“প্রিয়!
জানো,আমি কল্পনা করতে খুব ভালোবাসি। যখন থেকে একটু একটু করে মনের উঠোনে ভাবনারা ডানা মেলতে শুরু করলো, ঠিক তখন থেকে।আর দশটা মেয়ের মতো করে প্রিন্স চার্মিং এর কথা আমিও ভেবেছি।তবে আমি জানতাম আমার রাজকুমার পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চড়ে কখনো আসবেনা। তার সাথে হয়তো আমার দেখা হবে খটমটে, মাথায় জ্যাম ধরানো কোন এক ক্লাসের ফাঁকে কিংবা দেখা হবে লাইব্রেরির বুক সেলফের বইয়ের ফাঁক দিয়ে অথবা দেখা হবে ক্যাম্পাসের সিঁড়িতে নতুবা দেখা হতে পারে পহেলা বৈশাখে চারুকলায়। আমি নতুন শাড়ি পড়ে সামলাতে ব্যস্ত থাকবো , হোঁচট খেয়েও পড়তে পারি , তুমি হয়তো তাই দেখে একটু মিষ্টি হাসলে আর আমি রেগে লাল হলাম। অথবা এমন হতে পারে বন্ধুদের নিয়ে কড়া রোদে আইসক্রীম হাতে নিয়ে হয়তো মাঝ রাস্তায় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মাঝে তুমি হঠাত আমায় দেখলে, চোখ পড়তেই লাজুক হাসলাম আমি। আবার এমনও হতে পারে কবিতা পাঠের আসরে হয়তো তোমার ভরাট কন্ঠের আবৃত্তি শুনে তোমাকে নতুন করে দেখতে থাকলাম আমি। আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতো খুব সাধারণ কল্পনা আমার দেখেছো?
কিন্তু সেরকম কিছুই কিন্তু আমার সাথে হয়নি।আমি হুড়মুড় করে প্রেমে পড়ে গেলাম এমন একজনের যে কবিতা হয়তো পড়েছে তবে তা শুধুমাত্র পাঠ্য বইয়ের বাধ্যবাধকতায়,পহেলা বৈশাখের হুল্লোড় যার ভালো লাগেনা, খোঁপায় বেলী ফুলের মালা দেখে যে মুগ্ধ হয়ে বলেনা বাহ! যার ব্যস্ততা আর অবসর দুই কাটে সারাদিন কম্পিউটার টেবিলে, সে রাত জাগে বার্সা আর রিয়েল মাদ্রিদের খেলা দেখার জন্যে, রাতের আকাশের জ্যোৎস্না তাকে স্পর্শ করেনা… আমি জানি তুমি খুব বিরক্ত হচ্ছো এখন। বিরক্ত হলে তোমার ডান চোখের ভ্রু কিছুটা উপরে উঠে যায় জানো? ফালতু সেন্টিমেন্টের কোন জায়গা তোমার ব্যস্ত জীবনের কোন অংশে নেই আমি জানি। কিন্তু কি করবো বলো, আমার বেয়ারা মনের মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে মাঝ রাতে সারা পৃথিবীতে যখন বাঁধ ভাঙ্গা জ্যোৎস্না আছড়ে পড়ে, কাঁঠালি চাঁপার সুগন্ধে মৌ মৌ করে আশপাশ তখন তোমাকে নিয়ে আমিও জ্যোৎস্নায় ভিজি, বৃষ্টি শুরুর আগে সোঁদা মাটির ঘ্রাণে যখন আমার মনের ভেতর কেমন একটা উল্লাস, কেমন একটা আনন্দের সৃষ্টি হয় তার ভাগ আমি তোমাকেও দেই, রিকশার হুড ফেলে ভিজতে ভিজতে বৃষ্টি স্নান করি, শীতের বিকেল গুলোতে রাস্তার মোড়ে আর সবার মত বসে ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খাবার সময় অতিরিক্ত ঝালে যখন আমার চোখ দিয়েও দু ফোঁটা জল ঝরে পড়ে তুমি শুধু তাই দেখার জন্য আমার দিকে একটু তাকিয়ে থাকো…
আমার কল্পনাগুলো কেমন আটপৌরে তাইনা? তোমার উদ্দাম ব্যস্ততা আর ট্রেনিং এর ফাঁকে তা কিছুটা জায়গা করে নিতে পারেনা। ব্যস্ততা তোমাকে অবসর দেয়না আর আমার ফিকে হতে থাকা কল্পনা গুলোতে আমি আবার রঙ চড়াই……
ডায়রীটা এই পর্যন্তই লেখা ছিলো। ইহান ডায়রীটা বন্ধ করে ল্যাপটপের স্ক্রিনে দিকে তাকালো, অনলাইনে পেপার পড়ার ফাঁকে একবার আজকের দিনে কি কি কাজ আছে দেখে নেয়ার ছোট্ট ইচ্ছেটা প্রশ্রয় দিতেই ডায়রীটা খুলেছিলো ও। তাড়াহুড়োয় নিজেরটা ভুলে পৃথিলার ডায়রীটা সাথে নিয়ে বের হয়েছিলো ইহান নিজেই কিন্তু ডায়রী দেখে বিরক্তটা বউয়ের উপর হওয়া চাই। মোবাইল ফোন খানা হাতে নেয়ার পালাও শেষ হয়েছিলো বলতে গেলেই, ডায়রীর পাতায় তক্ষুণি চোখ পড়তেই নিজেকে থামালো। মুক্তোর মত কেমন জ্বলজ্বলে দুটি বর্ণে লেখা প্রিয়! আবার ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকালো, কোণায় ছোট্ট একটা খবর রয়েছে, আজ পূর্ণিমা। ডান হাতে আটকে থাকা কালো ব্র্যান্ডের ঘড়িটায় সময় দেখলো ইহান। ট্রেন ছাড়তে এখনো ২০ মিনিট বাকি। সব গুছিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়তে সময় খুব একটা বেশি লাগার কথা না। এই ট্যুরের চেয়েও অনেক জরুরী কাজ পড়ে আছে বাসায়। একটাই সমস্যা , এতো রাতে কাঁঠালি চাঁপা পাওয়া যাবে কীনা তা নিয়েই চিন্তা হচ্ছে ওর। কাছ থেকে কেউ ওর দিকে তাকালে দেখতে পেতো ডান দিকের ভ্রুটা কিছুটা উপরে উঠে গিয়েছে। শুধু বিরক্ত হলে না টেনশনে পড়লেও যে ওর এমনটা হয়, ঘরের অতি আবেগী মেয়েটা বোধহয় তা জানেনা।