হলুদ পিপাসা

হলুদ পিপাসা

– তোমাকে আমি যে কথা গুলো বলব তা তুমি মন দিয়ে শুনবে তারপর ডিসিশন নেবে।
ঐশী নিশ্চই এমন কিছু বলবে,যেটা আমি ধারনা করতে পারব না যে ও এই কথা বলতে পারে।
এরকম বলছি কারন ঐশী এর আগে যতবার আমাকে এই ভাবে বলেছে ততবার ই এমন কিছু বলেছে যা আমার হজম করতে খুব কষ্ট হয়েছে।
.
তাই আমি একটু খাবড়ে গেলাম।আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে। কপালে হয় তো বিন্দু বিন্দু জল জমেছে।আমার মস্তিষ্কের নিউরনে দ্রুত ইলেক্ট্রন চলাচল করছে।আমি আগ্রহ নিয়ে ঐশীর দিকে তাকিয়ে আছি ও কি এমন বলবে।
.
– শুভ্র।
– হাঁ।
– আমার ব্যাপারে তুমি অনেক কিছু জান না।যা আমি তোমাকে আজ জানাতে চাই।কিন্তু সত্যি এটাই আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি।তাই সব টা জানাতে চাই তোমাকে।
– ভালবাসতে হলে কি সব টা জানা জরুরি।আমি যেটুকু জানি সেটুকু কি যথেষ্ট নয়।
– তোমার কাছে হয় ত যথেষ্ট কিন্তু আমার কাছে না।
– ও–আচ্ছা।
– আমি একটা নষ্ট মেয়ে।আমি তোমাকে ধোকা দিতে চাই না।
.
কোন মেয়ে নিজেকে এই ভাবে নষ্ট বলতে পারে সেটা আমার জানা ছিল না।কোন ছেলে যদি নিজেকে নষ্ট বলে তাহলে সেটা ভাবা হয় ছেলেটা হয় তো নেশা করে,জুয়া খেলে ইত্যাদি।
আর কোন মেয়েকে যদি নষ্ট বলা হয় তাহলে সেটা হয় সেই মেয়ে টা শারিরিক সম্পর্কে লিপ্ত নয় তো কোন ছেলের সাথে পূর্বে তার সম্পর্ক ছিল।
আরও অনেক ভাবে মেয়েরা খারাপ হতে পারে কিন্তু মেয়েটা নষ্ট হয়ে গেছে এই কথা থেকে সবার মাথায় প্রথমে শারিরিক সম্পর্কের কথায় আসবে।
আমি এই সব ভেবে নিজে নিজেই চমকে উঠলাম।
.
– শুভ্র।
– হাঁ।
– আমি এক ছেলেকে ভালবাসতাম। তাকে আমার সব কিছু দিয়েছিলাম। কিন্তু…..
.
এই টুকু বলেই ঐশী থেমে গেল। আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না।যেই মেয়ে টা এক বছরের সম্পর্কে আমাকে হাত পর্যন্ত ধরতে দেয় নি সেই মেয়ে এই কথা বলছে।
.
ঐশী আবার বলতে শুরু করল মনে হয় কথা গুলো গুছিয়ে নিল।
– আমি তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ি। ছেলেটার নাম ছিল রাফি।আমি মনে করতাম রাফি আমাকে তার জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসে। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।সে আমার সাথে প্রায়ই শারিরিক সম্পর্ক করতে চাইত।আমি রাজি ছিলাম না।তারপরে ও প্রায়ই এই কথা বলতে থাকে।এক পর্যায়ে আমি ভালবাসার জন্য রাজি হয়ে যাই।
.
ঐশী একটু থামল হয় ত চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করছে।আমি শুধু মন্ত্র মুগ্ধের মত শুনে যাচ্ছি।
.
– আমাকে রুমে নিয়ে গিয়ে ও যখন আমার হাতে প্রথম হাত রাখল তখনও আমি ওকে বলেছিলাম,”রাফি এই সব না করলে হয় না।”রাফি বলল,এই সব কোন ব্যাপার না।”
.
ঐশী আবার থামল।
আমি গল্পের শেষটা জানার জন্য খুব আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম।
আমি আগ্রহ নিয়ে বললাম,তার পর তারপর।
– আমাদের মিলন হল।তার কিছুদিন পরে রাফি আমাকে ই-মেইল করে একটা ভিডিও পাঠাল।আর বলল আমি যদি ওকে দশ লাক্ষ টাকা না দেয় তাহলে এই ভিডিও ইন্টার নেট এ দিয়ে দেবে।
আমি লজ্জা,ঘৃনা,আর অপমানে মরে যেতে চাইলাম।সেদিন রাতে আমি আত্মহত্যা করার জন্য কয়েক পাতা ঘুমের বড়ি কিনে আনলাম।
.
ঐশী আবার থেমে গেল।আমি নিজে একজন ছেলে এটা ভাবতে আমার খারাপ লাগল।একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালবেসে এই ধরনের আচরন করতে পারে তা আমি স্বপ্নেও ভাবি নি।
.
– তারপর কি হল ঐশী।
– ঐ দিন রাতে আমার বাবা আমার ঘরে আসলেন।আমার মা কে আমি কোন দিন দেখি নি।আমার বাবা আমাকে অনেক ভালবাসতেন।তাই তিনি দ্বীতীয় বিয়ে করেন নি।বাবাকে দেখে আমি কেদেঁ ফেললাম।তখন কেদেঁ ফেলে আমি অনেক বড় ভুল করেছিলাম।বাবা বুঝতে পেরেছিলেন আমি অনেক কষ্টে আছি।বাবা বললেন,মা রে পৃথীবিটা অনেক বিচিত্র,এখানের সব কিছুই বিচিত্র।
একটা ফুলের বাগান ঝড়ে নষ্ট করে দিয়েছে বলে মন ভেঙ্গে ফেল না।তাহলে তোমার হাতে যে আরেক টা নতুন ফুলের বাগান তৈরি হত সেটা হবে না।
আমি সারা রাত ভাবলাম একটা খারাপ মানুষের জন্য নিজের জীবন শেষ করে দেব।আমি বাবার কাছে থেকে টাকা নিয়ে ছেলেটা কে দিতে গেলাম।বাবা অদভুত ভাবে আমাকে কোন প্রশ্ন ছাড়াই টাকা দিয়ে দিলেন।আমি টাকা নিয়ে যথা স্থানে দাড়িয়ে ছিলাম।
.
ঐশী আবারো থেমে গেছে।আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম ঐশীর মাঝে যে দুর্বলতা টা ছিল সেটা এখন নেই ওকে বেশ সতেজ মনে হচ্ছে।শিশির ভেজা গোলাপ কে সতেজ মনে হয়।মানুষ কে সতেজ দেখা যায় এটা প্রথম দেখলাম।
.
ঐশী বলল,আমার সামনে একটা এক্সিডেন্ট হল।সবাই দৌড়ে গেল।আমি গেলাম গিয়ে দেখি,রাফি রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে। গাড়ির চাকা টা ঠিক ওর মাজার উপর দিয়ে গেছে।ওহ আমার চোখের সামনে মারা গেল।আমার একটু ও দুক্ষ লাগল না।মানুষের মৃত্যুতে যে একজন মানুষ হাসতে পারে সেই প্রথম আমি জানলাম।আমি অনেক খুশি হলাম।
.
ঐশী একটা টানা নিঃশ্বাস নিল।
– তারপর আমি কাউকে বিশ্বাস করতাম না। তোমার সাথে দেখা হয়ে বুঝতে পারলাম।সব ছেলে এক নয়।আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।তাই তোমাকে ধোকা দিতে চাই নি।
.
আমি কি বলব বুঝতে পারছি না।মেয়েটার উপর দয়া হচ্ছে যে ওর সাথে অন্যায় হয়েছে।আবার রাগ হচ্ছে যে ও আমাকে ধোকা দিয়েছে।
.
– তুমি কি আমাকে ভালবাসতে পারবে।
-তুমি কি আশা কর?
ঐশী কাদঁতে কাদঁতে বলল না।আশা করি না।
.
আমি উঠে চলে আসলাম।
পিছনে ফিরে তাকাতে ইচ্ছা করছে খুব।কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে না শুভ্র মেয়ে টা নষ্ট হয়ে গেছে।তুই সারা জীবন অনুশোচনা করবি।
আমার মন বলছে,শুভ্র মেয়েটা একবার ছেলেদের কাছ থেকে ধোকা খেয়েছে।তোকে সে বিশ্বাস করে তোকে ভালবাসে।সে কোন দিন তোর উপরে কথা বলবে না।
.
আমি মস্তিষ্ক আর মনের যুদ্ধ উপভোগ করছি অপেক্ষায় আছি কে জেতে। বাংলাদেশ ভারত ওয়ান ডে ম্যাচের চেয়েও বেশি উত্তেজিত হয়ে অপেক্ষা করছি কে জেতে দেখার জন্য।
.
রাত নয় টা।
আমি ফিরে এসেছি।
ঐশী এখনো বসে আছে।সোডিয়ামের হলুদ আলোয় ঐশীকে হলুদ পরীর মত লাগছে।
ওর চোখের পানিও হলুদ দেখাচ্ছে।
মানুষের চোখের পানি হলুদ অদভুত লাগার কথা।
কেন জানি লাগছে না।
.
আমি দেখেই চলেছি।আর ভাবছি ঐশী আমাকে দেখলে কি করবে।
আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদঁবে নাকি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে।
..
আমি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি ঐশী পিছন ফিরে তাকিয়ে আমাকে দেখে কি করবে সেটা দেখার জন্য।
.
..
………………………………………….সমাপ্ত………………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত