সাথে কেয়ারটেকার উপর তলার কয়েকজন ভাড়াটিয়া।
অদ্ভুত বোঁটকা গন্ধ এসে নাকে লাগলো। ভেতরের রূমটিতে কাঁথা গায়ে রূপা শুয়ে আছে! অসম্ভব মুটিয়ে গেছে নাকি মেয়েটা এই চার মাসেই? কাছাকাছি এসেই যা বুঝলাম, তার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলাম না আমি। রূপার লাশ ,শক্ত হয়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছে! শ্যামা মুখখানিতে কেমন ভয়ার্ত ভাব লেপ্টানো। কয়েকজন মিলে ডাক্তার ডেকে আনলো সেই ডাক্তার রূপাকে দেখেই আৎকে বললেন-” একে তো আমি গত বৃহস্পতিবার এসে মৃত বলে গেছি! দুদিন আগে মারা গেছে মেয়েটা”
জুঁইচাপাটার নিচে কতক্ষণ বসে ছিলাম মনে পড়ে না। ঠিক যেখানটায় রূপাকে প্রথম সরাসরি দেখেছিলাম সেই জুঁইচাপার নিচে, থানা পুলিশ পোস্টমর্টেমের পর মঙ্গলবার খণ্ড বিখণ্ডিত বিভৎস দেহটা শেষ গোসল পর্যন্ত বসে ছিলাম। রূপার দাঁতের পাটি কানের কাছে এসে পড়েছে। হড়বড় করে বমি করলাম”” রাত প্রায় চারটা বাজে, বিপুল কাঁদছে আমি ওর ডান হাতটা শক্ত করে ধরে বসে আছি! আমি কি বলে বিপুলকে স্বান্তনা দেব বুঝতে পারছিলাম না। আমি নতুন বৌ,বাসররাতে ১৩/১৪ ঘন্টা আগে স্বামী হিসেবে কবুল করা এই মানুষটির ভালোবাসার গল্পটা এমন হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি।