আমাদের খুনসুটি

আমাদের খুনসুটি

শ্বশুর আব্বা মাথা ন্যাড়া করে ফেসবুকে ছবি আপলোড দিয়েছে। ক্যাপশন দিয়েছ..’আই এম মাথা ন্যাড়া।’ এমন ছবি আর ক্যাপশন দেখে পাক্কা ১০ মিনিট তব্দা খেয়ে ছিলাম। কি মন্তব্য করব বুঝতে পারছিনা। শ্বশুর আব্বার মাথা কি গেছে নাকি। হঠাৎ এমন পিক কেন দিলো। আব্বার পোস্টে হুরহুর করে হাহা রিয়াক্ট আর কমেন্ট পরতে লাগলো। আমি কমেন্ট চেক করতে গিয়ে তাজ্জব বনে গেলাম। ছোট ভাই সাইফ কমেন্ট করেছে ‘নায়েস তালোই এরকম আরো অনেক ছবি চাই, আরো অনুপ্রাণিত হতে চাই।’ শ্বশুর আব্বা সাইফের কমেন্টে লাভ রিয়াক্ট দিয়েছে। আর রিপ্লে করেছে ‘ভালোবাসা রইলো পুতুরা। তোমরা পাশে আছো বিধায় আমার পথ চলা সহজ হয়েছে।’ আমি হাসব নাকি কাঁদব ঠিক বুঝতে পারছিনা। এদিকে হাহা রিয়াক্টের পরিমান বাড়তেছে। কমেন্ট গুলো দেখে রীতিমতো অজ্ঞান হওয়ার মতন অবস্থা। কমেন্ট গুলো এরকম….

*এইডা জোস আছিলো তালোই।
*তালোইর মাথা ন্যাড়া, আমগো ঘরের ভাঙছে ব্যারা।
*সহমত তালোই।
*এই পোস্টে আমি ভং ধরে থাকব।
*তালোইর মাথা লাইটিং করে।
*সেরা তালোই, এগিয়ে যান।

কমেন্ট গুলো এরকমতো আছেই। কিন্তু আরো অবাক হলাম আমার খালাতো ভাইর কমেন্ট দেখে। খালাতো ভাই কমেন্ট করেছে….

“বহুদিন পর মাথা ন্যাড়া করছে আমার তালোই, দেখতে হ্যান্ডসাম, হিরো, লাগছে তারে ভালোই। এই ন্যাড়া মাথা আমার গর্ব বিঃদ্রঃ এই পোস্টে কমেন্ট করা, মালয়েশিয়া, ইরাক, সিঙ্গাপুর, আর্জেন্টিনা, কানাডার নির্যাতিত মেয়েরা এড মি। আমি তোমাদের সুপারম্যান।” খালোতো ভাইর কমেন্ট দেখে পুরাই শিহরিত। শ্বশুরআব্বার এমন বোকামি মার্কা ছবি আপলোড দেয়াতে নিজেই ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। মানইজ্জত আর রাখলনা। কি আর করার ডিপ্রেশন কমাতে সবার কমেন্টে হাহা রিয়াক্ট দিলাম। শেষে নিজেও কমেন্ট করলাম…’এমন ছবি আপলোড দেওয়ার জন্য আপনার জন্য রয়েছে কেয়া কসমেটিকস্ এর পক্ষ থেকে একটা লাইফবয় তোয়ালে।’ ডাটা অফ করে অফিসের কাজের মনোযোগ দিলাম। কিছুক্ষণ পরই ফোনটা বেঁজে উঠলো। বউ ফোন করেছে। রিসিভ করতেই হুংকার দিয়ে বলল….

–এসব কি শুরু করছো তুমি হু?
-কি করলাম?
–কি করছো মানে? বোঝনা কি করছো?
-আজব আমি কি করলাম?
–আব্বার ছবিতে ওসব কোন ধরণের কমেন্ট?
-ভালো কমেন্ট, দেখছই তো।
–ভালো? তুই আমাকে ভালো শেখাস? আব্বা নাহয় ফেসবুক সম্পর্কে জানেনা তাই একটা ছবি আপলোড দিয়েছে তাই বলে সবাই মজা নিবি।

-রাগ করো কেন? আর সবাই মজা নিছি বলতে?
–কেন তুমি সবাইকে বলোনাই উল্টাপাল্টা কমেন্ট করতে?
-আজব আমি কেন এটা বলব?
–তাহলে নায়েস তালোই, জোস তালোই, সেরা তালোই এসব কমেন্ট কে শিখিয়েছে? এইসব তোমার কুটনামি।
-হায় আল্লাহ বিশ্বাস করো বউ আমি কাউকে কিচ্ছু শেখাইনি।
–সবাই যে বলল রুবেল ভাই এমন কমেন্ট করতে বলেছে।
-ওরা আমাকে ফাঁসাচ্ছে। প্লিজ বউ…
–ওরা নাহয় মিথ্যে বলবে কিন্তু তুমি নিজে কেন অমন কমেন্ট করছো?
-আরে সবার দেখাদেখি করছি, ওয়েট ডিলিট করছি।
–লাগবেনা তোর ডিলিট করা।

বলেই বউ ফোন কেঁটে দিলো। আমি আহাম্মক হয়ে বসে রইলাম। আজকে খবর আছে আমার। কেনযে সবার দেখাদেখি অমন কমেন্ট করলাম। হাজার হলে শ্বশুর তো। কমেন্ট ডিলিট করতে যাব সেখানে বউ রিপ্লে করেছে, ‘স্ক্রিনশট রেখেদিলাম।’ আর ডিলিট করে লাভ কি!? কি করব বুঝতে পারছিনা। সন্ধ্যায় ভয়েভয়ে বাসায় ঢুকলাম। দরজা খুলে দিলো মেয়ে টুম্পা। বললাম….

–তোমার মা কই?
-মা রেগে আছে।
–কেন রাগ করছে।
-তোমায় কুপাবে।

বলেই মেয়ে চলে গেলো। আমি ভয়ে চুপসে গেলাম। দেখি বউ আনমনে টিভি দেখছি। আমি কাছে গেলাম। বললাম….

–সরি বউ।
-….(কথা নেই)

আবার সরি বলতেই বউ ঘুরে তাকালো। আমি ব্যাঙের মতন এক লাফে সরে আসলাম। বুকে থুতু দিয়ে বললাম…..

–এমনে তাকাও কেন?
-আমার ইচ্ছে।
–সরি এইযে কানে ধরলাম আর হবেনা।
-মিম কে?
–কোন মিম? (অবাক হয়ে)

তারপর জান্নাত তার ফোনটা এগিয়ে দিলো। আমি দেখার চেষ্টা করলাম কি। যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিলামনা। জান্নাতের সাথে খালাতো ভাইরচ্যাটিং। জান্নাত বলেছে….

–তুমি অমন কমেন্ট করেছো কেন?
-ভাবি আসলে আমি করতে চাইনি, রুবেল ভাইশিখিয়েছে।
–কিইইইই? তোমার ভাই শিখিয়েছে? আজকে আসুক বাসায় ও।

-শুধু কি তাই? ভাইয়া মিম নামের একজন অফিস কলিগের সাথে রোজ কফি খায়, ঘুরতে যায়। তারপর আর কোন কথা নেই। অতঃপর খালাতো ভাই নিজের দোস আমার ঘাড়ে চাপালো, আবার উল্টা বাঁশও দিয়ে গেলো। আমি অসহায় দৃষ্টিতে জান্নাতের দিকে তাকালাম। বললাম..’এসব মিথ্যে, বিশ্বাস নাহলে আমার ফেসবুক চেক করো। কথা বললেতো চ্যাটিং থাকবেই।’জান্নাত ইশারায় আমায় চুপ থাকতে বলল। আমি চুপ করে রইলাম। রাতে ভাত খাওয়ার সময় বউ মাংস দিয়ে খেলো আর আমায় আলুভর্তা দিলো। খাওয়া শেষের দিকে মাংস দিয়ে বলল….’খেয়ে নাও, আরো বেশি করে ভাত নাও।’

আমি বেশি করে ভাত নিয়ে খেয়ে শুয়ে পরলাম। সকালে টুম্পার হাসির শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম থেকে উঠব খেয়াল করলাম বালিশের সাথে মাথা খসখসে লাগছে। মাথায় হাত দিয়েই মাগো বলে চিৎকার দিলাম। আমার মাথা ন্যাড়া! কেমনে কি!? আয়নার সামনে গিয়ে দেখি পুরাই জাম্বুর মতন লাগছে। মেয়ে বিছানায় থাকা ফোন হাতে দিলো। আমি ফেসবুকে গিয়ে দেখি বউ আমার ন্যাড়া মাথার ছবি আপলোড দিয়েছে। সাথে ক্যাপশন দিয়েছে আমার জামাই ন্যাড়া, দেখবেন ক্যারা ক্যারা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত