প্রাক্তন

প্রাক্তন

আজ পাঁচ বছর পর আমি আমার প্রাক্তনের সাথে দেখা করতে যাবো।এই এত বছরে সময় পরিবতর্নের সাথে সাথে আমদের দুজনের জীবনেও অনেক পরিবতর্ন এসেছে।আমাদের জীবনে নতুন মানুষের আগমন ঘটেছে।
কিন্তু আজ এতদিন পর আমি আমার প্রাক্তনের সাথে দেখা করবো,এই কথাটা অকপটে স্বীকার করতে আমার বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই। সেই পাঁচ বছর আগের মত আজও আমি দেখা করার জন্য আবিদের আগে এসে উপস্থিত।সবসময়ের মত আবিদ আজও দেরি করে এসেছে। আজ আমি আবিদের পছন্দের গাড়ো নীল রঙ্গের একটা শাড়ি পড়ে এসেছি।আজ পাঁচ বছর পর আবিদ আমার সামনে। দুজন দুজনকে দেখে চুপ করে দাড়িয়ে আছি,,কি বলবো বুঝতে পারছি না। নিরবতা ভেঙ্গে আমিই আবিদকে জিজ্ঞাসা করলাম,,, কেমন আছো?

আবিদ:ভালো আছি।তুমি কেমন আছো অনা?

অনা:আমিও অনেক ভালো আছি।আর ভালো থাকবো না কেনো বলো,আজ এত বছর পর আমার পাগলামিকে প্রশ্রয় দিয়ে তুমি আমার সাথে দেখা করতে এসেছো। আমার মত এত ভাগ্যবতী কয়জন আছে বলো যার কিনা এত বছর পরও তার ভালোবাসার মানুষের সাথে দেখা করার সৌভাগ্য মিলে।

আবিদ: নিশ্চুপ!

অনা:আজকে তোমার সাথে দেখা না করলে তো জানতেই পারতাম না,সেই পিচ্চি আবিদ এখন কত বড় হয়ে গেছে,সে এখন সংসার করছে,তার ছোটো একটা মেয়েও আছে। কিন্তু আবিদ তুমি সেই আগের মতই আছো,তোমাকে হাসলে সেই আগের মত এখনো এত সুন্দর লাগে,শুধু তুমি আগের থেকে একটু কালো হয়ে গেছো,চেহারাটা কেমন জানি ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।

আবিদ:বয়স তো আর কম হলো না,চেহারা তো ফ্যাকাসে হয়ে যাবে।তবে অনা তুমি তো সেই আগের মত এখনো অনেক কথা বলো।

অনা:সময়ের স্রোতে তুমি পরিবতর্ন হয়ে গেছো আবিদ,কিন্তু আমি সেই আগের আমিই আছি। মনে পড়ে আবিদ, আগে তুমি চুপ করে থাকতে আর আমি সারাক্ষণ তোমার সামনে বকবক করতাম। তুমি আমার বেশি কথা বলা অনেক পছন্দ করতে।তুমি বলতে আমার কথাগুলো শুনতে নাকি তোমার অনেক ভালোলাগে। তাই আমি আগের মত এখনো অনেক কথা বলি।কিন্তু জানো তোমার মত এখনো কাউকে পেলাম না,যে কিনা বসে বসে আবার বেশি বেশি কথা গুলো শুনবে। আবিদ তোমার মেয়ে কেমন আছে??

আবিদ:ভালো আছে। তুমি এখনো বিয়ে কেনো করো নি অনা?তোমার পাগলামি কি এখনো যায় নি!

অনা: আমার সাথে পাঁচ বছর সম্পর্ক থাকা অবস্থায় ও তুমি বুঝতে পারো নি,আমার এই পাগলামি এই জন্মে কখোনো শেষ হবে না।

আবিদ: অনা এখন তো তোমার বিয়ে করা উচিত,অন্তত তোমার মা,বাবার জন্য হলেও।

অনা: আবিদ তুমি এতদিনেও বুঝতে পারো নি,যদি আমি বিয়ে করার হতাম,তাহলে অনেক আগেই করতাম।

আবিদ: আগে তো তুমি বলতে আমি বিয়ে করার পর নাকি তুমি বিয়ে করবে।

অনা: আগে আমি ভাবতাম তুমি বিয়ে করার পর হয়তো তোমার প্রতি অনেক ঘৃণা জন্মাবে,তখন আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো।।কিন্তু আবিদ আমার ধারানটা সম্পূর্ণ ভুল ছিলো।কারণ আর যাই হউক ভালোবাসার মানুষকে কখোনো ঘৃণা করা যায় না।

আবিদ: তোমার ফেমেলির সবাইকে শুধু শুধু কেনো কষ্ট দিচ্ছো?

অনা: আমার ফেমেলিকে যা কষ্ট দেওয়ার তখনই দিয়েছি,যখন তুমি আমার হাত ছেড়ে অন্য কারো কাছে যাওয়ার পরেও দিনের পর দিন তোমার জন্য কেঁদেছি, তুমি ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করেছা।যদি আমি নিজের ফেমেলির কথা ভাবতাম তাহলে তো তাদের কথা শুনতাম। আর এখন আমার ফেমেলির সবাই আমার পাগলামি দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।এখন আমার কোনো পাগলামি ওনাদের গায়ে লাগে না।

আবিদ: শুধু শুধু এসব পাগলামি করে তুমি কি পেয়েছো?

অনা: আবিদ তুমি এই পাগলামির মানে কখোনো বুঝবে না।যদি বুঝতে তাহলে স্বার্থপরের মত সেদিন নিজের ভালো থাকার জন্য আমার হাত ছেড়ে চলে যেতে না।

আবিদ: অনা তুমি তো অনেক ভালো করেই জানতে তোমাকে আমার পরিবারের কেউ কখোনো মানবে না।ওনাদের সবাইকে তো আমি অনেক বুঝিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয় নি।

অনা: আবিদ তোমাকে আমার করে না পাওয়ার জন্য তোমাকে আমি কোনোদিন কোনো দোষ দেই নি,আর আজও দিবো না। কিন্তু তুমি যদি আরেকটু ধৈর্য ধরে চেষ্টা করতে তাহলে হয়তো আজকে আমার একসাথে থাকতে পারতাম।

আবিদ: তোমার সেই এককথা।

শোনো অনা তুমি যদি আমার জায়গায় থাকতে তাহলে বুঝতে পারতে আমি কি পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তখন বিয়েটা করেছি। তোমাকে তো আমি ভালোবাসতাম, তাই আমিও চেয়েছি তোমাকে নিজের করে পেতে,কিন্তু তুমি আমার ভাগ্যে ছিলে না।

অনা: ভালো কিছু পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার ভাগ্যটা তো সবসময় খারাপ,এ আর নতুন কি।

আচ্ছা আবিদ তুমি কি এখনো আমাকে ভালোবাসো?

আবিদ: পুরোনো কিছু নিয়ে ভাবার সময় আমার এখন নেই।

অনা:তার মানে তুমি এখন আর আমাকে ভালোবাসো না।কিন্তু আগে তো খুব বলতে তুমি অন্য কোথাও বিয়ে করলেও নাকি আমার প্রতি ভালোবাসা একটু কমবে না।

আবিদ: অনা তোমার প্রতি আমার মনে যে জায়গাটা আছে, ওটা সারাজীবনই থাকবে।

অনা: ছলছল চোখ নিয়ে,মনে পড়ে আবিদ তুমি একটা মেয়ে বাবুর নাম ঠিক করেছিলে, বলেছিলে বিয়ের পর আমাদের মেয়ে হলে এই নামটা রাখবে। আমি ভেবেছি আমি যদি বিয়ে করি আর আমার যদি মেয়ে হয় তাহলে তোমার দেওয়া নামটা রাখবো,কিন্তু বিয়ে করি করি বলে আর বিয়ে করা হয়ে উঠছে না।

আবিদ: নিশ্চুপ!!!

অনা: আচ্ছা আবিদ সেই আগের মত এখন হুট করে আমাকে একবার ভালোবাসি বলার জন্য আমাদের বাড়ির সামনে এসে পাগলামি করতে তোমার মন চায় না।

আবিদ: এসব পাগলামি করা অনেক আগে ছেড়ে দিয়েছি। আমাকে যেতে হবে অনা। অফিস থেকে কল এসেছে। জরুরি একটা কাজের জন্য,আমাকে এখনি যেতে হবে।

অনা: আর কিছুক্ষণ থাকো…আবিদ!!তোমাকে আরেকটু ভালো করে দেখি।
কত বছর পর আজকে তোমাকে দেখতে পেলাম,একটু মন ভরে তোমাকে দেখতে দাও! এরকম হাজারো কথা আবিদকে বলার জন্য জমা হয়ে আছে অনার মনে,কিন্তু আজকে চাইলেও অনা এসব কথা আবিদকে বলতে পারবে না।

আবিদ: ভালো থেকো অনা।আর পারলে তোমার পাগলামি গুলো বন্ধ করো,দেখবে অনেক ভালো থাকবে।

অনার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে, আবিদ চলে যাচ্ছে, অনা ঠিকমত দেখতেও পারছে না।খুব ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে আবিদকে জড়িয়ে ধরতে, আর একবার ভালোবাসি বলতে,,কিন্তু সেই অধিকার তো আজ অনার নেই।আজ অনা চাইলেও আবিদকে আটকে রাখতে পারবে না। আবিদ এখনো বুঝলো না,, আবিদকে নিজের করে পাওয়ার জন্য অনার পাগলামিটা এ জন্মে কখোনো শেষ হবে না…..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত