“বাবা, তোমার কাছে কখনো আবদার করে কিছু চাইনি। আজ চাইছি। আমার বিয়ে গরীব ঘরের মুর্খ ছেলের সাথে দিবা। তবুও কোনো ধনীর ঘরে দিবা না।” তাহের উদ্দীনের সামনে মাথা নিচু করে একনাগাড়ে কথাগুলো বলল তার ছোট মেয়ে নূরী। তারপর কোনো কিছুর অপেক্ষা না করে চুপচাপ চলে গেল। বেশ অবাক হলেন তাহের উদ্দীন। তার দুই মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে লাজুক ও ভদ্র নূরী। মুখ ফুটে কখনো কিছু বলেনি। তবে আজ হঠাৎ কেন নিজের মুখে বিয়ে কথা বলল? আর এটা কেন বলল যে বিয়ে গরীব ঘরে দিতে? তাহের উদ্দীন বেশ চিন্তায় পড়লেন।
গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি আহামরি অর্থ সম্পদ না বানালেও মেয়ে দুটাকে শিক্ষিত করেছেন। বড় মেয়েকে রুনীকে মাস্টার্স করিয়েছেন। ছোট মেয়ে ডাক্তারি পড়ছে। মাস ছয়েক আগে রুনীর বিয়ে দিয়েছেন। ধনাঢ্য পরিবারের শিক্ষিত ছেলে। সংসারে কোনো কিছুর অভাব নেই। বেশ সুখেই আছে তারা। নূরীর ডাকে তাহের উদ্দীনের চিন্তা ভাবনায় ছেদ পড়লো। “মা ডাকছে। খেতে এসো বাবা।” এক নজর নূরীর দিকে তাকিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠলেন তিনি। তারপর তিনজন মিলে খাবার খেলেন। রাতে ঘুমানোর সময় স্ত্রী সাহেলা বানুর সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করলেন। সাহেলা বানু বললেন, “এতে চিন্তার কী আছে? হয়তো মেয়ের মনে পছন্দের কেউ আছে। তুমি চিন্তা করো না। আমি ওর সাথে আলাপ করব।”
বিছানায় শুয়ে আছে নূরী। কিছুতেই ঘুম আসছে না। এপাশ ওপাশ করছে শুধু। গত সপ্তাহ তার দুলাভাই উসমান একটা পার্টি দিয়েছিল। পার্টিতে শুধু ভাইবোন ও বন্ধুবান্ধব ছিল। অর্থাৎ অভিভাবক ছিল না। সেখানে তার দুলাভাইয়ের সাথে একটা মেয়ে সার্বক্ষণিক ছিল। দুলাভাইয়ের হাত মেয়েটার কোমড়ে ছিল। ব্যাপারটা নিয়ে যখন রুনীর সাথে আলাপ করলে সে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার বলে এড়িয়ে গিয়েছিল। তবে নূরী তার বোনের চোখে স্পষ্ট কষ্ট ও লজ্জা দেখেছিল। বোনকে বিব্রত না করতে নূরী আর কথা বাড়ায়নি।
এমনিতেই ছোট থেকে নূরী ধনীদের খুব একটা দেখতে পারে না। আর গতকালের পর থেকে তো ঘৃণা জন্ম নিয়েছে। ধনী হলে কি মানুষের বুদ্ধিমত্তা লোপ পায়? যেখানে স্ত্রী থাকার কথা সেখানে পরনারী কিভাবে ঠাঁই পায়? নূরী বুঝে গেছে যে তার বোনের সংসারে কোনো কিছুর অভাব না থাকলেও ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সম্মানের অভাব আছে। এমনটা যাতে তার সাথে না হয়, তাই লজ্জা ভুলে নূরী তার বাবাকে কথাগুলো বলেছিল। কেননা সে জানে মেডিকেল পরীক্ষা শেষ হতেই তার বাবা পাত্র দেখা শুরু করবেন।
আজ তাহের উদ্দীনের বেশ খুশি। এমজেবি সাপ্লায়ার্স নামক একটা বিদেশী কোম্পানির কাছ থেকে বড় অর্ডার পেয়েছেন। সবকিছু ভালো হলে মালামাল বাবদ বেশ মোটা অংকের টাকা লাভ হবে। এতে নূরীর বিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই করতে পারবেন। এমজেবির অফিস থেকে বের হচ্ছেন তাহের উদ্দীন ও তার ম্যানেজার আসাদ। গাড়িতে উঠে তাহের উদ্দীন খবরটা প্রথমে স্ত্রীকে দিলেন। তারপর বড় মেয়ে রুনীকে ফোন দিয়ে জানালেন। তারপর আর কাউকে জানাননি। হাসিখুশি মুখ মুহূর্তেই কালো হয়ে গেল। তা দেখে আসাদ বলল, “কোনো সমস্যা স্যার?” তেমন কিছু নয় বলে গম্ভীর ভাব নিয়ে গাড়ির পেছন সিটে বসে রইলেন তিনি। বেশ কিছুক্ষণ পর একটা অস্পষ্ট শব্দ করে বুকে হাত দিলেন তিনি।
তা দেখে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে থাকা আসাদ বলল, “কী হয়েছে স্যার?” জবাবে আসাদ শুধু হাসপাতাল শব্দটা শুনতে পেল। আসাদ ভাবলো স্যারের হয়তো হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ড্রাইভারকে হাসপাতালে নিতে বলল আসাদ। জ্ঞান হারানোর আগে তাহের উদ্দীন শুনলেন আসাদকে প্রস্তাব দিয়ে ড্রাইভার বলল, “আসাদ ভাই গাড়িতে বেশ মোটা অংকের টাকা আছে। চলেন ফিফটি ফিফটি করি। স্যার তো কিছুক্ষণ পরেই মারা যাবেন। কেউ কিছু জানতে পারবে না। জীবনের সব অভাব দূর হয়ে যাবে। এমন সুযোগে আর পাবো না।” এরপর আর কিছু শুনতে পাননি তাহের উদ্দীন। শুধু বুঝেছেন গাড়িটা থেমেছে।
চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলেন তাহের উদ্দীনের। অশ্রুসিক্ত চোখে তার স্ত্রী ও বড় মেয়ে পাশে বসে আছে। নূরী সাদা এপ্রোন পরে কিছু কাগজপত্র দেখছে। বাবাকে চোখ খুলতে দেখেই নার্ভ চেক করলো। তারপর কেবিনের বাইরে চলে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর গাড়ির ঘটনা ও টাকার কথা মনে পড়লো তাহের উদ্দীনের। এমজেবির অফিস থেকে অর্ডার স্বরূপ টাকাগুলো পেয়েছিলেন। বহু কষ্টে শক্তি সঞ্চার করে তাহের উদ্দীন বললেন, “আমি হাসপাতালে এলাম কীভাবে?” আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সাহেলা বানু বললেন, “তোমার ম্যানেজার আসাদ ফোন করে জানিয়েছিল।”
– ও কোথায়?
– বাইরেই আছে।
– ওকে ডাকো।
রুনী বলে উঠলো, “আহা! বাবা এখন নয়। এখন বিশ্রাম নাও।” তাহের উদ্দীন কিছু বলতে যাবে তখনই কেবিনের দরজা খুলে ডাক্তার, নূরী ও আসাদ প্রবেশ করলো। চেকআপ করে ডাক্তার বললেন‚ “আপনি ভাগ্যবান যে হার্ট অ্যাটাকের পরেও আপনার সবকিছু একেবারে স্বাভাবিক আছে। আগামীকাল ডিসচার্জ করে দিব। তবে এক মাস সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। নূরী তুমি আমার সাথে এসো। ফর্মালিটি গুলো শেষে করে নাও।” ডাক্তারের সাথে নূরী চলে গেল। আসাদের হাতে ব্যাগ দেখে তাহের উদ্দীন বেশ অবাক হলেন। “তোমরা একটু বাইরে যাও। আসাদের সাথে আমার কিছু কথা আছে।” স্ত্রী ও মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন তাহের উদ্দীন। সাহেলা বানু কিছু বলতে যাবেন, তখনই রুনী বাধা দিলো। তারপর মাকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।
আসাদের মুখ থেকে গাড়ির বাকি ঘটনা শুনে অবাক হয়ে গেলেন তাহের উদ্দীন। ড্রাইভারের অন্তরে লোভ দেখে আসাদ সুরে সুর মিলিয়ে হ্যাঁ বলে দেয়। কেননা গাড়ির নিয়ন্ত্রণ তো ড্রাইভারের হাতে। রাজি না হলে বিপদ নিশ্চিত। পুলিশ বক্স দেখে গাড়ি থামাতে বলে। ড্রাইভার বুঝেনি যে আসাদের মনে অন্যকিছু। ড্রাইভারকে পুলিশে দিয়ে গাড়ি নিয়ে আসাদ হাসপাতালে চলে আসে। ড্রাইভিং সেও পারে। সবকিছু বলার পর আসাদ জিজ্ঞেস করলো, “এই অর্ডার পেয়ে তো আপনি খুশি ছিলেন। তবে অ্যাটাক আসলো কেন? কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন?” ভাগ্যের লিখন বললেন তাহের উদ্দীন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি বললেন, “একটা অনুরোধ করবো, রাখবে?” “লজ্জা দিচ্ছেন স্যার। অনুরোধ নয়, আদেশ করুন।” খানিকটা সময় নিয়ে তিনি বললেন, “আমার ছোট মেয়েকে বিয়ে করবে?”
বেশ ধুমধামের সাথে নূরীর বিয়ে হলো। বর আর কেউ নয়, আসাদ-ই। নূরীও দ্বিমত করেনি। খুশি মনেই বিয়ে করেছে। শুধু আফসোস যে পড়ালেখাটা শেষ করতে পারেনি। ডাক্তার বলেছেন তাহের উদ্দীন যেন সবসময়ই হাসিখুশি থাকেন। তাই বিয়ের কথা বলায় নূরী শুধু মাথা দুলিয়েছিল। তাহের উদ্দীন হাসিখুশিই আছেন। তবে বুকের মধ্যে একটা আফসোস আছে যে বড় মেয়ে রুনীর বিয়েটা ধনী পরিবারের শিক্ষিত ছেলের সাথে দিলেও ভালো ছেলের সাথে দিতে পারেননি। হার্ট অ্যাটাকের দিন গাড়িতে উঠে যখন রুনীকে ফোন করে খুশির কথা বলছিলেন। তখন হঠাৎই রুনীর চিত্কার চেঁচামেচি ভেসে আসছিল।
মনে হলো কেউ রুনীর ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে। কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারেন ওটা রুনীর স্বামী উসমান। রুনী বারবার করুণার সুরে বলেছিল, “একটু সময় দাও। ফোনে বাবা আছে। আমি ফোনটা কেটে দেই।” কিন্তু উসমান কোনো কথাই শুনতে রাজি ছিল না। সে নিজের চাহিদা মিটাতে ব্যস্ত। লজ্জায় তাহের উদ্দীন নিজেই ফোন কেটে দিয়েছিলেন। মেয়েকে এমন পশুর কাছে বিয়ে দিয়েছেন যে স্ত্রীর মর্যাদাও দিতে জানে না। এই কষ্ট সহ্য করতে পারেননি। তাই হার্ট অ্যাটাক করে বসেন। আসাদের সততায় মুগ্ধ হয়ে নূরীকে তার হাতে তুলে দিয়েছেন। এছাড়াও আসাদ আল্লাহ ভীরু। নামাজ কালাম ঠিকমতো পড়ে। এমন ছেলে উসমানের মতো হবে না এই আশায় নূরীর বিয়েটা দিয়েছেন।
বিয়ের রাতেই নূরী উপলব্ধি করেছে তার বিয়েটা একজন আদর্শবানের সাথে হয়েছে। সেই সাথে এটাও বুঝেছে যে আসাদের চোখে সে স্ত্রী নয়, বসের মেয়ে। নূরীর পড়ালেখা বন্ধ হয়নি। বিয়ের এক সপ্তাহ পর একদিন আসাদ বলল, “অনেকদিন তো হলো কলেজে যান না। এবার মনে হয় কলেজ শুরু করা উচিত।” যতবারই আসাদ আপনি করে বলে ততবারই নূরী শাসায়। কিন্তু আসাদ শুধরাচ্ছে না। “কলেজ যেতে পারি, তবে আমার কিছু শর্ত আছে।” নূরীর এই কথা শুনে আসাদ কিছুটা বোকা হয়ে গেল।
তবুও স্বাভাবিক হয়ে বলল, “জ্বি বলুন।” মুচকি হাসি দিয়ে নূরী বলল, “প্রথমতো, আমাকে তুমি করে বলতে হবে। দ্বিতীয়তো, প্রতিদিন কলেজে দিয়ে আসতে হবে আবার নিয়েও আসতে হবে।” আসাদ হা করে তাকিয়ে রইলো। এ আবার কেমনে শর্ত? আসাদ বলল, “ঠিক আছে। তবে নিয়ে আসতে পারবো না। তখন অফিস টাইম।” নূরী কিছুটা রেগে বলল, “আমার কথা বললে বাবা ছুটি দিয়ে দিবে।” ব্যাগটা হাতে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে বাড়াতে আসাদ বলল, “এসব ব্যক্তিগত কাজের জন্য অফিস থেকে ছুটি চাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।” আসাদ প্রস্থান করলো। নূরী মুচকি মুচকি হাসলো। পরেরদিন থেকে নূরী কলেজ যাওয়া শুরু করলো। আসাদ দিয়ে আসে আবার নিয়েও আসে। নিজ ইচ্ছায় দিয়ে আসে তবে নিয়ে আসে তাহের উদ্দীনের নির্দেশে।
নূরীর মেডিকেল লাইফ শেষ হলো। পরীক্ষা দিয়েছে। এবার রেজাল্টের অপেক্ষা। তাই এখন ঘর সংসারে মনোযোগ দিলো। সবকিছু নিজের মতো করে সাজাতে লাগল। একদিন সকালে আসাদ যাওয়ার পর নূরী পুরো ঘর গুছালো। রাতে বাসায় এসে আসাদ নিজেই নিজের ঘর চিনতে পারছে না। এত সুন্দর সাজানো গোছানো দৃশ্য আগে কখনো দেখেনি সে।
একদিন অবসরের সময় নূরী বললো, “চলো আজ একটা মজার খেলা খেলি।” আসাদ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নূরীর দিকে তাকিয়ে রইল। নূরী আরও বলল, “আমি তোমাকে একটা শব্দ বলব। সে শব্দ শুনে তোমার মনে যা আসবে তা বলবে। সময় পাঁচ সেকেন্ড।” আসাদ রাজি হলো। নূরী একের পরে বিভিন্ন শব্দ বলতে লাগলো। বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব, পশুপাখি ইত্যাদি। এভাবে বলতে বলতে হঠাৎ নূরী নিজের নাম বলল। এটাই ছিল এই খেলার মূল উদ্দেশ্য। তাকে নিয়ে আসাদের মনে কি আছে তা জানতে চায়। আসাদ সাথেসাথে জবাব দিলো, “বসের মেয়ে।” ব্যাস নূরী ক্ষেপে গেল। খানিকটা আসাদের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল, “আমি বসের মেয়ে, হ্যাঁ?” আসাদ কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও হ্যাঁ সূচক মাথা দোলালো। এতে নূরী আরও রেগে গেল।
খানিকক্ষণ বাদেই পরিস্থিতি বদলে গেল। নূরী অঝোর ধারায় কান্না শুরু করলো। এতে আসাদ কিছুটা বোকা হয়ে গেল। “কি হলো? তুমি কাঁদছো কেন?” চোখের পানি মুছে নূরী বলল, “আমি তোমার কাছে বসের মেয়ে হয়ে থাকতে চাই না। আমি তোমার হৃদয়ে আমার জন্য স্ত্রীর স্থানটা চাই। ওটা কি আমার অধিকার নয়? আমি কি ভুল কিছু চাইছি?” নূরীর কথা শুনে আসাদ অবাক হয়ে বলল, “তার মানে তুমি আমাকে ভালোবাসো?” চেহারায় কান্না ও রাগের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ এনে আসাদের দিকে তাকালো নূরী। তারপর বলল, “নয়তো বিয়ে করতাম নাকি? আর এভাবে সংসার সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতাম নাকি?” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালার দিকে তাকিয়ে আসাদ বলল, “আসলে আমি ভেবেছিলাম এই বিয়েটা তোমাকে জোর করে দেওয়া হয়েছে। তাই তো কখনো স্বামীর অধিকার নিয়ে তোমার কাছে আসেনি।”
– এমনটা ভাবার কারণ কি?
– কেন ভাববো না? তুমি হলে ধনীর দুলালী। আর আমি তোমার বাবার গার্মেন্টসের একজন সাধারণ ম্যানেজার। শিক্ষাগত যোগ্যতাতেও তুমি আমার থেকে এগিয়ে। তোমার সাথে আমার কোনো দিক দিয়ে মিলে না।
একটা হাসি দিয়ে নূরী বলল, “বাহ, এসব মিলালে অথচ তোমার মনটাকে মিলালে না। তোমার মনের পবিত্রতা যে আমার থেকে হাজারগুন বেশি। তা কী তুমি জানো?” একটু থেমে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নূরী আরও বলল, “বাসর রাতে যখন তুমি নামাজের কথা বললে তখন আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। তারপর তুমি আমাকে যেদিন কলেজ যাওয়ার কথা বলেছিলে সেদিনই আমি তোমার প্রেমে পড়েছিলাম। সময়ের সাথে তোমার মনের সৌন্দর্য দেখে আমি বারবার প্রেমে পড়েছি। আমি তোমাকে মনে প্রাণে ভালোবাসি।
অন্তর দিয়ে তোমাকে স্বামী মানি। আর তোমার অন্তরে আমি স্ত্রী হিসাব থাকতে চাই, বসের মেয়ে হিসেবে নয়। এসব ধনী গরীবের ভেদাভেদ আমার কাছে কিছুই না। আমি শুধু তোমার কাছে স্ত্রীর সম্মান ও ভালোবাসা পেতে চাই।” একজন শ্রোতার মতো আসাদ চুপচাপ নূরীর কথাগুলো শুনলো। সে ভেবেছিল নূরী হয়তো তার বাবার পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে বিয়েতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু আজ আসাদের ভুল ভাঙলো। মেয়েটা তাকে খুশি মনেই বিয়ে করেছে। নূরীর কাছে এসে চোখের পানি মুছে আসাদ বলল, “আলমারিতে একটা নীল বেনারসি শাড়ি আছে। কিছু রং বেরঙের কাচের চুড়িও আছে। একটু সেজেগুজে আসবে? আমার না খুব ইচ্ছে ছিল বিয়ের পর বউয়ের সাথে একসাথে বসে জোছনা বিলাস করব।
যেখানে বউ নীল বেনারসি শাড়ি পরে আমার পাশে বসে থাকবে।” নূরী তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেল। নীল বেনারসি পরে আসাদের কাছে এলো। বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে আছে আসাদ। নূরীর জন্য পাশে আরেকটা চেয়ার আছে। নূপুরের শব্দ হতেই ঘাড় ঘুরিয়ে আসাদ তাকালো। মেয়েটা যে এত মায়াবী তা আগে কখনো খেয়ালই করেনি আসাদ। নীল শাড়িতে নূরীকে খুব মানিয়েছে। নূরী ধীরে ধীরে পা ফেলে চেয়ারের কাছে এলো। পাশের চেয়ারে না বসে আসাদের পাশেই বসে পড়লো। ঘটনায় বিস্মিত হলেও আসাদ সামান্য জায়গা করে দিলো। আসাদও আজ নূরীর স্পর্শ অনুভব করতে লাগল। দুজনে ভালোবাসার চাদরে একে অপরকে জড়িয়ে রাখলো।