:-দোস ওই দিকে দেখ?(শিপন)
আমি পিছনের দিকে তাঁকাতেই বড় ধরনের একটা ক্রাশ খেলাম।মনে হচ্ছে কোন পরী মাটিতে নেমে এসেছে।মেয়েটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
:-কিরে ওভাবে কী দেখিস।(শিপন)
শিপনের হাতের ধাক্কায় বাস্তবে ফিরলাম।
:-দোস মেয়েটা কেরে?(আমি)
:-ওর নাম নীলিমা।আমাদের বাসার পরেই ওদের বাসা।এবার ইন্টারে ভর্তি হয়েছে।
:-দোস প্লিজ এই মাইয়ার সাথে আমার প্রেম করাইয়া দে।প্লিজ দোস না করিস না।
:- আমি পারবো না।আমার আব্বু যদি জানতে পারে তাহলে আমার পিঠের ছাল তুলে নেবে।
:-যা লাগবে না।কোনদিন তোর কাছে কিছু চাইনি।একটা জিনিস চাইলাম তাও দিলিনা।
:-রাগ করিস কেনো।আচ্ছা যা করাইয়া দিবো।এখন ক্লাসে চল।
:-চল
ক্লাসে আজ একটুও মন বসছেনা।শুধু মেয়েটার মায়বি মুখটা ভেষে ওঠছে।
আমি হুসাইন।অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছি।আর শিপন আমার জানের দোস।আবার বাঁশ দিতেও ওস্তাদ।শিপন আর আমার বাসা পাশাপাশি গ্রামে।
ক্লাস শেষে শিপনকে নিয়ে মেয়েটার ক্লাসরুমের সামনে গেলাম মেয়েটাকে দেখতে।গিয়ে দেখি ওদের ক্লাস হচ্ছে তাই বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পর মেয়েটা ক্লাসরুম থেকে বের হলো।আমি মেয়েটার দিকে আবার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। মেয়েটার হাঁসিতে যেনো মুক্তা ঝড়ে পড়ছে।আমি প্রথম দেখাতেই মেয়েটার উপর সেইরকম প্রেমে পড়ে গেছি সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছি।এরপর থেকে প্রতিদিন মেয়েটার পিছু নেওয়া শুরু করলাম।মাঝে মাঝে মেয়েটার সাথে চোখাচোখিও হতো।প্রতিদিন বিকেলে মেয়েটাকে দেখার জন্য শিপনদের বাসায় যেতাম।মেয়েটাও মনে হয় বুঝতে পেরেছিলো আমি ওকে ভালোবাসি তাই মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো।
সেদিন ছিলো শুক্রবার।কলেজ ছুটি তাই সকাল সকাল শিপনদের বাড়িতে গেলাম।শিপনদের বাসার সবার সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক।গিয়ে দেখি ও ঘুমোচ্ছে।হঠাৎ ওর টেবিলের উপর আমার চোখ পড়লো।দেখি একটা ডায়রি।ও ডায়রিটে কী লেখে সেটা দেখার জন্য ডায়রিটা হাতে নিলাম।ডায়রির প্রথম পাতাতে লেখা”” নিলীমা +শিপন””।এটা দেখে বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলাম।পরের পেজ উল্টাতেই বুঝলাম আমি যাকে পছন্দ করি শিপনও তাকে পছন্দ করে।ডায়রিটা নিয়ে শিপনের রুম থেকে বের হয়ে আসলাম।আন্টির কাছে বললাম শিপন ঘুম থেকে ওঠলে বলবেন আমি এসেছিলাম।আবার পরে আসবো।কথাটা বলেই বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে ডায়রিটা খুললাম।ডায়রির সবগুলো পাতা একএক করে পড়লাম।সব পড়া শেষে বুঝলাম শিপন নীলিমাকে ইন্টার ফাষ্ট ইয়ার থেকে ভালোবাসে। একবার নীলিমাকে প্রপোজ করেছিলো কিন্তু নীলিমা অপমান করে।তারপরেও শিপন ওকেই ভালোবাসে।আমি এখন কী করবো বুঝতে পারছিনা।একদিকে আমার ভালোবাসা অন্যদিকে বন্ধুত্ব।যেকোন একটা আমাকে ছাড়তে হবে।শুধুমাএ একটা মেয়ের জন্য আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করবোনা।তাই ভাবলাম নীলিমার সাথে শিপনের রিলেশন করিয়ে দিবো।বন্ধুর জন্য যদি এতটুকু না করতে পারি তবে কিসের বন্ধু আমি।বিকেলে আবার শিপনের বাসায় গেলাম।লুকিয়ে ওর টেবিলের উপর ডায়রিটা রেখে দিলাম।তারপর শিপনের সাথে কিছুসময় আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
রাতে কিছুতেই ঘুম আসছিলো না।শুধু নীলিমার মায়াবি মুখটা চোখের সামনে ভেষে ওঠছিলো।এইকয়দিনে আমিও নীলিমাকে বড্ডবেশি ভালোবেসে ফেলেছি।সারারাত ঘুম হলোনা।পরেরদিন শিপনকে না বলে কলেজে চলে গেলাম।কলেজে গিয়ে দেখি নীলিমা ওর বান্ধবীদের সাথে বসে গল্প করছে।আমি ওকে ডাক দিলাম।
:-তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো?(আমি)
:-জ্বি বলুন(নীলিমা)
:-এখানে নয় একটু ওদিকে চলো।
:-চলুন।
নীলিমা আমার পিছু পিছু আসলো।ওর বান্ধবীদের থেকে একটু দুরে এসে দাঁড়ালাম।
:-তোমাকে আমি এখন যে কথাগুলো বলবো সেগুলো মন দিয়ে শুনবে।(আমি)
:-জ্বি বলুন।(নীলিমা)
:-আমি এতদিন তোমার পিছনে ঘুরেছি।তুমি আমাকে ভালোবাসো কীনা জানিনা তবে আমার থেকে অন্য একজন তোমাকে অনেক ভালোবাসে।সে হচ্ছে আমার বন্ধু শিপন।
:-কিন্তু আমিতো ওকে ভালোবাসিনা।
:-প্লিজ আগে আমার কথাগুলো শুনো তারপর কথা বলবে।শিপন তোমাকে একবার প্রপোজ করেছিলো এটা আমাকে ও কোনদিন বলেনি।কালকে ওর ডায়রি পড়ে জানলাম।তুমি ওকে অপমান করার পরেও ও তোমাকে ভালোবাসে।ও সবসময় আমাকে বলতো একটা মেয়েকে ও ভালোবাসে কিন্তু কোনদিন তার নাম কিংবা পিক আমাকে দেখায়নি। সেদিন যখন আমি তোমাকে দেখেই পছন্দ করে ফেলি।ও তোমার সাথে আমার রিলেশন করিয়ে দিতে রাজি হয়।কেনো রিলেশন করিয়ে দিতে চেয়েছিলো জানো??আমি ওর অনেক উপকার করেছি সেটার প্রতিদান দিতে চেয়েছিলো।নিজের ভালোবাসাটাকে আমার জন্য কুরবানি দিতে চেয়েছিলো।তোমরা বড়লোক আর ওরা গরীব এই পার্থক্যর জন্য তুমি ওকে অপমান করেছিলে।কিন্তু ও যে তোমাকে কতটুকু ভালোবাসে সেটার গভীরতা তুমি জানোনা।ও যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন ওর বাবা মারা যায়।ওদের পরিবারে নেমে আসে দুঃখ কষ্ট।ওর পড়াশুনা তখন প্রায় বাদ হয়ে গিয়েছিলো তখন আমি আমার আব্বুকে বলে ওর পড়াশুনার ব্যবস্থা করি।তখন থেকে আমাদের বন্ধুত্ব আরো মজবুত হয়।আমিও কোনদিন বুঝতে পারিনি ও এতটা উদার মনের মানুষ।
এতটুকু বলেই আমি থামলাম।নীলিমার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখে পানি টলমল করছে।আমি বুঝতে পারলাম ও ওর ভুলটা বুঝতে পেয়েছে।আমি আবার বললাম
:-শিপনকে ফোন করে আসতে বলবো?
ও মাথা নাড়ালো।আমি শিপনকে ফোন দিলাম।
:-দোস কই তুই।(আমি)
:-এইতো বাড়িতে।তোর ফোন অফ ছিলো কেনো?(শিপন)
:-এমনি।তুই কলেজে আয়।আমি কলেজে চলে এসেছি।
:-আচ্ছা তুই থাক আমি আসছি।
ফোনটা রেখে নীলিমাকে আমি বললাম
:-শিপন খুব ভালো ছেলে ওকে কোনদিন কষ্ট দিয়ো না।ওর বাবাকে হারিয়ে এমনিতেই বড় একটা আঘাত পেয়েছে।আবার যদি বড় ধরনের কোন কষ্ট পায় তাহলে হয়তো মরেই যাবে।
নীলিমা কিছু বলছেনা দেখে আমি চুপ হয়ে গেলাম।নীলিমাকে বললাম তুমি তোমার বান্ধবীদের ওখানে গিয়ে বসো শিপন আসলে আমি তোমায় ডাক দিবো।নীলিমা চলে গেলো।আমিও ক্লাসরুমে গিয়ে বসলাম। ৪০ মিনিট পর শিপন আসলো।এসেই আমাকে বললো
:-দোস নীলিমা দেখলাম বাইরের বসে আছে।(শিপন)
আমি ঠাস করে ওর গালে একটা থাপ্পর মারলাম।ও এমন কিছু আশা করেনি।আমি কিছু না বলে বাইরে বেরিয়ে এসে নীলিমাকে ডেকে নিয়ে আবার ক্লাসরুমে এলাম।গিয়ে দেখি শিপন কাঁদছে।আজ আমাদের ক্লাস ১১:৩০ এ তাই এখনো কেউ আসেনি।আমি আর নীলিমা শিপনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
:-নিজেকে খুব মহৎ ভাবিস তাইনা।কী ভেবেছিলি নিজের ভালোবাসাটাকে আমার জন্য কুরবানি দিবি?ইচ্ছা করছে তোকে আরো দুইটা থাপ্পর দিই।কালকে যদি তোর ডায়রি না পড়তাম তাহলেতো এসবের কিছুই জানতে পারতাম না।(আমি)
শিপন কিছু বলছে নিচের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি নীলিমার হাত শিপনের হাতে দিয়ে বললাম
:-নে তোর ভালোবাসাকে তোর হাতে তুলে দিলাম।যত্ন করে রাখিস।আর আমার জন্য একটা ভালো মেয়ে খুঁজে দিস।আর আমাদের বন্ধুত্ব মরার আগ পর্যন্ত অটল থাকবে।
কথাগুলো বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম।শিপন পিছন থেকে অনেকবার ডাকলো কিন্তু আমি শুনেও না শুনার ভান করে চলে আসলাম। এখন খুব কান্না পাচ্ছে। চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।জানি কোনদিন নীলিমাকে ভুলতে পারবোনা। ভালো থাকুক ওরা।আমি নাহয় আড়াল থেকেই ভালোবাসবো।
……………………………………………(সমাপ্ত)……………………………….