আসসালামু… ভাইয়া!
অলাকুম…।
ভাইয়া, bromazipam 3mg আছে? দেন, এক পাতা।
কিরে এতো পাওয়ার বেশি ঘুমের ঔষুধ নিয়ে কি করবি? গার্ল ফ্রেন্ড এর বিয়ে নাকি?
আপনি ও না…। নানীর জন্য বেশি কথা না বলে দেন…
কবে আসলি?
এই তো কালকে, ৭ দিনের ছুটি।
।।
সুমন( ডাক্তার) ছেলেটা কে?
সুমনঃ আরে স্যার, চিন্তে পারলেন না? এটা আরিয়ান, ওমর চাচার ছেলে।
স্যারঃ কি করে ছেলেটা? অনেক দিন থেকে দেখিনি তো, এজন্য। বড় ভাইয়ের সাথে ভালো সম্পর্ক ছেলেটার।
সুমনঃ ৩-৪ মাস হল, চাকুরী হয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে। এখন মনে হয় ঢাকাতে আছে।
স্যারঃ বিয়ে করেছে ছেলেটা?
সুমনঃ না করে নি। তবে সে দিন চাচা বলছিল ভালো মেয়ে পেলে দিয়ে দিবে।
স্যারঃ ওর বাবা কখন আসে?
সুমনঃ বিকেলে আপনি পাবেন।
স্যারঃ ঠিক আছে।
।।
পরের দিন রাতে আমি বসে আছি, অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে, কারেন্ট ও নাই, মাঝে মাঝে কারেন্ট চলে যাওয়া ভালো।
আব্বু আম্মু আসলো…
আমিঃ কি খবর তোমরাও চলে আসলা যে,
আব্বুঃ তোর সাথে একটা কথা ছিল,
আমিঃ কি বলো?
আব্বুঃ কাল তোর সালাম, চাচার ছোট ভাই তার মেয়ে সামিয়ার সাথে তোর বিয়ের প্রস্তাব আমাকে দিয়েছে।
আমিঃ হ্যাঁ, আমি জানি, আমাকে কালকেই ফোন করে সুমন ভাই বলে দিয়েছে। আমি জানতে চাইছিলাম যে তুমি কি বলো?
আব্বুঃ আমার মত না।
আমিঃ কেন না?
আব্বুঃ মেয়ে অনেক ভালো সেটা আমি জানি, তবে ৭ বছর আগের কথা ভুলি নি, আমি আগেও একবার মানা করেছিলাম, আর আজকেও করছি।
আমিঃ আমি রাজী।
আব্বুঃ তুই কি সব ভুলে গেছিস? তুই নিশ্চিত যে ঐ বাড়ীর মেয়ে এনে তুই সুখে থাকবি?
আমিঃ সেটা আল্লাহ্ জানে।
আব্বুঃ কিন্তু জেনে শুনে আবার ঐ ভুল করতে যাচ্ছিস?
আমিঃ জানি না, তুমি হ্যাঁ বলে দাও।
আব্বুঃ ঠিক আছে, তোর জীবন তুই যা ভালো মনে করিস।
।।
পরের দিন আমি দেখতে গিয়েই সামিয়া কে বিয়ে করে নিয়ে আসি, আর ২ টা কারণ ছিল, ১ যে আমার ছুটি কম, আর ২ একটু পরেই বুঝবেন।
।।
রাতে ঘরে ঢুকতেই সামিয়া আমাকে সালাম দিলো।
আমি কিছুটা বিরক্তির স্বরেই বললাম, থাক আর নাটক করতে হবে না।।
সামিয়া আমার দিকে চেয়ে আছে…।
সামিয়াঃ নাটক মানে?
আমিঃ এই যে এমন ভাব দেখাচ্ছ জেন তুমি কিছু বুঝো না। আর তোমার বাবা, আসলে তোমাদের পরিবার ভালোই পারে।
এক তোমার চাচা, তারপর তোমার বাবা…
।।
সামিয়াঃ আমি কিন্তু কিছু বুঝছি না। আপনি কি বলতে চাইছেন?
আমিঃ অতো বুঝানোর সময় নাই, লাইট অফ করবো, ঘুমাবো।
সামিয়াঃ আপনি কি ক্লান্ত?
আমিঃ কেন?
সামিয়াঃ ঘুমাবেন যে বললেন?
আমিঃ তো তোমার সাথে কি গল্প করবো?
সামিয়াঃ আপনি এভাবে রেগে কথা বলছেন কেন? আজকে আমাদের বাসর রাত।
আমিঃ so what! go to hell!
সামিয়াঃ আমি আপনার বউ, আমাকে যদি আপনার না পছন্দ কেন আমাকে বিয়ে করলেন?
আমিঃ কিছু পুরনো হিসাব বাকি ছিল, সে গুলো শোধ করলাম, না হলে কি যোগ্যতা আছে তোমার, আমাকে বিয়ে করার?
বাবা মা তো রাজী না, তাদের কথা দরকার হলে রাস্তার মেয়ের সাথে বিয়ে দিবে তবু তোমাদের বাড়ীর মেয়ে নিবে না। কিন্তু আমি জোর করে করেছি,
কারণ কিছু কাজ অসমাপ্ত আছে, সে গুলো সমাপ্ত করতে হতো। ভয় পেয়ো না, আমি তোমাকে তালাক দিবো না, না তোমার কখনো গায়ে হাত দিবো।
তোমাকে প্রতিদিন এতটুকু কষ্ট দিবো যে না পারবে তুমি হাসতে না পারবে তুমি কাঁদতে।
না কাউকে বলতে পারবা না সহ্য করতে…।
কষ্ট কি জিনিস আজ তুমি বুঝবা? তুমি জানো? এই ঘরে আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি, অনেক কিছুর সাক্ষী এই ঘর! আজ পর্যন্ত সুধু আমার সাক্ষী হয়েছে, আজ থেকে তোমার।
দেখি তুমি কতো সহ্য করতে পারো, আর আমি তোমাকে কতো কষ্ট ফিরিয়ে দিতে পারি।
সামিয়া আর কিছু বলল না… সে চুপচাপ কাঁদতে লাগলো
সকালে উঠে আমি এমন ভাব দেখালাম যেন রাতে কিছু হয় নি, ৩ মাস চাকুরী করে অভিনয় করা অনেক শিখে গেছি। অবশ্য আমাদের ট্রেনিং অভিনয় করা… কিভাবে
অভিনয় করে মানুষের মনের খবর নিতে হবে, আজ কোন কাজ নাই, সারা দিন বাইরে ঘুরেই কাটিয়ে দিলাম, কাল আমাদের বউ-ভাত! রাতে আম্মু খাবারের জন্য ডাক দিলো, আমি খেতে গেলাম, আজ রান্না টা যেন অন্য রকম লাগলো, তার ওপর একটু ঝাল হয়েছে, আমি অবশ্য ঝাল সহ্য করতে পারি, কিন্তু আমার কেন জানি মনে হলো এটা আম্মু রান্না করে নি।
আমিঃ মাংস কে রান্না করেছে?
আম্মুঃ কেন কি হয়েছে?
আমিঃ রান্না এতো ঝাল কেন?
আম্মুঃ সামিয়া রান্না করেছে, একটু ঝাল হয়েছে,
বেশি তো না, খেয়ে নে। কাল থেকে ঠিক হয়ে
যাবে।
আমিঃ ধুর! কি যাকে তাকে রান্না করতে দাও,
নিজে রান্না করতে পারো না? আমি এতো ঝাল
খাবো না।
আম্মুঃ তো আমি ডিম করে দিচ্ছি,
আমিঃ দাও।
।।
আমি সুধু ডিম ভাজা দিয়ে ভাত খেলাম, যদিও মাংসের জন্য কষ্ট হলো, অভিনয় করার জন্য খেতে পেলাম না।
।।
রাতে শ্বশুর ফোন দিলো,
আমি সালাম দিলাম।।
শ্বশুরঃ বাবা, কালকে তো আমরা আসবো,
আমিঃ হ্যাঁ, আসেন। কোন সমস্যা নাই।
শ্বশুরঃ সামিয়া কি করছে?
আমিঃএই তো পাশেই, টিভি দেখছে, দিবো?
কথা বলবেন?
শ্বশুরঃ না থাক, তুমি কি করছো?
আমিঃ আমি তেমন কিছু না, কম্পিউটারে একটু
কাজ করছি।
শ্বশুরঃ ঠিক আছে বাবা, ঘুমাও।
আমিঃ জি আচ্ছা, আসসাল্মু,।
।।
দেখলাম সামিয়া আমার দিকে তাকাচ্ছে,
আমিঃ কি হয়েছে?
সামিয়াঃ আমার দোষ কি?
আমিঃ কিসের দোষ?
সামিয়াঃ আমার রান্না আপনার খারাপ লাগতেই
পারে, কিন্তু এভাবে অপমান না করলে কি হতো
না? একটু ঝাল হয়েছে ঠিক আছে, তবে খাওয়া
তো যাচ্ছে। একটু ঝোল কম নিয়ে তো খাওয়া
যেত। আপনি সুধু ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেলেন?
আমিঃ তো কি হয়েছে? আমার ভালো লাগে নি
আমি খায় নি…
সামিয়াঃ তার মানে আপনি ইচ্ছা করেই এইরকম
করেছেন?
আমিঃ হ্যাঁ, অবশ্যই! তুমি এখনও বুজতে পারো
নি, আমি বলি তোমাকে, তোমার রান্নার
থেকেও অনেক ঝাল আমি খেতে পারি, কিন্তু
তোমার হাতের টা খাবো না।
সামিয়াঃ কিন্তু আমার দোষ কি সেটা তো
বলবেন।
আমিঃ প্রয়োজন মনে করি না, এখন বিরক্ত
করো না, ঘুমাবো।
।।
সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে, আম্মুকে বললাম
আম্মু তাড়াতাড়ি নাস্তা বানাও আমাকে একটু
অফিস যেতে হবে, একটু কাজ আছে।
আম্মুঃ তুই কি ঢাকা চলে যাবি নাকি?
আমিঃ না, শহরেই যাবো, একটু কাজ আছে।
আম্মুঃ কিন্তু আজ তোর শ্বশুর যে আসবে,
তোকে আর সামিয়াকে যে নিয়ে যাবে।
আমিঃ সামিয়াকে নিয়ে যাক, আমি পরে চলে
যাবো।
আম্মুঃ যাওয়া কি খুব জরুরী?
আমিঃ আমি একটু দরকারেই যাচ্ছি।
আম্মুঃ ঠিক আছে।
।।
আমি ঘরে এসে রেডি হচ্ছি, দেখলাম সামিয়া
আমার দিকে চেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে?
আমিঃ কি ভাবছো, যে আমি সত্যি কোন কাজে
যাচ্ছি নাকি অভিনয় করছি? আমি অভিনয় করছি,
কাজ একটা আছে তবে সেটা আজ না করলেও
কোন সমস্যা নাই,
আসল কথা আমি তোমাদের বাড়ী যাবো না।
আর কোন প্রশ্ন?
সামিয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে… তার চোখ
দিয়ে পানি বের হচ্ছে।
আমিঃ দিনে কাঁদলে সবাই বুঝে যাবে। রাতে কেঁদো অনেক সময় পাবা। এখন পথ ছাড়ো।
শহরে যাবার আগে আমার এক বন্ধুকে ফোন করলাম, এই এক বন্ধু আছে যাকে যার সাথে আমি কিছুটা ফ্রি সময় পার করি, যদিও এখন দু জনেই ব্যাস্ত।
আমি পৌঁছে সিমেল কে ফোন করলাম, সে বলল আসছি দাঁড়া।
সিমেলঃ পিছন থেকে, কিরে শালা! ভাবী কই?
আমিঃ কিসের ভাবী?
সিমেলঃ শালা, বিয়ে করলি দাওয়াত তো দুরের কথা একবার জানালিও না? বাড়ী চল, মা, মজা দেখাচ্ছে, তার ওপর বলেছি যে তুই ভাবীকে নিয়ে আসবি।
আমিঃ আমি তোকে বলেছি যে আমি সামিয়া কে নিয়ে আসবো?
সিমেলঃ তো কি করতে এসেছেন আপনি?
আমিঃ একটু কাজ আছে, ডিআইজি অফিস যেতে হবে।
সিমেলঃ তো আমি কি করবো?
আমিঃ তুই চল, ১ ঘণ্টার কাজ তারপর ঘুরবো।
সিমেলঃ বাহ, ভালো তো, বিয়ের আগেও আমারা অবলার মতো একা ঘুরতাম, আর এখন বিয়ের পর ও একা ঘুরবো।
আমিঃ এতো বউকে ভালবাসিস তো তোর বউকে ডাক।
সিমেলঃতোর নতুন বউ নিয়ে আসলি না, আর আমি পুরাতন বউ নিয়ে ঘুরবো?
আমিঃ তাই নাকি? দাঁড়াও আজ বলছি, নতুন আর পুরাতনের কথা।
সিমেলঃ ভাই, মাফ চাইলাম, তোর ভাবী কে বলিস না, না হলে আমি শেষ। একবার একজন মজা করে বলেছিল যে আমি নাকি ফোনে একটা মেয়ের সাথে প্রেম করি,
তারপর থেকে প্রতিদিন আমাকে চেক করে। বিয়ে তো করেছিস, এখন ঝামেলা বুঝবি। এখন বুঝবি বউ কি জিনিস?
আমিঃ তুই বুঝ, সামিয়ার সাহস নাই যে আমাকে কোন প্রশ্ন করবে, চেক করা তো অনেক দুরের কথা।
সিমেলঃ আচ্ছা সামিয়া নাকি লামিয়ার চাচাতো বোন? লামিয়াকে দেখলি? কেমন রে মেয়েটা? তোকে কিছু বলে নি? অবশেষে তুই ওদের বাড়ী জামাই হয়েই গেলি?
আমিঃ বাদ দে ওসব কথা,
সিমেলঃ না বল না ভাই, কে বেশি সুন্দর, সামিয়া ভাবী নাকি তোর সেই লামিয়া?
আমিঃ বিয়ের দিন আমি লামিয়াকে দেখিনি। আর আজ শ্বশুর বাড়ী যাবার কথা আমি যায় নি। আর সামিয়াকে আমি এপর্যন্ত ভালো করে দেখিনি।
সিমেলঃ এটা আবার কেমন কথা,? আজ ৩ দিন হচ্ছে তোদের বিয়ে, আর বলছিস বউ দেখিস নি? তুই কি বিয়েতে রাজী ছিলি না?
আমিঃ বাবা- মা ছিল না, কারণ লামিয়ার জন্য তারা ঐ বাড়ীর আর কোন মেয়ে নিতে রাজী না।
সিমেলঃ নিজের জীবনটা নিয়ে এভাবে খেলছিস ? বিয়ে যখন করেছিস, মন থেকে মেনে নিয়ে সংসার কর।
আমিঃ চেষ্টা করবো, তার আগে কিছু কাজ আছে ওগুলো শেষ করি, এখন অফিসে চল।
।।
আমি সিমেল কে নিয়ে অফিস গেলাম, ওখানে একটা মিটিং ছিল ওটা শেষ করে কিছু ফাইল নিয়ে আমি আমার অফিসার এসপি স্যার কে ফোন করলাম,
আমিঃস্যার, আসসাল্মু, কাজ শেষ। ফাইল আমার হাতে।
স্যারঃ তাহলে কি কালকে রাতেই রওনা দিবেন?
আমিঃ স্যার, একটা কথা বলতাম, মানে অনুরোধ করতাম।
স্যারঃ বলেন,
আমিঃ স্যার, আমার আরও ৫ দিন ছুটির প্রয়োজন ছিল।
স্যারঃ কেন, কোন সমস্যা?
আমিঃ না, আসলে স্যার ২ দিন হলো, হটাৎ করেই আমার বিয়ে হয়ে যায়।
স্যারঃ তাই, নাকি? খুব ভালো, তা মিষ্টি কবে খাওয়াবেন?
আমিঃ আসি স্যার তারপর, স্যার আমার ছুটি।
স্যারঃ দেখেন, আরিয়ান সাহেব, আপনি নতুন জয়েন্ট করছেন এর মধ্যে আমি আপনাকে ৫ দিন ছুটি দিয়েছি সুধু এই মিটিং টার জন্য,
আবার ছুটি দিলে আপনার সমস্যা হতে পারে, আচ্ছা একটা কাজ করেন, আপনি চলে আসেন,
এই ফাইল দেখে এটা আবার জমা দিতে হবে তখন না হয় আবার আপনাকে পাঠিয়ে দিবো।
আমিঃ ঠিক আছে স্যার। আসালামু…।
স্যারঃ অলাইকুম…।
।।
সিমেলঃ ছুটি পালি না?
আমিঃ শ্বশুর বাড়ীর আবদার তো? এসপি স্যারের সাথে ভালো সম্পর্ক তাই ৫ দিন ছুটি দিয়েছে।
সিমেলঃ এখন কি করবি?
আমিঃ কি করবো? চাকুরী, স্যার যখন ছাড়বে তখন আসবো।
সিমেলঃ ঠিক আছে এখন আগে বাড়ী চল, দুপুরে খেয়ে তারপর বের হবো।
আমিঃ ঠিক আছে চল।
।।
দুপুরে আমি সিমেল দের বাড়ী গেলাম, ওখানেও সবার এক কথা, বিশেষ করে ভাবী, সামিয়া কোথায়?
আমি বললাম আমি তো কাজে এসেছি এজন্য আনতে পারিনি।
ভাবী বলল, আরিয়ান ভাই, সিমেল জানেন আমাকে বিয়ের পর ৭ দিন কতো ঘুরিয়েছে?
আমিঃ হ্যাঁ, একটু আগে সিমেল বলছিল, নতুন আর পুরাতনের কথা…
ভাবীঃ মানে?
আমিঃ সেটা সিমেল ভালো জানে?
ভাবীঃ এই কথার মানে কি?
সিমেলঃ আহ, শয়তানটার কথা বাধ, দাও তো।
ভাবীঃ না, বলো।
আমিঃ ভাবী, নতুন মানে যখন আপনি নতুন ছিলেন, আর এখন পুরাতন তাই আপনাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে না।
ভাবীঃ কি এতো বড় কথা? আজ আরিয়ান ভাই যাক, রাতে তোমাকে মজা বুঝাচ্ছি।
আমিঃ আমি হাসতে লাগলাম… ভাবী বাদ দেন না…
ভাবীঃ না ভাই, আজ সিমেলর এক দিন কি আমার এক দিন, আজ এর বিচার না হলে আমি আমার বাপের বাড়ী চলে যাবো।
সিমেলঃ এবার খুশী তো আপনি?
আমিঃ আরে এতো ভয় পাস কেন, চল বের হয়।
ভাবীঃ হ্যাঁ, সন্ধার আগেই বাসাই আসবা, আমি বাপের বাড়ী যাবো।
আমিঃ ঠিক আছে ভাবী, পিচ্চি ছেলে টাকে আমি সন্ধার আগে ছেড়ে দিবো।
।।
আমি রাস্তার সামনে এসে হাসতে লাগলাম, বললাম, শালা, আজ থেকে যখন ১০ বছর আগে আসতাম তখন তোর বাপ এই কথা বলতো আজ তোর বউ, ভাই তুই বড় কবে হবি?
সিমেলঃ খুব সুখে আছো তো তার ওপর ভালো বউ পেয়েছো, আমার কষ্ট বুঝবা না।
।।
আমি মনে মনে ভাবলাম, সিমেল হয়তো সত্যি কথা বলছে, তবে সামিয়া তো শান্ত মেয়ে না, যদিও এখন সে শান্ত আছে।
সামিয়া ভালো মেয়ে এটার কোন সন্দেহ নাই, তবে এই কষ্ট তার প্রাপ্য।
আজ যদিতাকে কষ্ট না দেয়, তবে সে ভালোবাসা মূল্য বুঝবে না। না বুঝবে স্বামীর মূল্য।
তাকে বুঝাতে হবে টাকা সুখে রাখে না, না রাখে শান্তিতে।
সুখের থাকার আসল মূলমন্ত্র হলো ভালোবাসা, হলো বিশ্বাস।
একটা সম্পর্ক তখন ই ১০০% সুখের হয় যখন তাদের মাঝে সম্মান থাকে, থাকে সম্পর্কের প্রতি দায়িত্ব।
আর এটা বুঝার এক মাত্র পথ হলো তাকে কষ্ট দেওয়া, তাকে অবহেলা করা।
পরের দিন আমি ঢাকা চলে গেলাম, ১৫ দিন পর হটাৎ আমি ছুটিতে আসি। আমি সামিয়ার সাথে ফোনে কথা বলতাম না।
আম্মু কে বললাম আমি যে আমি সন্ধার মধ্যে বাড়ী আসবো। আম্মু বলল সামিয়া তো তার বাপের বাড়ীতে আছে, তুই তাকে বল যে সে যেন চলে আসে,
নাকি তুই কাল তাকে নিয়ে আসবি?
আমিঃ আমি ব্যাস্ত আছি, তুমি বলে দাও সে যেন চলে আসে।
।।
সন্ধাই আমি বাড়ী গেলাম, যখন বাড়ী যায় তখন আমি সিমেলের সাথে কথা বলছিলাম।
সিমেলঃ দোস্ত মহা বিপদে পড়ে গেছি,
আমিঃ কেন, আবার কি হলো?
সিমেলঃ অফিস থেকে বাড়ী ফিরে এসে দেখি, তোর ভাবী বাড়ীতে নেই।
আমিঃ তারপর?
সিমেলঃ ফোন করলে ধরেও না…
আমিঃ আমি কি তোদের থানা তে বলে দিবো?
সিমেলঃ আরে নাহ,
আমিঃ তাহলে কি করবো বল,
সিমেলঃ কি আর করবি? আমি ভয় পেয়ে শ্বশুর কে ফোন করলাম, উনি বলল, তোর ভাবী নাকি দুপুর থেকেই ওখানে আছে,
আমিঃ ভালো তো, তোমার বউ তোমাকে না জানিয়ে বাপের বাড়ী যাচ্ছে, আজ সেটা আমার বউ হলে বুঝতো, বউকে বাপের বাড়িতেই রেখে দিতাম। কেমন সাহস স্বামীকে না জানিয়ে বাপের বাড়ী যাওয়া।
।।
দেখলাম, পিছন থেকে কে যেন কেশে উঠলো, বুঝলাম সামিয়া পানি খেতে গিয়ে গলায় আঁটকে গেছে, আমি অবশ্য তাকে শোনানোর জন্যই এতো জোরে জোরে বলছিলাম।
আম্মুঃ কিরে কতো ব্যাস্ত তুই? বউয়ের গলাই পানি আঁটকে গেছে আর তুই তাকে সাহায্য করতে যাস না।
আমিঃ বউ মরলে আরেকটা পাওয়া যাবে, কিন্তু এতো ভালো বন্ধু কোথায় পাবো? সবাই তো নিজের স্বার্থে চলে, সিমেলের মতো স্বার্থহীন বন্ধু খুব কম আছে।
আম্মুঃ কথা বার্তা দেখছি অনেক বড় বড় করছো, বউকে এতো অবহেলা করা ঠিক না, তাকে সময় দে। না হলে বউ থাকবে না।
আমিঃ সময়? ওটার-ই তো বড় অভাব, এভাবে মেনে নিলে থাকবে না হলে আমি তো জোর করে ধরে নাই… স্বাধীন দেশে বাস করি, যার যা ইচ্ছা সে সেটা করবে।
।।
রাতে খাবার পর আমি টিভি দেখছি, আজ রান্না টা বুঝতে পারলাম না যে আম্মু করেছে নাকি সামিয়া, তাই আর কিছু বললাম না, অবশ্য রান্না টা খুব ভালো হয়েছে, আমার পছন্দের বিরিয়ানি।
সামিয়া ঘরে আসলো, আমি আড় চোখে তার দিকে তাকালাম,
সে খাটের এক পাশে বসলো।
সামিয়াঃ আমি কি কখনো বলেছি যে আমি কষ্ট পাচ্ছি বা রাগ করে আছি?
আমিঃ আমি তো জিজ্ঞেস করি নি, তাহলে জানবো কিভাবে? আর তুমি রাগ করলেই বা আমার কি? আম্মুর সামনে তো বলেই দিলাম, তোমার যা ইচ্ছা করবা, ভালো লাগলে থাকবা না হলে চলে যাবা?
সামিয়াঃ আপনি কি আমাকে তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছেন?
আমিঃ আমি তো সেটা বলি নি।
সামিয়াঃ আমি যাবো না। আমি যতই কষ্ট দেন না কেন। আচ্ছা আপনি আমাকে অবহেলা করছেন ভালো কথা কিন্তু কার জন্য করছেন?
কারণ আমি তো বিয়ের আগে এমন কোন আমার ক্ষতি করি নি যে সেটার শাস্তি আপনি আমাকে দিবেন। আর আমার বাবা বা চাচা যদি কিছু করে থাকে তবে সেটা তে আমার কি দোষ বলেন।
আমিঃ কথা যখন বের করলা তখন বলি, লামিয়ার বিয়ের কথা মনে আছে?
সামিয়াঃ হ্যাঁ, কিন্তু সেটা তো অনেক আগের কথা।
আমিঃ লামিয়াকে একটা ছেলে ভালোবাসতো, বিয়ের ২ দিন আগে লামিয়ার সাথে সেই ছেলেটার কথা হয়, সাথে তুমিও বলো।
সামিয়াঃ কি জানি হয়তো, অনেক দিন আগের কথা তো,
আমিঃ সে যা করেছিলো তা করেছিলো, আর তুমি বলেছিলা, অতীতকে ভুলে যান। তার একটা ভালো যায়গায় বিয়ে হচ্ছে ঝামেলা বাড়াবেন না।
সামিয়াঃ কি জানি বলেছিলাম মনে হয়, কিন্তু সেই কথার সাথে আপনার কি সম্পর্ক, আর আপনি এতো পুরনো কথা কিভাবে জানলেন?
আমিঃ কারণ সেই ছেলেটা আমি…
সামিয়াঃ কি??????(২০০০ ভোল্টের শক)
আমিঃ অতীতকে খুব সহজেই ভুলে যাওয়া যায় না। এটা তোমাদের মতো লোভী মানুষেরা কখনো বুঝতে পারবে না।
কি দোষ ছিল আমার? সুধু একজন কে মন থেকে ভালোবাসা আমার দোষ? লামিয়া তো আগেই না বলতে পারতো। কিন্তু বলেনি।
আমি কি খারাপ ছেলে ছিলাম, সুধু আমার বাবার অনেক টাকা ছিল না। আমি লামিয়াকে দামী গাড়ীতে ঘুরাতে পারবো না। আর যদি খারাপ ছেলেই হতাম তবে কেন চাকুরীর ৩ মাসের মধ্যে তোমার বাবা বিয়ের প্রস্তাব দিলো?
আমার বাবা রাগ করেই তোমাদের বাড়ীর মেয়ে নিবে না, কিন্তু আমি নিবো, কারণ কিছু ফিরিয়ে দেবা বাকি ছিল। আর কিছু প্রশ্ন আছে তোমার মনে? নাকি বুঝেছো? তোমাদের পরিবার টাকা চাই, তুমি টাকা পাবা, কিন্তু তুমি আমাকে পাবা না।
সামিয়াঃ কিন্তু আমি…।
আমিঃ আর কোন কথা না, যাও লাইট অফ করো, আমি ক্লান্ত ঘুমাবো।
বেশ কয়েক দিন ছুটি কাটিয়ে আমি আবার ঢাকা চলে আসলাম, এবার অবশ্য আমি দিনে অন্তত ১ বার সামিয়ার সাথে কথা বলতাম।
খুব বেশি হলে ১ মিনিট। হয়তো এটা প্রয়োজন তাই…
আমার বদলী হয়ে গেলো নীলফামারী তে, যদিও আমি একটা গোপন কাজে সেখানে গেছিলাম, এজন্য আম্মু বার বার বলার পর ও আমি সামিয়াকে নিয়ে যেতে রাজী হয় নি।
এভাবে ২ মাস পার হয়ে গেলো… ভাবলাম এই কাজ টা শেষ হলে এবার যখন ছুটি পাবো সামিয়ার সাথে কিছুটা হলেও দূরত্ব মিটিয়ে নিবো।
অনেক হয়েছে মেয়েটার শাস্তি, আম্মু বলল, এই ২ মাসে নাকি সে বাবার বাড়ী যায় নি।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সামিয়া বলল, এমনি যায় নি, আপনি আসেন তারপর যাবো।
বুঝলাম, সিমেলের বউ যখন একা বাপের বাড়ী যায় তখন আমি সামিয়াকে শুনিয়ে সিমেলকে যে কথা বলেছিলাম সে কথা সামিয়া এখন ও মনে করে আছে।
ভালো, তবে আমি তো এতো খারাপ স্বামী হতে চাই নি।
আমি সামিয়া কে বললাম, যাও বাবার বাড়ী, আমার আসতে দেরি হবে।
।।
।।
মাস খানিক পরের কথা!
আমি যে বাড়ীতে ভাড়া থাকতাম, উনি স্কুলের একজন শিক্ষক। অনেক ভালো মানুষ, সেই এক মাত্র মানুষ, যাকে বিশ্বাস করে আমি আমার আসল পরিচয় দিয়েছিলাম।
আমার কাজ তখন প্রায় শেষ, আর ৪ দিন পর আমি চলে আসবো, ইচ্ছা আছে ওখান থেকে সোজা আগে বাড়ী আসবো। ২-৩ দিন বউ এর সাথে সময় পার করবো তারপর ঢাকা যাবো।
সামিয়া কে সারপ্রাইজ দিবো। মেয়েটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আর না। এতো কষ্ট দিলাম, কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতে দিলো না।
এবার আমি তাকে বুঝাবো, আমি তাকে কতো ভালো বাসতে পারি, ফোনেই তাকে বুঝাতে পারতাম কিন্তু আমি চাই কথাই না ব্যাবহারে আমি তাকে বুঝাবো, যে আমি তার যোগ্য স্বামী।
।।
কিন্তু ভাগ্যে মনে হয় অন্য কিছু লিখা আছে…
আমি যে দিন চলে আসবো তার আগের দিন!
হটাৎ শুনলাম যে আমার বাড়ীর মালিক মানে সেই মাস্টার সাহেব এক্সিডেন্ট করেছে, আমি দৌড় দিয়ে হাসপাতালে গেলাম।
অবস্থা খুব একটা ভালো না, ওনার পরিবারে কে কে ছিল আমার জানা ছিল না, কারণ উনি একা থাকতেন।
আমি বাইরে বসে আছি, একজন বলল, এখানে আরিয়ান সাহেব কে?
আমি বললাম আমি। কি হয়েছে বলেন।
সে বলল, রোগী আপনাকে ডাকছে।
আমি ভিতরে গেলাম। দেখলাম ভিতরে ৪-৫ জন আছে।
।।
স্যার আমাকে ডেকেছেন?
মাস্টার সাহেবঃ বাবা, এখানে আসো।
আমিঃ জি বলেন।
মাস্টার সাহেবঃ দেখো বাবা, আমি মনে হয় বেশিক্ষণ বাঁচবো না। এটা আমার মেয়ে বৃষ্টি, মেয়েটাকে নিয়ে অনেক বিপদ এজন্য তাকে আমার থেকে আলাদা করে রাখতাম,
কিন্তু আমি যাবার পর এই মেয়ের কি হবে? মেয়েটার শখ সে একজন ভালো শিক্ষক হবে, কিন্তু তার এই স্বপ্ন এখন কে পূরণ করবে? আমি চাই বাবা, তুমি আমার মেয়েটাকে বিয়ে করো।
আমিঃ চাচা, আমি বিবাহিত, আপনি তো মনে হয় সেটা জানেন।
মাস্টার সাহেবঃ হ্যাঁ, জানি বাবা!
আমিঃ তারপর ও কিভাবে বলছেন?
মাস্টার সাহেবঃ দেখো বাবা, বাবা হিসাবে আমার দায়িত্ব মেয়েকে একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দেওয়া যে তার মেয়েকে সুখে রাখবে আর আমি জানি তুমি
আমার মেয়েকে সুখে রাখবে তার সব স্বপ্ন তুমি পূরণ করবে। তুমি আর না বলো না বাবা।
আমিঃ কিন্তু?
মাস্টার সাহেবঃ কোন কিন্তু না, এই নাও আমার মেয়ের হাত তোমার হাতে দিলাম, সাথে সব দায়িত্ব।
আমিঃ কিন্তু চাচা…।।
।।
এই কথা বলার সাথে সাথেই চাচা আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।
মেয়েটা মানে বৃষ্টি কাঁদতে লাগলো… কিন্তু আমি তো চারদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলাম, কি হলো আমার জীবনে।
আমি তো সামিয়াকে নিয়ে সুখী হতে চেয়ে ছিলাম। মাঝখান থেকে এই মেয়ে এলো কোথা থেকে? এখন আমি সামিয়া কে কি বলবো? কোন মুখে তার সামনে দাঁড়াবো?
আমি সন্ধাই মাস্টার সাহেবের দাফন শেষ হবার পর রাকিব মানে সেই চাচা যিনি হাসপাতালে তখন আমাদের সাথে ছিলেন, তাকে ডাক দিলাম।
তারপর আমি আমার আর সামিয়ার সব কথা খুলে বললাম,
তিনি সব শুনার পর যা বলল,
চাচাঃ বাবা, তোমার জীবনে অনেক সমস্যা এটা বুঝলাম, তবে হয়তো চেষ্টা করলে আর আল্লাহ্ চাইলে তুমি সে সমস্যা সমাধান করতে পারবা,
কিন্তু বৃষ্টির জীবনের কাহিনী জানো না।
মাস্টার ভাই ছিল আমার বড় ভাইয়ের মতো, তার কিছু জমি, বাগান ও ৩ টা পুকুর আছে আমি সেগুলো আজ ১৫ বছর থেকে দেখাশুনা করি,
যখন থেকে বৃষ্টির মা মারা গেছে।তুমি স্কুলের সামনে যে বড় বাড়ী নাম আনারুল চিনো সে মানুষকে?
আমিঃ হ্যাঁ চিনি তো। আমার সাথে কয়েক বার দেখা হয়েছে।
চাচাঃ ঝামেলা শুরু হয় আজ থেকে ১৮ বছর আগে বৃষ্টির যখন জন্ম হয়, বৃষ্টির যখন জন্ম হয় তখন আনারুল তার ছেলের জন্য বৃষ্টির বিয়ের কথা বলে।
মাস্টার ভাই জানতো এটা সুধু জমি আর পুকুরের লোভে। এজন্য তিনি বলে পরে দেখা যাবে, কিন্তু আনারুল সাহেব বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখাতে থাকে।
তুমি আসার ১ মাস আগেও একটা বিয়ে ভেঙ্গে যায়, কারণ আনারুল তাদের ভয় দেখায় যে তারা বিয়ে তে আসলে তাদের ছেলেকে তুলে নিবে,
এভাবে ৩ টা বিয়ে ভেঙ্গে যায়… এবার বলো যে সে কি করবে? কিন্তু তোমার সাথে বিয়ে হলে তোমাকে তারা ছাড়বে না, তাড়াতাড়ি তুমি এখান থেকে পালিয়ে যাও।
আমিঃ চাচা একটু বৃষ্টির সাথে কথা বলা যাবে?
চাচাঃ হ্যাঁ, অবশ্যই। বৃষ্টি মা, একটু এদিকে আসবা? আরিয়ান তোমার সাথে একটু কথা বলবে।
।।
আমিঃ দেখেন আপনি জানেন কি জানি না, আমার একটা বউ আছে, আর আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। আমি আপনাকে বিয়ে করতে একটুও রাজী না,
কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করছে আপনাকে বিয়ে করতে। তবে আমার কিছু কথা আছে। আর আপনার যদি কাউকে পছন্দ থাকে তবে বলতে পারেন,
আমি ওয়াদা করছি যে কোন মূল্যে আমি তার সাথে আপনার বিয়ে দিবো।
বৃষ্টিঃ আমার কোন পছন্দ নাই, আর আমাকে বাবা বলেছে যে আপনার বউ আছে, আর আমার মতো অভাগার কপালে এর থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না।
আমিঃ বিয়ের পর স্বামী হিসাবে আমি সব দায়িত্ব পালন করতে পারবো না, এর জন্য আমার সময় লাগবে।
বৃষ্টিঃ আমাকে সুধু পড়ার ব্যাবস্থা টা করে দিবেন আমি এর থেকে বেশি কিছু আর চাই না।
আমিঃ ঠিক আছে।
।।
আমার আর বৃষ্টির বিয়ে হয়ে গেলো। আনারুল নামের সেই মানুষটা এসেছিলো কিছু মানুষ মানে তার লোক জন নিয়ে,
আমি আগে থেকেই কিছু আমার লোক রেডি করে রেখেছিলাম।
তারা যখন আমাকে গালি গালাজ আর আমাকে মারতে আসলো, তখন আমি সেই থানার পুলিশ ডাকলাম।
আমি যখন আমার পরিচয় দিলাম, সাথে সাথেই তাদের সবাইকে গ্রেফতার করে নিলো।
।।
রাতে আমি আব্বুকে ফোন করে সব বললাম,
বাবা একটা কথাই বলল, এর অন্য কোন পথ কি ছিল না?
আমিঃ আমি অনেক চেষ্টা করেছি, অন্য পথ পাই নি।
বাবাঃ কিন্তু সামিয়া কি সেটা মেনে নিবে? তার ওপর তুই বলছিস তোর সাথে নাকি তার সম্পর্ক ভালো না? তাহলে কিভাবে মেনে নিবে?
আর সামিয়ার কথা ভাব, এটা মানার কোথাও না…
আমিঃ বাবা, আমি জানি সামিয়া অনেক কষ্ট পাবে, আর আমি ওকে সেই কষ্ট দিতে চাই নি। তুমি আম্মুকে কিছু বলো না, সকালে আমি চলে আসবো। দেখি কি করতে পারি।
বাবাঃ তোর সাথে কি মেয়েটা আসবে?
আমিঃ হ্যাঁ, আসবে,
বাবাঃ অনেক বড় ঝামেলার মধ্যে পড়ে গেছিস বাবা, জানিনা ভাগ্যে কি আছে?
আমিঃ এতদুর তো ভাগ্য কে মেনে নিয়েই পথ পাড়ি দিলাম, দেখি না আর খানিকটা পথ পাড়ি দিয়ে।
বাবাঃ ঠিক আছে বাবা, আয়!
আমিঃ চাচা! গেলাম থাকেন।
চাচাঃ দুয়া করি বাবা,অনেক সুখে থাকো।
আমি বৃষ্টি কে নিয়ে বাসে উঠলাম। রাত টা অনেক অন্ধকার ছিল, কিন্তু আমার ভাগ্যের পথটা মনে হয় এর চাইতেও বেশি অন্ধকার।
খুব সকালেই আমি পৌঁছে গেলাম, বৃষ্টিকে আমার চাচার বাড়ীতে রেখে আমি একা বাড়ী গেলাম,
আজ সামিয়াকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে, জানি না সত্যি কি সে আগে থেকে বেশি সুন্দর হয়েছে নাকি আমি এতো দিন তাকে ভালো করে দেখিনি।
ইস, আজ যদি বৃষ্টি না থাকতো…
সামিয়াঃ বাহ, এতো সকালেই হাজির,
আমিঃ বাস খুব জোরে এসেছে।
সামিয়াঃ একটু ঘুমিয়ে নেন, আমি নাস্তা করি। কালাই-এর রুটি খাবেন? আমি এবার বানাতে শিখে গেছি।
আমিঃ একটু বসো না, নাস্তা পরে খাবো।
সামিয়াঃ আপনি রাতে জার্নি করেছেন, একটু ঘুমান, না হলে আবার শরীর খারাপ করবে।
আমি মনে মনে ভাবছি… কিভাবে বলবো? আমি তো মেয়েটাকে আর কষ্ট দিতে চাই না, তবে ওর থেকে লুকিয়ে রেখেও আমি তাকে ধোঁকা দিতে চাই না… কিন্তু কিভাবে বলি?
আমিঃ একটা কথা বলি,?
সামিয়াঃ কি বলেন?
আমিঃ আমি খুব খারাপ স্বামী তাই না?
সামিয়াঃ আমি কি কখনো সেটা বলেছি আপনাকে?
আমিঃ আমি তো বুঝি, স্বামী হিসাবে কোন দায়িত্ব পালন করতে পারি না।
সামিয়াঃ কে বলেছেন পারেন না, বিয়ের পর থেকে আমাকে খেতে দিচ্ছেন, আমাকে জামা কাপড় কিনে দিচ্ছেন, যখন যা ইচ্ছা সেটা পেয়ে যায়।
আমিঃ এতেই কি সব দায়িত্ব শেষ?
সামিয়াঃ সেটা আপনি ভালোই জানেন।
আমিঃ আমি একটা ভুল করে ফেলেছি, তবে আমার আর কোন পথ ছিল না। আমি পরিস্থিতির স্বীকার।
সামিয়াঃ কি হয়েছে?
আমিঃ কিভাবে বলবো ওটাই ভাবছি।
সামিয়াঃ আমাকে কষ্ট দেবার জন্য আমার সতীন নিয়ে এসেছেন নাকি?
আমিঃ সেটাই মনে করো…
সামিয়াঃ কি??????
আমিঃ সত্যি আমি একটা মেয়েটাকে বিয়ে করেছি। কিন্তু তোমাকে কষ্ট দেবার জন্য না,
।।
সামিয়া এতক্ষণে সিরিয়াস ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে…
সামিয়াঃ আপনি মজা করছেন তাই না?
আমিঃ যদি এটা মজা হতো…। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে আমি আরেকটা বিয়ে করেছি। তবে বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালোবাসি।
।।
সামিয়া কাঁদো কাঁদো ভাবে…।
সামিয়াঃ কোনটা বিশ্বাস করবো বলেন, আপনি আরেকটা বিয়ে করেছেন ওটা নাকি এটা যে বিয়ের ৪ মাস পর ও যে স্বামী বউ কে ছুয়েও দেখে নি,
সে স্বামী বলছে যে তাকে ভালোবাসে। ২ টা তো এক সাথে সম্ভব না, আপনি বলেন কোনটা সত্যি।
আমি বাক রুদ্ধ হয়ে গেলাম, কি উত্তর দিবো, মেয়েটাকে। সত্যি তো ২ টা তো এক সাথে সম্ভব না, আর সামিয়া তো পিচ্চি মেয়ে না, মনো-বিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন করা মেয়ে সে।
যথেষ্ট বুঝার জ্ঞান আছে তার এজন্য সে আজ পর্যন্ত আমার এতো অবহেলার পর ও আমার সংসার করে গেলো।
।।
সামিয়া একটা ল্যাগেজ বের করলো, আলমারি থেকে কিছু কাপড় বের করতে শুরু করলো,
আমিঃ তুমি এসব কি করছো?
সামিয়াঃ আপনি না বলেছিলেন, আপনার বউ যদি আপনাকে না বলে বাবার বাড়ী যায় তবে তাকে বাবার বাড়িতেই রেখে দিবেন, তাই আজ আমি চলে যাচ্ছি।
আমিঃ কেন?
সামিয়াঃ কেন মানে? কিসের কেন? আমি চাই না আমার জন্য আপনার নতুন বউয়ের সাথে নতুন জীবন শুরু করতে সমস্যা হয়, এজন্য আমি চলে যাচ্ছি,
অনেক বিশ্বাস করতাম আপনাকে, ভাবতাম কতো দিন কষ্ট দিবেন, ৬ মাস, ১ বছর, ৫ বছর?
এরপর তো আমাকে ভালো না বাসলেও আমার প্রতি একটু দয়া মায়া হবে? এই ভেবে আমি সব সহ্য করতাম।
কিন্তু আপনি কি করলেন?
আমি কি এতোটাই খারাপ মেয়ে? একটা ছোট না হয় ভুল করেছিলাম, তাই বলে তার প্রতিশোধ আপনি এভাবে নিবেন?
আমিঃ বিশ্বাস করো, আমি প্রতিশোধ নেয় নি, আমি তো তোমাকে নিয়ে আমাদের মধ্যে কার সব দূরত্ব মিটিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি ভাগ্যের কাছে পরাজিত।
সামিয়াঃ কিভাবে বিশ্বাস করবো, আপনি বলেন? এটা কি বিশ্বাস করার মতো কাজ? ৪ মাস থেকে সুধু সুখে থাকার নাটক করে গেছি, কাউকে কিছু বলি নি… যেন আপনাকে কারো কাছে মাথা না নতো করতে হয়। আমি চলে গেলাম, আপনি ভালো থাকবেন। দুয়া করি আপনি যেন অনেক সুখী হন।
আমিঃ তুমি আমার একবার কথা শুনো।।
সামিয়াঃ না শুনবো না।
এরপর সামিয়া চলে যেতে চাইলো, আমি মানা করার পর ও শুনলো না, আমি পিছন থেকে তার হাতটা ধরেই এক চড়,
জানি চড় মারা টা ঠিক হয় না, কিন্তু আমি জানি সামিয়া যদি একবার তার বাবার বাড়ী চলে যায় তবে এটাই আমাদের শেষ দেখা। আর আমি এক বার আমার ভালোবাসা হারিয়েছি, আরেকবার হারানোর মতো কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আমার নাই।
আমিঃ ৪ মাস থাকতে পারলা, আর ৪ মিনিট পারবা না? আগে আমার কথা শুনো তারপর তুমি যা বলবা তাই করবো, দরকার হলে আমি নিজে তোমাকে রেখে আসবো। কিন্তু আমাকে বলতে দাও।
সামিয়াঃ বলেন।
আমিঃ আমি সব বলে দিলাম, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত……।।
এখন বলো, আমি ভুল করেছি এটা ঠিক, তোমাকে কষ্ট দিয়েছি এটাও ঠিক, তবে আমি তোমাকে ধোঁকা দেয় নি।
সামিয়াঃ মেয়েটা কই?
আমিঃ বড় চাচার বাড়ীতে।
সামিয়াঃ মা বাবা জানে?
আমিঃ বাবাকে রাতে বলেছিলাম, মা জানে না।
সামিয়াঃ কিন্তু আপনি বলেন, আমি কিভাবে আরেকটা মেয়ের সাথে ঘর করবো? কিভাবে সহ্য করবো যে আজ থেকে এই বাড়ী এই ঘর, মা, বাবা সব কিছুর অংশীদার আরেকজন আছে। কীভাবে মেনে নিবো বলেন ?
আমিঃ আমি জানি না…।। কারণ আমি মেয়ে না, আমি তোমার কষ্ট বুঝবো না। তবে তোমার চোখের পানি যে আজ আমাকেও স্পর্শ করেছে সেটা ঠিক বুঝতে পেরেছি। সিদ্ধান্ত তোমার, তুমি যা বলবা সেটাই করবো।
সামিয়া বলল, আপনি ছাদে জান, আমি ৫ মিনিট পর আসছি। ভয় নাই, কিছু করবো না। আবেগ নিয়ে জীবন চলে না। আপনি জান, আমি আসছি।
আমি ছাদে আমার ফুল গাছ গুলোর দিকে তাকিয়ে আছি, সামিয়া আঙ্গুরের গাছ ও লাগিয়েছে…
আমি থাকতে যতো ফুল ফল গাছ ছিল ৪ মাসেই তার ২ গুন করে নিয়েছে।
ছাদে একটা শখ করে খোলা ঘর করেছিলাম, যেন বউ কে নিয়ে জস্না দেখতে পারি… কিন্তু ঘরটা কতো সুন্দর লাগছে, নিশ্চয় সামিয়া সাজিয়েছে।
।।
পিছন থেকে কে যেন একটা কাশি দিলো…
আমিঃ আঙ্গুর গাছ তুমি লাগিয়েছো?
সামিয়াঃ হ্যাঁ, খেয়ে দেখেন তো কেমন?
আমিঃ কেন তুমি খাও নি?
সামিয়াঃ না, ভাবলাম আপনাকে দিয়েই সূচনা করবো…
আমিঃ আমার মতো খারাপ মানুষকে দিয়ে সূচনা করলে আঙ্গুর মিষ্টি হবে না।
সামিয়াঃ সেই যায় হোক, আঙ্গুর তো। আর বইয়ে পড়েছিলাম আঙ্গুর ফল টক।
আমিঃ ঠিক আছে খাচ্ছি।
সামিয়াঃ চা নেন।
আমিঃ নিচ্ছি, আচ্ছা তুমি কি সিদ্ধান্ত নিলা?
সামিয়াঃ দেখেন মেয়েটার জন্য আমার ও দুঃখ হচ্ছে কিন্তু আপনি বলেন, এই যে ছাদ যাকে আমি আমার মনের মতো করে সাজিয়েছি…
নিজের এক একটা স্বপ্ন কে আমি সত্যি করেছি, এই বাগান করতে আমার শ্বশুর আমাকে কতো সাহায্য করেছে আপনি জানেন?
আমার তো এই ছাদটায় ভাগ দিতে কষ্ট হচ্ছে, জানিনা কীভাবে এতো কিছুর ভাগ দিবো?
আমিঃ আমি তোমার কষ্ট বুঝতে পারছি। আমার বাগানের একটা মরা ফুল ও আমি কাউকে দিতাম না, কিন্তু যখন কারো প্রয়োজন ছিল তখন ৭-৮ রকম ফুল পেড়ে দিতাম।।
সামিয়াঃ তার মানে এই উদাহারণ দিয়ে আপনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে এতো সব কিছু আমি অর্ধেক সেই মেয়েকে দিয়ে দিবো?
আমিঃ আমি সেটা বলি নি, আমি সুধু এটা বলতে চাচ্ছি যে পরিস্থিতিতে মানুষ অনেক কাজ করতে বাধ্য হয়।
সামিয়াঃ কিন্তু আমি পারবো না,
আমিঃ তাহলে তুমি বলো আমি এখন কি করবো?
সামিয়াঃ বিয়ে করার আগে আমাকে কি জিজ্ঞেস করেছেন? আমার বাড়ীতে আপনার নতুন বউয়ের যায়গা নাই, এই বাড়ী, শ্বশুর, শাশুড়ি আমার।
আপনি আপনার নতুন বউকে কোথায় নিয়ে যাবেন সেটা আপনার ব্যাপার।
আমিঃ তাহলে যদি আমি তাকে অন্য যায়গায় রাখি তাহলে তোমার সমস্যা হবে না?
সামিয়াঃ সমস্যা আবার হবে না? তবে সেটা মেনে নিবো। তবে এই বাড়ীর মধ্যে না।
আমিঃ ঠিক আছে।
।।
কিছুক্ষণ পর বাবা ছাদে আসলো।
বাবাঃ কিরে কখন আসলি?
আমিঃ এই তো ঘণ্টা খানিক আগে। তুমি কোথায় গেছিলে?
বাবাঃ নামাজ পড়ে হাঁটছিলাম।
সামিয়াঃ বাবা, আপনি রাত থেকে ঘটনা জেনেও আমাকে কিছু বলেন নি?
বাবাঃ কি বলবো বলো? ছেলে কি চাকুরী তে ম্যাডেল পেয়েছে যে গর্ব করে বলবো?
আমিঃ বাবা, সামিয়া মেনেছে, কিন্তু মেয়েটাকে অন্য কোন যায়গায় রাখতে হবে, মানে এই বাড়ীতে না। আর আমিও সেটা চাইনা যে ঐ মেয়েও এই বাড়ীতে থাক।
বাবাঃ ঠিক আছে তাহলে অন্য একটা ব্যাবস্থা করে দাও।
…।।…
এরপর আর সমস্যা হয় নি, বৃষ্টি কে ওদের জমি বিক্রি করা টাকা দিয়ে ওর নামে একটা বাড়ী করে দেয়, যেটা ঠিক আমার বাড়ীর সামনে।
আর বৃষ্টি পড়তে থাকে… আমিও সামিয়ার সাথে এখন অনেকটা ফ্রি… সামিয়ার বাড়ীতে একটু ঝামেলা করার চেষ্টা করেছিলো।
কিন্তু সামিয়া বলল যে সে আমাকে আগেই বিয়ের অনুমতি দিয়েছিল তাই তারা আর কিছু বলল না।
আর এই ভাবেই চলতে লাগলো আমার কাহিনী…
আমি আর সামিয়া আর মাঝ খানে বৃষ্টি।
.
.
…………………………………………সমাপ্ত………………………………….