আজব প্রেম

আজব প্রেম

— আম্মু আজ কালকার যুগে কেউ কি এসব মানে! (আমি)
— হুম আমি মানি,আর যা বলছি তাই।
— আম্মু আমি পারবো না।

আমি এসব মানি না, ছোটবেলা তোমরা ওনাকে কথা দিছিলা আমি ওনার মেয়েকে বিয়ে করবো,,,,।আমি দেই নি। আর আমি এসব বুজতামও না।তাহলে কেনো না চিনে একটা মেয়েকে বিয়ে করবো.?

— তাহলে ওর সাথে পরিচিত হ।দেখা কর
—দেখ আম্মু আমি এসব পারবো না।
— ফারহান!
— হুম।(ফোন টিপতে টিপতে)
—একবার কথা বলেতো দেখতে পারিস।
— পরবো না!
— আমার জন্য,
— ইমোশনালি ব্লাকমেল করা বন্ধ করো।
— ফারহান!
— আচ্ছা দাও,একবারই কিন্তু!
— আচ্ছা।

তারপর আম্মুর থেকে নাম্বার নিয়ে ফোন দিলাম।প্রথম বার রিংহয়ে কেটে গেলো।আম্মুর জোড়াজুরিতে আবার ফোন দিলাম।রিং হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোনটা রিসিভ করলো।আম্মুও চলে গেলো।এমন একটা ভান ধরলো মনে হয় বৌ কে ফোন দিছি।যাই হোক…

— আস-সালামুআলাইকুম।(ফোনের ওপাশ থেকে)
— হুম,আমি ফারহান!
— জ্বী,আমি জানি।
— কিভাবে.?
— আপনার আম্মু নাম্বারটা দিছিলো।
— ও।
— কেমন আছেন.?
— হুম ভালো,
— আসলে আম্মুকে রান্না ঘরে হেল্প করছিলাম।তাই প্রথমবারে ফোনটা রিসিভ করতে পারি নাই।
— হুম।

আরো কিছুক্ষণ কথা হলো।জানতে পারলাম এই বার অনার্স ২য় বর্ষ। আমার থেকে ২ বছর জুনিয়র।আর আমার সম্পর্কে মোটামুটি সব কিছুই জানে। আম্মু নাকি বলছে। পরের দিন কলেজে গেলাম।প্রতিদিনের মতো আজও রাস্তার পাশের সেই দোকানটায় বসে আছি।হুম একজনের অপেক্ষায়। নাম সিমি।আমাদের কলেজেই পড়ে।২ বছর যাবৎ পিছনে পরে আছি তরপরও কোনো খবর নেই।খুব শান্ত একটা।এই পর্যন্ত দেখলাম না কোনো ফ্রেন্ড আছে।ভার্সিটিতে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম।সেদিনি ভালো লাগে।

কিন্তু অবাক করার ব্যাপার ছিলো এটা যে প্রথম যেদিন প্রপোজ করতে গিয়েছিলাম সেদিন একটা কাগজে লিখে দিয়েছিলো আমি কথা বলতে পারি না । তারপর আর ওই মেয়ের ধারে কাছে দিয়েও যাইনি।এরপর একদিন এক স্যারের সাথে দেখা করতে ওই ডিপার্টমেন্ট এর দিকে যাই তখন দেখি মেয়েটা স্যারের সাথে কথা বলছে।তখন ওই স্যার কে জিগ্যাসা করি!

— স্যার ওই মেয়েটা কি আপনার সাথে কথা বলছে.?
— কোন মেয়েটা.?
— ওই যে ওই মেয়েটা।
— ও, সিমি.?
— হুম।
— হ্যা কথা না বলার কি আছে!
— আমিতো জানতাম ওই মেয়েটা বোবা!
— আরে না,মজা করছে হয়তোবা।
— ও,আচ্ছা। আর স্যার আপনার এসাইনমেন্ট টা।
— হু দাও।

তারপর আবার পিছনে পড়ে আছি।এই পর্যন্ত একদিনও কথা বলে নাই আমার সাথে।আমি অনেকবার বলছি।প্রতিদিনি বলি। আজও চইলা আসছে।প্রতিদিনের মতো আজও পিছু নিলাম।

— আচ্ছা আমিতো জানিই তুমি কথা বলতে পারো তাহলে কথা বলো না কেনো.?
— এইভাবে চুপ থেকে কি প্রমান করতে চাও.?
— ভয় পাও নাকি কথা বল্লে প্রেমে পড়ে যাবা.!
— আরে দেয়ালের সাথেও যদি এতো কথা বলতাম তাহলে দেয়ালও কথা বলতো আমার সাথে।
— আরে কিছুতো বলো!
— এবার কথা না বল্লে কিন্তু জড়িয়ে ধরবো মাঝ রাস্তায়।

হঠাৎ থেমে গেলো।মনে হয় এবার কিছু বলবে।কিন্তু না রাগি একটা লুক দিয়ে আবার চলে গেলো। কলেজে চলে আসছি তাই আর কিছু বল্লাম না।ও ওর ডিপার্টমেন্টে আমি আমার ডিপার্টমেন্টে।কলেজে ঢুকতেই সানভির সাথে দেখা।

— কিরে আজ কথা বল্ল.?
— না!
— ট্রাই করতে থাক হয়ে যাবে।
— হুম,আবার আরেক ভেজাল শুরু হইছে।
— কি হইছে আবার!
— আরে বাসার সবাই একটা মেয়েকে নিয়ে পড়ে আছে(সব বল্লাম)।
— তো দেখা কর গিয়ে।
— মাথা খারাপ।গেয়ো ভূত হবে একটা।আমাদের গ্রামেরি।
—তুইওতো একটা সময় গ্রমেই ছিলি!
— এখন তো শহরে থাকি।
— বাদ দে,তোকে বুঝালেও বুজবি না।চল ক্লাসে যাই
— হুম,চল।

সেদিন ক্লাস করে বাসায় চলে আসি।সন্ধার পরে ওই মেয়েটি ফোন দিলো।ধরলাম না।তারপর আবার ফোন দিলো।মনে হলো ফোন রিসিভ না করা পর্যন্ত এভাবে ফোন দিয়েই যাবে।যাই হোক ফোন রিসিভ করলাম।

— হ্যালো কে.?(আমি)
— জ্বী আমি!
— ও,তা কেনো ফোন দিছেন.?
— এমনি,ভাবলাম আপনার খুজ নেই।
— আমি কোনো ছোট বাচ্চা নই যে খোজ নেয়া লাগবে।
— তারপরও ভাবলাম,কেমন আছে.?
— হুম ভালো
— কি করেন
— পড়তেছি
— ও আচ্ছা তাহলে পড়েন।পরে কথা হবে।

কথা শেষ না করতেই আমিই কেটে দিলাম ফোনটা।এমন সময় একটা ফ্রেন্ড দিয়ে বল্ল যে মামার দোকানে আড্ডা দিবে তাই সেখানে চলে আসতে।সেখান থেকে আড্ডা দিয়ে ফিরলাম রাত ১১ টায়।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ফোনটা হাতে নিয়ে ৪ টা মিসড কল। আবারো ফোন আসলো।রিসিভ করলাম।

— ব্যাস্ত ছিলেন বুজি.?
— হুম।(আমি)

এভাবে প্রতিদিন রাতে কথা হতো।আমার কোনো আগ্রহ ছিলো না ওর ব্যাপারে।ও যা জিগাসা করতো শুধু তারি উত্তর দিতাম এমন কি একদিনও জিগাসা পর্যন্ত করিনি আপনি কেমন আছপন।তারপরও কথা বলতো আমার সাথে।আমি তারপরও পাত্তা দিতাম না ওকে।যখন ওর সাথে ফোনে কথা বলতাম তখন হয় গেমস খেলতাম না হয় কারো সাথে চ্যাটিং না হয় ফেইসবুক ইউস করতাম।আর অন্য দিকে সিমির পিছনে পাগলের মতো ঘুরতাম।আসলে যার কাছে আমাদের কোনো মূল্য নেই আমার তার দিকেই আকর্ষিত।আর যার কাছে আমাদের মূল্য সবচেয়ে বেশি,আমাদের কাছে তার শূন্য।

একদিন কলেজ ক্যাম্পাসে সিমি কে দেখলাম সানভির সাথে কথা বলতে।আমার কিছুটা সন্দেহ হলো।তারপর থেকে সানভির উপর নজর রাখতে শুরু করি।ওরা মাঝে মাঝে দেখা করতো কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে। কিন্তু বেশিক্ষণ কথা বলতো।পাচ সাত মিনিটের মতো দাড়িয়ে কথা বলতো তারপর চলে যেতো।আমার সন্দেহটা দিন দিন বেরেই যাচ্ছিলো।একদিন ভিডিও করে রাখলাম ব্যাপারটা।তারপর সানভিকে দেখালাম।সানভি এই প্রথম আমার সমনে লজ্জায় মাথা উচু করে দাড়াতে পারছিলো না।সেদিন খুব রাগ হচ্ছিলো।ওকে খুব জোড়ে একটা চড় দিছিলাম।তারপরও কিছু বলে নাই সানভি।মাথা নিচু করে চলে গেছিলো।সেদিন সানভিকে খুব অচেনা মনে হচ্ছি।আমাদের প্রায় দশ বছরের ফ্রেন্ডশিপ ছিলো।কিন্তু এই প্রথম সানভি আমার সামনে মাথা তুলে তাকাতেও লজ্জা পাচ্ছিলো।
তারপরের দিন সিমির কাছে গেলাম।ক্যাম্পাসে বসে ছিলো।

— ওই হ্যালো.?
— (আমাকে দেখে কিছুটা অবাক হয়)
— এখনো কি নাটকটা শেষ হবে না!
— মানে !(সিমি) ভিডিওটা দেখালাম।আমার দিকে অবাক হয়ে অনেক্ষন তাকিয়ে ছিলো।আমি ওকেও খুব জোড়ে একটা চড় দেই।

— আমার ফ্রেন্ডের সাথে রিলেশন করলে আমাকে এতোদিন ঘুরানোর কি দরকার ছিলো বলে দিলেই পারতে তাহলেই তো আর তোমার পিছু নিতাম।সত্যিকারের ভালোবেসেছিলাম তাই হয়ো দাম পাই নি।আসলে….

— ওয়েট ওয়েট ওয়েট,কি বল্লেন আপনি।সত্যিকারের ভালোবাসা তাই না।আচ্ছা আমি যখন আপনাকে বলেছিলাম আমি কথা বলতে পারি না তখন আপনার সত্যিকারের ভালোবাসা কোথায় ছিলো।আর আপনার নাকি একটা মেয়ের সাথে ছোট বেলা থেকেই বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আর আপনার সাথে নাকি ওনার কথাও হয়।নিশ্চই এভোয়েড করেন তাই না।তারপরও যে, মেয়েটা আপনার অবহেলা সহ্য করে আপনাকে ফোন দিয়ে হাসি খুশি কথা বলে সেটা হলো ভালোবাসা।

এটা নয় যে,কথা বলতে পারে না বলে তাকে ফেলে চলে যাওয়া।আর এটাও শুনছিলাম যে মেয়েটা নাকি এখনো পর্যন্ত আপনাকে দেখেই নাই,আপনি তো আমার চেহারা সুন্দর হওয়ার পরও ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন।কিন্তু যে মেয়েটা আপনাকে না দেখে ছোট বেলা থেকে ভালোবেসে আসছে।আপনারটা যদি প্রকৃত ভালোবাসা হয় তাহলে ওই মেয়েটার ভালোবাসা টা কি মিথ্যে।আমি সিউর আপনার চেহারাটা যদি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট চেহারাও হয় তারপরও হয়তোবা মেয়েটা আপনাকে ছেড়ে যাবে না।এটাই প্রকৃত ভালোবাসা। আমি কিছু না বলেই চলে আসছিলাম।হঠাৎ পেছন থেকে সিমি বলে ওঠলো।

— আমি যদি ওই মেয়ের জায়গায় হতাম তাহলে কখনোই আপনার মতো একটা ছেলেকে বিয়ে করতাম না।
আমি আবার পিছনে গেলাম।ওর সামনে

— ধন্যবাদ দেয়ার ছিলো তোমাকে।ভেবেছিলাম যদি কখনো আবার দেখা হবে তখন দিয়ে দিবো। কিন্তু শেষ কথাটার জন্য এখনি বলে দিলাম।বিশ্বাস করো আমি তোমাকে পাবো না এটা নিয়ে আমার কোনো আফসুস নেই।এমন কি যদি ওই মেয়টাকেও না পাই তাহলেও কোনো আফসুস থাকবে না।কারণ আমি তোমাদের যোগ্যই নই। আর অনেক কিছু শিখলাম তোমার থেকে আজ।ধন্যবাদ।কখনো ভুলবো না তোমাকে।বাই। সেখান থেকে চলে আসি।বাসায় আসতেই

— ফারহান!(আম্মু)
— হুম বলো!
— তোর আন্টি আসছে.?
— কোন আন্টি.?
— আমার বান্ধুবি
— ও।
—-তোর সাথে কথা বলতে চায়।
— কোথায় আন্টি.?
— দাড়া আমি ডেকে দিচ্ছি।
— আচ্ছা। সোফাটায় বসলাম।কিছুক্ষণ পর আন্টি আসলো।

— কেমন আছেন আন্টি.?
— হুম ভালে বাবা তুমি কেমন আছো.?
— হুম ভালো।
— আসলে আমরা ঠিক করেছিলাম যে তোমাদের বিয়ের কাজটা ইদানিং সেরে ফেলতে.?
— কিন্তু আন্টি এখনোতো আমার পড়াশোাই শেষ হয় নি.?
— কিছু হবে না,তোমার আম্মু-আব্বুর সাথে কথা হইছে আমাদের
—আর আপনার মেয়ে জানে এসব.?
— হুম।
— আচ্ছা যা ভালো মনে হয় করেন।
— কালকের পরের দিন কেমন হয়.?
— আপনাদের ইচ্ছা।

বলে চলে আসলাম। দুইদিন পর যথারীতি বিয়ে বিয়ের দিন ঠিক হয়েছেে।সত্যি বলতে বিয়ের থেকেও বেশি আগ্রহে বসে আছি মেয়েটাকে দেখার জন্য এখনো পর্যন্ত নাম টাই জানা হয় নি.! বিকেলে সানভিকে দেখলাম।প্রথমে অনেক রাগ হয়,কিন্তু ও যখন সামনে এসে বলে তোর সাথে কথা আছে তখন আর কিছুই বলতে পারিনি।একটু সাইডে গেলাম।

— কেমন আছিস.?(সানভি)
— সত্যি বলতে অনেক ভালো যা এর আগে কখনোই ছিলাম না।
—ও।
— সিমিকে নিয়ে আসলেও পারতি,আমি কিছু মনে করতাম না!
— আচ্ছা বাদ দে, যাকে বিয়ে করছিস তার নাম কি.?
— জানি না।
— দেখছিস কখনো.?
— না।
— তাহলে বিয়ে করছিস যে গেয়ো ভূতটাকে.?
— অপমান করছিস.?
— না বাস্তবতাটাকে বুজাচ্ছি।

আর একটা কথা সিমি, আমার গার্লফ্রেন্ড না তোর হবু বৌ। সেই গেয়োভূতটা।আন্টি বলতে না করছিলো তাই বলি।কি করে ভাবলি ১০ বছরের বন্ধুত্বটা একটা মেয়ে এসে উলটপালট করে দিবে।কষ্ট টা এটার জন্যে পাইনি যে তুই আমাকে মেরেছিস কষ্টটা এটার জন্য পাইছি যে তুই আমাকে ১০ বছরেও চিনতে পারিস নি.? তোর ওকে পছন্দ হওয়াটা সত্যিই অদ্ভুত ছিলো।আর সিমি তোর জন্যই এখানে এসেছিলো।আর ও তোর ভালো চাইতো। তাই তোর সব ইনফরমেশন আমার থেকে নিতো।বিশ্বাস না হলেও আন্টিকেও জিঙ্গেস করতে পারিস।
কিছু না বলে ওকে খুব জোড়ে জরিয়ে ধরি।

— তুই ওইদিকে যা আমি আসছি।
— এড্রেস টা নিয়ে যা!তা না হলে কোথায় খুজবি.?
— শালা এড্রেস টা নিয়ে সোজা সিমিদের বাসায়।

— আরে তুই এখানে.?(আন্টি)
— সিমি কোথায়.?
— ছাদে,আরে শোনতো। কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ছাদে চলে গেলাম।
— এই নাটক টা শেষ হবে কখন?(আমি)
— আপনি এখানে.? (সিমি)
— আসতে পারিনা.?
— না তা না.!
— তাহলে?(ওর একদম কাছে গিয়ে)
—দেখেন একটু দূরে যান লোকে দেখলে কি বলবে.!

— কি বলবে.?
— কিছু না.!
— কেনো করলা আমার সাথে এরকম.?
— আপনাকে পাল্টানোর জন্য।
— তাই বলে এতটা কষ্ট!
— আমিওতো পাইছি!
— কিভাবে.?
— আপনাকে কষ্ট দিছি তাই।
— তাই বুঝি.?
— হুম.? ওর কপালে একটা চুমো দিলাম।সাথে সাথে আমাকে ধাক্কা দিয়ে..
— আমার লজ্জা লাগে না বুঝি।

বলে দৌড়ে চলে যায়।আমিও বাসায় চলে আসি।জানি আগামি দিন গুলো ভালো না কাটলেও খারাপ কাটবে না।কারণ যে মানুষটাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি তার কাছে আমিই তার পৃথিবী। দোষকি আরেকটা ভালবাসার মানুষকে কাছে ফিরিয়ে দিতে,, ভালবাসা গুলো যদি এমন হতো,, তাহলে কাউকে এত কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকতে হতো না,,,,

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত