ডিভোর্সের সিদ্ধান্তটা কি তুমি ভেবে নিয়েছো?
– হুম।
– তাহলে তো আমার আর কিছুই বলার নেই।
– দীপা আনমোনা হয়ে বলল, তোমার তো কখনই কিছু বলার ছিলনা রাশেদ।
– রাশেদ কিছু না বলে চলে গেল।
রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে, রাশেদ বাড়ি ফিরছেনা। দীপার চোখে ঘুম নেই। খাটের একপাশে শুয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে। তার চোখের পানি গড়িয়ে গড়িয়ে বালিশে পড়ছে। বালিশ ভিজে যাচ্ছে। দীপা কিন্তু রাশেদকে ফোন দিয়েছিল কয়েকবার। প্রথম কয়েকবার ফোন বেজে গেছে। রাশেদ ফোন রিসিভ করেনি। তারপর থেকে ফোন অফ। কখন যেন চোখ দুইটা লেগে গেছিল তার। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে চমকে উঠল দীপা৷ রাত ১ টা বাজে। কোন কথা না বলেই দীপা দরজা খুলে দিল। রাশেদ ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দীপাকে জিজ্ঞেস করলো, রাত কয়টা বাজে?
– দীপা অবাক হয়ে বলল, এটা কি তোমার আমাকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ নাকি আমার তোমাকে করা উচিৎ?
– কার উচিৎ, কার অনুচিত সেসব পরে হবে। যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দাও।
– ১ টা বাজে।
-তাহলে এত রাতে তুমি জিজ্ঞেস না করে, আমার গলা না শুনে দরজা কেন খুললে?
– কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
– কিছুই বলতে চাচ্ছিনা। চোর ডাকাত ও তো হতে পারতো তাইনা? তোমার তো ক্ষতি ও করতে পারতো? এই বিষয় গুলো কতবার শিখাবো?এগুলার জন্যই তো রাগ করি আমি।
– ওহ! ভালো। আর তোমার লেট করে বাড়ি আসা টা? সেটা?
– প্রতিদিন তো লেট করিনা তাইনা? তুমি ঝগড়া করলে লেট করি।
– আমি ঝগড়া করলেই তুমি লেট করবা? কেন করবা? আমি তোমার সাথে আর সংসার করতে পারবোনা। আমি ডিভোর্স চাই। মুক্তি চাই।
বলার সাথে সাথেই রাশেদ কষিয়ে একটা চড় মারলো দীপার গালে। আচমকা থাপ্পড় টা সামলাতে না পেরে দীপা পরে গেল নিচে। কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর দীপা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। অনেকটা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, তুমি আমার গায়ে হাত তুললে? এটাই বাকী ছিল?এরপর আর সম্ভব না। আমি কাল ই চলে যাবো। তোমার মতো লোকের সাথে থাকা সম্ভব না। রাশেদ দীপার হাত ধরে টেনে তুলে আবার একটা থাপ্পড় দিল। তারপর দীপা বলল, আবার মারলে??
– হ্যাঁ, মারলাম। ভেবেছিলাম কখনো গায়ে হাত তুলবোনা? কিন্তু তুমি তুলিয়ে নিলে। মানছি, তুমি আমার থেকে অনেক ছোট, কিন্তু এটা ভূললে তো চলবেনা যে তুমি আমার বউ। তুমি শুধু আমার একার বউ না। আমার গোটা সংসারের বউ। আমার বাড়ির বউ। তাহলে তোমার মাঝে এত চাইল্ডিশ ন্যাচার কেন থাকবে??
– কি করেছি আমি রাশেদ? বল, তোমাকে বলতেই হবে?
– ডিভোর্স কথাটার মানে বোঝ? কেন তুমি কথায় কথায় বলবা, তোমার সাথে থাকবোনা, ডিভোর্স চাই, মুক্তি চাই- এসব কি? তুমি জানো এসব শুনে আমার কতটা অশান্তি হয়? কতবার বলেছি এসব বলবানা। ঝগড়া, মনোমালিন্য প্রত্যেকটা সংসারেই হয়। প্রত্যেকটা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই হয়। কোথাও কম কোথাও বেশী। তার মানে এই না যে কথাই কথাই ডিভোর্স এর কথা বলতে হবে?
দীপা চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। চোখের পানি টপটপ করে নিচে পড়ছে। রাশেদ দীপাকে কাছে টেনে নিতে চাইলে দীপা উল্টো দিকে সরে গেল। রাশেদ তখন জোড় করে দীপাকে কাছে টেনে নিয়ে দীপার কপালে একটা চুমু দিল। দীপা এইবার আর বাঁধা দিলনা। রাশেদ তারপর দীপাকে বলল,
– আর কখনো এই কথা টা বলনা দীপা। আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। সারাদিনের পরিশ্রমের পর বাড়ি এসে তোমার হাসি মুখটা না দেখলে আমার খুব অশান্তি লাগে। আর তুমি যতবার ঐ কথাটা বল, ততবার আমার বুকের ভেতরে যেন অস্বাভাবিক একটা কষ্ট হয়। দীপা রাশেদের দুই গাল দুই হাত দিয়ে ধরে বলল, স্যরি। আর কখনো বলবোনা। এইভাবে ভালবাসলে আর কখনোই বলবোনা।
– তারমানে কি আমি অন্যসময় ভালবাসিনা, তাই ঝগড়া করো?
– এই যে দেখলা? তুমি শুধু কথা প্যাঁচাও। আমাকে বল বাচ্চাদের মতো করি। তুমি যে এত ধেরে বুড়ো হয়ে ও বাচ্চাদের মতো করো সেটা?
– রাশেদ হেসে ফেলল। তারপর দীপাকে বলল, আমি স্যরি দীপা৷ আর কখনো তোমার গায়ে হাত তুলবোনা। আজকে মেজাজ টা ঠিক রাখতে পারিনি।
– চোখের পানি মুছে, ভেজা গলায় দীপা বলল, স্যরিতে কাজ হবেনা। আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।
– হুম যাবো। না বললেও যাবো। দুইজন বিছানায় শুয়ে আছে। দুইজনেরই ঘুমঘুম ভাব। কিন্তু এখনো পুরোপুরি ঘুমোয়নি। ঠিক তখন দীপা বলল, একটা সত্যি কথা বলবা?
– হুম বল।
-আচ্ছা আমি খুব পঁচা? আমার কোনকিছুই তোমার ভাললাগেনা তাইনা?
– ভাল না লাগলে ভালবাসি কেন?
– না তুমি ভাল তাই ভালবাস। ঐ বলোনা প্লিজ।
– সত্যি কথা বলবো?
– হুম।
– অনেক বেশী ভালো। এই সময়ে তোমার মতো মেয়ে খুব কম হয়। কিন্তু…
– কিন্তু কি?
– রাগ আর জেদ টা একটু বেশী।
– তাইনা? আর নিজের? তোমার বুঝি রাগ আর জেদই নেই?
– রাশেদ বলল, এই দেখলা? সত্যি কথা বললেই দোষ?
– তারপর দীপা ও হেসে ফেললো। দীপা বললো, শোননা। তুমি তো জানোই আমি একটু হুটহাট করে রেগে যাই, উল্টা পাল্টা কথা বলি, ওসব তুমি ধরবানা ওকে? বিশ্বাস করো, আমি মন থেকে ওরকম না। তুমি আমাকে এভাবেই সাপোর্ট দিও প্লিজ৷ এভাবেই ভালবাসা, শাসন দিয়ে আমার ভুল গুলো আমাকে ধরিয়ে দিও।
– হুম। তুমি আমার বউ না?
– হুম। ওকে ঘুমাই এখন। তুমি আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও। যখন দেখবা আমি ঘুমিয়ে গেছি, তখন তুমি ঘুমাবা ওকে?
– হুম, ঘুমাও। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
দীপা ঘুমিয়ে যায়। তারপর রাশেদও ঘুমিয়ে যায়। রাত টা শেষ হয়ে নতুন ভোর হাতছানি দেয়। তারপর আবার এক রাত আসে। তাদের টক মিষ্টি ভালবাসা টা ও চলতেই থাকে।