গল্পের শুরুটা হয়েছিল অনেক আগেই।যার পরিনতি আজকের এই বাসর রাত।আবির আর নীলিমার এই দিনটার জন্য একটু বেশিই অপেক্ষা করতে হয়েছে।দিনটা ছিল
২০১৫ সালের ১০ ই জুলাই।সবেমাত্র পড়ালেখা শেষ করে একটু ঘোরাঘুরি করতেই একটা ভাল জব পেয়ে গেল।আর তার সাথে শুরু হয়ে গেল আবিরের চাকুরি জীবন।
পড়ালেখা করার পাশাপাশি আর অন্যসব দিকেও আবিরের ছিল দেখার মত পারদর্শীতা।খেলাধুলা,গান বাজনা,মুভি দেখা,আড্ডা দেওয়া এসবের পাশাপাশি সামাজিক
মাধ্যম গুলোতেও নিয়মিত ছিল আবির।তাই নতুন চাকরিতে মনোযোগ দিতে একটু হলেও কষ্ট করতে হচ্ছে আবিরকে।। যাই হোক এবার ফিরে আসি গল্পের ঠিকানায়।
সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অফিস শেষে একটুখানি বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর রাতে ঘুমানোর আগে ফেসবুকে ঢু মারা এই ছিল আবিরের নিত্যদিনের রুটিন।ফেসবুকে
মোটামুটিভাবে পরিচিতই ছিল সে।এর কারন ছিল তার অসাধারণ গল্প আর চমৎকার কিছু ছন্দময় কথা।এসবের কারনে অনেকের সাথেই সখ্যতা গড়ে উঠেছিল
আবিরের।তাদের মধ্যেই একজন হল নীলিমা।দুজনেই দুজনার সব কথা একে অপরকে শেয়ার করতো।মন খারাপের দিনগুলিতে একজন আর একজনকে হাসার
জন্যে নিজস্ব মেধা কাজে লাগাত।সত্যি বলতে তাদের দিনগুলি যেন তাদের ক্যানভাসে সাজানো রংতুলির মতোই অতিবাহিত হচ্ছিল।এতদিনের পরিচয়েও কেউ
কাউকে দেখেনি।ইদানিং আবির দেখা করতে চাইলেও নীলিমা নানা অজুহাতে এড়িয়ে যেত।তবে আবির কিছু বুঝতে পারতো যে ওর মনে অন্য কিছু চলছে নীলিমার
জন্যে।বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিছু।তাই একদিন বলেই ফেলল….
>আচ্ছা আপনি আমার সাথে দেখা করতে চান না কেন???(আবির)
>না তেমন কিছু না। আমি চাই আপনি নিজ থেকেই আমাকে খুজে বের করুন।আর দেখা তো হয়েই যাবে একদিন না একদিন।
>না।আমি বলতে চাচ্ছিলাম কি আমার কাছে তো আপনার অনেকককিছু পাওনা আছে তো।আর আমি কেউ কিছু পেলে সেটা না দিয়ে থাকতে পারি না।…
>তা মহাশয় আজ হঠাৎ ঋণ শোধ নিয়ে পড়লেন কেন????
>না তেমন কোন কারন নাই।সত্যি কথা বলতে কি আপনাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিল তো তাই!!!
>আরে বাহ।প্রথমে আমার কথা শুনতে খুব ইচ্ছে করতো সেটা পূরণ করেছি বলে আপনি কি ভেবেছেন আপনার এই ইচ্ছেটাও পূরণ করবো????
>আচ্ছা ঠিক আছে।আমাকে যে ট্রিট দেবার কথা ছিল সেটা দিয়ে দেন তাহলেই হবে।।
> আপনার তো দেখি অনেক বুদ্ধি!!ঠিক আছে ট্রিট পেয়ে যাবেন।সময় আর জায়গা আমি আপনাকে বলে দিব।..
আবিরের আনন্দ আর দেখে কে!!!
তবে একটা কথা বকে রাখা ভাল এতদিনের পরিচয়ে কেউ কাউকে তুমি বলেনি।হয়তো বলার প্রয়োজন বলে মনে করেনি।..
যাই হোক খুশি মনে অফিসে বসে কাজ করছিল।এমন সময় মেডামের পিএ একটা প্যাকেট এনে হাতে ধরিয়ে দিল।বললো -এটা মেডাম আপনার কাজের উপর খুশি
হয়ে আপনাকে দিয়েছে।এই মেডামের ব্যাপারটাও আবিরের মাথায় ঢোকে না। চাকরি পাওয়ার পর থেকেই না মেডামকে ও দেখেছে না মেডাম ওকে দেখেছে।
তারপরেও মেডাম ওকে গিফট দেয়।এটা অবশ্য আবিরের খারাপ লাগে না।কারণ গিফট হিসেবে সে তার পছন্দের লেখকের বই গুলোয় পায়।আজও হয়তোবা তার
বিপরীত কিছু হবে না।আবির কিছু একটা চিন্তা করলো তারপর বললো আমি কি একবার মেডামের সাথে দেখা করতে পারি????
ওনি কিছুক্ষণ ভেবে বললেন আমি কথা বলে দেখি ওনি কি বলেন।।।
এই বলে ওনি চলে গিয়ে কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসলেন
>ওনি আপনার সাথে দেখা করবেন তবে বেশি সময় দিতে পারবেন না। পরে আপনাকে আবার সময় দিবে ওনি..
>ঠিক আছে কোন সমস্যা নাই।..
আবির অনুমতি নিয়ে রুমে ঢুকলো।রুমে ঢুকেই সে হতবাক।তার থেকে কম বয়সী মেয়ে বসে আছে।তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে মেয়েটির সৌন্দর্য দেখে।এত
মায়াবী আর পটলচেরা নয়নধারী কাউকে দেখবে সে কল্পনাও করতে পারে নি।।
যাই হোক আবির চেয়ারে গিয়ে বসলো।তার কথা বলার ক্ষমতাটুকুও মনে হয় চলে গেছে।মেয়েটির সরি মেডামের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার শক্তিটুকু মনে হয়
শুষে নিয়েছে কেউ।
>মেডামের স্বরে যেন বাস্তবে ফিরলো আবির।স্বর বললে ভুল হবে ওনি গলা পরিষ্কারের শব্দ করেছিল।
আবির মেডামের দিকে তাকিয়ে দেখে মেডাম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আবির কোথা থেকে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছে না।..
>আসলে মেডাম আপনার সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল।তাই দেখা করতে আসলাম।আজ আসি পরে আর একদিন কথা হবে।
এই বলে একরকম তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে আসলো।
ডেস্কে এসে আবির ভাবতে লাগলো আমি আজ কি দেখলাম!!!!!!
তখনি মেসেজ আসলো নীলিমার।
কাল ৪.৫০.ইকো পার্ক।।।
বিষ্ময় আর আনন্দে দিশেহারা আবির।আপাতত মেডামের চিন্তা বাদ দিয়ে নীলিমার কথা ভাবতে লাগলো।আর প্রহর গুনতে শুরু করলো পরদিন বিকেলবেলার।।।অন
েক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে মনে হল বিকেল হল।আজকে প্রথম দেখা তাই আবির অনেক আগেই পার্কে গিয়ে হাজির হলো।অপেক্ষা করতে করতে সামনে
একটা গাড়ি এসে দাড়ালো।সেখান থেকে একটি মেয়ে নামলো।আরে একি!!!! মেডাম এখানে কেন??? কোন কিছু না ভেবে আবির রুমালে মুখ আড়াল করে পিছনে
চলে গেল।তারপর আবির দেখলো মেডাম একটা গাছের নিচে গিয়ে বসলো।আবির ফোন বের করে নীলিমার ফোনে কল দিল।ও অবাক হয়ে দেখলো মেডাম পার্স
থেকে ফোন বের করছে।এটা দেখার পরে ও আর ওখানে থাকে নি।ফোন বন্ধ করে চলে গেল।এদিকে নীলিমা ফোন দিয়েই চলেছে।।।তারপরে যা হয় আরকি একটা
স্যাড মুহূর্ত শুরু হয়ে গেল যেটা আমি লিখতে পারবো না।আবির জব ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে।এদিকে আবিরকে প্রচন্ড মিস করতে শুরু করেছে নীলিমা। আবির নিজের
বাসাও পরিবর্তন করেছে যার কারণে ওর সাথে কোনরকম যোগাযোগ করতে পারছে না।
এদিকে আবির গ্রামের বাড়ি চলে এসেছে। ও আসলে কিছু মিলাতে পারছিল না।নীলিমার সাথে কখনোই ওর কিছু হবে না।সন্ধ্যার দিকে এসে দেখে ওর অফিসের পিএ
বারান্দায় বসে আছে আর বাড়িটা সাজানো।আবিরের মা বললো ওরা আমাকে সব বলেছে।আর বউমাকেও আমার ভাল লেগেছে।
>কিন্তু মা তুমি সবটা জানো না!!!!
>কে বললো!!বউমা আমাকে সব বলেছে।
এতকিছু বুঝি না আজ তোর বিয়ে।ঠিকাছে।
কি আর করা বুঝলাম মায়ের ব্রেনটা ওয়াশ করা হয়ে গেছে।আর আমি মায়ের কথার অবাধ্য হই না।
অবশেষে পরিণতি আজকের এই দিন।
বাসর ঘরে ঢুকে দেখি বউ কিসের ঘাটের উপর থাকবে তা না বউ কোমড়ে হাত দিয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।
> আপনার জন্যে আমি প্রথম থেকে এতকিছু করলাম।আর আপনি আমাকে না বলে হাওয়া হয়ে গেছিলেন।
>না আসলে…..
>আর কিছু বলতে হবে না।আপনি না পাওনা কিছু রাখেন ও না আবার রাখতেও দেন না।আজকেই আমি সব দেনা পাওনার হিসাব মেটাতে চাই।
>আজকেই!!!!!….
তার পরের কিছু আর বলার অপেক্ষা রাখে না।এভাবেই শুরু হল নতুন একটি ক্যানভাসের যেখানে দুটি স্বপ্নের রং এক তুলিতে মেখেছে।