বউয়ের অভিমান

বউয়ের অভিমান

শারুকে দেখলাম হাতে কি একটা যেনো নিয়ে বসে আছে।বোতল জাতীয় কিছু একটা।একটু সামনে এগিয়ে গেলাম। বুঝার চেষ্টা করছি হাতে বোতলটা কিসের।একটু সামনে যেতেই দেখলাম।লাল রংয়ের লেখা বিষ।বিষ লেখা দেখে চোখ তো কপালে উঠেগেল।নিজেকে সামলে নিয়ে একটু নরম স্বরে শারুকে বললাম ” হাতে কি এটা তোমার? ”

শুরু মুখটাকে একটা ঝারি দিয়ে বললো কি এটা দেখতে পারছেন না আপনি! না ঠিক দেখতে পারছিনা,চোখে ঝাপসা ঝাপসা দেখছি।বয়স হয়েছে তো, তাই আজ কাল একটু চোখে কম দেখছি। এই কথা বলতেই শারু আমার দিকে তাকালো।রাগে একদম ফসফস করছে।তাকে আরেকটু রাগানোর জন্যে বললাম কি হলো রাগে এত ফসফস করছো কেনো কাল নাগিনের মত।

কি আমি কাল নাগিনি! হ্যাঁ কাল নাগিনিই তো আজ আপনাকে দংশন করবো। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি বললাম আচ্ছা দংশন করো সমস্যা নেই।হাতে কি এটা সেটা আগে বলো। হাতে কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না আপনি? না দেখতে পাচ্ছিনা।তুমি যেভাবে মুষ্টি বদ্ব করে রেখেছো কি করে আমি দেখবো বলো। আপনার দেখতে হবেনা।আমার হাতে হচ্ছে বিষ। আমি চোখটাকে একটু বড় বড় করে বললাম বিষ? হুম, দেখতেই তো পারছেন এটা বিষ।নাকি ভালভাবে দেখাতে হবে?

-না হবেনা দেখাতে হবেনা।তুমি বলেছো তাই বিশ্বাস করেছি।শত হলেও আমার দুইমাত্র বউ

আপনি কি বললেন।দুই মাত্র বউ মানে আপনার আরেকটা বউ আছে আগে কেনো বলেননি। এ কথা বলেই মুখটা কালো করে ফেললো।বুঝতে পারলাম কিছু একটা হবে।বললাম আরে না স্লিপিং মিস্টেক।ওহ সরি কথার মিস্টেক।দুই মাত্র বউ হতে যাবে কেনো।তুমি তো আমার একমাত্র বউ।এ কথা বলার পর দেখলাম কোন সাড়া শব্দ করলো না।তাই জিঙ্গেস করলাম।আচ্ছা তোমার হাতে বিষ কেনো। বিষ হাতে কেনো আপনি বুঝেন না? আমি বিষ খাবো! বউয়ের এমন কথা শুনে আমার হাগু টাইট হয়েগেছে।বউ বলে কি। এখন যদি বউ বিষ খায় তাহলে পুলিশ তো আমারে ধরবে।আমি একটু বিষ্ময়ের সাথে জিঙ্গাস করলাম।মানে কি শারু? মানে খুব সহজ।বিষ খাবো।তারপর! তুমি বিষ খাবে মানে।আর তারপর কি। এইযে দেখছেন এগুলে কি? আমার সামনে কাগজ আর কলম ধরে বললো।আমি বললাম হ্যাঁ দেখছি কাগজ আর কলম।

–হ্যাঁ কাগজ আর কলম।এটাতে একটা নোট লিখব আমি।

শারুর নোট লিখবে শুনে আমি প্রশ্ন করলাম। কিসের নোট লিখবে তুমি। তারপর শারু বললো। আমি এখানে সুইসাইড নোট লিখব। শারুর সুইসাইড নোট লেখার কথা শুনে।আমি তাকে একটু বিষ্ময়ের আর জানার আগ্রহ নিয়ে জিঙ্গাসা করলাম। কিসের সুইসাইড নোট।কার সুইসাইড নোট। কে সুইসাইড করবে? তারপর শারু বললো অামি সুইসাইড করবো। এটা আমার মৃত্যুর সুইসাইড নোট।আর তা লিখবো অাপনার নামে! শারুর এমন কথা শুনে চোখ কপালে উঠেগেল।মনে হচ্ছে মাটি সরে গেছে পায়ের নিচ থেকে।তবুও নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বললাম। অামার নামে কেনো লিখবে? আমি কি করলাম। আমার এমন কথার পর শারু বললো

-লিখবো যে অামার মৃত্যুর জন্য অাপনি দায়ী!হ্যাঁ শুধু আপনিই দায়ী। শারুর মৃত্যুর জন্যে নাকি আমি দায়ী।ওরে আমার বউ বলি কিরে।কেউ আমারে শান্তনা।গলার স্বরটা একটু নরম করে বললাম। অামি দায়ী কি করলাম অামি।তুমি কেনো মরবে আমার জন্যে।বিষ খেও না।

-কি করছেন ভেবে দেখেন! অামি বিষ খাব মানে খাবোই। তার অাগে সুইসাইড নোট লিখবো। যে অামার মৃত্যুর জন্য অাপনি দায়ী!আমার স্বামী দায়ী।

এবার একটু রেগে গিয়ে বললাম। অামাকে ব্লেকমেল করা হচ্ছে? আমার মুখে ব্লেকমেল কথা শুনে শারু হেসে দিলো।তারপর বললো অাপনাকে ব্লেকমেইল করবো অামি?? হাহাহাহা!! অামি সত্য বলছি মৃত্যুর আগে আপনার নামে সুইসাইড নোট লিখেই মরবো।

এবার মনে ধরলো এই বেডি বিষ খাবেই।সুবিধার মনে হচ্ছেনা।রীতিমত ঘামতে শুরু করলাম।মনে হচ্ছে বাপ মা আমারে খাল কেঁটে কুমির এনে দিয়েছে।আর আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলছে নে বাবা এবার কুমিরের সাথে বসবাস কর।নিজেকে একটু কন্ট্রোল করে বললাম। শারু বিষ খাওয়ার কি আছে। অামি মরে অাপনাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে যাবো। অামার মৃত্যুর জন্য অাপনি দায়ী লিখে যাবো! কি করলাম অামি? কি করলেন আপনি তা জানেন না। অামি অাপনার বিবাহিত বউ,তবুও কোন অধিকার নাই আমার। মনে মনে বললাম বউ কি অবিবাহিত হয় নাকি।তারপর বললাম ওহ।

– -ও কি ও কি! অাজ একটা ফয়সালা করতে হবে। হয় অামি অামার অধিকার পাবো। না হয়, বিষ খাবো।

অাপনাকে ফাঁসাবো।আমিও মরবো আপনাকেও ফাঁসাবো। শারু এমন বলার পর আমি বললাম যাই করো। ;আমার অনেক কাজ অাছে।বুঝতে পারলাম হিস্ট্রিটা কি।তারপর পা বাড়ালাম বাহিরের দিকে। শারু বসা থেকে দাঁড়িয়ে বললো।

-আজকে আর কোন কাজ হবেনা। একটা ফয়সালা আপনার করে যেতেই হবে। বললাম
– পথ ছাড়ো বলছি শারু! ছাড়বো না! কি করবেন আপনি।
– দেখো কি করি।

ঠাস করে শারুর গালে চড় দিয়ে, তারপর একটা ধাক্কা দিলাম।ঠাস করে টেবিলের উপর পড়লো শারু।হঠাৎ করে রাগ উঠলো। আমি অাদিল অার শারু আমার বিবাহিতা স্ত্রী। বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছে গত একমাস হল।তবুও আমাদের মাঝে স্বামী স্ত্রী কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি!ছেলেরা সবসময় নতুন বউয়ের অাঁচল ধরে থাকে। কিন্তু এদিকে বিয়ের পর দিন থেকেই আমি চাকরী নিয়ে ব্যস্ত।শারুকে ঠিক মত সময়ও দিচ্ছিনা।

সময় যে দিচ্ছিনা তাও না।আমি চাইছি শারুর সাথে মানিয়ে নিতে।চেষ্টা করছি মানিয়ে নিয়ে চলতে।। কারণ যে মেয়েকে সবসময় অন্যভাবে দেখেছি। পিচ্চি হিসেবে ভেবে এসেছে। তার সাথেই বিয়ে হলো ।সেটা এখনো মানতে পারছিনা। অাসলে শারু হলো আমার ফুফাতো বোন।সেই সূত্র ধরে, আমার মা শারুকে পছন্দ করে।কিন্তু আমি কখনো তাকে বউ করবো এমনটা ভাবিনি।কিন্তু মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্বেও যেতে পারিনি।মায়ের কথা মতো বিয়ে করতে হয়েছে।তাই এখন নিজেকে শারুর সাথে মানিয়ে নিতে পারছিনা।

তবে অাজকে শারু একটু বেশিই করে ফেলেছে এক্সট্রা বিহিভ। তাই শারুর গায়ে হাত তুলতে হয়েছে। অার শারুই কি করবে। ও তো ঠিকেই বলেছে, তাদের বিয়ে হয়েছে একমাস এখনো স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।তাকে ঠিকমত সময় দিচ্ছিনা খোঁজ খবর নিচ্ছিনা।তাহলে তো অভিমান করবেই। আমারো ঠিক হয়নি শারুর গায়ে এভাবে হাত উঠানোর।বউ তো একটু কেয়ার করা প্রয়োজন। একটু বাহির থেকে ঘুরে রুমে গেলাম।গিয়ে দেখলাম শারু স্বাভাবিক ভাবেই আছে।জিঙ্গেস করলাম

-কি করছো শারু।আমার কথায় কোন উত্তর দিল না। আবার জিঙ্গাস করলাম :কি করছো শারু? না এবারও একই রকম কোন কথা নাই।তাই বললাম
– বাহব্বাহ এতো রাগ? অাচ্ছা ভাল। একটু রাগানো আর কথা বলার জন্য প্ল্যান করলাম।তাই বললাম

অামি যাচ্ছি, ভাবছি অাজকে এক বুতুল মদ কিনবো। তারপর তা মদখাবো, মাতলামো করবো।অার বলবো, অামার বউ অামার সাথে রাগ করেছে।আমার সাথে কথা বলছেনা। এবার কাজ হয়েছে।আমার কথা শুনে শারু বললো

– –যান কিনেন গিয়ে! খান গা তাতে আমার কি। কথাটা একটু অভিমানের স্বরে বললো। আমি বললাম; না আর খাবো না!!

– –কেনো খাবেন না?বেশি করে খান। আর মদ খাবো না কারণ অামার বউয়ের সমস্যা হবে।
-বউ কিছুক্ষণ অাগে মারা গেছে!
– ও তাই,অাচ্ছা ঠিক অাছে, তাহলে অামিও মরে যাবো।

এই কথা বলতেই শারু আমার মুখ চেপে ধরলো।আর বললো “ওমন কথা যেন মুখে অার না শুনি ” বউয়ের এমন কথা শুনে পুরানডা জুড়িয়ে গেল।আমি বললাম কেনো বলবোনা, কেনো?

– ভালবাসি খুব বেশি ভালবাসি! আহ বউ আমারে ভালবাসে।আচ্ছা তাহলে একটা পাপ্পি দাও।
– না দিবোনা!
– –কেনো দিবানা। অামি তোমার জামাই হু!
– ওরে অামার জামাইরে, অাইছে অামার জামাই।অাগে কই অাছিলেন?
– –ছিলাম বউয়ের পাশে, কিন্তু বউ দেখতে পায়নি!!
– বউ দেখতে পেরেছে, তবে জামাই বুঝতে পারেনি!
– —ওরে অামার বউ এতো কথা কয় কেন?
– পাশে জামাই অাছে তাই ভয় নাই।
– –ঠিকাছে দেখাচ্ছি মজা। আপনার যান না কেনো।আমগো মজা দেখার আর দরকার নাই আপনাদের হু

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত