মিষ্টি ভালোবাসা

মিষ্টি ভালোবাসা

পুরো রাস্তা বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। আকাশ এখনও মেঘাচ্ছন্ন। সিহাব বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ভাবছে বাহিরে যাবে কি না। ঠিক তখন ফাহিমা পেছন থেকে বলে উঠলো “কি ভাবছিস?” সিহাব হকচকিয়ে জবাব দিলো “না, তেমন কিছু না।”

– বাহিরে যাবি নাকি?
– ঠিক নাই।
– গেলে আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসিস।
– টাকা?
– তোর কাছে পাঁচশ টাকা পাই না?ওইখান থেকে নিয়ে আসবি।
– আমার কাছে মাত্র দশ টাকা আছে।
– মানিব্যাগ দেখি?
– উঁহু।
– ছ্যাচড়া।ওয়েট টাকা নিয়ে আসছি। ফামিহা চলে গেলো। সিহাব মুচকি হেসে বাহিরের দিকে তাকাতে ফোন বেজে উঠলো।স্ক্রিনে আননোন নাম্বার।

– হ্যালো।
– কেমন আছো?
– কে?
– এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেছো?
– নাদিয়া?
– হুম।

– ফোন দিছেন কেন?
– এমনি।তোমাকে খুব মিস করছিলাম।
– আজব!আমাকে মিস করার কি আছে?
– বুঝবা না।তোমার একটু সময় হবে?
– কেন?
– দেখা করতে চাচ্ছিলাম।
– সরি।
– প্লিজ, জাস্ট দশ মিনিট।
– বললাম তো সরি।দেখা করা পসিবল না। ফাহিমা পাশ থেকে জিজ্ঞাসা করলো “কে ফোন দিছে?” সিফাত ফোন কেটে দিয়ে বললো “নাদিয়া।”

– তুই আবার ওই ক্যারেক্টারলেস মেয়ের সাথে কথা বলিস?
– আরে না।আননোন নাম্বার থেকে কল দিছিলো।তাই রিসিভ করছি।
– কি বললো?
– দেখা করতে চাচ্ছে।

– হুম ভালো।যা দেখা কর।
– ধুর।তুই এভাবে রিয়েক্ট করছিস কেন?
– তোর জানতে হবে না।আর শোন, আমি কাল বাসায় চলে যাবো।
– মাত্র কয়দিন হলো তো আসছিস।
– সেমিস্টার এক্সামের ডেট এগিয়ে আনছে।
– ওপ্স।
– এই নে টাকা।দুইটা কোণ, একটা চিকেন বার্গার আনবি।বাকি যা বাঁচবে তোর।
– হি হি হি।ওকে।
– বাট আমার টাকা দিয়ে সিগারেট খাবি না।
– সেটা দেখা যাবে।
– হুম, বার্গার খালামনিকে দিয়ে কোণ নিয়ে ছাদ আসবি।আমি ছাদে আছি।

সিফাত হু হা জবাব না দিয়ে বাহিরে চলে গেলো।এরমধ্যে আবারও নাদিয়ার কল।সিফাত রেগে কোন ফ্লাইট মুডে রেখে দিলো। আকাশে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ হচ্ছে।একনাগাড়ে বিদ্যুৎ চমকেই চলেছে। সিফাত ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ছাদে উঠে দেখলো ফাহিমা ছাদের একদম কিনারায় বসে আছে। “কিরে তোর ভয় করে না?” ফাহিমা গম্ভীর সুরে বললো “না।” সিফাত ফাহিমার পাশে বসে কোণ দুইটা এগিয়ে দিয়ে বললো “মন খারাপ মনে হচ্ছে।” ফাহিমা একটা কোণ নিয়ে অন্যটা সিফাতের হাতে ধরিয়ে দিলো। সিফাত লজ্জা পেয়ে বললো “আমি খাবো না।”

– হুম।ভালো জিনিস খাবি কেন?মাত্র সিগারেট খাইছিস তাইনা?
– কসম না।
– ভয় পাস কেন?আমি ফুপ্পিকে বলবো না।
– হুম খাইছি।
– গুড, নে এবার আইসক্রিম খা।

সিফাত ফাহিমার হাত থেকে আইসক্রিম নিয়ে চুপচাপ খেতে লাগলো। কালো মেঘে ঢাকা আকাশ। বৃষ্টির পানিতে ভেজা সবুজ গাছ।আকাশে পাখিদের আনাগোনা।সেই সাথে শীতল বাতাস। দুজন খুব মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতির অপরূপ এই দৃশ্য অনুভব করছে। এর মাঝে ফাহিমা অবাক করা কথা জিজ্ঞাসা করলো।

– নাদিয়ার সাথে তোর রিলেশন ছিলো তাইনা?
– নাহ্।
– সত্যি কথা বলবি আজ।
– সত্যি রিলেশন ছিলো না।রিলশন থাকলে তোকে বলতামই।তাছাড়া জেনেশুনে কেউ এইরকম চরিত্রের মেয়ের সাথে প্রেম করে?

– বুঝলাম।আসলে তোকে কিছুক্ষণ আগে একটা মিথ্যা কথা বলছি।
– কোনটা?
– আমার সেমিস্টার এক্সাম আগায়নি।
– তাহলে?
– ছেলের বাসা থেকে পরশু আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে আসবে।
– ওপ্স।
– কি ওপ্স?
– তুই এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলবি?

– আমার ইচ্ছা নাই।বাট আব্বু বলতেছে ছেলে এবং ছেলের পরিবার দুইটাই ভালো।এরকম সম্বন্ধ পাওয়া মুশকিল।
– গুড।
– তোর আবার কি হলো?
– কিছু না।বিয়ে করে সংসার কর।চল রুমে যাই।আকাশের অবস্থা বেশি ভালো না।
– পরে।
– ছেলেটার ছবি দেখছিস?
– হুম।ভালোই দেখতে।
– তাহলে তো ঝামেলাই থাকলো না।
– হুম।লং হ্যান্ডসাম দুইটাই।
– ভালো।তুই থাক আমি গেলাম।ঠান্ডা লাগতেছে।
– আরে শোন।

সিফাত দাঁড়ালো না। সোজা রুমে এসে দরজা আটকে নিলো। কেন যেন এই মুহূর্তে কিচ্ছু ভাললাগছে না।ঘুমাতে পারতে হালকা লাগতো।আফসোস চোখে ঘুমও নেই। রাত প্রায় দশটা বাজে। বাসার সবাই ডিনারের জন্য ডায়নিং রুমে বসে আছে।কিন্তু সিফাতের দেখা নেই।শাহানাজ বেগম কয়েকবার সিফাতকে ডাকতে এসেছেন।প্রতিবার জবাব এসেছে “আমার খিদে নেই।পরে খাবো।” অবশেষে ফাহিমা এসে দরজা নক করলো। সিফাত এবার রেগেমেগে দরজা খুলে বললো “কয়বার বলছি আমি খাবো না! ওহ্ তুই।কি হইছে বল।” ফাহিমা মুখ মলিন করে বললো “সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।খাবি চল।” সিফাত অন্যদিকে তাকিয়ে বললো “তোরা খেয়ে নে।আমি পরে খাবো।” ফামিহা কোন কথা না শুনে সিফাতের কান টেনে সোজা ডায়নিং রুমে নিয়ে গেলো। এতে সিফাতের বাবা মা দাদু সবাই অবাক। সিফাত ফাহিমার হাত থেকে কান ছাড়িয়ে বললো “আমি খাবো না ব্যাস।”

সিফাতের বাবা গম্ভীর সুরে বললেন “কেন কি হইছে?” সিফাত মাথা নিচু করে বললো “বিকালে বাহিরে গিয়ে অনেক কিছু খেয়ে আসছি।পেট ভরা।” সিফাতের দাদু হেসে বললেন “অল্প কয়টা খেয়ে নে দাদুভাই।” সিফাত নিজের কথায় অটুট থেকে বললো “না।খাওয়ার জন্য এরকম জোর করছো কেন?” mসিফাতের মা বললেন “কারণ তুই আজ পর্যন্ত রাতে না খেয়ে ঘুমাস নাই।” ফাহিমা শাহানাজ বেগমের উদ্দেশ্য বললো “খালামনি তুমি একটা উপকার করবা?” শাহানাজ বেগম হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করলেন “কি মামনী?” “আমার জন্য যেই ছেলে দেখছে তুমি সেই ছেলের বাসায় বিয়ের জন্য না করে দাও?” “কেন মামনী?ছেলে তো দেখতে শুনতে সবদিক থেকে ভালো।” ফামিহা সিফাতের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললো “হইছে থামো।একজনের পুড়তেছে।তুমি না করে দিতে পারবা কি না সেটা বলো?”

শাহানাজ বেগম অবাক হয়ে বললেন “তোমার আব্বুর সাথে কথা বলে বিয়ে ভেঙে দেওয়া যাবে।কিন্তু ব্যাপার কি?”
“পরে বলবো।এখন তোমার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করো, সে খাবে কি না।” শাহানাজ বেগম সিফাতের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন “খেতে বস।” সিফাত চুপচাপ খেতে বসে গেলো। এদিকে বাসার সবাই হতভম্ব।কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না।তবে আন্দাজ করতে পারছে সিফাত এবং ফাহিমার মধ্যে ঝামেলা চলছে। ভোর বেলা ফাহিমা সিফাতের রুমে উপস্থি। সিফাত তখনও ঘুমিয়ে। ঘুমের ঘোরে ছেলেটার মুখে উদ্ভুত মায়া ভেসে উঠেছে।ফাহিমা মুগ্ধ হয়ে সিফাতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চুল ধরে টেনে তুললো। সিফাত কোনভাবে চোখ খুলে বললো “জ্বালাচ্ছিস কেন?” ফাহিমা হেসে বললো “আমার ইচ্ছা হইছে তাই।”

– যা ঘুমাইতে দে।
– উঁহু।
– প্লিজ!
– আব্বু ফোন দিছিলো। সিফাত লাফ দিয়ে উঠে বললো “তারপর?” ফাহিমা অন্যদিকে তাকিয়ে বললো “তুই ঘুমা।পরে বলবো।”

– সমস্যা নাই বল।
– তোর তো প্রচুর ঘুম পাইছে।
– ঘুম চলে গেছে।
– তাও ঘুমা।
– ধুর, তোর আব্বু কি বলছে সেটা বল।
– কি আর বলবে?খালামনির সাথে কথা বললো।খালামনি বলছে ছেলে পছন্দ হয় নাই।তাছাড়া এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া কি দরকার?ব্লা ব্লা আরও অনেক কিছু।

– তারপর?
– তারপর জানিনা।খালামনি বেলকনিতে চলে গেছিলো।
– শেষ?
– না।খালামনির সাথে কথা বলার পর আমার সাথে কথা বলছে।
– তুই কি বললি?
– যা বলার বলছি।
– আমি তোর সাথে সব শেয়ার করি না?তাহলে তুই এরকম করছিস কেন?
– হি হি হি, আব্বুরে বলছি খালামনির একটা হনুমান আছে।হনুমানটা আমার লাগবে।
– তোর আব্বু কি বলছে?
– সময় হলে হনুমানটার গলায় ঝুলিয়ে দিবে।
– সত্যি?
– হুম।

সিফাত মুহূর্তে খুশিতে আন্তহারা হয়ে গেলো।নিজের আবেগ ধরে রাখতে না পেরে ফাহিমাকে জড়িয়ে ধরলো।
ফাহিমা নির্বাক।এরকম কিছু আশা করেনি। “এই কি করছিস?” সিফাত কোন কিছু পাত্তা না দিয়ে বললো “তুই চুপ থাকতো।অনেকদিন পর শান্তি লাগছে।” ফাহিমাও সিফাতের ঘোরে হারিয়ে গিয়ে চুপিচুপি বললো “সারাজীবন এভাবে কাছে রাখবি কিন্তু।” সিফাত চোখ বন্ধকরে বললো “এর চাইতেও বেশি কাছে রাখবো।আপাতত চুপ থাক।আমাকে একটু ঘুমাতে দে।” ফাহিমা বুঝতে পারছে না কি করবে? উঠতেও মন চাচ্ছে না।অপরদিকে বাসার কেউ চলে আসলে কেলেংকারী ঘটে যাবে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত