আবারও সেই তুমি

আবারও সেই তুমি

আজকের বিকালটা খুব সুন্দর তাইনা? রুপার কথায় হিমু কিছু বলে না।একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবারও আকাশের দিকে তাকায় হিমু। রুপার সাথে হিমুর পরিচয় ছয় মাসের।হিমুদের উপর তলায় থাকে রুপার পরিবার। আজই এসেছে ওরা।প্রাইভেট পড়ে বাড়ি আসছিলো হিমু। হিমু সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে আর রুপা নিচে নামছে। হিমু একবার ওকে দেখে আবার উঠতে লাগলো। ওদিকে মেয়েটা হিমুর দিকে তাকিয়েই আছে।

কে কাকে দেখে কে অবাক বেশি হয়েছে এখনও বুঝতে পারছেনা।হিমু বেশি অবাক নাকি রুপাও। ঠিক ছয় মাস আগে এমন ভাবেই দেখা হয়েছিল ওর সাথে হিমু। একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলো রুপাদের মাদরাসায়। কালো বোরকার সাথে সাদা হিজাব পড়া মেয়েটার দিক থেকে চোখ সড়াতে পারেনি সেদিন হিমু। ৩ ঘন্টা অনুষ্ঠানে মাঝখানে ১৫ মিনিটের বিরতি ছাড়া সারাক্ষণ চোখ রেখেছিলো মেয়েটার দিকে। নামটাও সেদিন জানতে পারে হিমু। যখন কুরআন তেলাওয়াত করতে ওকে ডাকা হলো। রুপা। হুম রুপা দেখতেও নামের মতোই সুন্দর। সেদিন থেকেই রুপা হিমুর মন জুড়ে বসবাস শুরু করে। যা এখনও হিমুর মনে রয়ে গেছে। বন্ধুদের নিয়ে যেতো ওদের মাদরাসায়। ওকে ফলো করতো। ওকে দেখার জন্য সারাদিন দাড়িয়ে থাকতো। রুপা যে কিছু বুঝতো না তা না। ও সবই বুঝতো।

একদিন হিমু রুপাকে দেখতে যায়। কিন্তু বুঝতে পারিনা ওখানে যাবার পর মনটাই ভেঙ্গে যাবে।লেকের পারে বসে ছিলো হিমু। দেখে রুপাও আসছে। রুপা একা না সাথে একটা ছেলেও। বেশ জোরে হেসে হেসে কথা বলছে। হিমু আর একটু দাঁড়ায়নি চলে আসে। এরপর আরো দুই দিন রুপাকে দেখেছে ওই ছেলেটার সাথে। হিমু এরপর আর কখনও যায়নি রুপার সামনে।হিমু ঠিক করে চলে যাবে গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথায়। এসএসসি পরিক্ষা দিয়ে চলে আসে ঢাকায়। এখানেই থাকছে হিমু ৫ মাস ধরে। অবশ্য ভর্তি হয়েছে ওদের ওখানেই। এখান থেকে কোচিং করে হিমু।কিন্তু এতদিনেও ভুলতে পারেনি রুপাকে। মনটা যে ও নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু যখন ওই ছেলেটার সাথে দেখলো তখনই হিমুর মনটা ভেঙ্গেগেলো।

এখানে আসার পর একবারও গ্রামে যায়নি হিমু৷ সিম চেঞ্জ করে ফেলেছে। সবার থেকে আলাদা। বাড়ির বসাই শুধু নম্বরটা জানে।।হিমু চায়নি কখন কারো সাথে কথা বলে মায়া বাড়াতে। কখনও রুপার খবরও নেয়নি। ও হয়তো ভালোই আছে।ভালো তো থাকারই কথা। প্রতিদিন বিকালে সাদে উঠে একা একা দাঁড়িয়ে থাকি। রুপার একটা ছবি তুলেছিলো লুকিয়ে । সেটা দেখে। মাঝে মাঝে এত কান্না আসে তখন আর কিছুই ভালো লাগেনা। মনে চায় ছুটে চলে যায় রুপার কাছে।

প্রতিদিনের মতো আজও সাদে উঠে গান শুনছিলো হিমু। মনটাও খুব খারাপ হিমুর। শেষ পর্যন্ত রুপা আবারও হিমুর কাছাকাছি। ওর থেকে দূরে থাকার জন্য আসা আর ওরা এখন এখানে। কি করবে হিমু? তবে রুপাকে দেখে হিমুর সুবিধার মনে হয়নি। সেই মায়া মায়া চেহারাটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। শরীরটাও শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি। এইগুলো ভাবছিলো হিমু ঠিক তখনই রুপা কথাটি বললো,

-আজকের বিকালটা খুব সুন্দর তাইনা? হিমু যখন কিছু বললো না তখন রুপাই বললো,

-এই ছেলে কি সমস্যা তোর? মহান হয়েছিস?

রুপার কথায় হিমু ওর দিকে তাকিয়ে বেশ অবাকই হয়েছে। একবারে তুই। মুখ দিয়ে রাগ উতলে পড়ছে। সে কি রাগী চেহারা। হিমুকে বলতে না দিয়ে রুপা আবারও শুরু করলো,

-কি ভাবো নিজেকে? একটাবারও ভেবেছো কারো কথা। আর কাউকে কিছু না বলে কেন চলে আসলে? একটা বার বলে তো আসতে পারতে।

-আমার যে কিছুই করার ছিলনা।
-তুমি জানো আমি কত খুঁজেছি তোমায়। কোথাও পায়নি। সেদিন তোমার বন্ধু এসে কাগজটা দিয়ে গেলো। পড়ে দেখি লেখা, সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। রুপাকে অনেক ভালোবাসি। আমি পারছিনা ওকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে। তাই চলে যাচ্ছি।তুমি জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসতাম। কিন্তু আমি তো চাইতাম তুমি আমাকে বলো। কিন্তু তুমি তো বললেই না। একটাবার বলে দেখতে।

-আসলে তা না সেদিন হিমুকে আর কিছু বলতে দিলো না রুপা।

-এই এখনও আমাকে আগের মতো ভালোবাসো? হিমুরও কি হলো জানিনা। হাটু গেছে বসে পড়লো রুপার সামনে।

– তুমি কি আমার বাবুদের আম্মু হবে? হবে কি আমার সকাল বেলার সূর্য? যাকে দেখে ঘুম থেকে উঠবো আমি। তুমি কি হবে আমার বিকালে লেকের পাড় দিয়ে হাটার সঙ্গী? কথা দিলাম কখনও তোমার হাত ছাড়বোনা। তুমি কি হবে আমার কোলবালিশ? যাকে ছাড়া একটা রাতও থাকা অসম্ভব। খুব ভালোবাসি রুপা তোমাকে।

-হুম হবো। তোমার সবকিছু হবো আমি সব।এই অপেক্ষায় তো ছিলাম

ভালোবাসা নিয়ে হেটে চলেছে দুজনে। অজানা এই শহরে। নতুন এক ভালোবাসা নিয়ে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত