LOVE U ABONI

LOVE U ABONI

বন্ধুদের সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে একসঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখনই অবনীর ফোন আসলো।সকলকে থামতে বলে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো

–আমার জানটা কি করে?
–তোমার জানটা নির্জনে ছাঁদে বসে থেকে তোমাকে মিস করে।তুমি কি করো?
–আমিও আমার জানটাকে মিস করি।দুপুরে খাওয়াহয়ছে আমার জানটার?
–না গো একদম খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
–কেন শরীর খারাপ করছে নাকি তোমার?
–বুঝতেছি না।তুমি খাইছো?
–তুমি খাওয়ার আগে কোনদিন খাইছি আমি?
–তা খাও নাই।কিন্তু আজ খেয়ে নাও।এখন আর আমি  খাবো নাগো।
–প্লীজ খেয়ে নাও।আর শরীর খারাপ হলে ডাক্তার দেখাও প্লীজ।
–হুমম..খেয়ে নিয়ো।বাই
–খাওয়ার পরে জানিয়ো আমাকে।বাই জানু।

ফোন কাটতেই সকলে হাসাহাসি শুরু করে দিলো। লাউডস্পিকার অন ছিলো তাই সকলেই শুনছিলো আমাদের কথোপকথন।আমিও তাদের সাথে অট্টহাসিতে মেতে উঠলাম। মেয়েটা অনেক বোকা তবে আমাকে অনেক ভালোবাসে।আমি যতোক্ষণ না ফোন দিয়ে বলবো খেয়েছি ততক্ষণ সে খাবে না।এভাবে কতোদিন যে তাকে না খাইয়ে রেখেছি হিসেব নাই।আজো সে না খেয়েই থাকবে।বিষয়টা খুব উপভোগ করি। আড্ডা শেষ করে বাড়ি চলে আসলাম।ফ্রেশ হয়ে মুভি দেখতে বসলাম।তখনই সে ফোন দিলো।মেজাজটা গরম হয়ে গেলো।তবুও নিজেকে শান্তু করে ফোন ধরলাম

–খাবার খাইছো?
–বললাম না খেতে ভালো লাগছে না।তুমি?
–নাগো আমারো ভালো লাগছিলো না তাই খাই নাই। তা কি করো?
–এইতো শুয়ে আছি।
–আজ রাস্তায় একটা পথ শিশুকে দেখে খুব মায়া হলো গো।ছোট্ট একটা বাচ্চা কিন্তু কি কষ্টই না করে খাবার জোগাড় করছো।
–হুমম।
–আচ্ছা আমরা যদি বিয়ের পরে কোন এতিম মেয়েকে পালক নেই তাহলে কেমন হবে?
–হুমস ভালো হবে কিন্তু আমাদের বাবু হবে না।(মনে মনে-তোকে বিয়ে করলে তো পালক নিবো।হাহা)
–হুমম হবে।কিন্তু আমার না খুব শখ একটা এতিম পথশিশু কে লালনপালন করা।পূরণ করবে না আমার এই ইচ্ছে।
–হুমম করবো।আর কি ইচ্ছে আছে?(খুব মজা লাগছে শুনতে)

–আআর আআর আর একটা ছোট্ট বাড়ি হবে যেখানে আমরা পুরো পরিবার মিলে থাকবো।একটা বাইক থাকবে।ছুটির দিনগুলোতে তুমি আমাকে নিয়ে ঘুরবে সেই বাইকে।আর একটা কিউট বিলাইয়ের বাচ্চা থাকবে যেটা নিয়ে আমাদের মেয়েটা যাকে আমরা পালক নিবো সে খেলবে।আমাদের মেয়ের নাম হবে রাইশা।আর দিন শেষে আমাদের দুইজনকে বুকে নিয়ে তুমি ঘুমাবে।

–হুমম।তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করবো।
–রায়হান আরেকটা কথা
–কি?
–রকি আজ আবার রাস্তার মাঝে আমাকে ধরেছিলো। খুব বাজে বাজে কথা বলেছে।তুমি ওকে নিষেধ করো নাই?
–হুমম করেছিলাম তো।আচ্ছা আবার নিষেধ করে দিবো নি।বাই
–ওকে বাই।

গ্রামের একটা বখাটে ছেলে রকি।সাথে কিছু বন্ধুও থাকে তার।সারাদিন নেশা করে আর মেয়েদের সাথে বাজে ব্যবহার করে।কিছুদিন থেকে অবনীর পিছে পরেছে।অবনী আমাকে নিষেধ করতে বলেছিলো কিন্তু আমি তেমন ভাবে গুরুত্ব দেই নাই।। পরেরদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডার দেওয়ার সময় রাজু বললো

–আচ্ছা রায়হান তুই অবনী কে যা বলবি ও তাই করবে?
–সন্দেহ আছে নাকি?
–হুমম আছে বলেই তো বলছি।
— হাহাহা।কি করাতে হবে সেটা বল তারপরে দেখ।
–তোর সাথে পালাতে বললে পালাবে?
–অবশ্যই।বলার সাথে সাথে চলে আসবে।
–তাহলে বল।
–মাথা ঠিক আছে আমি কেন ওর সাথে পালাবো?
–আরে পালাতে কে বলছে?তুই শুধু বলবি পালাবি আর বাস স্টপেজের আসতে বলবি।তোকে না পেয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যাবে।
–ঠিক আছে।কি খাওয়াবি বল?
–কাচ্চি।
–ঠিক আছে।

বাড়ি এসে অবনীকে ফোন দিয়ে বললাম পালানোর কথা।প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না কিন্তু আমি জোর করায় রাজি হলো।সন্ধার পরে বাস স্টপেজে গিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করতে বললাম। দেখতে দেখতে সন্ধা হয়ে আসলো।সে বাড়ি থেকে বের হয়ে আমাকে ফোন দিলো।আমি তাকে নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে বললাম।যেতে যেতে প্রায় চল্লিশ মিনিট লাগবে।যেহেতু সে বের হয়েছে তাহলে আমি বাজিটা জিতে গেছি।তাই রাজুর কাছে থেকে কাচ্চি খেয়ে বাড়ি চলে আসলাম। খুব ক্লান্ত লাগছে তাই ফোনটা বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেলাম।নাহলে অবনী ফোন দিয়ে দিয়ে মাথা খারাপ করে রেখে দিবে।

–আব্বু আব্বু কি এতো ভাবছো তুমি হ্যাঁ। রাইশার ডাকে ঘোর কাটলো।এতোক্ষণ যা ভাবছিলাম সব আমার অতীত।আর রাইশা আমার বর্তমান,ভবিষ্যৎ। অবনী ইচ্ছে পূরণের জন্যই রাইশাকে চারবছর বয়সে নিয়ে আসি।এখন তার বয়স সাত বছর।খুব ভালোবাসে আমাকে আমিও নিজের থেকে তাকে বেশি ভালোবাসি।

–আব্বু আবার কিহলো?চুপ করে আছো কেন?আজ না আস্মুর কাছে নিয়ে যাবে বললে।
–হুমম মামুনি রেডি হয়ে নাও।

এখনই যাবো। রাইশাকে তৈরি করে দিয়ে নিজেও তৈরি হয়ে বাইক নিয়ে রওনা দিলাম।কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা কবরস্থানে এসে পৌঁছালাম। হ্যাঁ এখানেই শুয়ে আছে আমার অবনী।সেদিনই হারিয়েছি আমি আমার অবনীকে।সে সরল মনে সেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো কিন্তু আমি সার্থপরের মতো ঘুমিয়ে ছিলাম।ভাবি নাই একবারো তার কথা। সে রাতেই রকিরা নেশা করে আসছিলো ওখান দিয়ে। একা বসে থাকতে দেখে তারা চারজন মিলে আসার অবনীর সম্মান নষ্ট করে মেরে ফেলে রেখে চলে যায়।

রাজু পরদিন সকালে যখন এই খবর দিলো তখন মনে হচ্ছি এই পৃথিবীতে আমিই মনে হয় সবচেয়ে বড় অপরাধী।খুব কষ্ট হচ্ছিলো সেদিন।পুরো দিন চোখ থেকে পানি পড়ছে।কিন্তু আমার অবনী একবারের জন্য আর সেদিন খবর নেয় নাই। গাড়ি থামাতেই রাইশা দৌড়ে অবনীর কবরের কাছে যায়।এর আগেও সে এসেছে এখানে।অবনীর প্রতিটা মৃত্যুবার্ষিকিতে রাইশাকে এখানে নিয়ে আসি।মনে মনে কি যেন বলে।হয়তো আম্মুর জন্য দোয়া করে। গাড়ি থেকে নেমে কবরের কাছে গেলাম।এখানেই শুয়ে আছে আমার অবনী।এখন অনেকটা সার্থপর হয়ে গেছে সে।আর ফোন দিয়ে আমার খোঁজ নেয় না।আমি না খেলে খাবে না বলে বায়না ধরে না আর।

অবনী আমি তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করেছি।আমি একটা এতিম মেয়েকে এনে নিজের পরিচয়ে বড় করেছি।তার নাম দিয়েছি রাইশা।তুমি জানো না সে সারাদিন শুধু বিড়ালটা নিয়েই খেলা করে আর রাতে আমার বুকে মাথে রেখে ঘুমায়।আমাদের একটা ছোট্ট বাড়ি আছে,একটা বাইক আছে কিন্তু অবনী তবুও ঘরটা যে অপরিপূর্ণ কেননা তুমি যে নাই।আমার বুকে রাইশা থাকলেও তোমার জায়গাটা যে খালিই রেখে প্রতি রাতে ঘুমাতে হয়।পেরেছো কি ক্ষমা করতে আমাকে? না কখনো করো না ক্ষমা।কেননা আমি যে অনেক বড় অপরাধী। কিন্তু এই অপরাধীটা যে এখন তোমাকে ভালো বাসে অনেক অনেক ভালোবাসে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত