আহ্লাদী ভালোবাসা

আহ্লাদী ভালোবাসা

পার্কের পুকুড়পাড়ে বকুল গাছটার নিচের বেঞ্চিতে বসে আছে ইবু। ড্রেস আপ সাধারনই তবে পায়ে সবসময়ের মতো একজোড়া কনভার্স পড়া। কানে ওয়ারলেস ইয়ারফোন গুজে হাবীবের কোন ব্যান্ডের গান হালকা সাউন্ডে শুনছে। বেঞ্চীর বামপাশে মালবোরো এডভান্সের একটা শ্বেত শলাকা জ্বলছে। ফিল্টারটা এখনও পুরাপুরি সাদা, মনে হয় জ্বালানোর সময়েও টান দেয়নি। এই জায়গাটা আজকে অন্যান্যদিনের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে কিন্তু মারজান নেই। ইসঃ বড্ড মিস করে ফেললো মেয়েটা। খানিকটা দূরের আমগাছ থেকে একটা পাকা আম পড়ায় পেছনে ফিরে তাকালো ইবু। রক্তিম আবির রঙের সিদুরে আমটার গা বেয়ে হলুদ রস ঝড়ছে। মুখে এক চিলতে মুচকী হাসি। মনে পড়ে গেলো প্রপোজের প্রথম দিনের কথা।

পেট্রোলপাম্পের সামনে বাস থেকে নেমে ডানপাশের রাস্তাটা দিয়ে হাটছে ইবু। গন্তব্য খয়েরী রঙের দোতলা বিল্ডিংটার নিচ। কানে হেডফোনে বিভিন্ন প্রকারের প্রপোজাল ডায়লগ বাজছে। ইবু প্রতি বারই ভূলে যাচ্ছে এসব। ফোনের স্ক্রীনে মারজানের নাম্বার থেকে কল বেজে উঠলো। কলটা কেটে দিলো ইবু, কারন সে নিচেই দাঁড়িয়ে আছে। ৩০ সেকেন্ড পরেই পাশের গলিটা থেকে মারজানের আগমন, হাতে একটা ব্যাগ। অন্যান্যদিনের চেয়ে আজকে একটু অন্যরকম লাগছে মারজানকে। গোলাপী কালারের ড্রেসটার সাথে ম্যাচিং করে ঠোটে ইবুর ফেভারিট হালকা গোলাপী কালারের শুকনো লিপষ্টিক দেয়া। ইবুর পড়নে একটা বিস্কিট কালারের প্রিন্টের সূতি পাঞ্জাবী। দূজনেই হাটছে পাশাপাশি কিন্তু কারো মুখে কোন শব্দ নেই। মৌনতা ভেঙে মারজানই বলে উঠলো,

> মিঃ জামাই, আপনাকে কিন্তু আজকে অনেক সুন্দর লাগছে।
– এহেম… এহেম… এখানে জামাই কে?
> কেনো পাঞ্জাবীতে কি আপনার মধ্যে জামাই জামাই লুক আসেনা?
– আচ্ছা, মিস গার্ল ফ্রেন্ড।
> ও হ্যালো, এখানে গার্ল ফ্রেন্ড কে শুনি?

– না আসলে যা সাজ দিয়েছেন রাস্তায় যেই দেখবে সেই গার্ল ফ্রেন্ড ভাববে।
> এই নিন ধরুন
– এটা কি?
> একটা হাতে আকা পিক, যেটা আপনি চেয়েছিলেন।
– আচ্ছা ধন্যবাদ।
> এইগুলো নিন।
– এগুলো কি?
> কিছু গিফট আপনার বোনের জন্য।
– এসবের কি দরকার ছিলো?
> ওই একদম চুপ।

> এই রাস্তাটা না আমার খুব ফেভারিট।
– শুনশান নিরব, তাই?
> হ্যা, চলুন একটু দাড়াই। (ব্যাগের থেকে একটা বক্স বের করলো)
– এগুলো কি?
> ঘোড়ার ডিম, কি রান্না করছি জানিনা। যাই হোক প্রশংসা করবেন, নইলে আর রান্না করতে ভাল্লাগবেনা।
– ওয়াও….. বিরিয়ানী
> এই নিন চামুচ।
– আরেহ রাখেনতো আপনার চামুচ, হাত আছে কি করতে?
> আমাকে সাধবেননা?

– ফেভারিট জিনিসের ভাগ কাউরে দেইনা, পারলে একটু পানি দিন।
> একটা চিমটিও বাকি রাখলেননা, এই নিন পানি।
– রান্নার জবাব নেই, আম্মুর মাষ্টারকপি বলতে হবে।
> এই ব্যাগে কিছু আছে, ধরুন।
– আমিও আপনাকে কিছু দিতে চাই (পকেট থেকে কিছু বের করে)
> (স্বযত্নে ব্যাগে রেখে দিলো কারন ইবু খুলতে বলেনি)
– শুনুন
> বলুন
– (হাটু গেরে চোখ বুজে প্রপোজ করলো, উইল ইউ ম্যারি মি?)
> হুম, লাভ ইউ টু (মারজানের খুশিতে চোখ দিয়ে পানি এসে গেছে।)

ঠিক এই সময়েই আকাশ থেকেও বৃষ্টি শুরু হলো। একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে, কারন আজীবন গল্পে আর ভিডিওতে দেখছে কিভাবে সত্যি কারের ভালোবাসায় প্রপোজের সময় বৃষ্টি শুরু হয়। দুজনেই দৌড় দিলো। একটা দোচলা ঘড়ের চালের নিচে দাড়ালো। ভীতু ইবু মারজানের জীবনেও হাত ধরবেনা, তাই মারজান কার হাত বেশি ফর্সা দেখার নাম করে হাত ধরলো ইবুর আর কয়েক মিনিট ধরে রাখলো। ইবু প্যাকেট খুলতে বললো। মারজান প্যাকেট খুলে দেখলো সাদা কালারের পাথরের একটা ব্রেসলেট আছে। মারজানও ইবুকে প্যাকেট খুলতে বললো। প্যাকেটের ভেতরেও একটা সাদা রংয়ের ঘড়ি ছিলো। একে অপরের হাতে গিফট পড়িয়ে দিলো।

মারজান ফ্যামিলি উচ্চবিত্ত, তবে এতো বড় ফ্যামিলির হওয়ার পরেও ইবুর থেকে কোন গিফট নেয়না। নিলেও অনেক কম দামের গিফট নেয়, কারন ইবুর কোন জব নেই আর স্টুডেন্ট এখনও। এদিকে মারজান ঠিকই ইবুকে দামী দামী গিফট দেয়। এই মেয়েটা শুধু ইবুর কাছে চায় দেখা করতে। আর কিছু চায়নাই এখনও। কিছুদিন আগেও ইবু বসুন্ধরা থেকে একটা সনির ওয়ারলেস ইয়ারফোন এনেছিলো মারজামের জন্য, বাট শুনেই মারজান মানা করে দিছে। শুধু একটা পাথরের নাকের নথ চাইছে যার মূল্য কিনা শতখানেক হতে পারে। ইবু এতো রাগী ছেলে ছিলো যে কোন মেয়েই ইবুকে বুঝতে পারতোনা, অধীকার ফলানো দূরে থাকুক। আর এই পিচ্চি মেয়েটার সাথে তো ইবু রাগ দেখাতে পারেই না, উলটা রাত পার হয় মারজানের রাগ ভাঙাতে। চিকন মেয়েদের নাকি রাগ বেশি, সেই রাগের মাত্রাটা এখন হাড়ে মাংসে টের পায় ইবু। গতকালও দেখা করা নিয়ে রাগ করে ইবুকে ব্লকলিষ্টে চালান করছে।

ইবু জানে ২৪ ঘন্টা ওভার হওয়ার আগেই তার ব্লক ছুটাবে আর ইবুকে বলবে, “আসো মিলে যাই।” ইবুও আহ্লাদী কন্ঠে বলবে, “গুলুগুলু লাভ ইউ।” ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসবে, “লাভ ইউ টু বাবুই।” আর যাই হোক এই সাময়িক ব্রেকাপের ফলে একটা রাত ইবু ৯ টার সময়েই ঘুমাতে পেরেছে। সময় থেমে থাকেনা, এখন শুধু অপেক্ষা সন্ধ্যা ৭ টা বাজার। ভালো থাকুক ভালোবাসাগুলো।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত