অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রেম

অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রেম

আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলাম নিশিতার দিকে৷ আমার সমস্ত পৃথিবী যেন স্তব্ধ হয়ে গেল৷ আমার চারপাশ যেন থমকে গেছে চট করেই। বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে না৷ জনকোলাহলের শব্দ আসছে না আর। একটু আগে ডাক দেওয়া পাখিটার ডাক দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে৷ আকাশের মেঘ গুলো উড়ে যাচ্ছে না। রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতিতে কোনো গাড়ি বেশ শব্দ করে চলে যাচ্ছে না৷ কোথাও কোনো শব্দ হচ্ছে না।

সব যেন স্তব্ধ। আমি কেবল একটা মেয়েকে দেখছি। কালো কেশি একটা মেয়ে। যে মেয়েটার চোখ দুটো ভীষণ রকম গভীর। যার গোল গোল দুটো চোখ আছে৷ যে চোখে আমি এক সময় স্বপ্ন দেখতাম৷ অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক কিছু স্বপ্ন, কিছু অক্লান্ত অনুভূতি। আমি চুপচাপ, ভীষণ চুপচাপ, কেবল শুনলাম, তার প্রতি পদের শব্দ। সে ধীর পাঁয়ে এগিয়ে আসছে। আমি অনুভব করছি আমার বুকের বাঁ পাশটা অস্বাভাবিক রকম ধপধপ করছে। আমি চারবছর পুরনো কিছু অনুভূতি অনুভব করছি৷ ।

আমি সেই মূহুর্তে সেই যায়গায় থমকে দাঁড়ালাম। আমার সমস্ত পৃথিবী সেই মূহুর্তে থমকে দাঁড়ালো যেন। নিশিতা তখনও আমাকে দেখেনি। সে দোকানের বাইরে শো করানো কিছু জামা দেখছে। আমি তখন এ পাশের দোকান থেকে তার দিকে তাকিয়ে আছি৷ কী ভীষণ নির্বোধ দৃষ্টি আমার। তাকে দেখার প্রচণ্ড লোভ যেন আমি সামলে উঠতে পারছি না৷ আমি তাকে দেখতেই থাকলাম। ঠিক সেই মূহুর্তে ওই দোকানের ওদিক থেকে আমাকে দেখতেই থমকে দাঁড়ালো নিশিতা৷ কেবল দাঁড়িয়ে দেখল আমায়৷ দু’জন তখন দু’দিক থেকে দেখছি একে অপরকে। কী ভীষণ ঘোর ধরানো সেই দৃষ্টি তার৷ আমি আজো যেন প্রথম বারের মতো তার প্রেমে পড়ছি৷ ভীষণ রকম পড়ছি৷

-কে আপনি?
-আমি তানভীর।
-কোন তানভীর?
-আমাকে চিনো না তুমি?
-না তো?

-আমি তোমাদের ক্লাসেই পড়ি। ভর্তির পর থেকে প্রতিদিন ক্লাস করছি৷ আর তুমি বলছো তুমি আমাকে চেনো না?
-ভর্তির প্রথম থেকে ক্লাস করলেই যে তোমাকে চিনে যাবো তেমন তো না?
-আমাকে বুঝি ক্লাসে একবারও দেখোনি?
-ক্লাসের সময় এতোদিকে দৃষ্টি দেই না আমি৷ তাই হয়তো দেখা হয়নি। কী নাম জানি বলেছিলে?
-নাম তানভীর।
-ও হ্যাঁ। মনে পড়েছে৷ তানভীর। তা কী জন্যে আসলে তা তো বললে না?
-একটা কথা বলতে এসেছিলাম।
-কী কথা? আমি খানিক চুপ থেকে বললাম,
-সেটাই তো বলতে পারছি না৷ মেয়েটা কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকল বোকার মতো৷ তারপর বলল,

-তুমি আমার সাথে মজা করতে এসেছো এখানে?
-না তো!
-তাহলে এসব কী বলছো তুমি? কী বলতে এসেছো তাইই বলতে পারছো না?
-হ্যাঁ৷ পারছি না৷
-কেন পারছো না।
-তা বললে তুমি রাগ করবে।
-রাগ করবো না। তুমি বলো৷
-নাহ৷ রাগ করবে৷ বলা যাবে না৷
-আচ্ছা৷ ঠিকাছে। বলতে হবে না৷ এই বলে মেয়েটা হেঁটে চলে যেতে থাকল। আমি কিছু সময় চুপ থেকে পেছন থেকে খানিকটা জোর গলায় বললাম,
-বলিনি দেখে রাগ করেছো?

মেয়েটা পেছন ফিরে তাকালো৷ তার নাকের ডগায় ঈষৎ রাগ ভাসছে। কান লাল হয়ে আছে। আমি আরো দু’পা এগিয়ে গেলাম৷ মেয়েটাকে অস্বাভাবিক রকমের সুন্দরী লাগছিল তখন৷ মেয়েটা বলল,

-রাগ আমি করেছি বটে। তবে সবার সাথে রাগ দেখাই না আমি। আমি খানিকটা মলিন স্বরে বলল,
-এখন তুমি কি আমার সাথে রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দিবে?
-দেওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়?
-ব্যাপারটা নিতান্তই ছেলেমানুষী হয়ে যাচ্ছে না?
-তা হোক। বয়েসটাই তো ছেলেমানুষীর। একটু ছেলেমানুষী না করলে কি হয়?
-তোমার কথাই ঠিক রাখবে? আমার সাথে কথা বলবে না?
-হ্যাঁ। আমার সিদ্ধান্তই আমার কাছে শেষ সিদ্ধান্ত।
-তাহলে আমি কি রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করবো? মেয়েটা চট করেই হেসে দিল। কথাটা যেন ভীষণ হাস্যকর। বলল,

-সেটা তোমার ব্যাপার। আমার সাথে কথা বলাটা যদি গুরুত্বপূর্ণ হয় তবে করিও চেষ্টা। তবে হ্যাঁ! অতিরিক্ত কিছু আমি মোটেও পছন্দ করি না৷ স্যারের কাছে বিচার দিয়ে দিবো কিন্তু।

-আচ্ছা, বলছিলাম কী! রাগটা এখানেই রেখে দাও না। আমি তোমাকে কথাটাও বলে দেই।
-তখন তো বলতে চাওনি। এখন নিজ থেকেই বলতে চাচ্ছো?
-তোমার সাথে কথা বলাটা বিশেষ প্রয়োজন আমার৷ মেয়েটার চট করেই কিছু একটা মনে পড়ে গেল যেন৷ বলল,

-আমার মনে হচ্ছে, আমরা আজ প্রথম দিন হিসেবে অনেক বেশি কথা বলে ফেলেছি। তানভীর, আমার মনে হয় আমাদের এতো বেশি কথা বলা উচিৎ হয়নি।

-কেন? তুমি কী মেপে ঝেপে কথা বলো নাকি? নাকি নির্দিষ্ট শব্দের ভেতরে কথা বলো?
-তুমি তো ভারী প্যাচালো মানুষ?
-আমি প্যাঁচালো মানুষ?
-তা নয়তো কী? এতোক্ষণে আমি বাসায় পৌঁছে যেতে পারতাম। অথচ তুমি কথার টানে আমাকে এখানে আঁটকে রাখছো।
-তার মানে তুমি কারো কথার টানে আঁটকে যাও? নিশিতা কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর বলল,

-তুমি খুব অদ্ভুত। এই বলে সে হাঁটা শুরু করলো৷ আমি হাসলাম। পেছন থেকে বললাম,
-অদ্ভুত তো বটেই।

মেয়েটা ততক্ষণে হেঁটে চলে গিয়েছে কিছুদূর। আমি পেছন থেকে তাকিয়ে থাকলাম। ভাবলাম কিছুদূর গিয়ে সে দাঁড়াবে৷ তারপর ফিরে তাকাবে৷ কিন্তু তেমন কিছুই ঘটল না৷ সে ধীরে ধীরে হেঁটে চলে গেল৷ আমি ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকলাম৷ ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে এলো আমার বন্ধু কামরুল। বলল,

-কিরে? কিছু হলো? আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম। বললাম

-সে ভীষণ কঠিন মেয়ে। ভালোই কথা জানে৷ সময় লাগবে রে বন্ধু৷ কামরুল বলল,
-আমি কি কথা বলে দেখবো? আমি কথা বললে দেখবি কিছু একটা অন্তত হয়ে যাবে৷ আমি ওর কাঁধে হাত রেখে হাসলাম। বললাম,
-প্রকৃতি যদি চায় তবে তুই ছাড়াই কিছু একটা হয়ে যাবে।
-দেখা যাক কী হয়!

আমি আর কিছু বললাম না৷ দুজন মিলে করিডোর ধরে হাঁটতে থাকলাম। মনের ভেতর তখনও সেই স্তব্ধতা। সেই অপরূপ সুন্দরীর অবয়ব। যেন লেপ্টে গিয়েছে মনের কোণে৷ আমি নিশিতা নামক মেয়েটাকে কল্পনা করতে করতেই বেরিয়ে এলাম কলেজ গেট থেকে।

প্রথম দিন মেয়েটাকে দেখেই আমার আশ্চর্য রকম কিছু অনুভব হলো৷ এতোদিন এতো মেয়ে দেখলাম তবে কখনই এমন অস্বাভাবিক সুন্দরী কাউকে দেখিনি৷ কিংবা আমার দৃষ্টিতে এমন অস্বাভাবিক কাউকে নয়। এমন কাউকে দেখে থমকে দাঁড়ায়নি আমার চারপাশের প্রকৃতি। এতো গভীর করে অনুভব করিনি কাউকে। তখন সময়টাও ছিল রঙিন৷ ইন্টারের ফিজিক্স আর হায়ার ম্যাথের অংক গুলো সলভ করার মতো একটা রঙিন সময় ছিল৷ যে সময় ছিল নতুন ক্যামিস্ট্রি আর বায়োলজি বই পড়ার মতো রঙিন৷ নতুন কলেজ, নতুন ক্যাম্পাস এবং নতুন কিছু বন্ধুদের ভীড়ে আমি হঠাৎই নিজের মাঝে নতুন একটা কিছু অনুভব করলাম।

যা ছিল আমার জন্যে প্রথম, প্রথম কারো জন্যে পাগলের মতো অনুভূতি হওয়া, তাকে বারংবার দেখার জন্যে মনের মাঝে ভীষণ উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়া৷ হঠাৎই আমি জানি কেমন হয়ে যাচ্ছিলাম৷ ইন্টার ভালোভাবে শেষ করে একটা ভালো ভার্সিটিতে পড়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি যুদ্ধ করতে নেমেছিলাম, আজ সেই যুদ্ধ যেন হঠাৎই থমকে গেল রঙিন কিছু অনুভূতির আড়ালে। আমি তখন উচ্চতর গণিতের অংক সলভ করা বাদ দিয়ে নিশিতা নামক মেয়েটার রহস্য সমাধানে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। ভীষণ রকম তলিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও। ফিজিক্সের দূরত্ব মাপার বদলে আমি তখন তার আর আমার মাঝের দূরত্ব মাপছিলাম৷ ক্যামিস্ট্রির যৌগ মেলানোর বদলে আমি আমাদের দুজনের মনকে মেলানোর চেষ্টা শুরু করলাম।

পরেরদিন নিশিতার সাথে আমার কথা হয়নি৷ আমি লুকিয়ে তাকে ঠিকই দেখেছি তবে তার মাঝে তেমন কিছুই দেখলাম না আমি৷ সে নিজের মতো ক্লাসে এলো, স্যারের লেকচার শুনলো, তার প্রিয় বান্ধুবির সাথে কথা বলল, অথচ আমি যে তার সাথে কাল কথা বলেছি, কিংবা আমি যে বারবার তাকে দেখছি আড়াল থেকে সে যেন দেখেও তা দেখছে না৷ খুব গোপনে যেন সে আমায় এড়িয়ে চলল। মনের ভেতর লেগে গেল একদম। তবুও সয়ে নিলাম। তাকে নিজের করে পাবার আশায়। পরের দিন আমি নিজ থেকেই কথা বললাম। তখন আমাদের কম্বাইন্ড ক্লাস ছিল ইংরেজি৷ সাইন্স ভবন থেকে আর্টস ভবনে যেতে হতো৷ সেও যাচ্ছিল। আমি তার পথ আগলে দাঁড়ালাম। বললাম,

-কী খবর তোমার নিশিতা? নিশিতা আমাকে দেখে হাসল। বলল,
-ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? আমি হেসে জবাব দিলাম,
-যাক৷ এবার অন্তত চিনতে পেরেছো আমায়।সে খানিক হেসে জবাব দিলো,
-খোঁচা দিচ্ছো? আমি হাসলাম। বললাম,

-তা নয়। দুষ্টামি করছিলাম। সে কিছু বলল না। হাসল কেবল। আমি বললাম,

-নিশিতা একটা কথা কী জানো? এই পৃথিবীটা না খুব অদ্ভুত। একদমই অদ্ভুত। এমনটা আমার আগে মনে হতো। কিন্তু আজকাল কেন জানি বারবার এটাই মনে হচ্ছে যে তোমার চেয়ে অদ্ভুত আর কিছুই হতে পারে না।
সে ভ্রু কুচকে তাকালো৷ বলল,

-আমার মাঝে অদ্ভুত কী দেখলে তুমি?
-আছে কিছু একটা। যেটা আসলেই খুব টানে৷
-কী টানে?
-ও তুমি বুঝবে না।
-না বুঝার বয়সটা পেরিয়ে এসেছি আমি৷ এখন সবই বুঝি৷ টের পাই৷
-সব বুঝো? টের পাও?
-হ্যাঁ।

-তাহলে তো তোমার বুঝে যাওয়ার কথা৷
-কী বুঝে যাওয়ার কথা?
-এই যে আমি এতো কিছু করছি! তোমার এটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করছি!
-তা তো অনেকেই করে।
-সবারটার সাথে কি আমারটা একই? আমি কি ভিন্ন কিছুই করিনি?
-তুমি কি কিছু করেছো? কেবল তাকিয়ে থাকা ছাড়া?
-তুমি জানতে আমি তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি। আমরা তখন আর্টস ভবনের সামনে চলে এসেছিলাম। সে বলল,
-পড়ালেখায় মনোযোগী হও৷ অযথা সময় ব্যয় করিও না৷

এই বলে সে ক্লাস রুমে চলে গেল। আমি কেবল বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম৷ মেয়েটাকে তো একবারও দেখিনি আমাকে দেখতে। তাহলে সে জানলো কীভাবে আমি তাকে দেখি? আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমার কেমন জানি লাগতে থাকল৷ আমার মনে হলো মেয়েটাও আমাকে দেখছে৷ অবশ্যই দেখছে।

এভাবেই দু’চার কথা আমাদের মাঝে মাঝে হয়ে যেত৷ তা দিয়েই যেন মহা খুশি আমি৷ দিনরাত কেবল তাকে ভেবেই পার করছিলাম। অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রেম তখন আমার মাথায় ঝেঁকে বসেছিল। আমি দিন দিন কেমন জানি হয়ে যেতে থাকলাম। কেমন অন্য রকম। বেখেয়ালি ভাব চলে এলো নিজের মাঝে। পড়াশোনায়ও কেমন বেখেয়ালি হয়ে গেলাম। সেদিন ফিজিক্স পড়া না পারায় নিজাম স্যারের কাছে কী বকাটাই খেলাম। সত্যিই পড়ালেখার ব্যাপারে আমি ভীষণ বেখায়লি হয়ে গিয়েছিলাম। এসবের মাঝে হঠাৎই নিশিতা একদিন ডেকে বলল,

-তানভীর? আমি অবাক হয়ে ফিরে তাকালাম। বললাম,

-আমার বিশ্বাস হচ্ছে না৷ তুমি ডেকেছো আমায়?
-কেন? আমি কি তোমায় ডাকতে পারি না?
-তা পারো৷ কিন্তু হঠাৎ ডেকে বসলে বলে হজম হচ্ছিল না আরকি।
-অযথা কথা বাদ দাও৷ একটা সিরিয়াস কথা বলতে চাচ্ছিলাম আমি৷
-সত্যিই? সিরিয়াস কথা বলবে?
-মজা করিও না৷ প্লীজ৷
-আচ্ছা বলো।
-আমার জানা মতে তুমি ভীষণ ভালো ছাত্র৷ কিন্তু হঠাৎই তোমার পড়াশোনায় এমন অবনতিটা মেনে নিতে পারছিনা৷
-তুমি তো ক্লাসে আমাকে দেখোওনি৷ তাহলে কীভাবে জানতে আমি ভালো ছাত্র?নিশিতা খানিকটা মাথা নিচু করে নিলো। বলল,

-আমি তোমাকে আগ থেকে জানতাম৷ ভর্তির প্রথম দিন থেকেই।
-সেদিন বললে যে আমাকে দেখোওনি৷
-ওটা এমনিই বলেছিলাম।
-এমনিই কেন বললে?
-আমার ইচ্ছে হলো তাই৷
-তা এখন আমাকে কী করতে বলছো?

-আমি চাই তুমি পড়াশোনা ঠিকভাবে করো।
-যদি না করি?
-করতে হবে৷
-জোর করবে?
-হ্যাঁ৷
-কেন?
-কথা এতো প্যাঁচাও কেন তুমি? মেয়েটা যেন লজ্জা পেল। মাথা নামিয়ে নিলো৷ তার চোখমুখ ময় অদ্ভুত লজ্জা খেলা করছিল৷ বললাম,
-আমি কথা প্যাঁচাই না৷
-প্যাঁচাও৷ খুব প্যাঁচাও৷ আমি কিছু বললাম না এবার৷ হাসলাম খানিক। তারপর কিছু সময় কাটল নীরাবতায়৷ সে বলল,
-কী? করবে পড়াশোনা ঠিকভাবে? আমি হাসলাম। বিনয়ী স্বরে বললাম,
-মহারানী আদেশ করেছেন। তা কী খুব সহজে অমান্য করা যায়? নিশিতা হাসল। লজ্জাময় হাসি। বলল,

-খুব কথা জানো তুমি তাই না?
-জানতাম না৷ ইদানিং কেমন করে জানি কথা বলছি৷ কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি।
-কেন? কী হয়েছে?
-একটা অসুখে ভুগছি নিশিতা৷
-অসুখ? কী অসুখ?
-এই অসুখের নাম শুনলে তুমি রাগ করবে৷
-না৷ রাগ করবো না৷ বলো৷
-না, রাগ করবে৷

-বলছি তো! রাগব না। বরং না বললে আমি রাগ করবো৷
-এতো রাগ কেন তোমার?
-জানি না৷
-বলতেই হবে?
-হ্যাঁ৷ বলতেই হবে। আমি থামলাম। নিশিতার চোখের দিকে তাকালাম। কী গভীর সেই দু চোখ৷ বললাম,
-নিশিতা? নিশিতা আমার দিকে তাকিয়ে থাকল৷ বলল,
-হু!
-নিশিতা?

আমি তুমি নামক রোগে ভুগছি ভীষণ। সেই প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত আমি ‘নিশিতা’য় ভুগছি। হৃদয়টা এমন বেহায়া হয়েছে যে খানিকটা অবসর পেলেই একজন মানুষের ছবি ভাসিয়ে তোলে চোখের পর্দায়৷ তাকে নিয়ে কী ভীষণ গভীর ভাবনায় ঢুবে থাকি আমি। কল্পনায় তার কালো কেশে হাত বুলিয়ে দেই নির্ভয়ে৷ দু’চোখ ভরে দেখি৷ যেন দেখাই শেষ হয় না৷ নিশিতা, এই যে, এই কথা গুলো বলছি আমি, বাড়ি থেকে একটুও প্রস্তুতি নিয়ে এসে বলিনি। এগুলো আমার মনের কথা৷ অনুভূতির কথা! ভেতর থেকে আসছে৷ খুব গভীর থেকে। নিশিতা, তোমার কি মনে হচ্ছে না প্রকৃতি কিছু একটা চাচ্ছে৷ অন্যরকম কিছু একটা? আমি থামলাম। নিশিতার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সে কোনো জবাব দিলো না। কেবল আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। তার দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিল। অন্য রকম কিছু একটা৷ আমি আবার ডাকলাম,

-নিশিতা? তার ঘোর ভাঙ্গল যেন৷ বলল,
-হু?
-কিছু বলেছিলাম তোমায়। শুনেছো?
-আমাকে বলেছিলে? আমি বললাম,
-তুমি শুনোনি? নিশিতা আমার দিকে তাকিয়ে থাকল কেবল। বলল,
-তানভীর? তুমি কি জানো তুমি যে জাদু জানো! জানো সেটা?আমি অবাক হয়ে তাকালাম তার দিকে। কিছু বললাম না। সে বলল,
-তোমার মাঝে কিছু একটা আছে৷ ভিন্ন কিছু। তুমি জানো সেটা? আমি অবাক স্বরে বললাম,
-না তো! জানি না।
-মানুষ মুগ্ধ করতে পারো তুমি। খুব ভালো করে পারো। আমি কিছুসময় চুপ করে থাকলাম৷ তারপর বললাম,

-নিশিতা, আমি কি তোমায় মুগ্ধ করতে পেরেছি? ও কিছু বলল না। অন্য দিকে ফিরে তাকালো। চেহারাময় তার রক্তিম নীরাবতা। বললাম,
-নিশিতা, আমি কেবল তোমাকেই মুগ্ধ করতে চাই৷ কেবল তোমাকেই চাই৷ আজীবনের জন্যে চাই৷ সে কিছু বলল না৷ লজ্জা পেল ভীষণ। মাথা নিচু করে চলে গেল।

আমি হাসলাম। ভাবলাম এবার নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়ে যাবে। আমি চাই! অন্তত কিছু একটা হোক৷ তারপর আমি মহারানীর মন জয় করতে আবার পুনরায় কথা বলতে শুরু করলাম৷ হঠাৎই পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় আমি নিশিতাকে দেখা থেকে খানিকটা বিরত থাকতে থাকলাম। প্রেম এবং পড়ালেখা এই দুই বিষয়টা ব্যালেন্স করে চলতে শিখিনি তখনও। এই ব্যালেন্স না করতে পারায় মহারানী একদিন ডেকে বসলেন। মুখ তার বড় মলিন। মাথা নিচু করে মলিন মুখে বলল,

-তোমাকে পড়াশোনা করতে বলেছি৷ চারপাশ ভুলে যেতে বলিনি৷ আমি প্রথমে কথাটা বুঝতে পারিনি ঠিক৷ তাই বলে বসলাম,
-চারপাশ দেখে কী লাভ৷ পড়ার আদেশ তোমার। আর তোমার আদেশ আমার কাছে খুবই মূল্যবান।
নিশিতার মুখ আরো মলিন হলো যেন৷ কিছু বলল না৷ চলে যেতে চাইলো৷ আমি ঠিক তখনই তাঁকে আঁটকিয়ে বললাম,

-কী বলেছিলে একটু আগে? ও মলিন স্বরে বলল,
-কিছু না৷
-নিশিতা? তুমি কি চারপাশ বলতে তোমাকে বুঝিয়েছো৷ সে অভিমানী স্বরে বলল,
-না। কাউকে বুঝাইনি৷ আমি তার সামনে চলে গেলাম একদম। বললাম,
-তুমি মিস করছিলে তাই না?
-না। আমি কিছুই মিস করছিলাম না৷ আমি হাসলাম। বললাম,
-তার মানে তোমাকে দেখতে বলছো আমায়?
-আমি মনে হয় কখন নিষেধ করেছি! হুহ! আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম৷ বললাম,
-এতো রহস্য করো কেন তুমি?
-জানি না। আমি হাসলাম। তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম কেবল। বললাম,

-তুমি যাই করো! তোমার রহস্য আমি সহজে বুঝে যাই৷ তা কি তুমি জানো?
-হুহ! খুব বুঝেন আপনি।
-হ্যাঁ, খুবই বুঝি৷ এবং আমি খুবই বুঝতে চাই৷ কথাটায় নিশিতা মজা পেল যেন৷ সে হাসল খানিক। তার মলিন মুখ যেন চট করেই উজ্জ্বল হয়ে উঠল৷ আমি বললাম,

-নিশিতা? যতো যাই হোক, আমি কেবল তোমাকেই দেখব৷ কেবল তোমাকেই! তুমি জানো না আমার ভেতরটা কতোটা চায় তোমায়! কতটা চায়! সে মৃদু হাসল। চেহারায় তার লাল আভা। জবাব দিলো না সে৷ মাথা নিচু করে চলে গেল। আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম তার গমন পথ চেয়ে৷ সে কয়েক পাঁ গিয়ে পিছনে দেখল একবার৷ হাসল খানিক৷ বলল,

-তুমি যাদুকর তানভীর। খুব যাদু জানো তুমি! ঘোর ধরাতে জানো ভীষণ৷ এই বলে চলে গেল সে। আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। মনে তখন দারুণ প্রশান্তি। অদ্ভুত এক রকম আনন্দ হচ্ছিল ভেতরে। কিছু অক্লান্ত শিরশিরে অনুভূতি। এরপর সময় ক্ষণ বুঝে একদিন হাঁটু ভেঙ্গে প্রপোজ করে বসলাম৷ সে বেশ সাদরেই গ্রহণ করে নিলো৷ যেন এমন একটা সময়ের অপেক্ষায় ছিল সে৷ এরপর থেকে শুরু হলো দুজনের একত্রে ইন্টার পথ চলা! অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রেম! কিছু অনুভূতি! কিছু অবাস্তব অথচ কী ভীষণ নিষ্পাপ অনুভূতি।

খুব সকালে তখন প্রাইভেটে আসা, সবার আগে এসে চুপিচুপি গল্প করা, সবার আড়ালে কিংবা সবার সামনেই তাকে দেখা, বারবার পেছনের বেঞ্চে ফিরে তাকানো, একটু সুযোগ পেলেই নিজেদের ব্যাপারে কথা বলা, ভবিষ্যত নিয়ে গল্প করা, একাকি দুজনে বসে কিছু অবাস্তব স্বপ্নের সৃষ্টি করা, দিন রাত ফোনে কথা বলা, ক্লাসে টেক্সট মেসেজ পাঠানো, এ’জন পড়া না পারলে অন্যজনের কাছ থেকে বুঝে নেয়া, এবং বায়োলজি ল্যাভে সবার আড়ালে প্রথমবারের মতো তার গালে চুমু খাওয়া, এভাবে চলছিল এই অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রেম। দুজন কিশোরকিশোরীর প্রেম। দুজনের জীবনের লক্ষ্য একই সাথে সেট করেছিলাম আমরা৷ অথচ সেই সময় গুলো,স্বপ্ন গুলো, দুজনের একাকি গল্প গুলো, তার চোখের গভীরে নিজের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা হঠাৎই যেন মলিন হয়ে যায়। মিশে যায় এডমিশন টেস্টে না টিকে এক বছর পিছিয়ে যাওয়ার মাঝে। আমাদের দুজনের গল্প ঠিক সেই সময় সেই মূহুর্তে থমকে গিয়েছিল৷ তার চান্স হয়ে গেল। অথচ আমি হাজার চেষ্টায়ও কোথায় টিকতে পারিনি৷ টিকতে পারিনি নিজের প্রেমের কাছে। নিজের প্রেমিকার কাছে। আমি পরের বছর চেষ্টা করবো বলে বসে থাকলাম।

দিনরাত তাকে নিয়েই ভাবতে থাকলাম। অথচ সে তখন আমাকে আড়াল করে নিজের লক্ষ্যের প্রতি আশক্ত হয়ে গেল৷ তাকে এখন আর ফোন দিলে পাওয়া যায় না৷ পাওয়া গেলেও বিশেষ কিছু কথা হয় না। অথচ আমি চান্স না পাওয়ার পর আমাকে মানুষিকভাবে বেশ সাপোর্ট করেছিল সে৷ আমাকে উৎসাহীত করেছিল৷ আমি ভাবলাম প্রেমিকা পেয়েছি একজন! খুব কেয়ারিং প্রেমিকা। অথচ এর কিছু কাল পরেই যে সে অচেনা হয়ে যাবে কে জানত। ধীরে ধীরে আমাদের ফোন কলে কথা হওয়া কমতে থাকে। এখন আর রাত জেগে গল্প হয় না৷ স্বপ্ন বুনা হয় না এখন আর৷ কেবল এ পক্ষের বুক ভরা বেদনা আর ভারী দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। সে বদলে গেছে। আড়াল হয়ে গেছে সে।

আমাকে এখন আর চিনে না৷ আমি পর। অচেনা কেউ। কী ভীষণ কষ্টে ভুগছিলা তা যদি বুঝানো যেত লিখে আমি তাইই করতাম। কষ্ট লিখে বুঝানো যায় না৷ অনুভূতি লিখে জানানো কঠিন৷ না পাওয়ার বেদনা কষ্টকর৷ স্বপ্ন দেখানো মানুষটা হুট করেই চলে যাওয়াটা আরো ভীষণ কষ্টকর। ঠিক এভাবেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় নিশিতা নামক মেয়েটা৷ খুব গোপনে আড়াল হয় সে আমার ভুবন থেকে৷ অথচ সে আড়াল হয়েও যেন থেকে যায় বুকের ভেতর। তাকে নিয়ে অনুভূতি যেন আরো গভীর হয়৷ গভীর হয় কল্পনা৷ নিশিতার সাথে এক সময় আমার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়৷ আমি বহু কষ্টে তার ভার্সিটির এক বট ভাইয়ের খোঁজ নেই৷ তার সাথে বন্ধুত্ব করি৷ যদি তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়৷ আচ্ছা সে কি জানে? গতচার বছর আমি তাকে ভীষণ খুঁজেছি৷ আমার প্রতিটি সুসময়ে দুঃসময়ে তাকে যে ভীষণ খুঁজেছি তা কি সে জানে?

জানে না হয়তো৷ কিংবা জানবেই বা কীভাবে! তার পথ আর আমার যে বড় ভীন্ন আজ৷ সে পক্ষে হয়তো কেউ জুটে গেছে তার৷ হয়তো সেই কারণে আমাকে ভুলে গিয়েছে সে৷ নতুন করে সাজিয়ে নিয়েছে তার ভূবণ। নতুন করে কারো সাথে হয়তো বুনছে স্বপ্ন৷ আজ তার জন্যে একটা অতিত ভুল মাত্র৷ একটা ভুক সিদ্ধান্ত হয়তো আমি তার জন্যে৷ আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। নিশিতাও দাঁড়িয়ে থাকল। আমরা তখন শপিং মলের দুটো দোকানের সামনে৷ আমাদের মাঝে দূরত্ব অল্প কিছু৷ অথচ মনের দূরত্ব যে কতোখানি তা বলা মুশকিল। আমার চোখ দুটো জ্বলে উঠল যেন৷ আমি মাথা নিচু করে নিলাম। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম কেবল৷ কিছুই বলতে পারলাম না৷ আমার পাশের দোকান থেকে বেরিয়ে এলো ইরা৷ আমাকে দেখতেই বলল,

-কিরে? এভাবে হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমার ঘোর কাটল যেন৷ আড়াল করে দেখলাম একবার নিশিতাকে। সে যেন তার জায়গায়ই জমে আছে৷ আমি বললাম,

-কিছু না৷ এমনিই৷ আর কিছু নিবি তুই? ও অবাক স্বরে বলল,

-সবেই তো এলাম। নেওয়ার তো অনেক কিছুই বাকি৷ কেন? তোকে হঠাৎ এমন বিব্রত দেখাচ্ছে কেন? আমি ম্লান হাসলাম। বললাম,
-কিছু না৷ এমনিই৷
-তাহলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল যাই? এই বলে সে আমার হায় ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল। যেতে বলল,
-তুইও না কেমন জানি! সেই আগের মতো আছিস।

আমি পেছন ফিরে দেখলাম একবার৷ ওপাশের দোকান থেকে দু’জোড়া চোখ তখনও দেখে যাচ্ছিল আমায়৷ আমার কিছু করার থাকল না আর৷ আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম কেবল। নিশিতার ব্যাপারে আমি এরপর থেকে কিছু জানতে পারিনি৷ বহুকষ্টে খবর পেয়েছিলাম যে সে সিনিয়র কোনো ভাইয়ের সাথে প্রেমে যুক্ত হয়েছে৷ এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ নিতেই ইচ্ছে হয়নি আমার৷ অনুভূতি গুলো কেবল লুকিয়ে রেখে এখনো বেঁচে এসেছি একা একা৷ দেখি কতো কাল যায় এমন। ইরার সাথে শপিং করে বের হতেই দেখলাম নিশিতা বাইরে দাঁড়িয়ে। কারো জন্যে অপেক্ষা করছে হয়তো৷ আমি চোখ নামিয়ে চলে আসতে চাইলাম৷ সে হঠাৎই ডেকে বসল৷ আমি খুব করে চাইছিলাম, না ডাকুক। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়। সন্ধ্যে হয়েই গেল। সে ডেকে বসল। আমি তখন চলার পথে থমকে দাঁড়ালাম। বুকের ভেতর তখন ধপধপ শব্দ হচ্ছি ভীষণ। আম স্থির হয়ে গেলাম। ইরা বলল,

-তোকে ডাকছেন উনি। আমি খানিকটা ভান করে বললাম,
-আমাকে ডাকছে?

তারপর পেছন ফিরে তাকালাম৷ দেখলাম সে কাজল কালো চোখে তাকিয়ে আছে৷ আমি তখন যেন ডুবে যাচ্ছিলাম চোখ দুটোয়! কী ভীষণ মায়া সেখানে। কী ঘোর! আমি ইরাকে বললাম,

-দাঁড়া একটু৷ কথা বলে আসি৷ ইরা স্মিত হাসল। বলল,
-যা৷ আমি আছি এখানে৷

আমি নিশতার সামনে গেলাম। বোকার মতো তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলাম কেবল৷ সে আমাকে দেখে গেল। কেবলই আমাকে দেখল। আমি বললাম,

-আমাকে ডেকেছেন? এই বলে তাকালাম তার দিকে। সেই মারাত্মক চোখ দুটোর দিকে। তারপর দ্রুতই চোখ নামিয়ে নিলাম। সে বলল,
-আপনি করে বলছো! আমি আনমনা হয়ে বললাম,
-সম্পর্কটাই যেখানে ‘আপনি’র।
-একটা সম্পর্ক কী এভাবেই ভুলে যাওয়া যায়? আমি হাসলাম। রসকষহীন হাসি। বললাম,
-আপনি কি আমার সাথে এসব কথা বলতে ডেকেছেন?

নিশিতার চোখ দিয়ে ক’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল তখন৷ সে কিছুই বলল না৷ কেবল ফুপিয়ে উঠল৷ ভারী নিশ্বাস বেরিয়ে এলো। আমি ভাবলাম সে কাঁদছে কেন? তার তো কাঁদার কথা না? তার তো আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার কথা! যেমনটা এড়িয়ে গিয়েছিল এতোদিন যাবত! আমার মাথা ঘুরে এলো৷ আপাতত তাকে নিয়ে না ভাবাই ভালো৷ সে আমার ছিল এক সময়৷ এখন নেই৷ সে এখন অতিত৷ অতিত নিয়ে মাথা ঘামানোটা বোকামি। বললাম,

-কিছু না বললে এখানে দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। আমার তাড়া আছে৷ নিশিতা চোখে জল রেখে হাসে তখন। বলে,

-কে ওই মেয়ে? গার্লফ্রেন্ড? তার চেহারায় ঈষৎ হিংসা দেখলাম আমি। বললাম,
-তা জেনে আপনার কী লাভ?
-এভাবে কথা বলবে আমার সাথে?
-কথা বলছি এই তো অনেক!
-এতো ঘৃণা? এতো ঘৃণা আমার জন্যে?
-ভালোবাসাটা তো দেখোনি৷ দেখলে আজ এই দিনটা আসতো না৷
সে কিছু বলল না। চুপ করে থাকল৷ আমি বললাম,
-তা আসি তাহলে৷ ভালো থেকো!

এই বলে আমি চলে এলাম ওর সামনে থেকে৷ অথচ আমার মনে হচ্ছে আমি এখনও তার সামনে দাঁড়িয়ে। তাকে দেখছি এখনও৷ একটা মানুষকে কীভাবে এতোদিন মনে রাখা যায়, কীভাবে তাকে নিয়ে অনুভূতি গুলো প্রতিবারই নতুন হয়৷ কীভাবে হয়? মেয়েটা বলতো, আমি নাকি যাদু জানি৷ অথচ সে যে আমায় আগ থেকেই যাদু করে রেখেছে তা কি সে জানে? সে কি জানে তার মতো জাদুকর আর কেউ নেই। কেউ হতেই পারে না৷

চলে এলাম অতিত পেছনে ফেলে। থাকুক সে গল্প সেখানে লুকানো৷ থাকুক না হয় আমার অনুভূতি গুলো গোপন৷ আড়ালে থাকুক আমার সেই অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রেম। সেই অবাস্তব অথচ কী ভীষণ নিষ্পাপ স্বপ্ন গুলো। সে না হয় আমাকে দেখে কাঁদল। দুফোঁটা জল ফেলল চোখের৷ এই’ই অনেক। আর কী চাই আমার।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত