হালকা খুঁনসুটি

হালকা খুঁনসুটি

আমি আর তোমার ছেলের সাথে থাকতে পারবো না! ” কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ঢুকে এই কথা বলে মায়ের সামনে গিয়ে ধপ করে বসে পড়লাম। শাশুড়ি হলেও উনার সাথে আমার সম্পর্ক মা মেয়ের চেয়েও গভীর। ” তোমার ছেলে মনে হয় আবার উল্টা পাল্টা খেয়ে এসেছে, না হয় কিছু করে এসেছে! ” বাবা বলে উঠলো। লজ্জা পেয়ে গেলাম, কারণ এ সময়ে বাবা থাকার কথা নয় তাই আলুথালু বেশেই মায়ের ঘরে গিয়েছিলাম। বাবাকে দেখে চোখ মুছে কাপড় একটু গোছ করে নিলাম।

– কেন রে মা? কি হইছে আবার!
– আমি তোমার ছেলের সাথে থাকতে পারবো না! আর ওর ঘরেও আর যাবো না।
– বলবি তো হইছে কি?
– সে অন্য মেয়ের সাথে ইটিস পিটিস করে।
– সে কি? এ কি কথা!

– বলেছিলাম না, এই ছেলে তোমার নাম ডুবাবে!
– তুমি চুপ করো, আমার স্পর্শ ওমন ছেলেই না। ও স্নেহাকে অনেক ভালবাসে, আমি ওর মা। আমি বুঝি ওর মন।
– সে মা আমি জানি না। আমি আজ থেকে গেস্ট রুমে থাকবো না হয় অন্য কোথাও।
– আহা এমন বলে না মা। আমি দেখছি তো।
– কি আর দেখবে। অন্য মেয়েকে মনে ধরেছে তার, আমি তো পুরানো হয়ে গেছি।
– আচ্ছা ওরে ডাকি, ডেকে শুনি কি ব্যাপার।
– ডেকে আর কি হবে। হুহ!

( স্পর্শকে ডাক দেয় মা, মাতৃভক্ত ছেলের মত সুরসুর করে চলে আসে সে। কানে ফোন ছিল, কারো সাথে কথা বলছিলো। আমি ওকে ঢুকতে দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।)

– হ্যাঁ আমি একটু পরেই ফোন দিচ্ছি। আরে মায়ের সাথে কথা বলেই ব্যাক করবো। প্রমিস।
– এই তুই ফোন রাখ তো।
– হ্যাঁ মা বলো।
– কি শুনি এগুলো?
– কি শুনলে।

– তুই নাকি অন্য কোন মেয়ের সাথে কি করিস?
– মানে, আর কি তেমন না
– তেমন না তো কেমন? মা ওকে ভাল করে জিজ্ঞাসা করো।
– কোন মেয়ের সাথে কি করিস? ঘরে বউ থাকতে অন্য মেয়ে। ছি: ছি: লোকে কি বলবে।
– লোকের কথায় কে কান দেয় মা। আজকাল অনেক ছেলেরই বউ আর গার্লফ্রেন্ড দুইটা থাকে। আর দুইটা বউও থাকে।

– তো তুই কি তেমন হইতে চাস?
– আমি তো স্নেহারে নিষেধ করি নি যে সে বয়ফ্রেন্ড বানাতে পারবে না।
– এসব কি অলুক্ষণে কথা স্পর্শ

( আমার চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইলেও কাঁদতে পারি নি। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রাখি। এই মানুষটাকে ভালবাসি আমি। এই মানুষটা আমার স্বামী। নিরবে জল ফেলতে থাকি।)

– তা কোন সে পোড়ামুখী যার জন্য তুই বৌমাকে কষ্ট দিচ্ছিস।
– আমি ওকে কষ্ট পেতে বলেছি নাকি?
– মাইর চিনোস? মেরে তোর হাড় গুড়ো করে দিব।
– হ তা তো দিবাই। তোমরা সবাই স্নেহার পক্ষে, স্নেহা যা বলবে সবাই সিরিয়াস নিয়ে নিবা!
– তো এখন তুই একটা জিএফ নিয়ে ঘুরতে চাস?
– ঘুরতেই পারি, সমস্যা কি? ( এবার আর কান্না নিয়ন্ত্রণ হয় না। জোরে জোরেই ফুপিয়ে কাঁদতে থাকি)
– আরে মা কাঁদিস না। আমরা আছি তো।
– আর আমি ভেসে আসছি? আমি না আনলে ওরে আনতে পারতে বউ করে।
– তুই যা তো, কোন পোড়ামুখী পছন্দ করেছিস তার কাছে যা।
– আরে আমি স্নেহাকে মজা করে বলেছি সুইটি তোমার থেকে বেশি কিউট।

প্রেম করতে হেব্বি মজা হবে। আর জানোই তো সুইটি কে? ( মা বাবা দুজনেই হো হো করে হেসে দেন। আসলে সুইটি ছিল আমার মাসতুতো ননদের মেয়ে। যা আমি জানতাম না। তাই ভেবেছিলাম অন্য মেয়ের সাথে সে প্রেম করে। বুক থেকে পাথর নামে যেন)

– এই নিয়ে এই কান্ড ?
– তোমাদের বউমা তো মনে করে আমি অন্য খানে প্রেম করে বেড়াই (আমার পাশে গায়ে হাত দিয়ে বসে)
– ধরবা না আমায় একদম!
– বৌমা বলতেছে তোর সাথে থাকবে না, তোর ঘরে থাকবে না। গেস্ট রুমে গিয়ে থাকবে।
– তাই নাকি? কোন সমস্যা নেই।
– থাকবো না তো। শুধু শুধু কষ্ট দেয়।
– আর তুমি বুঝি দেও না। তুমি খুব ভাল।
– হু ভাল। তাই তোমার সাথে তোমার ঘরে আর থাকবো না।

– ওকে। থাকতে হবে না আমার ঘরে ( আমাকে বাবা মায়ের সামনেই আড়কোলে তুলে নেয়)
– এ কি হচ্ছে। ছাড়ো ছাড়ো, বাবা মা আছেন।
– তাতে আমার বয়েই গেলো।
– ছাড়োওওও।
– বেশি নড়লে পড়ে যাবে। তাই চুপচাপ থাকো। মা আসছি এবার!
– আমি তোমার ঘরে থাকবো না
– সমস্যা নেই, আমরা গেস্ট রুমেই থাকবো।
– ধুর…..
(তারপর সে আমাকে কোলে নিয়ে বাবা মায়ের ঘর থেকে গেস্ট রুমেই নিয়ে গেলো)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত