রাত ১২:০০টা বেজে গেছে।কিন্তু বাড়ি যেতে ভয় লাগছে।কি করবো বলুন.? ঘরে দু-বছরের পুরনো বউ। বিয়ের এক মাস পর থেকেই যেটুকু পারে,সেটুকু নিয়েই সাজিয়ে গুছিয়ে আয়েশ করে বসে থাকে।কিছু বলতে গেলেই,আমি আকাইম্মা,বলদ,নির্বোধ বলে কিছু মিষ্টি শব্দ শুনিয়ে দিবে।কিন্তু রাগ করেনি কখনো।
এক-পা,দু-পা করে ঘরে ঢুকলাম।অন্ধকার ঘর।ধুপকাঠির মৃদু গন্ধ ভেসে আসছে হাওয়াতে,যেটা আমার খুবই পছন্দ।
ঘরে ঢুকেই বাতিটা অন করলাম।দেখি,আমার বিবিসাহেবা একখানা শীতল পাটি পেতে ভাত-তরকারী সাজিয়ে বসে আছে।ইদানীং ওর সৌন্দর্য অবলোকন করা হয়না।
আমি প্লেটের ঢাকনা সরিয়ে দেখলাম লাউয়ের ডাটা চচ্চড়ি আর আলু ভর্তা। ওকে জিজ্ঞেস করলাম আজও কেন না খেয়ে বসে আছে। উত্তর সেই একই,আমার সাথে খাবে। রোজ ও আমাকেই আগে হাতে করে খাইয়ে দেয়।এক মুঠো ভাত আর ভর্তা আমার মুখে পুরে দিয়ে ও চচ্চড়ি তুলতে গেল।
ভর্তা ভাতটা মুখে দিয়ে মনে হল ভাত আর গিরিশ খাচ্ছি।
ওকে জিজ্ঞেস করলাম,”আজও ঝাল-লবন কিছুই হইনি”
সখী উত্তর দিলো,-“তিনদিন ধরে বলছি তোমায়,ঝাল-লবন ফুরিয়ে গেছে।তুমি তো আনতে পারছো না।আমি কি করবো বলো.??”
তাকে বললাম-সখী আমার,চিন্তা কোরো না,কাল অবশ্যই আনার চেষ্টা করবো।”
সখী উত্তর দিলো,-থাক হে সখা,এ সংসারে আমাদের চাউল কেনা পয়সায় হয়না, ঝাল-পিয়াজ তো দু:স্বপ্ন।এসো হে প্রিয়,তোমার বুকটাতে একটু মাথা রেখে শান্তি করে ঘুমায়.।””
#এই যে সুশীল সমাজের জনাব, আমাদের রোমান্টিক প্রেমালাপ শুনতে এসে কি ব্যর্থ হলেন.? কি করবো বলুন-আমি এক সামান্য রিকশাচালক।এ সংসারে ওই বউটা ছাড়া কেউ নেই।রোজ রিকশা টেনে চাউল কেনা পয়সাও হয়না।তাই লজ্জা আর ভয়ে রাত করে বাড়ি ফিরি। রোজ এভাবেই কিছু ঝাল-লবন-পেয়াজ-তেলের অভাবের পরিমান হিসেব করে আমাদের প্রেমালাপ শুরু হয়। বিস্বাদ খাবারটা মাঝে মাঝে গোগ্রাসে গিলে অথবা অখাদ্যটা না খেতে পেরে ক্ষুধার্ত শরীরটা এলিয়ে দিয়ে শেষ হয় আমাদের রোমান্টিকতা।
সে এক অন্যরকম রোমাঞ্চ।সে রোমাঞ্চ বোঝার ক্ষমতা আপনাদের নেই।থাকলে আমার মত স্ব-চেষ্টায় বিয়ে পাশ করা ছেলেটা রিকশা টেনে অভুক্ত থাকতো না। আপনাদের আছে মিটিং-মিছিল-হেন তেন দিবস পালনের জন্য আলাদা তহবিল গচ্ছিত রাখার ক্ষমতা।