– এইযে মিস. নিশান । (ফারিয়া)
– ওই নাক বুচি আমাকে মিস বললি কেন ?? (আমি)
– তুই তো মেয়ে তাই ।
– আর তুই তো ছেলে তাই না ??
– হুমম। তুই মেয়ে বলে সারা দিন ঘরে বসে থাকিস । আর আমি ছেলে বলে তোদের বাসা পর্যন্ত চলে এলাম তোকে দেখার জন্য ।
– আজাইরা বকিস না ।
– ওই আজাইরা কিরে ??
– ওই সারা দিন তো ঘরের মধ্যে বসে থাকস মেয়েটা আসছে তার সাথে ভালো ভাবে কথা না বলে এরকম করছিস কেনো ??? (মা)
কিছু না বলে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এলাম । ক্ষুধা লাগছে, এগারোটা বাজে পেটে কিছু নেই ।
এর মধ্যে প্রিয় শত্রু এসে হাজির ।
ও, এই শত্রুটা মানে শত্রু না সারাক্ষন আমার পিছে লেগে তো তাই বিরক্ত হয়ে শত্রু ডাকি । নাম কিন্তু ফারিয়া। আমার মায়ের বড় চাচার নাতনি আর বাকিটা ইতিহাস । বাসাটা আমাদের কাছে তাই প্রায় সময় এখানে আসে আর আমার জন্য নিয়ে আসে এক বস্তা বকা খাওয়ার সুযোগ । পড়ে আমার সাথে একই ভার্সিটিতে । শত্রুটাকে খুব ভালোও লাগে ।
– মা খেতে দাও ক্ষুধা পেয়েছে । (আমি)
– কি লাট সাহেব এখনো খায়নি ???(ফারিয়া)
– দয়া করে আপনি আমার পিছে লাগবেন না ।
– কেন সাহেব ।
– তুই গেলি নাকি মারই খাবি ??
– সাহস থাকে তো মার ।
– কি ডাকাত রে তুই । আমাকে ভয় দেখাস !!
-হুমম ডাকাতনি ।
– তোরা কি সারাদিন জগড়া করবি ?? (মা)
– এই ঝগড়াটে আসার পর থেকে আমার পিছে লেগে আছে । (আমি)
– তুই চুপ থাক ।
– ওমাগো কাকে কি বলি ??
– দূর হ এখান থেকে ।
এই শাঁকচুন্নি কে একেবারে মাথায় তুলে রেখেছে । সবাই ওর পক্ষে কিছু বলা যায় না।
নাস্তা করতে বসলাম টেবিলে এসে হাজির ।
– এই আমাকে একটু ঘুরতে নিয়ে যাবি ?? (ফারিয়া)
– তুই তো ছেলে তোকে কেন নিয়ে যাওয়া লাগে । (আমি)
– আরে দূরর
– তোর বয়ফ্রেন্ড কে বলতে পারস না ।
– আন্টি দেখ আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছে না ।
– ওরে তুই কি আন্টি ছাড়া কিছু বুঝসনা ।
– হিহিহি না । নাহলে তো তোর কাছ থেকে কিছু আদায় করা যায় না ।
– না জানি কখন আন্টিকে বলবে আমি তোমার ছেলে বিয়ে করবো । (বিড়বিড় করে বললাম)
– কিছু বললি ??
– না কিছু না ।
– নিয়ে যাবি তো
– না পারবো না
– আন্ট…. (মুখটা চেপে ধরলাম)
– নিয়ে যাবো নিয়ে যাবো ।
মাকে বললে যেতে তো হবেই সাথে বকা ও খেতে হবে । তারচেয়ে চেপে যাওয়া ভালো।
– আমার কাছে টাকা নাই তুই টাকা দিলে যাবো নইলে না ।
– আমি কেন টাকা দিবো । তুই নিয়ে যাবি তুই খরচ করবি
– আমার কাছে নেই বুঝতে চেষ্টা কর ।
– আন্টি…
– ওরে খোদা তুমি আমাকে উঠাই নাও না ক্যান ।
– তোর সাথে আমারেও উঠাই নিক ।
– তোর জ্বালায় আর বাঁচবোনা
– মরবিও না
কোনো কথাই কাজ হচ্ছে না । তাকে নিয়ে যেতেই হবে আজ, ছাড়াছাড়ি নেই মনে হচ্ছে ।
– বিকালে যাবো ।
– এইতো বাবু পথে এসেছে ।
– চুপ থাক ।
– রাগ করেনা সোনা ।
– আহা কত দরদ
– তোমার জন্য দরদ করবো নাতো কার জন্য করবো । হাজার হলেও আজ ঘুরতে নিয়ে যাবে ।
– যত জ্বলা আমার ।
– মাত্র শুরু ।
– আরো বাকী ?? তোর বিয়ে টিয়ে হবে না নাকি ??
– হবে তো ।
– আমাকে ছেড়ে তোর জামাই কে জ্বালা যা ।
– তার কাছেই তো আছি (একদম আস্তে করে)
– কিছু বললি ??
– না কিছু না ।
দুপুরে খাওয়া করে ঘুমালাম। ফারিয়া তখন মায়ের সাথে কথা বলছে ।
কী এত কথা বলে বিছু বুঝি না । আবার কিছুক্ষণ পর পর হেসে ওঠে । যাকগে ঘুম দিলাম একটা।
– ওই ওঠ
– হুমম
– ওঠ বলছি
– কি হইছে ??
– তুই না আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছিস ।
– আরে পারবোনা ঘুমাতে দে ।
– কি পারবিনা (মা)
– ওমা তুমি ????
– মেয়েটা তোর সাথে যাওয়ার জন্য এতক্ষণ অপেক্ষা করছে আর এখনও ঘুমাচ্ছিস । আর এখন বলছিস নিয়ে যেতে পারবিনা । (ধমক দিয়ে)
– নিয়ে যাবো তো দয়া করে আর চিৎকার করো না ভয় লাগে ।
– যা তাড়াতাড়ি
তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে বের হয়ে পড়লাম।
– কোথায় যাবি ??(আমি)
– একটু আদর করে বলো না গো !!(ফারিয়া)
– ওমাগো আপনার আবার কি হলো।
– তোমার সাথে ঘুরতে যাচ্ছি । কেউ দেখলে ভাববে প্রেমিক প্রেমিকা । সে ভাবে একটু ব্যবহার করলে সমস্যা কোথায় ।
– কেউ ভাবলে আমার কি ?? তুই কি আমার প্রেমিকা ??
– হলে কি সমস্যা ??
– তোর মত মেয়ে কে প্রেমিকা ??
আমার মাথায় ভূত চাপছে ?? এমনিতেই অবস্থা খারাপ করে দিস ।
– আমি কি খুব খারাপ ?? (কান্না ভাব)
মনে হচ্ছে কান্না করে দিবে । মন খারাপ হয়ে গেলো আমার ।
– একটা কথা বলতো, তুই আমাকে ভালোবাসিস ??
– নিচের দিকে তাকিয়ে শুধু মাথা নাড়লো ।
আমিওতো বাসি কিন্তু তাকে এত কষ্ট দিতে ভালো লাগবেনা । তার হাতটা ধরলাম ।
– আচ্ছা তোমার সাাথে ঘুরতে যাচ্ছি প্রেমিক প্রেমিকা মত ব্যবহার করলে সমস্যা কোথায় ।
– হ্যা সমস্যা । বরের মত ব্যবহার করতে হবে ।
– রাজি আছি ।
– এবার তো যেতে পারি
দুজনে হেসে উঠলাম । শুরু হল আরেক অর্থহীন নতুন ভালোবাসার গল্প ।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা