প্রেমিক

প্রেমিক

আজকে হঠাৎই আমার গার্লফ্রেন্ডের বুকের দিকে আমার চোখ পড়লো। দেখতে একদম ঝাক্কাস। মনে হচ্ছিলো একটু ছুয়ে দেখি। রিকশায় বসে ঘুরাঘুরির সময় হাতের কনুই দিয়ে তো স্পর্শও করেছিলাম। তাছাড়া অন্যদিনের থেকে আজ একটু গা ঘেষেই বসেছিলাম। অবশ্য সে কোনো প্রকার আপত্তি করেনি। অন্যসব দিনের মতোই তার ভাবাকৃতি ছিল। রিকশা থেকে নেমে হাঁটার সময় তার নিতম্বের দিকে চোখ পড়লে আমি নিজেকে ঠিক রাখতেই পারছিলাম না। পরে পেছন থেকে তার কোমড়ে হাত দিয়ে নিজেকে একটু কন্ট্রোল করে হাঁটতে থাকলাম। অবশ্য তার কোমড়ে হাত দেওয়াতেও সে কোনো আপত্তি করেনি। বরং আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়েছিল মাত্র।

নির্জন স্থান বুঝে আমি হঠাৎই তার সম্মুখে গিয়ে তার মুখটা আমার মুখের কাছে এনে চুমু দিতে গিয়েছিলাম। তাতেও সে কোনো আপত্তি করেনি। পরে কী ভেবে যেন ছেড়ে দিলাম। কিন্তু আমার একটা নেশা রয়েই গেল তার প্রতি। আমি মনে মনে দিন গুনতে থাকলাম, “কবে, কিভাবে, কোথায় তাকে একান্তে পেতে পারি। বুধবার সন্ধ্যেয় সৌরভকে কল করে বললাম, দোস্ত আমার গার্লফ্রেন্ড না দিন দিন একটা ডাসা মাল হয়ে উঠছে। কিছু একটা করতে হবে আমার। এখন তুই একটা ব্যবস্থা করে দে। সৌরভ বললো, মাল ডাসা হলে খেয়ে ফেল। দেরি করিস না। পরে দেখবি অন্যকেউ খেয়ে ফেলেছে। আমি বললাম, সেজন্যই তোকে বলছি একটা ব্যবস্থা করে দে।

– চিন্তা নিস না। সৌমিকের বাসা খালি পড়ে আছে। ওকে বলে মেনেজ করে দিচ্ছি।
– কালকের মধ্যে দিতে পারবি?
– আগে ওর সাথে কথা বলে দেখি। ওর একটা রুমমেট এখনো বাসায় রয়ে গেছে। সে চলে গেলে কালকের মধ্যেই হয়ে যাবে।
– একটু তাড়াতাড়ি কর দোস্ত। আমার তো আর তর সইছে না। তাকে খেতে না পারলে এ জীবন বৃথা হয়ে যাবে।
– ওকে ম্যান, একটু ওয়েট কর।

রাত দশটা নাগাদ সৌরভ কল করে জানালো সৌমিকের যেই রুমমেটটা ছিলো। সে বাড়ি চলে গিয়েছে। আগামীকাল আমি সারাদিন আমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ফূর্তি করতে পারবো। এখন শুধু অনন্যাকে অর্থ্যাৎ আমার গার্লফ্রেন্ডকে যেমন তেমন করে বাসায় নিতে হবে। পরের কাজটুকু সে পরে দেখা যাবে।

সৌরভের সাথে কথা বলা শেষ করে অনন্যাকে কল করলাম। সে প্রথমবারেই রিসিভ করলো। বোধ হয় আমার কলের অপেক্ষাতেই ছিল। আমি বললাম, অনু কালকে ফ্রী আছো তুমি? সে বললো, না গো। তবে বিকেলে ফ্রী থাকবো। আমি বললাম, বিকেলে হলেই চলবে। সে বললো, কেন? কোথাও ঘুরতে যাবে নাকি?

– হুম, সেরকমই বলতে পারো।
– ওকে।
– হ্যাঁ, তাহলে কাল বিকেলে সংসদের সামনে চলে এসো। আমি ওখান থেকে তোমাকে রিসিভ করবো।

মেয়েটাকে পটাতে আমার সময় লেগেছে দুই মাস। সৌরভকে অবশ্য বলেছিলাম হেল্প করতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সে তার নিজের গার্লফ্রেন্ডদের নিয়েই কূল পায় না। আবার আমাকে করবে হেল্প! অগত্যা নিজেই কষ্টে মষ্টে পটালাম। পটানোর কালে তার কলেজের সামনে, রাস্তার পাশে রোজই দাঁড়িয়ে থাকতাম। মাঝে মাঝে হুটহাট করে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে তাকে দিতাম। আর এভাবেই সে পটে গেল।

পরদিন বিকেলে অনন্যাকে নিয়ে মোহাম্মাদপুরে সৌমিকের বাসায় গিয়ে উঠলাম। আমি, সৌরভ আর সৌমিক একই সঙ্গে লেখাপড়া করি। সৌমিক আমাকে বাসায় রেখে বাইরে বের হয়ে গেল। অনন্যা এর মাঝে একবার জিজ্ঞেসও করেছে, শ্রাবণ এখানে কী করবো আমরা? আমি ভাসা ভাসা উত্তর দিয়েছি। পরে তাকে কাছে বসিয়ে তার নিতম্ব স্পর্শ করে কোমড়ে হাত রাখতেই সে কেঁপে উঠে বললো, এসব কী করছো শ্রাবণ?

আমি তার কথার জবাবে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম, ভাল লাগছে না? সে কোনো জবাব দিল না। আমি তার কোমড় থেকে পেটে হাত দিতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তার ঘন ঘন নিঃশ্বাস আমার কাধে এসে লাগছে। আমি তার ঘারে আলতো করে চুমু দিতেই সে আবারো কেঁপে উঠলো। ধীরে ধীরে তার ওষ্ঠদ্বয় আমার ওষ্ঠদ্বয়ে নিমজ্জিত হলো। আমার সদ্য জাগা বাসনা পূরণ করতে আমি তার বুকে হাত দিলাম। প্রথম প্রথম সে বাধা দিলেও পরে আর না করেনি। দু’জনে গভীর প্রেমলীলায় মেতে উঠলাম।

এখন আমাদের দেখা হলেই সাক্ষাতের শুরুতে ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করে সাক্ষাত হয়। বাসায় ফেরার সময় গভীর চুম্বনে একে অপরকে ভরিয়ে দিয়ে বিদায় জানাই। দিন যেতে থাকলো আমার অারো বেশ কয়েকটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক হলো। তাদের সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর অনন্যাকে কেমন যেন পুরাতন পুরাতন লাগতো। তার মধ্যে কোনো নতুনত্ব খুঁজে পেতাম। একই ঠোঁট, একই বুক, একই নিতম্ব আর ভাল লাগে না।

এর মাঝে একদিন অনন্যা আমাকে কল করে বললো সে প্রেগন্যান্ট। আমি প্রথমে হাসি ঠাট্টা করেই উড়িয়ে দিলাম। পরে সে বললো, শ্রাবণ আমি সিরিয়াস। সেদিন চেকাপ করিয়েছি আমি। তুমি কিছু একটা করো। আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও। আমি হেসে হেসেই বললাম, আরে এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তুমি বাচ্চা নষ্ট করে ফেলো। লাইফটা আগে ইনজয় করি। তারপর না হয় বিয়ে করবো। সে সিক্ত কণ্ঠে বললো, শ্রাবণ এটা বলতে পারলে তুমি? তুমি না বলেছিলে, তুমি আমায় বিয়ে করবে? আমি বললাম, বলেছিলাম যেহেতু। সেহেতু নিশ্চয়ই করবো। তুমি আপাতত বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলো।

– আমি পারবো না।
– না পারলে ফোন রাখো এখন।

সে আরো কিছু বলার আগেই আমি কল কেটে দিলাম। বিকেলে নিহানার সাথে ডেটে যাবো। এখন অনন্যার এসব চিন্তা টেনশন মাথায় আনলে চলবে না। তবুও কেন যেন তার কান্নাভেজা কণ্ঠটা বুকে এসে লাগছে। যত হোক প্রথম প্রেম তো। এখন অবশ্য আমার প্রেমিকার অভাব নেই।

সৌরভকে কল করলাম। তাকে বললাম, দোস্ত আমার গার্লফ্রেন্ড তো প্রেগন্যান্ট। কী করবো এখন? সে বললো, আরে এ নতুন কী? আমার তো অহরহ এমন হচ্ছে। তুই তাকে এবোরশন করে ফেলতে বল। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি বললাম, তাকে তো এবোরশনের কথা বললাম। সে এবোরশন করতে চায় না। কী করবো এখন?

– সে করতে না চাইলে তাকে এইসেই বুঝিয়ে করাতে বাধ্য কর। নয়তো তার পিছু ছেড়ে দে।
– হুম, তাই করতে হবে।
– কী করবি?
– তার পিছু ছেড়ে দেবো।
– গুড বয়। আরে প্রেম করে খেলাধুলা করলে না প্রেমিক হওয়া যায়!
– আজ বিকেলে নিহানার সাথে ডেট আছে।
– এগিয়ে যা। হেল্প লাগলে বলবি।
– এ আর বলতে হয় নাকি?

অনন্যা মেয়েটা বারবার জ্বালাচ্ছে। রাত নেই, দিন নেই, সবসময় বলছে বিয়ে করো বিয়ে করো। আজকে তো সে ফাইনালি আমাকে বলেই ফেললো, তুমি বিয়ে করবে কিনা বলো? আমি প্রথমে আমতা আমতা করে পরে তার জুড়াজুড়িতে একদম না করে দিয়েছি। মেয়েটা কান্না করছিল ভীষণ। অবশ্য তার এই কান্না আর এখন বুকে লাগে না আমার।

রাত দশটা নাগাদ আমার ফোনে একটা মেসেজ এলো, “আমি জানি, তুমি এখন হাজারো অনন্যাতে আসক্ত। ভাল থেকো শ্রাবণ। আর কখনো তোমাকে বিয়ের জন্য চাপ দেবো না। কখনো আর বলবো না, শ্রাবণ আমি প্রেগন্যান্ট। ভাল থেকো। আর নিজের খেয়াল রেখো।”

তার এই মেসেজটা পেয়ে আমার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। সে খারাপ কিছু করতে যাচ্ছে না তো? আমি তার ফোনে কল করলাম। নাম্বার বন্ধ। আমার কপাল ঘেমে যাচ্ছে। এখন বাসা থেকে বের হতেও পারছি না। সৌরভকে কল করে বিষয়টা বললাম। সে বললো, আরে বেটা টেনশন নিস না। এসব ইমোশনাল ব্লাকমেইল করবেই মেয়েরা। এটা নিয়ে মাথা ঘামালে লাইফে ইনজয় করতে পারবি না।

পরদিন সকালে সৌমিক কল করে বললো, সৌরভের বোন আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যার আগে একটা ছোট্ট চিরকুট রেখে গেছে। তাতে লেখা আছে, “আমি তোমাকে সত্যই ভালবেসেছিলাম শ্রাবণ। এজন্য তুমি আমাকে যেভাবে চেয়েছো, ঠিক সেভাবেই পেয়েছো। যাইহোক, তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। ভাল থেকো প্রিয়। ইতি তোমার অনু।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত