দুপুর ২টা।গার্ডেনের ঠিক মাঝখানে একটা চেয়ার পেতে তাতে বসে খুব মনোযোগ সহকারে রবীন্দ্রনাথের “নৌকাডুবি ” উপন্যাসটা পড়ছিলাম। উপন্যাসের পাতায় কমলা হঠাৎ ডাক্তারবাবুর সামনে পড়ায় লজ্জায় লাল।ঠিক এই সময় পেছন থেকে কেউ একজন খুব জোড়ে চাটি মারলো মাথায়। আমি অনেকটা উল্টে পড়ি পড়ি অবস্থা।।
অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের পজিশন ঠিক করে বসে পাশে তাকাতেই দেখি ঠোঁটে বিশ্বজয়ী হাসি ঝুলিয়ে আমার পাশের চেয়ার বসছেন শুভ্র ভাইয়া।উনাকে দেখামাত্র চোখে রাগের আগুন জ্বালিয়ে উনার দিকে তাকালাম।।উনি আমার দিকে ঝুঁকে এসে ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠলেন- কি রে?এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন?খুব সুন্দর লাগছে বুঝি আমায়? লাগারই কথা!!জানিস?বাসে তিনটা মেয়ে কনটিনিউয়াসলি পুরো ৫ ঘন্টা আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো।আই থিংক দে আর ক্রাশড অন মি।বাট আই এম সারপ্রাইজড দেট মেয়েগুলো এতোসময় ঘাড় বেকিয়ে তাকিয়ে থাকার পরও তাদের ঘার একদম ফিট।।কিভাবে সম্ভব?
এই? তোর ঘাড়টা এদিকে আনতো দেখি স্পেশাল কিছু লাগাস নাকি তোরা ঘাড়ে আমি কিছু না বলে বিরক্তি নিয়ে উনার দিকে তাকালাম।।যেনো উনি আস্ত একটা বিরক্তির ডিব্বা।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় তাতে উনার কোনো যায়ই আসছে না।।উনি চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন- মেয়েগুলো আহাম্মকের চূড়ান্ত বুঝলি?উইথ আউট ব্রাশ করা একটা ছেলের প্রেমে পড়ে গেলো?স্ট্রেঞ্জ!!তাহলে বুঝতে পারছিস?আমি ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে গাড়িতে উঠলো মেয়েরা পুরাই ফিট মারবে।
তুমি চিটাগং টু ময়মনসিংহ চলে আসলে ব্রাশ না করেই??(অবাক হয়ে) হ্যা তো?রাতে ঘুমই হচ্ছিলো না।বুঝতে পারছিলাম আমায় এখানে আসতে হবে..হবেই হবে,,নয়তো ঘুম হবে না।।তাই চারটার দিকে বেরিয়ে পড়লাম হাঁটতে…হাঁটতে হাটঁতে বাসস্ট্যান্ড।।ভাবলাম আমি বাসের সামনে বাস আমার সামনে শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থেকে কি লাভ??তাই ঠুস করে উঠে গেলাম বাসে।।বাসে তো আর টুথপেষ্ট রাখে না..সো ব্রাশ করার প্রশ্নই আসে না।
আমি এবার ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম।লাল টি-শার্ট,, এ্যাশ রঙের একটা থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট,,বামহাতে কালো রঙের ব্রেসলেট টাইপ কিছু একটা,, চুলগুলো অগোছালো।।দেখতে মাশাআল্লাহ সুন্দরই লাগছে পুরাই পাবনা ফেরত পাগল।এই অবস্থায় কেউ চিটাগং থেকে ময়মনসিংহ চলে আসতে পারে জানা ছিলো না।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম কি এতো ইম্পোর্টেট কাজ ছিলো যে তোমায় আসতেই হলো?? সেটা তোকে কেন বলবো?তোকে বলে আমার লাভ??নিজেকে কি তুই প্রেসিডেন্ট মনে করিস নাকি??এনিওয়ে?শুনলাম হাত ফাত কেটে বিদিগিস্তা অবস্থা করেছিস।কই দেখি কোন হাত?
তোমাকে দেখাবো কেন?তোমাকে দেখালে আমার লাভ?নিজেকে কি ডাক্তার মনে করো নাকি?এনিওয়ে?শুনলাম পাগল হয়ে গেছো,,পাবনায় ছিট টিট বুক করিয়েছো নাকি?? আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিস।এতো কথা কই পাস??কাহিনী কি?প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি। জানিস তো পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে,,আর মেয়েদের কথা ফুটে প্রেমিকেরই তরে।। ফাতরা লজিক।আর আমি প্রেম করলেই তোমার শশুড়ের কি শুনি? আমার শশুড়েরই তো সব রে।তার মেয়ে প্রেমে পড়ছে… তার জামাইবাবাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।।এটা কি চিন্তার বিষয় না??
মানে?(কনফিউজড হয়ে) মানে সহজ।তুই প্রেমে পড়লে ডেবিট ক্রেডিট সবদিক দিয়েই আমার শশুড়েরই লস।। বুঝলি?বুঝিস নি? আমি মাথা নাড়িয়ে না জানালাম।।যার অর্থ আমি বুঝি নি। আমার প্রেমে পড়ার সাথে উনার শশুড়ের লাভ ক্ষতির সম্পর্ক কি হতে পারে?? আজিব!! উনি আমার ব্যান্ডেজ করা হাতটা আলতো ভাবে হাতে তুলে নিলেন,,পকেট থেকে বেলিফুলের মালার গোছা বের করে,, একের পর এক পেঁচাতে লাগলেন হাতে।।রহস্যময়ী হাসি দিয়ে ধীর গলায় বলে উঠলেন-
ধর তুই পালিয়ে টালিয়ে গেলি তাহলে লস কার হবে?আলটিমেটলি আমার শশুড়ের।।তার আদরের মেয়ে,, আমার মতো সুদর্শন,,ভদ্র,,ইন্টেলিজেন্ট একটা জামাই রেখে কোন আহাম্মকের সাথে ভেগে যাচ্ছে বিষয়টা কেমন না??মানসম্মান তো ডাহা পানিতে,,তাও আবার ড্রেনের পানি।।
কথাটা বলে আমার নাকটা টেনে দিয়ে হেঁটে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলেন।আমি আহাম্মকের মতো বসে আছি।। আমি ভাগলে উনার শশুরের মানসম্মান কেন পানিতে থাকবে??উনি কি ইন্ডাইরেক্টলি আমার বাবাকে শশুড় ডেকে গেলেন??অদ্ভুত!!!