কলেজে আজ প্রথম দিন ৷ কিন্তু সকালে উঠতেই দেরি হয়ে গেল ৷ কোনরকমে ফ্রেস হয়ে কলেজের উদ্দ্যেশে ছুটলাম ৷ এক বড়ভাইকে জিজ্ঞাসা করে ক্লাস রুমে গেলাম ৷ দেখি আসলেই দেরি হয়ে গেছে ৷ ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই বসে আছে, কয়েকজন শিক্ষক দাড়িয়ে আছে ৷ পরিচয় পর্ব চলছে মনেহলো ৷
– স্যার, আসতে পারি?
– নিউ ফাস্ট ইয়ার?
– জি স্যার ৷
– আসো ৷
ভেতরের ঢুকে দেখি ছেলেদের সারিতে কোন ছিট খালি নাই ৷ তাই কয়েকটা ছেলে মেয়েদের সারিতে গিয়ে বসেছে ৷ আমিও তাদের পাশে গিয়ে বসলাম ৷ ভালই হলো প্রথম দিনের কলেজ ৷ তবে তেমন কারো সাথে বন্ধুত্ব হলো না ৷ কারন আমি একটু একা থাকতে ভালবাসি, কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতে ইচ্ছা হয় না ৷ কলেজ শেষ করে রিকসার জন্য দাড়ি আছি ৷ হটাৎ একটা মেয়ে এসে,
– এই চলো ঘুরে আসি?
– কে আপনি? কথা নেই বার্তা নেই ঘুরে আসি মানে?
– আমি তোমার ক্লাস মেট ৷ তোমার সামনেই তো বসা ছিলাম, দেখোনি?
– খেয়াল করিনি, কিন্তু আমি আপনার সাথে ঘুরতে যাবো কেন?
– ওই কলম দিয়ে চোখ গেলে দেবো, আপনি করে বলছো কেন? আর এখন আমার সাথে না গেলে আমি চিৎকার করে লোক জড়ো করবো ৷
– তাতে আমার কি?
– আমি বলবো তুমি আমায় বাজে কথা বলেছ ৷ তাহলে গণধোলাইয়ের জন্য রেডি হও ৷
– আ..আমি যাবো তো, আপনার সাথে ঘুরতে যাবো, চলেন…
– আবার আপনি?
– না না, তোমার সাথে ঘুরতে যাবো, চ.. চলো..
– গুড বয়, আর এতো ভয় পওয়া লাগবে না ৷ একটা রিকসা ডাকো ৷
– Ok
নিরবে অন্যদিকে ফিরে বসে আছি রিকসায় ৷
– ওই এভাবে বসেছ কেন, সোজা হয়ে বসো ৷ আগে কখনো কোন মেয়ের সাথে রিকসায় বসোনি?
আমি সোজা হয়ে বসলাম ৷ রিকসাটা একটা বড় হোটেলের সামনে এসে থামলো ৷ মনে মনে একটু ভয় পেলাম ৷ আজ মনেহয় মানিব্যাগের বরোটা বাজবে ৷ মেয়েটা আমার হাত ধরে হোটেলের ভিতরে নিয়ে গেল ৷ বসে একটা ওয়েটারকে ডাকলো মেয়েটা
– ওয়েটার…
– জি মেডাম ৷
– মেনুটা দেখি ৷
– এই যে মেডাম ৷
– নুডলস নেই?
– জি না, মেডাম ৷
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
– চলো, তাহলে অন্য হোটেলে যাই ৷
– যা আছে, তার মধ্যে থেকে কিছু অডার করো ৷ অন্য হোটেলে কেন?
মেয়েটা এমনভাবে চোখ বড় বড় করে তাকালো আর কিছু বলার সাহস পেলাম না ৷
যাই হোক আরো দুইটা হোটেল ঘুরে নুডলস পেলাম ৷ কিন্তু মেয়েটা একপ্লেট অডার করলো কেন বুঝলাম না ৷ কিন্তু সেদিকে আমার মন নাই, আমি চলে গেছি অতিতে…
:
মাধ্যমিক শেষ হওয়ার কিছু আগে মিমের সাথে রিলেশান হয় আমার ৷ প্রায় ক্লাস ফাকি দিয়ে ঘুরে বেড়াতাম আমরা ৷ ও নুডলস খেতে খুব ভালবাসতো, তার চেয়ে বেশি ভালবাসতো আমাকে খাইয়ে দিতে ৷ একপ্লেট নুডলস অডার দিয়ে দুইটা চামচ দিয়ে ও আমাকে আর আমি ওকে খাইয়ে দিতাম ৷ মাঝে মাঝে নদীর ধার দিয়ে হাটতাম ৷ এটা ছিল আমার প্রিয় ৷
:
– নাও হা করো
মেয়েটার কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম ৷ একটা চামচে নুডলস নিয়ে আমার মুখের কাছে ধরে আছে ৷ এবার আমার অবাক হওয়ার পালা ৷
– কি হলো, এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? হা করো ৷
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না ৷ গলাটা ধরে আসছে ৷ আমি নিজে খেতে চাইলাম, কিন্তু মেয়েটা না করলো ৷ খাওয়া শেষে মেয়েটা বলল,
– মানিব্যাগটা দাওতো
মিমও ঠিক এরকম ভাবেই বলতো ৷ টাকা দিয়ে বাইরে আসলাম ৷ আমি অবাক দৃষ্টিতে দেখছি মেয়েটাকে ৷ ও মনেহয় একটু লজ্জা পেল,
– কি দেখো?
– কিছু না ৷ (চোখ সরিয়ে নিলাম)
মেয়েটা আমার হাতটা ধরে বলল,
– পাশে একটা নদী আছে, নদীর ধারে হাটবা?
এবার আরো অবাক হলাম আমি ৷ কে এই মেয়ে? কিন্তু মেয়েটা আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে হাটতে শুরু করলো ৷ আমি আবার অতিতে চলে গেলাম ৷
:
শেষ কবে নদীর ধারে হেটেছি মনে নেই ৷ মিম চলে যাওয়ার সাথে সব বন্ধ হয়ে গেছিলো ৷ ব্রেন্টে টিউমার ছিলো ওর ৷ অপারেশন করতে গিয়েই…
আমার জীবনটাও ওলোট পালোট হয়ে যায় ৷ সেই চঞ্চল, হাসি-খুশি, সব সময় আড্ডাবাজিতে সিহাবের ও মৃত্যু হয়, হয়ে যাই শান্ত নিরব সিহাব ৷ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরেও বের হতাম না ৷ আজ এই মেয়েটার জন্য অনেকদিন পর আবার জীবনটা কিছুটা অতীতের মত চলছে ৷ কিন্তু মেয়েটা কে, আগে তো কখনো দেখিনি ৷
:
– আর হাটতে পারছি না, চলো বসি…
– চলো ৷
বসে পাল তুলে চলে যাওয়া নৌকার দিকে তাকিয়ে আছি,
– ওই রিয়াদ, কি ভাবছো?
আমি যেন শক খেলাম, কারন এই নামে আমাকে শুধু মিমই ডাকতো ৷ আর কৌতহল চাপতে না পেরে বললাম,
– কে তুমি?
মেয়েটা একটা ডায়রী বের করে আমার হাতে দিল ৷ যেটা আমি মিমকে দিয়েছিলাম ৷ আমাদের প্রতিদিনের ঘটনা এতে লিখতো মিম ৷ মেয়েটা বলতে শুরু করলো,
– আমার নাম মেঘা, মিম আমার কাজিন ৷ মিম মারা যাওয়ার আগে এটা আমায় দিয়ে কিছু বলতে চেয়েছিল, কিন্তু পারিনি ৷ ডায়রীটা পড়ে আমি তোমায় ফলো করা শুরু করি এবং ধীরে ধীরে তোমাকে কখন ভালবেসে ফেলি বুঝতে পারিনি ৷ একটা সুযোগ দেবে আমায়, মিমকে আমার মধ্যে বাচিয়ে রাখার?
বলে মাথা নিচু কাঁদতে কাঁদতে দুহাতে আমার হাতটা চেপে ধরলো মেয়েটা ৷ আমা-র চোখের কোন বেয়ে দুফোটা অশ্রু পড়লো ডায়রীটার উপর ৷ মেঘা আমার চোখের জলটা মুছে আমার বুকে মাথা রাখলো ৷ বাধা দিতে গিয়েও দিলাম না ৷
হয়তো এতটাই শেষ চাওয়া ছিল মিমের…
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা